দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া। বর্তমানে এ দেশটিতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি যাচ্ছে কাজের সন্ধানে। কিন্তু সেখানে বৈধ বাংলাদেশিদের থেকে অবৈধদের পরিমানই বেশি । এ কারণে মালয়েশিয়ার সরকার কিছুদিন আগে ই-কার্ডের মাধ্যমে নতুন ভাবে অবৈধ প্রবাসীদের বৈধ হবার সুযোগ দিয়েছিলো। যা এ বছর জুন মাসে শেষ হয়েছে। কিন্তু এবছরের ৩১ ডিসেম্বর পযর্ন্ত রিহায়রিংয়ের মাধ্যমে বৈধ হবার সুযোগ রয়েছে মালয়েশিয়ার অবৈধ প্রবাসীদের। রিহায়ারিং বা ই-কার্ডের মাধ্যমে বৈধ হলেও পুলিশের হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
বিভিন্ন ভাবে বৈধ বাংলাদেশি প্রবাসীরাও মালয়েশিয়ায় পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছে। মালয়েশিয়া প্রবাসী চাকরীজীবি নাইম হাসান বলেন, বাংলাদেশিরা অন্যান্য দেশে প্রবাসীদের থেকে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছে পুলিশের কাছে। তার প্রধান কারণ হিসেবে তিনি জানান, বাংলাদেশিদের আটক করতে পারলে তাদের থেকে খুব সহজে ঘুষ আদায় করতে পারে মালয়েশিয়ার পুলিশ। যা অন্যান্য দেশের প্রবাসীদের থেকে আদায় করা সম্ভব হয় না। যার কারণে মালয়েশিয়ার পুলিশের ঘুষ আদায়ে প্রথম টার্গেট বাংলাদেশিরা বলেও জানান তিনি । তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাই-কমিশনে অভিযোগ করলেও পযাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও জানান নাইম।
নেপাল, ভারত বা পাকিস্তানের প্রবাসী ব্যক্তিরা অবৈধ হলেও তাদের তেমন হয়রানির শিকার হতে হয় না মালয়েশিয়ায়। কারণ এ দেশগুলোর দূতাবাস অনেক সক্রিয়। মালয়েশিয়ান পুলিশ বা অন্যকোন মাধ্যমে হয়রানি হলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় এই দেশগুলোর দূতাবাস। ফলে কোনো পুলিশ এসব দেশের প্রবাসীদের তেমন হয়রানি করে না। কিন্তু বাংলাদেশিদের দূতাবাস থেকে তেমন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ সুযোগ নেয় মালয়েমিয়ান পুলিশ। অবৈধ প্রবাসীরাতো বিভিন্ন ভাবে হয়রানির শিকার হয় তার সাথে বাদ যায় না বৈধ প্রবাসীরাও। নাইম বলেন, বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তারা দেশ থেকে কোনে রাজনৈতিক ব্যক্তি বা মন্ত্রী আসলে তাদের দেখাশোনার দায়িত্বেই বেশি ব্যস্ত থাকে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, দূতাবাস বাংলাদেশিদের নানা অভিযোগে এড়িয়ে যায়। যার সুযোগ নেয় দালাল চক্র ও মালয়েশিয়ার পুলিশ। এদিকে দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, এমন ধরনের অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেনো কোনে রকম সমস্যায় বা হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে হাইকমিশন। কিন্তু অনেক প্রবাসী এ ধরেন সমস্যা পড়লে নিজেরাই সমাধানের চেষ্টা করে ঘুষ দিয়ে । যার কারণে এধরনের হয়রানির তথ্য দূতাবাসের কাছে আসছে না। এদিকে বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রথম সচিব হেদায়াতুল ইসলাম মন্ডল আহ্বান জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসীদের বাংলাদেশি হাই কমিশন থেকে পাসপোর্ট ও রিহায়ারিং সম্পন্ন করে বৈধ হওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, “যারা বৈধ উপায়ে মালয়েশিয়ায় এসেছেন (স্টুডেন্ট ভিসা ছাড়া) বা অতীতে বৈধ শ্রমিক হিসেবে থাকলেও এখন অবৈধ, তারা নির্দিষ্ট মালিকের মাধ্যমে এখনও মাইইজি’র মাধ্যমে রিহায়ারিং করার সুযোগ নিতে পারেন। অথার্ৎ রিহায়ারিং এর শর্তগুলো মেনে এ প্রকল্পের বৈধ হওয়ার সুযোগ এখনো আছে। কিন্তু প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই বলছে তারা বিভিন্নভাবে মালয়েশিয়ার পুলিশের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছে। যার সঠিক কোনে সমাধান দূতাবাসের কাছে জানালেও তারা তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না।
যার ফলে এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হচ্ছে না। যার কারণে দিনের পর দিন অনেক বৈধ প্রবাসীদের বিনা কারণে ঘুষ দিতে হচ্ছে পুলিশদের। কিন্তু এই সমস্যা এভাবে চলতে থাকলে মালয়েশিয়া পুলিশদের মতো অনেক ক্ষেত্রে জনগন বাংলাদেশিদের থেকে বিনা কারণে ঘুষের দাবি করবে যা বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাড়াবে। তাই এই সমস্যা সমাধানের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হাই কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
No comments:
Post a Comment