হোনায়েন যুদ্ধ (غزوة حنين) : ৮ম হিজরীর শাওয়াল মাস
মুসলমানদের আকস্মিক মক্কা বিজয়কে কুরায়েশ ও তাদের মিত্রদলগুলি মেনে নিলেও নিকট প্রতিবেশী বনু হাওয়াযেন ও তার শাখা ত্বায়েফের বনু ছাক্বীফ গোত্র এটাকে মেনে নিতে পারেনি। তারা মনে করল, মুসলমানেরা এরপর সমৃদ্ধ নগরী ত্বায়েফ হামলা করতে পারে। অতএব আগেই যদি আমরা মুসলমানদের পরাজিত করতে পারি, তাহ’লে আমাদের সম্পদ যেমন রক্ষা পাবে তেমনি ত্বায়েফে মক্কাবাসীদের যত বাগ-বাগিচা ও জায়গীরসমূহ রয়েছে, সব আমাদের দখলে এসে যাবে’। এছাড়া মুসলমানদের কাছ থেকে মূর্তি ভাঙ্গার বদলা নেওয়া যাবে। এ উদ্দেশ্যে তারা মক্কা ও ত্বায়েফের মধ্যবর্তী বনু মুযার ও বনু হেলাল এবং অন্যান্য গোত্রের লোকদেরকে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে নিল। তবে বনু হাওয়াযেন-এর দু’টি শাখা গোত্র বনু কা‘ব ও বনু কেলাব এই অভিযান থেকে পৃথক থাকে। তারা বলে যে, পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমগ্র দুনিয়া যদি মুহাম্মাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়, তথাপি তিনি সকলের উপরে বিজয়ী হবেন। অতএব আমরা এলাহী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারব না’।
এ সত্ত্বেও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে হাওয়াযেন নেতা মালেক বিন আওফ নাছরীর (مالك ابن عوف النَّصْري) নেতৃত্বে চার হাযার সৈন্যের এক দুর্ধর্ষ বাহিনী হুনায়েন-এর সন্নিকটে আওত্বাস (أوطاس) উপত্যকায় অবতরণ করল। যা ছিল হাওয়াযেন গোত্রের এলাকা ভুক্ত। তাদের নারী-শিশু, গবাদি-পশু ও সমস্ত ধন-সম্পদ তারা সাথে নিয়ে আসে এই উদ্দেশ্যে যে, এগুলির মহববতে কেউ যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালাবে না। বরং প্রাণপণ যুদ্ধ করে তারা যুদ্ধ জয়ে উদ্বুদ্ধ হবে। তাদের প্রবীণ নেতা ও দক্ষ যোদ্ধা দুরাইদ বিন ছাম্মাহ (دريد بن الصمة) এগুলিকে সঙ্গে আনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তোমরা এগুলিকে দূরে সংরক্ষিত স্থানে পাঠিয়ে দাও। যুদ্ধে তোমরা বিজয়ী হ’লে ওরা এসে তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবে। আর পরাজিত হ’লে ওরা বেঁচে যাবে’। কিন্তু তরুণ সেনাপতি মালেক বিন আওফ তার এ পরামর্শকে তাচ্ছিল্যভরে উড়িয়ে দেয় এবং সবাইকে যুদ্ধের ময়দানে জমা করে। মূলতঃ দুরাইদের পরামর্শ মতে কাজ করলে তার সুনাম হবে, এবিষয়টি মালেক বরদাশত করতে পারেনি। আবু হাদরাদ আসলামী (রাঃ)-কে গোপনে পাঠিয়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাদের সব খবর জেনে নিয়ে বললেন, تلك غنيمة المسلمين غدًا إن شآء الله ‘এসবই আগামীকাল মুসলমানদের গণীমতে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ’।
ইসলামী বাহিনী হোনায়েন–এর পথে :
৮ম হিজরীর ৬ই শাওয়াল শনিবার মক্কা থেকে ২,০০০ নওমুসলিম সহ ১২,০০০ সেনাদল নিয়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হোনায়েনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এটা ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর মক্কায় আগমনের ঊনিশতম দিন। এই সময় আত্তাব বিন আসীদকে মক্কার প্রশাসক নিযুক্ত করা হয়।
যাতু আনওয়াত্ব :
‘হোনায়েন’ হ’ল মক্কা ও ত্বায়েফের মধ্যবর্তী একটি স্থানের নাম, যা মক্কা হ’তে আরাফাতের রাস্তা ধরে ১০ মাইলের কিছু (بضعة عشر ميلا) দূরে অবস্থিত একটি পাহাড় বেষ্টিত উপত্যকা। ১০ই শাওয়াল বুধবার ভোর রাতে মুসলিম বাহিনী হোনায়েন উপস্থিত হয়। যাওয়ার পথে তারা একটি বড় সতেজ-সবুজ কুল গাছ দেখতে পান। যাকে ‘যাতু আনওয়াত্ব’ (ذات أنواط) বলা হ’ত। মুশরিকরা এটিকে ‘মঙ্গল বৃক্ষ’ মনে করত। এখানে তারা পশু যবহ করত, এর উপরে অস্ত্র-শস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত, এখানে পূজা দিত ও মেলা বসাত। তা দেখে কেউ কেউ বলে উঠলো, اجْعَلْ لَنَا ذَاتَ أَنْوَاطٍ كَمَا لَهُمْ ذَاتُ أَنْوَاطٍ ‘আমাদের জন্য (হে রাসূল) একটি যাতে আনওয়াত্ব দিন, যেমন ওদের রয়েছে’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিস্ময়ের সাথে বলে উঠলেন,اللهُ أَكْبَرُ، قُلْتُمْ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوْسَى ‘আল্লাহু আকবর! সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন নিহিত, তোমরা ঠিক সেইরূপ কথা বলছ, যেরূপ মূসার কওম বলেছিল, اِجْعَلْ لَّنَا إِلَهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ ‘আমাদের জন্য একটি উপাস্য দিন, যেমন তাদের বহু উপাস্য রয়েছে’। আর মূসা তাদের জওয়াবে বলেছিলেন, إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ ‘তোমরা মূর্খ জাতি’ (আ‘রাফ ৭/১৩৮)। তিনি বললেন, إِنَّهَا السُّنَنُ، لَتَرْكَبُنَّ سُنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ ‘এটাই হ’ল রীতি। তোমরা পূর্বের লোকদের রীতি অবশ্যই অবলম্বন করবে’।
আমরা কখনোই পরাজিত হব না :
এ সময় নিজেদের সৈন্যসংখ্যা বেশী দেখে কেউ কেউ বলে উঠেন, لَنْ نُغْلَبَ اليومَ مِنْ قِلَّةٍ ‘শত্রু সংখ্যা কম হওয়ার কারণে আজ আমরা কখনোই পরাজিত হব না’। একথায় আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বড়ই কষ্ট পান।
যুদ্ধ শুরু : মুসলিম বাহিনীর বিপর্যয় :
ভোর রাতে মুসলিম বাহিনী হোনায়েন পৌঁছল। শত্রুপক্ষের ছাক্বীফ ও হাওয়াযেন গোত্রের দক্ষ তীরন্দাযরা আগেই ওঁৎ পেতে ছিল। তারা গিরিসংকটের সংকীর্ণ পথে মুসলিম বাহিনীর অগ্রগামী দলকে নাগালের মধ্যে পাওয়া মাত্রই তীরবৃষ্টি শুরু করে দিল। তাদের এ আকস্মিক আক্রমণে মুসলিম বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। সবাই দিগ্বিদিক জ্ঞানহারা হয়ে ছুটে পালাতে লাগল। বিভিন্ন বর্ণনা মোতাবেক এ সময় রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে ছিলেন ৯, ১০, ১২ অথবা ১০০ জনের কম সংখ্যক লোক।
[4]
এ দৃশ্য দেখে নওমুসলিম কুরায়েশ নেতা আবু সুফিয়ান বিন হারব বলে ওঠেন, لا تنتهي هزيمتهم دون البحر الأحمر ‘লোহিত সাগরে পৌঁছনোর আগ পর্যন্ত এদের পালানোর গতি শেষ হবে না’। আরেক জন ব্যক্তি জাবালাহ অথবা কালদাহ ইবনুল জুনায়েদ চীৎকার দিয়ে বলে ওঠল, ألا بطل السِّحْرُ اليومَ ‘দেখ জাদু আজ বাতিল হয়ে গেল’। অর্থাৎ প্রথম ধাক্কাতেই এদের ঈমান শেষ হয়ে যাবার উপক্রম হ’ল এবং পূর্বের অবিশ্বাসে ফিরে যেতে উদ্যত হ’ল।
এই সংকটপূর্ণ সময়ে রাসূল (ছাঃ)-এর বীরত্ব ও তেজস্বিতা ছিল অতুলনীয়। তিনি স্বীয় খচ্চরকে কাফের বাহিনীর দিকে এগিয়ে যাবার জন্য উত্তেজিত করতে থাকেন ও বলতে থাকেন, أَنَا النَّبِىُّ لاَ كَذِبْ * أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ ‘আমি নবী। মিথ্যা নই’। ‘আমি আব্দুল মুত্ত্বালিবের পুত্র’। অর্থাৎ আমি যে সত্য নবী তার প্রমাণ যুদ্ধে জয়-পরাজয়ের উপরে নির্ভর করে না। এ সময় রাসূল (ছাঃ) ডানদিকে ফিরে ডাক দিয়ে বলেন, هَلُمُّوْا إلَيَّ أيها الناسُ، أنَا رَسُوْلُ الله، أنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ، ‘আমার দিকে এসো হে লোকেরা! আমি আল্লাহর রাসূল’। ‘আমি আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদ’। এসময় তাঁর নিকটে অল্প সংখ্যক মুহাজির ও তাঁর পরিবারের কিছু লোক ব্যতীত কেউ ছিল না। রাসূল (ছাঃ)-এর চাচাতো ভাই নওমুসলিম আবু সুফিয়ান বিন হারেছ বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব রাসূলের খচ্চরের লাগাম এবং চাচা আববাস বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব খচ্চরের রেকাব টেনে ধরে রেখেছিলেন, যাতে সে রাসূলকে নিয়ে সামনে বেড়ে যেতে না পারে। এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খচ্চর থেকে নামলেন ও দো‘আ করলেন, اللَّهُمَّ أَنْزِلْ نَصْرَكَ ‘হে আল্লাহ! তোমার সাহায্য নামিয়ে দাও’। অতঃপর তিনি চাচা আববাসকে নির্দেশ দিলেন ছাহাবীগণকে ঊচ্চৈঃস্বরে আহবান করার জন্য। কেননা আববাস ছিলেন অত্যন্ত দরাজ কণ্ঠের মানুষ। তিনি সর্বশক্তি দিয়ে উচ্চৈঃস্বরে ডাকলেন,
أَيْنَ أَصْحَابُ السَّمُرَةِ، ‘বায়‘আতে রিযওয়ানের সাথীরা কোথায়’? তাঁর এই আওয়ায পাওয়ার সাথে সাথে গাভীর ডাকে দুধের বাছুর ছুটে আসার মত লাববায়েক লাববায়েক ধ্বনি দিয়ে চারদিক থেকে ছাহাবীগণ ছুটে এলেন।
[7] কারু কারু এমন অবস্থা হয়েছিল যে, স্বীয় উটকে ফিরাতে সক্ষম না হয়ে স্রেফ ঢাল-তলোয়ার নিয়ে লাফিয়ে পড়ে ছুটে রাসূলের নিকটে চলে আসেন।
এরপর হযরত আববাস (রাঃ) يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ ‘হে আনছারগণ!’ বলে আনছারদের আহবান করলেন। অবশেষে দেখা গেল যে, যে গতিতে মুসলমানেরা ফিরে গিয়েছিল, তার চেয়ে দ্রুত গতিতে তারা যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রত্যাবর্তন করল। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই উভয়পক্ষে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক মুষ্টি বালু উঠিয়ে কাফিরদের দিকে নিক্ষেপ করে বললেন,شَاهَتِ الْوُجُوْهُ ‘চেহারাগুলো বিকৃত হৌক’। এই এক মুঠো বালু শত্রুপক্ষের প্রত্যেকের দু’চোখে ভরে যায় এবং তারা পালাতে থাকে। ফলে যুদ্ধের গতি স্তিমিত হয়ে যায়। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنْهَزَمُوْا وَ رَبِّ مُحَمَّدٍ ‘মুহাম্মাদের প্রভুর কসম! ওরা পরাজিত হয়ে গেছে’। নিঃসন্দেহে এটা ছিল আল্লাহর গায়েবী মদদ, যা তিনি ফেরেশতাগণের মাধ্যমে সম্পন্ন করেন।
শত্রুপক্ষের শোচনীয় পরাজয় :
ধূলি নিক্ষেপের পরপরই শত্রুদের পরাজয়ের ধারা সূচিত হয় এবং সত্তরের অধিক লাশ ফেলে তারা যুদ্ধের ময়দান থেকে পালাতে শুরু করে। তাদের নেতা মালেক বিন আওফ বড় দলটি নিয়ে স্বীয় স্ত্রী-পরিজন ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে ত্বায়েফের দুর্গে আশ্রয় নেন’। আরেকটি দল তাদের নারী-শিশু ও গবাদি পশু নিয়ে আওত্বাস ঘাঁটিতে চলে যায়। আরেকটি দল নাখলার দিকে পলায়ন করে।
প্রথমোক্ত দলের পশ্চাদ্ধাবনের জন্য ১০০০ সৈন্যসহ খালেদ বিন ওয়ালীদকে পাঠানো হয়। দ্বিতীয় দলটির জন্য আবু আমের আল-আশ‘আরীকে একটি সেনাদল সহ পাঠানো হয়। তিনি তাদের উপরে জয়লাভ করেন। কিন্তু তাদের নিক্ষিপ্ত তীরের আঘাতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তৃতীয় দলটির পিছনে একদল অশ্বারোহীকে পাঠানো হয়। যাদের হাতে তারা পরাভূত হয় এবং তাদের প্রবীণ নেতা দুরাইদ বিন ছাম্মাহ নিহত হয়।
যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা :
মানছূরপুরীর হিসাব মতে হোনায়েন যুদ্ধে মুসলিম পক্ষে শহীদের সংখ্যা ছিল ৬ এবং কাফির পক্ষে নিহতের সংখ্যা ছিল ৭১।
বিপুল গণীমত লাভ :
আওত্বাস ঘাঁটিতে শত্রুপক্ষের নিকট থেকে যে বিপুল গণীমত লাভ হয়, তার পরিমাণ ছিল নিম্নরূপ:
বন্দী : ৬,০০০ নারী-শিশুসহ, উট : ২৪,০০০, দুম্বা–বকরী : ৪০,০০০-এর অধিক, রৌপ্য : ৪,০০০ উক্বিয়া। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সব সম্পদ একত্রিত করে ‘জি‘র্রানাহ’ (الجعرانة) নামক স্থানে জমা রাখেন এবং মাসঊদ বিন আমর গেফারীকে তার তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেন। ত্বায়েফ থেকে প্রত্যাবর্তন এবং অবসর না হওয়া পর্যন্ত তিনি গণীমত বণ্টন করেননি। বন্দীদের মধ্যে হালীমার কন্যা রাসূল (ছাঃ)-এর দুধবোন শায়মা বিনতুল হারেছ (شيماء بنت الحارث السعدية) আস-সা‘দিয়াহ ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে চিনতে পেরে নিজের চাদর বিছিয়ে তাতে বসতে দিয়ে তাকে সম্মানিত করেন। অতঃপর তাকে তার ইচ্ছানুযায়ী তার কওমের নিকটে ফেরৎ পাঠান।
বস্ত্ততঃ এটাই ছিল সেই ওয়াদার বাস্তবতা, যে বিষয়ে আল্লাহ বলেছিলেন,
لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ فِيْ مَوَاطِنَ كَثِيْرَةٍ وَيَوْمَ حُنَيْنٍ إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَيْئًا وَضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُمْ مُدْبِرِيْنَ- ثُمَّ أَنْزَلَ اللهُ سَكِيْنَتَهُ عَلَى رَسُوْلِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَأَنْزَلَ جُنُوْدًا لَمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَذَلِكَ جَزَاءُ الْكَافِرِيْنَ- ثُمَّ يَتُوْبُ اللهُ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ عَلَى مَنْ يَشَآءُ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ- (الةوبة ২৫-২৭)-
অনুবাদ : ‘আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন অনেক স্থানে, বিশেষ করে হোনায়েনের দিন। যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের গর্বিত করে ফেলেছিল। কিন্তু তা তোমাদের কোনই কাজে আসেনি। বরং প্রশস্ত যমীন তোমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তোমরা পিঠ ফিরে পালিয়ে গিয়েছিলে’। ‘অতঃপর আল্লাহ তাঁর বিশেষ প্রশান্তি ‘সাকীনা’ অবতীর্ণ করেন স্বীয় রাসূল ও মুমিনদের উপরে এবং নাযিল করেন এমন সেনাদল, যাদের তোমরা দেখোনি এবং কাফিরদের তিনি শাস্তি প্রদান করেন। আর এটি ছিল তাদের কর্মফল’। (এ ঘটনার পরে) আল্লাহ যাদের প্রতি ইচছা করেন, তওবার তাওফীক দেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (তওবাহ ৯/২৫–২৭)।
শেষোক্ত আয়াতে যে তওবার কথা বলা হয়েছে, তাতে ইঙ্গিত রয়েছে শত্রুপক্ষের নেতা মালেক বিন আওফ ও তার সাথীদের প্রতি। যারা পরে সবাই ইসলাম কবুল করে ফিরে আসেন। – ফালিল্লাহিল হাম্দ।
ত্বায়েফ যুদ্ধ (غزوة الطائف) :
এটি ছিল মূলতঃ হোনায়েন যুদ্ধেরই বর্ধিত অংশ। হোনায়েন যুদ্ধ হ’তে পালিয়ে যাওয়া সেনাপতি মালেক বিন আওফ নাছরী তার দলবল নিয়ে ত্বায়েফ দুর্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইতিপূর্বে তার পশ্চাদ্ধাবনের জন্য এক হাযার সৈন্যসহ খালেদ বিন ওয়ালীদকে পাঠানো হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হোনায়েন-এর গণীমত সমূহ জি‘র্রানাহতে জমা করে রেখে নিজেই ত্বায়েফ অভিমুখে রওয়ানা হয়ে যান। পথিমধ্যে তিনি নাখলা, ইয়ামানিয়াহ, ক্বারনুল মানাযিল, লিয়াহ (لية) প্রভৃতি অঞ্চল অতিক্রম করেন এবং লিয়াহতে অবস্থিত মালেক বিন আওফের একটি সেনাঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেন। অতঃপর ত্বায়েফ গিয়ে দুর্গের নিকটবর্তী স্থানে শিবির স্থাপন করেন এবং দুর্গ অবরোধ করেন। এই অবরোধের সময়কাল ১০, ১৫, ১৮, ২০ ও ৪০ দিন পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে। অবরোধের প্রথম দিকে দুর্গের মধ্য হ’তে বৃষ্টির মত তীর নিক্ষিপ্ত হয়। তাতে মুসলিম বাহিনীর ১২ জন শহীদ হন। অনেকে আহত হন। পরে তাদের উপরে কামানের গোলা নিক্ষেপ করা হয়, যা খায়বর যুদ্ধের সময় মুসলমানদের হস্তগত হয়েছিল। শত্রুরা পাল্টা উত্তপ্ত লোহার খন্ড নিক্ষেপ করে। তাতেও বেশ কিছু মুসলমান শহীদ হন।
এ সময় রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ হ’তে একটি ঘোষণা প্রচার করা হয় যে, مَنْ خَرَجَ إلَيْنَا مِنَ الْعَبِيْدِ فَهُوَ حُرٌّ- ‘যেসব গোলাম আমাদের নিকটে এসে আত্মসমর্পণ করবে, সে মুক্ত হয়ে যাবে’। এই ঘোষণায় ভাল ফল হয়। একে একে ২৩ জন ক্রীতদাস দুর্গ প্রাচীর টপকে বেরিয়ে আসে এবং সবাই মুসলমানদের দলভুক্ত হয়ে যায়। এদের মধ্যকার একজন ছিলেন বিখ্যাত ছাহাবী হযরত আবু বাকরাহ (রাঃ)। নারী নেতৃত্বের অকল্যাণ সম্পর্কিত ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত হাদীছের যিনি বর্ণনাকারী। ‘আবু বাকরাহ’ নামটি ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর দেওয়া উপনাম। কেননা বাকরাহ (بكرة) অর্থ কূয়া থেকে পানি তোলার চাক্কি। যার সাহায্যে তিনি দুর্গপ্রাচীর থেকে বাইরে নামতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে তার মুনিবের পক্ষ থেকে তাকে ফেরৎ দানের দাবী করা হ’লে রাসূল (ছাঃ) বলেন, هُوَ طَلِيْقُ اللهِ وَطَلِيْقُ رَسُوْلِهِ ‘সে আল্লাহর মুক্ত দাস, অতঃপর তাঁর রাসূলের মুক্ত দাস’।
গোলামদের পলায়ন দুর্গবাসীদের জন্য ক্ষতির কারণ হ’লেও আত্মসমর্পণের কোন লক্ষণ দেখা গেল না। কেননা তাদের কাছে এক বছরের জন্য খাদ্য ও পানীয় মওজুদ ছিল। উপরন্তু তাদের নিক্ষিপ্ত তীর ও উত্তপ্ত লোহা খন্ডের আঘাতে মুসলমানদের ক্ষতি হ’তে থাকল। এ সময় আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নওফাল বিন মু‘আবিয়া দীলীর (نَوْفَل بن معاوية الدِّيلي) ‘নিকটে পরামর্শ চাইলেন। তিনি তাকে অত্যন্ত সুন্দর পরামর্শ দিয়ে বললেন, هم ثعلب في جحر، إن أقمت عليه أخذته وإن تركته لم يضرك، ‘ওরা গর্তের শিয়াল। যদি আপনি এভাবে দন্ডায়মান থাকেন, তবে ধরে ফেলতে পারবেন। আর যদি ছেড়ে যান, তাহ’লে ওরা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার পরামর্শ গ্রহণ করলেন এবং ওমর (রাঃ)-এর মাধ্যমে পরদিন মক্কায় প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা জারি করে দিলেন। কিন্তু এতে ছাহাবীগণ সন্তুষ্ট হ’তে পারলেন না। তারা বললেন, বিজয় অসমাপ্ত রেখে আমরা কেন ফিরে যাব? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ঠিক আছে। কাল তাহ’লে আবার যুদ্ধ শুরু কর’। ফলে তারা যুদ্ধে গেলেন। কিন্তু কিছু লোক আহত হওয়া ব্যতীত কোন লাভ হ’ল না। এবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, إنا قافلون غداً إن شاء الله ‘আগামীকাল আমরা রওয়ানা হচ্ছি ইনশাআল্লাহ’। এবারে আর কেউ দ্বিরুক্তি না করে খুশী মনে প্রস্ত্ততি নিতে লাগল। এ দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাসতে লাগলেন।
এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলা হ’ল, আপনি বনু ছাক্বীফদের উপরে বদ দো‘আ করুন। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) তাদের হেদায়াতের জন্য দো‘আ করে বললেন, اللَّهُمَّ اهْدِ ثَقِيْفًا وَأْتِ بِهِمْ ‘হে আল্লাহ! তুমি ছাক্বীফদের হেদায়াত কর এবং তাদেরকে নিয়ে এসো’। রাসূল (ছাঃ)-এর দো‘আ কবুল হয়েছিল এবং সেনানায়ক মালেক বিন আওফসহ হাওয়াযেন ও ছাক্বীফ গোত্রের সবাই মুসলমান হয়ে মদীনায় আসে।
উল্লেখ্য যে, এই সেই ত্বায়েফ, যেখানে দশম নববী বর্ষে মক্কা থেকে ৬০ মাইল পায়ে হেটে এসে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছাক্বীফ নেতাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন। বিনিময়ে পেয়েছিলেন তাদের মর্মান্তিক যুলুম ও অবর্ণনীয় দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন। অথচ আজ শক্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি তাদের ক্ষমা করে হেদায়াতের দো‘আ করলেন।
হতাহতের সংখ্যা : ত্বায়েফ যুদ্ধে মুসলিম পক্ষে ১২ জনের অধিক শহীদ হন এবং অনেক সংখ্যক লোক আহত হন। তবে কাফেরদের হতাহতের সংখ্যা জানা যায়নি।
হোনায়েন যুদ্ধের গণীমত বণ্টন :
হোনায়েন যুদ্ধের গণীমত বণ্টন না করেই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ত্বায়েফ গিয়েছিলেন। ইচ্ছাকৃতভাবে এই বিলম্বের কারণ ছিল হাওয়াযেন গোত্রের নেতারা ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে আসলে তাদের বন্দীদের ও তাদের মাল-সম্পদাদি ফেরত দিবেন। কিন্তু এই দীর্ঘ সুযোগ পেয়েও হতভাগাদের কেউ আসলো না। তখন তিনি যুদ্ধজয়ের রীতি অনুযায়ী গণীমত বণ্টন শুরু করলেন।
বণ্টন নীতি :
বণ্টনের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘মুওয়াল্লাফাতুল কুলূব’ অর্থাৎ মক্কার নওমুসলিম কুরায়েশ নেতৃবৃন্দের এবং অন্যান্য গোত্র নেতাদের মুখ বন্ধ করার নীতি অবলম্বন করেন। যাতে তাদের অন্তরে ইসলামের প্রভাব শক্তভাবে বসে যায়। সেমতে তাদেরকেই বড় বড় অংশ দেওয়া হয়। গণীমতের এক পঞ্চমাংশ রেখে বাকী সব বণ্টন করে দেওয়া হয়। বড় বড় নেতাদের মধ্যে আবু সুফিয়ান ইবনু হারবকে ৪০ উক্বিয়া রৌপ্য এবং ১০০ উট দেওয়া হয়। পরে তার দাবী মতে তার দুই পুত্র ইয়াযীদ ও মু‘আবিয়াকে ১০০টি করে উট দেওয়া হয়। হাকীম বিন হেযামকে প্রথমে ১০০টি উট পরে তার দাবী অনুযায়ী আরো ১০০টি দেওয়া হয়। ছাফওয়ান বিন উমাইয়াকে প্রথমে ১০০ পরে ১০০ পরে আরও ১০০ মোট ৩০০ উট দেওয়া হয়। হারেছ বিন কালদাহকে ১০০ উট এবং অন্যান্য কুরায়েশ নেতাকেও একশ একশ করে উট দেওয়া হয়। অন্যদেরকে মর্যাদা অনুযায়ী পঞ্চাশ, চল্লিশ ইত্যাদি সংখ্যায় উট দিতে থাকেন। এমনকি এমন কথা রটে যায় যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) এত বেশী দান করছেন যে, কারু আর অভাব থাকবে না। এর ফলে বেদুঈনরা এসে এমন ভিড় জমালো যে, এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি গাছের কাছে কোনঠাসা হয়ে পড়লেন। যাতে তাঁর গায়ের চাদরটা জড়িয়ে গেল। তখন তিনি বলে উঠলেন أيها الناس، رُدُّوْا عَلَيَّ رِدَائِي ‘হে লোকেরা! চাদরটা আমাকে ফিরিয়ে দাও’। যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, তার কসম করে বলছি, যদি আমার নিকটে তেহামার বৃক্ষরাজি গণীমত হিসাবে থাকত, তাও আমি তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতাম। তখন তোমরা আমাকে কৃপণ, কাপুরুষ বা মিথ্যাবাদী হিসাবে পেতে না’। তারপর স্বীয় উটের দেহ থেকে একটি লোম উঠিয়ে হাতে উঁচু করে ধরে বললেন, أيُّهَا النَّاسُ! وَاللهِ مَا لِى مِنَ الْفَىْءِ شَىْءٌ وَلاَ هَذِهِ إِلاَّ خُمُسٌ وَالْخُمُسُ مَرْدُودٌ فِيكُمْ ‘হে জনগণ! আল্লাহর কসম! ফাই বা গণীমতের কিছুই আমার কাছে আর অবশিষ্ট নেই। এমনকি এই লোমটিও নেই, এক পঞ্চমাংশ ব্যতীত। যা অবশেষে তোমাদের কাছেই ফিরে যাবে’।
এইভাবে নওমুসলিম মুওয়াল্লাফাতুল কুলূবদের দেওয়ার পর বাকী গণীমত ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে বণ্টন করা হয়। যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ)-কে হিসাব করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায় যে, প্রতিজন পদাতিকের মাত্র চারটি উট ও চল্লিশটি বকরী এবং অশ্বারোহীর ১২টি উট ও ১২০টি করে বকরী ভাগে পড়েছে। এই যৎসামান্য গণীমত নিয়েই তাদেরকে খুশী থাকতে হয়।
তৃণভোজী পশুর সম্মুখে এক গোছা ঘাসের অাঁটি ধরলে যেমন সে ছুটে আসে, মানুষের মধ্যে অনুরূপ একদল মানুষ আছে, যাদেরকে দুনিয়ার লোভ দেখিয়েই কাছে টানতে হয়। সদ্য দলে আগত লোকদের ক্ষেত্রে রাসূল (ছাঃ) অনেকের জন্য উক্ত নীতি অবলম্বন করেন কিন্তু ছাহাবায়ে কেরাম তো পরীক্ষিত মানুষ। দুনিয়া তাদের কাছে তুচ্ছ বিষয়। আখেরাত তাদের নিকটে মুখ্য। তাই তাদের ব্যাপারে রাসূলের কোন উদ্বেগ ছিল না।
আনছারগণের বিমর্ষতা ও রাসূল (ছাঃ)-এর ভাষণ :
মক্কার নওমুসলিমদের মধ্যে গণীমতের বৃহদাংশ বণ্টন করে দেওয়ায় আনছারগণের মধ্যে কিছুটা বিমর্ষতা দেখা দেয়। কেউ কেউ বলে বসেন,لَقِيَ وَاللهِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَوْمَهُ ‘আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর কওমের সাথে মিশে গেছেন’। কেউ কেউ বলল, إِذَا كَانَتْ شَدِيْدَةٌ فَنَحْنُ نُدْعَى وَيُعْطَى الْغَنِيْمَةَ غَيْرُنَا ‘যখন কঠিন সময় আসে, তখন আমাদের ডাকা হয়। আর গণীমত দেওয়া হয় অন্যদের’। খাযরাজ নেতা সা‘দ বিন ওবাদাহর মাধ্যমে এ খবর জানতে পেরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দ্রুত তাদের কাছে গমন করেন এবং সমবেত আনছারদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে হামদ ও ছানার পরে বলেন, يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ مَقَالَةٌ بَلَغَتْنِيْ عَنْكُمْ وَجِدَةٌ وَجَدْتُمُوْهَا عَلَيّ فِيْ أَنْفُسِكُمْ ‘হে আনছারগণ! তোমাদের কিছু কথা আমার নিকটে পৌঁছেছে। তোমাদের অন্তরে আমার উপরে কিছু অসন্তুষ্টি দানা বেঁধেছে। أَلَمْ آتِكُمْ ضُلاَلاً فَهَدَاكُمْ اللهُ وَعَالَةً فَأَغْنَاكُمْ اللهُ وَأَعْدَاءً فَأَلّفَ اللهُ بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ؟ ‘আমি কি তোমাদের নিকটে এমন অবস্থায় আসিনি যখন তোমরা পথভ্রষ্ট ছিলে? অতঃপর আল্লাহ তোমাদের সুপথ প্রদর্শন করেন। যখন তোমরা অভাবগ্রস্ত ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের সচ্ছলতা দান করেন? তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মাঝে ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি করে দেন’? তারা বললেন, হাঁ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে আনছারগণ! তোমরা কি জবাব দিবে না? তারা বললেন, আমরা আর কি জবাব দেব হে আল্লাহর রাসূল! এসবই তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগ্রহ। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, দেখ তোমরা ইচ্ছা করলে একথাও বলতে পার এবং সেটা বললে, তোমরা অবশ্য সত্য কথাই বলবে- সেটা এই যে, ‘আপনি আমাদের কাছে এসেছিলেন এমন সময় যখন আপনাকে মিথ্যাবাদী বলা হচ্ছিল, কিন্তু আমরা আপনাকে সত্য বলে জেনেছি। যখন আপনি ছিলেন অপদস্থ, তখন আমরা আপনাকে সাহায্য করেছি। যখন আপনি ছিলেন বিতাড়িত, তখন আমরা আপনাকে আশ্রয় দিয়েছি। যখন আপনি ছিলেন অভাবগ্রস্ত, তখন আমরা আপনার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছি’।
অতঃপর তিনি বলেন, أَوَجَدْتُمْ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ فِيْ أَنْفُسِكُمْ فِيْ لُعَاعَةٍ مِنَ الدُّنْيَا تَأَلّفْت بِهَا قَوْمًا لِيُسْلِمُوْا، وَوَكَلْتُكُمْ إلَى إسْلاَمِكُمْ ‘হে আনছারগণ! দুনিয়ার এক গোছা ঘাসের জন্য তোমরা মনে কষ্ট নিয়েছ, যার মাধ্যমে আমি লোকদের অন্তরে আকর্ষণ সৃষ্টি করতে চেয়েছি, যাতে তারা অনুগত হয়? আর তোমাদেরকে সোপর্দ করেছি তোমাদের ইসলামের উপর (অর্থাৎ তোমাদের জন্য ইসলামই যথেষ্ট)। أَلاَ تَرْضَوْنَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ أَنْ يَذْهَبَ النّاسُ بِالشّاةِ وَالْبَعِيْرِ وَتَرْجِعُوْا بِرَسُوْلِ اللهِ إلَى رِحَالِكُمْ؟ ‘হে আনছারগণ! তোমরা কি চাও না যে, লোকেরা বকরী ও উট নিয়ে চলে যাক, আর তোমরা আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে ফিরে যাও? أَلاَ تَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النّاسُ بِالدُّنْيَا، وَتَذْهَبُوْنَ بِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَحُوْزُوْنَهُ إِلَى بُيُوْتِكُمْ؟ ‘তোমরা কি চাও না যে, লোকেরা দুনিয়া নিয়ে চলে যাক। আর তোমরা আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে চলে যাও ও তাঁকে তোমাদের বাড়ীতে আশ্রয় দাও?’ ‘অতএব সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে রয়েছে মুহাম্মাদের জীবন, যদি হিজরত না থাকত, তাহ’লে আমি হ’তাম আনছারদের মধ্যকার একজন। যদি লোকেরা বিভিন্ন গোত্র বেছে নেয়, তবে আমি আনছারদের গোত্রে প্রবেশ করব’। اللَّهُمَّ ارْحَمْ الْأَنْصَارَ، وَأَبْنَاءَ الْأَنْصَارِ، وَأَبْنَاءَ أَبْنَاءِ الْأَنْصَارِ ‘হে আল্লাহ! তুমি আনছারদের উপরে রহম কর। আনছারদের সন্তানদের উপরে রহম কর এবং তাদের সন্তানগণের সন্তানদের উপরে রহম কর’।
রাসূল (ছাঃ)-এর উক্ত হৃদয়স্পর্শী ভাষণ শুনে কাঁদতে কাঁদতে সকলের দাড়ি ভিজে গেল এবং তারা সবাই বলে উঠল,رَضِيْنَا بِرَسُوْلِ اللهِ قَسْمًا وَحَظًّا ‘আমরা সবাই আল্লাহর রাসূলের ভাগ-বণ্টনে সন্তুষ্ট’।
হাওয়াযেন প্রতিনিধি দলের আগমন ও বন্দীদের ফেরৎ দান :
গণীমত বণ্টন সম্পন্ন হবার পর যোহায়ের বিন ছারদ (زهير بن صرد) -এর নেতৃত্বে হাওয়াযেন গোত্রের ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মুসলমান অবস্থায় আগমন করে। এই দলে রাসূলের দুধ চাচা আবু বুরক্বান (أبو بُرْقَان) ছিলেন। তাঁরা অনুরোধ করলেন যে, অনুগ্রহ পূর্বক তাদের বন্দীদের ও মাল-সম্পদাদি ফেরৎ দেওয়া হৌক’। তাদের কথা-বার্তায় এতই কাকুতি-মিনতি ছিল যে, হৃদয় গলে যায়। তাদের বক্তব্য মতে বন্দীনীদের মধ্যে রাসূলের দুগ্ধ সম্পর্কিত খালা-ফুফুরাও ছিলেন। যাদের বন্দী রাখা ছিল নিতান্ত অবমাননাকর বিষয়।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কার ও অন্যান্য গোত্রের নও মুসলিমদের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, إن معي من ترون،… فأبناؤكم ونساؤكم أحب إليكم أم أموالكم؟ ‘আমার সঙ্গে যারা আছে, তোমরা তো তাদের দেখতেই পাচ্ছ’ (অর্থাৎ মাল-সম্পদ তারা ফেরৎ দিবে না)।… এক্ষণে তোমাদের সন্তানাদি ও নারীগণ তোমাদের নিকটে অধিক প্রিয়, না তোমাদের ধন-সম্পদ’? জবাবে তারা বললেন, ما كنا نعدل بالأحساب شيْئاً ‘আমরা কোন কিছুকেই বংশ মর্যাদার তুলনীয় মনে করি না’। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের বললেন, যোহরের জামা‘আত শেষে তোমরা দাঁড়িয়ে বলবে, إنا نستشفع برسول الله صلى الله عليه وسلم إلى المؤمنين، ونستشفع بالمؤمنين إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم أن يرد إلينا سبينا ‘আমরা রাসূলকে মুমিনদের নিকটে এবং মুমিনদেরকে রাসূলের নিকটে সুফারিশকারী বানাচ্ছি আমাদের বন্দীদেরকে আমাদের নিকটে ফিরিয়ে দেবার জন্য’।
রাসূল (ছাঃ)-এর কথামত তারা যোহরের ছালাত শেষে সকলের উদ্দেশ্যে উক্ত অনুরোধ পেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমার ও বনু আব্দুল মুত্ত্বালিবের অংশে যা আছে, সবই তোমাদের। এক্ষণে আমি তোমাদের জন্য লোকদের নিকটে সওয়াল করছি (سأسأل لكم الناس)। তখন মুহাজির ও আনছারগণ বললেন, আমাদের অংশের সবকিছু আমরা রাসূলকে দিয়ে দিলাম’। এবার আক্বরা বিন হাবিস বললেন, আমার ও বনু তামীমের অংশ দিলাম না’। একইভাবে উওয়ায়না বিন হিছন বললেন, আমার ও বনু ফাযারাহর অংশও নয়’। আববাস বিন মিরদাস বললেন, আমার ও বনু সুলায়েম-এর অংশও নয়’। কিন্তু তার গোত্র বনু সোলায়েম বলে উঠল, না আমাদের অংশের সবটুকু আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দিয়ে দিলাম’। মিরদাস তখন তার গোত্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন, وَهَنْتُمُوْنِيْ ‘তোমরা আমাকে অপদস্থ করলে’?
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘দেখ এই লোকগুলি মুসলমান হয়ে এখানে এসেছে। উক্ত উদ্দেশ্যেই আমি তাদের বন্দী বণ্টনে দেরী করেছিলাম। আমি তাদেরকে এখতিয়ার দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কোন কিছুকেই তাদের বন্দীদের সমতুল্য মনে করেনি। অতএব যার নিকটে বন্দীদের কেউ রয়েছে সন্তুষ্টচিত্তে তাকে ফেরত দিলে সেটাই উত্তম পন্থা হবে। আর যদি কেউ আটকে রাখে, তবে সেটা তার এখতিয়ার। তবে যদি সে ফেরৎ দেয়, তবে আগামীতে অর্জিত প্রথম গণীমতে তাকে একটির বিনিময়ে ছয়টি অংশ দেওয়া হবে’। তখন লোকেরা সমস্বরে বলে উঠলো, قَدْ طَيِّبْنَا ذَلِكَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য সবকিছুই হৃষ্টচিত্তে ফেরত দিতে প্রস্ত্তত আছি’। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা কে কে রাযী ও কে কে রাযী নও, সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। অতএব তোমরা ফিরে যাও এবং তোমাদের দল নেতাদের মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়ে দাও’। তখন সবাই তাদের বন্দী নারী-শিশুদের ফেরত দিল। কেবল বনু ফাযারাহ নেতা উওয়ায়না বিন হিছ্ন বাকী রইল। তার অংশে একজন বৃদ্ধা মহিলা ছিল। পরে তিনি তাকে ফিরিয়ে দেন। এইভাবে ৬,০০০ যুদ্ধ বন্দীর সবাই মুক্তি পেয়ে যায়। মুক্তি দানের সময় প্রত্যেক বন্দীকে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) একটি করে মূল্যবান ক্বিবতী চাদর উপহার স্বরূপ প্রদান করেন। রাসূলের এই উদারনীতি ছিল তৎকালীন সময়ের যুদ্ধনীতিতে একটি ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা।
ওমরাহ পালন ও মদীনায় প্রত্যাবর্তন :
জি‘ইর্রানাহতে গণীমত বণ্টন সম্পন্ন হওয়ার পর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ওমরাহ পালনের জন্য ইহরাম বাঁধলেন। অতঃপর মক্কা গমন করে ওমরাহ পালন করলেন। অতঃপর আত্তাব বিন আসীদকে মক্কার প্রশাসক হিসাবে বহাল রেখে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং ২৪শে যুলক্বা‘দাহ মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন।
হোনায়েন যুদ্ধের গুরুত্ব :
১. এই যুদ্ধে বিজয়ের ফলে আরব বেদুঈনদের বড় ধরনের সকল বিদ্রোহের সম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে যায়। কেননা এই যুদ্ধের পরে ৯ম হিজরীর রজব মাসে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাঁর জীবনের শেষ যুদ্ধে অংশ নেন রোমকদের বিরুদ্ধে তাবুক অভিযানে।
২. এই যুদ্ধে বিজয়ের ফলে দোদুল্যমান অনেক নও মুসলিমের মনে ইসলামের অপরাজেয় শক্তিমত্তা সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে। তারা আর কখনো ইসলামের বিরোধিতা করার চিন্তা করেনি। যেমন মক্কার শায়বা বিন ওছমান, নযর বিন হারেছ প্রমুখ ব্যক্তি হোনায়েন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল সুযোগ মত রাসূলকে হত্যা করার জন্য। যুদ্ধের প্রথমাবস্থায় মুসলমানদের পালানোর হিড়িকের মধ্যে শায়বা রাসূলের নিকটবর্তী হয়েছিল তাঁকে অতর্কিতে হত্যা করার জন্য। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) তাকে কাছে টেনে নিয়ে বুকে হাত দিয়ে দো‘আ করেন, হে আল্লাহ! তুমি এর থেকে শয়তানকে দূর করে দাও’! সাথে সাথে শায়বার মনোভাবের আমূল পরিবর্তন ঘটে ও ইসলামের পক্ষে বীরযোদ্ধা বনে যান। নযর বিন হারেছেরও একই অবস্থা হয়।
৩. এই যুদ্ধে বিজয়ের ফলে মুসলিম শক্তি আরব উপদ্বীপে অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিরূপে পরিগণিত হয়। এমনকি তৎকালীন বিশ্বশক্তি রোমকগণ ব্যতীত মুসলিম শক্তির কোন প্রতিদ্বন্দ্বী রইল না।
শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ :
১. সংখ্যা শক্তি নয়, কেবল ঈমানী শক্তিই ইসলামী বিজয়ের মূল চালিকাশক্তি। একথার অন্যতম বাস্তব প্রমাণ হ’ল হোনায়েন যুদ্ধে বিজয়।
২. শিরকের প্রতি আকর্ষণ যে মানুষের সহজাত শয়তানী প্ররোচনা, সেকথারও প্রমাণ পাওয়া যায় হোনায়েন যাত্রাপথে মুশরিকদের পূজিত কুলগাছ (ذات أنواط) দেখে অনুরূপ একটি পূজার বৃক্ষ নিজেদের জন্য নির্ধারণকল্পে কিছু নও মুসলিমের আবদারের মধ্যে। অথচ শিরকী চেতনার টুটি চেপে ধরে তাওহীদী চেতনার উন্মেষ ঘটানোর মধ্যেই মানবতার সুষ্ঠু বিকাশ ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা সম্ভব।
৩. কেবল তারুণ্যের উচ্ছ্বাস দিয়ে নয় বরং যুদ্ধের জন্য প্রবীণের দূরদর্শিতার মূল্যায়ন অধিক যরূরী। শত্রুপক্ষের প্রবীণ নেতা দুরাইদ বিন ছাম্মাহর পরামর্শ অগ্রাহ্য করে তরুণ সেনাপতি মালেক বিন আওফের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণেই হোনায়েন যুদ্ধে বনু হাওয়াযেন তাদের বিপুল সম্পদরাজি এবং ছয় হাযারের মত নারী-শিশু ও বন্দীদের হারায়। পরে রাসূলের বদান্যতায় নারী-শিশু ও বন্দীগণ মুক্তি পায়।
৪. অহংকার পতনের মূল- একথারও প্রমাণ মিলেছে হোনায়েনের যুদ্ধে। যখন কিছু মুসলিম সৈন্যের মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল, لَنْ نُغْلَبَ الْيَوْمَ ‘আজ আমরা কখনোই পরাজিত হব না’। যুদ্ধের শুরুতেই তাদের পলায়ন দশার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের এই অহংকার চূর্ণ করে দেন।
৫. নেতার প্রতি কেবল আনুগত্য নয়- হৃদয়ের গভীর ভালোবাসা ও আকর্ষণ থাকা প্রয়োজন। নইলে বড় কোন বিজয় লাভ করা সম্ভব নয়। যেমন হোনায়েন বিপর্যয়কালে রাসূলের ও তাঁর চাচা আববাসের আহবান শুনে ছাহাবীগণ গাভীর ডাকে বাছুরের ছুটে আসার ন্যায় লাববায়েক লাববায়েক বলতে বলতে চৌম্বিক গতিতে ছুটে এসেছিলেন।
৬. চূড়ান্ত প্রচেষ্টার পরেই কেবল আল্লাহর সাহায্য নেমে আসে যেমন ছাহাবীগণ যুদ্ধে ফিরে আসার পরেই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) শত্রুপক্ষের দিকে বালু নিক্ষেপ করেন এবং এর পরে তাদের পরাজয়ের ধারা সূচিত হয়।
৭. সর্বাবস্থায় মানবতাকে উচ্চে স্থান দিতে হবে। তাই দেখা যায় যুগের নিয়ম অনুযায়ী বিজিত পক্ষের নারী-শিশু ও বন্দীদের বণ্টন করে দেবার পরেও আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে ফেরৎ দিলেন। এমনকি ছয়গুণ বিনিময় মূল্য দিয়ে অন্যের নিকট থেকে চেয়ে নিয়ে তাদেরকে স্ব স্ব গোত্রে ফেরৎ পাঠালেন। এ ছিল সেযুগের জন্য এক অনন্য সাধারণ ঘটনা। বলা চলে যে, এই উদারতার ফলশ্রুতিতেই বনু হাওয়াযেন ও বনু ছাক্বীফ দ্রুত ইসলাম কবুল করে মদীনায় আসে।
৮. বিজয়ের চাইতে হেদায়াত প্রাপ্তিই সর্বদা মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। সেকারণ আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছাক্বীফ গোত্রের জন্য বদদো‘আ না করে হেদায়াতের দো‘আ করেন এবং আল্লাহর রহমতে তারা সবাই মুসলমান হয়ে যায়।
৯. দুনিয়া পূজারীদের অনুগত করার জন্য তাদেরকে অধিকহারে দুনিয়াবী সুযোগ দেওয়া ক্ষেত্র বিশেষে সিদ্ধ- তার প্রমাণ পাওয়া যায়- আবু সুফিয়ান, হাকীম বিন হেযাম, ছাফওয়ান বিন উমাইয়া প্রমুখকে তাদের চাহিদামত বিপুল গণীমত দেওয়ার মধ্যে। অথচ আখেরাত পিয়াসী আনছার ও মুহাজিরগণকে নামে মাত্র গণীমত প্রদান করা হয়।
১০. আমীর ও মা‘মূর উভয়কে উভয়ের প্রতি নির্লোভ সততা ও নিশ্চিন্ত বিশ্বাস রাখতে হয়। সে সততা ও বিশ্বাসে সামান্য চিড় দেখা দিলেই উভয়কে অগ্রণী হয়ে তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে হয়। যেমন রাসূলের গণীমত বণ্টনে আনছারদের অসন্তুষ্টির খবর তাদের নেতা সা‘দ বিন ওবাদাহর মাধ্যমে জানতে পেরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দ্রুত তাদের কাছে পৌঁছে যান এবং তাদের সন্দেহের নিরসন ঘটান। ফলে অসন্তুষ্টির আগুন মহববতের অশ্রুতে ভিজে নির্মূল হয়ে যায়।