Social Icons

Wednesday, February 28, 2018

নিয়ম মেনে আমন্ত্রণপত্র পাঠালে ব্রাজিলের ভিসা পেতে লাগবে স্বল্প সময় - পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে বর্তমানে এদেশে প্রচুর বিদেশে নাগরিক রয়েছেন । পারমানেন্ট রেসিডেন্ট কার্ড নিয়ে ব্রাজিলে বসবাস করছেন। অনেকেই তাদের পরিবার কে এদেশে আনতে পাঠাচ্ছেন আমন্ত্রণপত্র । কিন্তু এখানেই সমস্যা, ব্রাজিলের ভিসা পেতে পোহাতে হচ্ছে নানান বিড়ম্বনা । ব্রাজিল হাই কমিশন সময় নিচ্ছে ৩ থেকে ১০ মাস ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করতে । ইতি মধ্যে হাজারো অভিযোগ প্রবাসীদের নিজ নিজ দেশের ব্রাজিল হাই কমিশনের বিরুদ্ধে । কিন্তু তদন্তে বেড়িয়ে এলো ভিসা র বিড়ম্বনার জন্য ব্রাজিল হাই কমিশন দায় নন । বরং সমস্যা হচ্ছে নিয়ম না মেনে পাঠাচ্ছেন পারিবারিক আমন্ত্রণপত্র সঙ্গে নেই যথাযত কাগজ পত্র ,তাই সব পেপারস যাচাই করতে লাগছে অতিরিক্ত সময় ।

নিয়ম মেনে আমন্ত্রণপত্র পাঠালে ব্রাজিলের পারিবারিক ভিসা পেতে সময় লাগবে ৩০ থেকে ৪৫ কার্যদিবস । যে সকল প্রবাসী ব্রাজিলের পারমানেন্ট রেসিডেন্ট কার্ড পেয়েছেন তারা তাদের পরিবার কে অবশ্যই আমন্ত্রণপত্র পাঠাতে পারেন । এখন যেনে নিন ব্রাজিলের পারমানেন্ট রেসিডেন্ট কার্ড ধারী নাগরিক এর পরিবার এর আওতায় কে কে রয়েছেন - স্ত্রী / স্বামী ,সন্তান ,বাবা ও মা । পরিবারের এই সদস্যরা ব্রাজিলের স্থায়ী ভিসা পাবেন ।  আরো বিস্তারিত জানতে এই লিংক দেখুন -   http://daca.itamaraty.gov.br/en-us/

নেইমারের অস্ত্রোপচারের খবর ‘ভুয়া’

গত রোববার ফরাসি লিগে মার্সেইয়ের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জেতা ম্যাচের ৭৭তম মিনিটে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল কেড়ে নিতে গিয়ে পায়ে আঘাত পাওয়ার পর মাঠেই কিছুক্ষণ চিকিৎসা নেওয়ার পর স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন নেইমার।
পরে সোমবার রাতে পিএসজি জানায়, ২৬ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়ের ডান পায়ের গোঁড়ালির গাট মচকে গেছে। সঙ্গে ভেঙেছে পঞ্চম মেটাটারসাল।
এরপর মঙ্গলবার কয়েকটি সংবাদমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে জানায়, সমস্যার পুরোপুরি সমাধানে এবং বিশ্বকাপে কোনোরকম ঝুঁকি এড়াতে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেইমার। আর তাতে দুই মাসের মতো ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে মাঠের বাইরে থাকতে হবে। তবে সেসব ভুয়া খবর বলে জানিয়েছেন এমেরি।
বুধবার ঘরের মাঠে ফরাসি কাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে মার্সেইয়ের বিপক্ষে খেলবে পিএসজি।
এই ম্যাচের আগের দিন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এমেরি বলেন, ”নেইমার অস্ত্রোপচার করাবে না। এটা সত্যি নয়। ”
নেইমারকে কতদিন মাঠের বাইরে থাকতে হবে সে বিষয়ে অবশ্য কিছু জানাননি কোচ।
আগামী ৬ মার্চ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে মাঠে নামবে পিএসজি। ওই ম্যাচে অবশ্য তার খেলার সম্ভাবনা কম।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে প্রথম লেগে ৩-১ গোলে হেরেছিল পিএসজি। ফলে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠতে ফিরতি পর্বে কমপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জিততে হবে প্যারিসের ক্লাবটিকে।

ব্রাজিলের পাসপোর্টে পশ্চিমের ভিসার আবেদন করেছেন কিম!

উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন এবং তার প্রয়াত বাবা কিম জং ইল পশ্চিমা বিশ্ব ভ্রমণের ক্ষেত্রে ব্রাজিলের পাসপোর্ট ব্যবহার করে আবেদন করেছিলেন। ১৯৯০ সালে তারা এ কাজ করেছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে পশ্চিমা বিশ্বের এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর অন্তত পাঁচজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন।
পশ্চিমাবিশ্বের দেশগুলোতে ভ্রমণের ব্যাপারে ব্রাজিলের পাসপোর্ট ব্যবহার করে যে আবেদন করা হয়েছিল, তার একটি ফটোকপি
 রয়টার্সের কাছে পৌঁছেছে। সেখানে দেখা গেছে, কিম জং উনের ছবি লাগানো রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, ভিসার জন্য ব্রাজিলের এই পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন কিম জং উন এবং তার বাবা। ছবিতে স্পষ্টভাবে তাদের চেনা যাচ্ছে।
তবে ব্রাজিলে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। অন্যদিকে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

অস্ত্র তৈরির জন্য ইরান কারো অনুমতি নেবে না: রুহানি


আন্তর্জাতিক মহলকে উত্তাপ ছড়িয়ে নিজেদের সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো। ভয়ঙ্করসব মহড়ার পাশাপাশি চলছে বাকযুদ্ধ। আর তারই জের ধরে এবার ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বললেন, ক্ষেপণাস্ত্রসহ প্রতিরক্ষা ও সামরিক সরঞ্জাম তৈরির জন্য আমরা কারো অনুমতি নেব না। শুধু তাই নয়, এই বিষয়ে কারো সঙ্গে কোনো আলোচনাও করব না। ইরানের দক্ষিণে এক সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
ড. রুহানি নিরাপত্তা ইস্যুতে বলেন, এই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য বাইরের কোনো দেশ ও শক্তির প্রয়োজন নেই। ইরান এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার সাম্প্রতিক নানা তৎপরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইরানের ক্ষতি করতে গিয়ে আমেরিকা নিজেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এবং ইউরোপসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ আমেরিকার এসব তৎপরতার নিন্দা জানিয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার অবস্থানের প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, আমেরিকা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইয়েমেন ইস্যুতে ইরানের নিন্দা জানাতে চেয়েছিল, কিন্তু আবারও তারাই ব্যর্থ হয়েছে। 
তিনি আরও বলেন, কোনো দেশ বা ব্যক্তি যদি ইয়েমেনের জনগণের কল্যাণ চিন্তা করতে চায় তাহলে তাদের উচিত হবে সৌদি আরবকে ধ্বংসাত্মক বোমা দেওয়া বন্ধ করা। একইসঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে থাকা দরিদ্র মানুষগুলোর কাছে ওষুধ ও খাদ্য সরবরাহের অনুমতি দিতে সৌদি আরবের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।

মালিতে বোমা বিস্ফোরণে ৪ বাংলাদেশি সেনা নিহত


মালির দোয়েঞ্জা নামক স্থানে ভয়াবহ ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণে চার বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। তবে মালিতে নিয়োজিত অন্যান্য বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীগণ নিরাপদ আছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
নিহতরা হলেন- ওয়ারেন্ট অফিসার আবুল কালাম, পিরোজপুর (৩৭ এডি রেজিঃ আর্টিঃ), ল্যান্স কর্পোরাল আকতার, ময়মনসিংহ (৯ ফিল্ড রেজিঃ আর্টিঃ), সৈনিক রায়হান, পাবনা (৩২ ইবি) এবং সৈনিক (পাচক) জামাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ (৩২ ইবি)।
জানা গেছে, বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে উত্তর মালিতে মাইন বিস্ফোরণের ফলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। সে সময় বাংলাদেশি এই সৈন্যরা মালির মোপটি প্রদেশের বোনি ও দোয়েঞ্জা শহরের মধ্যবর্তী একটি সড়কে টহলরত ছিলো। তাদের বহনকারী গাড়িটি ভয়াবহ এ বিস্ফোরণের শিকার হয়।

খাবার পেতে ‘যৌনতায় বাধ্য’ হচ্ছে সিরীয় নারীরা


ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে ‘পূর্ণিমা-চাঁদ’ও ‘ঝলসানো রুটি’র মতো লাগে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার উপমা যেন এখন পুরো সিরিয়ায় নির্মম বাস্তব হয়ে উঠেছে। ক্ষুধার্ত নারীরা নিজের জন্য, সন্তানের জন্য, পরিবারের অন্যদের জন্য খাবার পেতে ‘যেকোনো শর্তে’ নিজেদের সঁপে দিচ্ছেন। এই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের ‘যৌনতায়’ বাধ্য করছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থার নিয়োজিত ত্রাণকর্মীরা। 


নারীদের ওপর নিপীড়নের বিষয়ে বছর তিনেক আগে সতর্ক করা সত্ত্বেও নতুন প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, সিরিয়ার অসহায় নারীদের ওপর নির্যাতন চলছেই। খাবারসহ ত্রাণ সামগ্রীর বিনিময়ে নারীদের যৌন কাজে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকি কোনো নারী প্রাণ বাঁচাতে কোনো দিকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য ত্রাণদাতা সংস্থাগুলোর গাড়িতে উঠতে চাইলেও ‘যৌনতা’ আদায় করে নিচ্ছে ‘মানবিক সংস্থাগুলোর’ ‘অমানবিক কর্মীরা।

জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এর নতুন প্রতিবেদনে সিরীয় নারীদের প্রতি এ হিংস্রতার তথ্য ‍উঠে আসার পর বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। ঘৌতা শহরে সিরিয়া ও রাশিয়ার যৌথ বাহিনীর বিমান হামলায় যে মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে, সেটিকে বিশ্ব দরবারে আরও জোরদারভাবে তুলে ধরছে এই প্রতিবেদন।


‘ভয়েসেস ফ্রম সিরিয়া-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, খাবার পেতে নারী ও বালিকারা ‘যৌন সেবা’ দিতে ‘ত্রাণকর্মীদের’ সঙ্গে অল্প কিছু সময়ের জন্য বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছেন। কোথাও বিতরণকারীরা ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার নামে নারী ও কন্যা শিশুদের ফোন নাম্বার নিয়েছেন। তাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে ‘কিছু না কিছু’ আদায় করে ছাড়ছেন। অনেক নারীকে ত্রাণ দেওয়ার বিনিময়ে তার সঙ্গে বাড়ি যাওয়া, বিতরণকারীদের সঙ্গে একটা রাত কাটানোর মতো ঘটনাও ঘটছে। 
যদিও জাতিসংঘ ও দাতব্য সংস্থাগুলো দাবি করছে ‘যৌন নিপীড়নের’ বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ‘শূন্য সহনশীলতা’র পর্যায়ে। যদি আঞ্চলিক অংশীদার সংগঠনগুলোর কেউ এ ধরনের নিপীড়নে যুক্ত হয়েও যায়, তবে এসব বিষয়ে তারা অবগত নয়।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো তৃতীয় পক্ষের ভাড়া করা লোকজনের মাধ্যমে বিপর্যয়স্থলে ত্রাণ বিতরণ করে

অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি ৬ নারীর একজন যৌন হয়রানির শিকার

অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি ছয় নারীর একজনকে সঙ্গীর হাতে শারীরিক বা যৌন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ারের (এআইএইচডব্লিউ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অন্যদিকে, প্রতি ১৬ পুরুষের একজন তাদের স্ত্রী বা সঙ্গীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। খবর সিনহুয়ার।
পারিবারিক ও যৌন নির্যাতনের বিষয়ে বুধবার অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার (এআইএইচডব্লিউ) প্রকাশিত এ যাবৎকালের বিশদ এই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির প্রতি ছয় নারীর একজনকে শারীরিক বা যৌন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় এই প্রথমবারের মতো এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো।
পারিবারিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রতি চারজনের তিনজনই পুরুষের হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এক্ষেত্রে গড়ে প্রতি সপ্তাহে একজন নারী ও প্রতি মাসে একজন পুরুষ তাদের বর্তমান বা সাবেক সঙ্গীর হাতে প্রাণ হারাচ্ছেন। যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নারীদের মধ্যে ৯৬ শতাংশই বলেছেন, তারা পুরুষ সঙ্গীর দ্বারাই নির্যাতিত হয়েছেন। 
এআইএইচডব্লিউ’র মুখপাত্র লুইস ইয়র্ক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘নারীরা তাদের বাড়িতে ও আপনজনের হাতেই বেশি নির্যাতিত হন।  অপরদিকে পুরুষরা সাধারণত ঘরের বাইরে এবং অনাত্মীয়দের মাধ্যমেই নির্যাতিত হয়ে থাকে। 

যুক্তরাজ্যে অবৈধ বাংলাদেশি নিয়োগে সুনাম হারাচ্ছে রেস্টুরেন্টে ব্যবসা

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। তবে বর্তমান অবস্থায় এ ব্যবসায় দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। তার মধ্যে অন্যতম অবৈধ বাংলাদেশি নিয়োগ। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলোতে অল্প টাকায় অবৈধ প্রবাসীদের কাজের সুযোগ দিচ্ছে রেস্টুরেন্টগুলোতে। এতে দিনদিন নিজেদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে বর্হিবিশ্বে।
গত ২ ও ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে অবৈধভাবে নিয়োগকৃত বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানের সময় অবৈধভাবে বসবাসকারী পাঁচ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের নেট অঞ্চলের দু’টি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে দেশটির অভিবাসন তদারককারী কর্মকর্তারা। আটককৃত সবাই ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেখানে অবস্থান করছিলেন।
তদারককারী প্রধান কর্মকর্তা রিচার্ড লেডারলে জানিয়েছে, নেট অঞ্চলের ফাভারসামের প্রিন্স অব ইন্ডিয়া রেস্টুরেন্ট ও সোয়ানসকোম্বির আকাশ তান্দুরি বালতি নামে দু’টি রেস্টুরেন্টে এই অভিযান চালানো হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রিন্স অব ইন্ডিয়া রেস্টুরেন্ট অভিযান চালিয়ে তিন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ২৭ বছর বয়সী দুই জন স্টুডেন্ট ভিসা ও ৩২ বছর বয়সী একজন ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছিলেন। তবে তাদের সবারই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে ৫ ফেব্রুয়ারি আকাশ তান্দুরি হোটেলে অভিযান চালায় অভিবাসন কর্মকর্তারা। সেখানে অনুমতি না থাকার পরও নিয়োগ দেওয়ায় দুই বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। আকটকৃতদের অবৈধ অভিবাসন বিষয়ক একটি কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তবে প্রিন্স অব ইন্ডিয়ার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালিক দাবি করেন, আটককৃতদের নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখনও তাদের কাগজপত্র যথাযথভাবে যাচাই করা যায়নি। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা কখনোই অবৈধ কর্মচারীদের নিয়োগ দেই না। কারণ, আমরা জানি অবৈধ শ্রমিকদের নিয়োগ দিলে জরিমানা গুনতে হবে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যে কাজ করার অনুমতি না থাকা কোনও ব্যক্তিকে চেনার পরও নিয়োগ দেওয়া হলে নিয়োগকর্তাদের জেল-জরিমানা করার বিধান রয়েছে। এবিষয়টি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা মেনে চলে কর্মী নিয়োগ দিবে এটাই সকল যুক্তরাজ্যে প্রবাসীদের দাবী।

লাটভিয়া থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

বাল্টিক সাগরের পূর্ব তীরে লিথুনিয়া ও এস্তোনিয়ার মধ্যবর্তী ছোট্ট দেশ লাটভিয়া।উচ্চশিক্ষায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছুটে চলা বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদের বড় একটি অংশ দেশটিতে আসলেও, পরবর্তীতে ইউরোপের বিভিন্ন  দেশে পালিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করছে, ফলে সেসব দেশে অবৈধ হয়ে দিন কাটাচ্ছে।অথচ ২/৩বছর পড়াশুনা করেই ইউরোপের যেকোন দেশে বৈধ ও স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারে এসব শিক্ষার্থীরা ।কিন্তু সেপথ অনুসরণ না করে তাড়াহুড়া করে উচ্চশিক্ষার গন্ডি না পেরোতেই অনেকেই চলে যাচ্ছে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে। যার কারণে একদিকে যেমন বাংলাদেশের প্রতি বিরুপ ধারণা হচ্ছে, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যত থাকলেও সেপথ তারা নষ্ট করে দিচ্ছে।এমনটি জানিয়েছেন লাটভিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তারেক আহম্মদ। যিনি সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে লাটভিটার ‘একা ইউনিভার্সিটি’র ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়াশুনা করেছেন। পাশাপাশি কনসালটেন্সি খুলে দেশটিতে শিক্ষার্থী নিয়ে যাচ্ছেন এই তরুণ।ভয়েস বাংলার সাথে কথা হলে জানান, সেখানকার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এমন কার্যকলাপের কথা।
তিনি জানান, ‘লাটভিয়ায় আগে যেসব শিক্ষার্থীরা এসেছে তাদের অনেকেই ইউরোপের অন্যান্য দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার আশায় পালিয়ে গেছে। ফলে, বাংলাদেশিদের সম্পর্কে ইউরোপিয়ানদের মধ্যে বিরুপ ধারণা দিন দিন বাড়ছে।আর এ কারণে বাংলাদেশ থেকে আগে শিক্ষার্থী আনলেও এখন তিনি শ্রীলংকা কিংবা ভারতীয় শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যকোন দেশের শিক্ষার্থী আনেন না।কারণ এ দু’দেশের শিক্ষার্থীদের পালিয়ে যাওয়ার মনোভাব খুবই কম’। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে পরামর্শের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘যদি তারা দেশটিতে উচ্চশিক্ষা পুরোপুরি শেষ না করে, তাহলে যেন দেশটিতে প্রবেশ না করে। আর যদি কেউ আসে তাহলে বলবো পড়াশুনা শেষ করলে জব ভিসা নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভালো চাকুরি বা স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারবে এবং ভালো ভবিষ্যৎ গড়ার পাশাপাশি বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারবে’।

Tuesday, February 27, 2018

যে কারণে পরিণতি পায়নি মিঠুন-শ্রীদেবীর প্রেমের সম্পর্ক!

বলিউডের আশির দশকের জনপ্রিয় জুটি মিঠুন-শ্রীদেবী। রুপালি পর্দা কাঁপানো এ জুটি একের পর এক দর্শক প্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন ভক্তদের। এমনকি রিল লাইফের প্রেমের সম্পর্কের মতোই তাদের মধ্যে গড়ে উঠে রিয়েল লাইফের প্রেম-ভালবাসা। গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল গোপনে শ্রীদেবীকে বিয়ে করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী। কিন্তু দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্ক ভেস্তে যায় হঠাৎ করেই পরিণতি পায়নি তাদের প্রেম-ভালবাসা।
শ্রীদেবী ও মিঠুনের প্রেমের সূত্রপাত ‘জাগ উঠা ইনসান’ সিনেমার মাধ্যমে। রাকেশ রোশান পরিচালিত ১৯৮৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমায় প্রধান তিনটি ভূমিকায় ছিলেন শ্রীদেবী, মিঠুন চক্রবর্তী এবং রাকেশ রোশান।
অসাধারণ প্রেম কাহিনির এই সিনেমাটি সমালোচকদের প্রশংসা তো বটেই, বিপুল বাণিজ্যিক সাফল্যও পেয়েছিল। এই সিনেমার সেটেই সূচনা হয় আরেক প্রেম কাহিনির। শ্রীদেবী-মিঠুনের এই প্রেম বলিউডের অন্যতম সাড়া জাগানো রোমান্স উপাখ্যান। আশির দশকে সিনেমা ম্যাগাজিনগুলো সরগরম ছিল এই গুঞ্জনে। ১৯৮৪ সালে শ্রীদেবীর সঙ্গে যখন মিঠুনের প্রেম জমে ওঠে তখন এ অভিনেতার দাম্পত্য জীবন দুজনের প্রেমে পাহাড়সম বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
আবার এ দুজনের প্রেমের দৃশ্যপটে বনি কাপুরের আবির্ভাব ঘটে অনেকটা খলনায়কের ভূমিকায়। ১৯৮৪ সালেই ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ সিনেমার প্রযোজক বনি কাপুরের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে শ্রীদেবীর। অসাধারণ সুন্দরী ও দুর্দান্ত অভিনেত্রী শ্রীদেবীর প্রতি আকৃষ্ট হন বিবাহিত বনি কাপুর। কিন্তু মিঠুনের প্রেমে মগ্ন থাকায় বনি কাপুরের আহ্বানে তখন সাড়া দেননি শ্রীদেবী। বনি কাপুরও নানাভাবে শ্রীদেবীর মন যোগাতে ব্যস্ত হন। বনি কাপুরের প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে একের পর এক শ্রীদেবীর সিনেমা মুক্তি পেতে থাকে। কিন্তু শ্রীদেবী মিঠুনের সঙ্গেই সম্পর্ক ধরে রাখেন।
শ্রীদেবী চেয়েছিলেন মিঠুন তার স্ত্রী যোগিতা বালিকে ত্যাগ করে তাকে বিয়ে করুক। কিন্তু শ্রীদেবীকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসলেও মিঠুনের পক্ষে যোগিতা বালিকে ত্যাগ করা সম্ভব হয়নি। কারণ যোগিতা তার সন্তানের মা এবং দুঃসময়ের সহযাত্রী। এই অভিমান থেকেই জন্ম নেয় বিরোধ। আশির দশকের শেষে ১৯৮৯ সালে তাদের সর্বশেষ সিনেমা ‘গুরু’ মুক্তি পায়। এরপরই মিঠুন-শ্রীদেবীর প্রেমে ভাঙনের সুর বাজে। দুজনের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পেছনে একদিকে যেমন রয়েছে শ্রীদেবীর প্রতি বনি কাপুরের আগ্রহ, অন্যদিকে রয়েছে যোগিতা বালির হস্তক্ষেপ। সংসার বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন যোগিতা বালি। তিনি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। এই চেষ্টার পরই শ্রীদেবীর সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকিয়ে বাধ্য স্বামীর মতো ঘরে ফেরেন মিঠুন। আর বনি কাপুরকে নিয়ে নিজস্ব সংসার গড়ার স্বপ্নে মেতে ওঠেন শ্রীদেবী।

পাতানো বোনকে দেড় বছর ধরে ধর্ষণ, অতঃপর...

‘অনাথ’ কিশোরীকে বোন পাতিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে৷ভারতের পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা থানার গাঙ্গুটিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে অভিযুক্তকে আটক করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ৷এদিকে ওই কিশোরীকে মেডিক্যাল টেস্টের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷
পুলিশ জানিয়েছে, আটক যুবকের নাম রামচন্দ্র দাস (৩৫)৷ গ্রামেরই এক কিশোরীর বাবা মারা যাওয়ার পর মা-ও তাকে ছেড়ে চলে যায়৷ ওই কিশোরীকে সে বোন পাতিয়ে নিজের কাছে আশ্রয় দিয়েছিল৷ রামচন্দ্র কীর্তন গেয়ে দিনযাপন করে৷ ওই কিশোরীকেও সে কীর্তনের আসরে নিয়ে যেত এবং গান গাওয়াতো৷
কিশোরীর অভিযোগ, প্রথমে ভালো ব্যবহার করলেও শেষ দেড় বছর ধরে নিয়মিত তাঁকে ধর্ষণ করত রামচন্দ্র৷ কাউকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়৷ এমনকী কীর্তনের আসর ছাড়া অন্য সময় তাকে বাড়ির বাইরেও বেড়াতে যেতে দেওয়া হত না৷
এদিকে দিনের পর দিন অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকায় কিশোরীটি অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে৷ ভয় কাটিয়ে সোমবার গ্রামবাসীদের সে পুরো ঘটনা জানায়৷ এরপরই লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্তকে আটক করে৷ দেড় বছর ধরে টানা ধর্ষণের শিকার হয়েও কিশোরীটি কেন এতদিন তা সামনে আনেনি, এই বিষয়টিও অবশ্য খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘টানা দেড় বছর তো কারও ইচ্ছের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ধর্ষণ করা যায় না৷ নিশ্চয় দু’পক্ষেরই সম্মতি ছিল৷ হতে পারে, ধোঁকা খেয়েই এতদিন পর ওই কিশোরী মুখ খুলল৷ তদন্তে সবদিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷’ এদিকে অভিযুক্তকে জেরা করেও এবিষয়ে তথ্য পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা৷
সূত্র: কলকাতা টোয়েন্টিফোর সেভেন

২৯ বার সার্জারি করিয়েছিলেন শ্রীদেবী!


বয়স ধরে রাখতে মরিয়া ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী শ্রীদেবী।  বলিউডের চিরসবুজ নায়িকার মৃত্যুর কারণ এখনো স্পষ্ট নয়।  প্রথমে 'হৃদরোগে মারা গেছে' এমনটা দাবি করা হলেও ময়নাতদন্তে দেখা গেছে পানিতে ডুবে দম বন্ধ হয়ে মারা গেছেন তিনি।  এ নিয়ে তার স্বামী বনি কাপুরকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে দুবাই পুলিশ।

                                                ঠোঁটে সার্জারির পর
অনেকে 'সার্জারি আসক্তি'কেই শ্রীদেবীর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।  বয়স ৫৪ হলেও তাকে তরুণীই মনে হতো।  তিনি জীবিত অবস্থাতেই 'একাধিকবার প্লাস্টিক সার্জারি' করেছেন এমন অভিযোগও উঠেছিল।  কিন্তু শ্রীদেবী এসব 'মিথ্যা' বলে মন্তব্য করেছেন। 
                                                             সপরিবারে
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, ৫৪ বছরের জীবনে মোট ২৯ বার সার্জারি করেছেন শ্রীদেবী।  সর্বশেষ ঠোঁট মোটা করার জন্য সার্জারি করেন তিনি।  শুধু শ্রীদেবীই নন, তার মেয়েরাও 'সুন্দরী' হওয়ার জন্য সার্জারি করেছেন বলেও খবর বেরিয়েছে।  

আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।


আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম বুয়েনোস আইরেস।
 

ভৌগোলিক অবস্থান: ৩৪°২০ দক্ষিণ ৫৮°৩০ পশ্চিম। উত্তরের নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে দক্ষিণের মেরু-উপদেশীয় অঞ্চল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার বিস্তার। এর পূর্ব দিকে আটলান্টিক মহাসাগর, উরুগুয়ে এবং ব্রাজিল। উত্তরে প্যারাগুয়ে এবং বলিভিয়া। পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে রয়েছে অন্দিজ পর্বতমালা। এই পর্বতমালার অপর প্রান্তে রয়েছে চিলি।

আয়তন: আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ আমেরিকা দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম রাষ্ট্র। মোট আয়তন ২,৭৮০,৪০০ বর্গকিমি (৮তম)
১,৭২৭,৬৬০ বর্গমাইল।

১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই জুলাই দেশটি স্পেনের শাসনাধীন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভের জন্য স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দে স্পেন এই দাবি মেনে নিলে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে।

জনসংখ্যা: ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের অনুমানিক হিসাব: ৩,৯,৯,২১,৮৩৩ । ২০০০১ খ্রিষ্টাব্দের আদমশুমারি মতে জনসংখ্যা ছিল ৩৬,২৬০,১৩০ জন। আর্জেন্টিনার বেশির ভাগ লোক দেশটির মধ্যভাগে অবস্থিত বিশাল উর্বর প্রেইরি সমভূমির (যার নাম পাম্পাস) শহরগুলিতে বাস করেন।

ভাষা: স্প্যানিশ উপনিবেশের সূত্রে এই অঞ্চলের আদি ভাষাগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেয়েছে। বর্তমানে আর্জেন্টিনারা রাষ্ট্রভাষা স্প্যানিশ।



২০১৭ সালে ব্রাজিলে ভুট্টার মজুদ কমেছে ৯%

ভুট্টা উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় ব্রাজিলের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে বিপুল পরিমাণ ভুট্টা রফতানি হয়। খাদ্যপণ্যটির রফতানিকারকদের তালিকায় দেশটি দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ২০১৭ সাল শেষে দেশটিতে ভুট্টার সমাপনী মজুদ আগের বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ কমেছে। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের (এফএএস) প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর বিজনেস রেকর্ডার।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ব্রাজিলে ভুট্টার সমাপনী মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ ১৯ হাজার টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম। ২০১৬ সাল শেষে দেশটিতে ভুট্টার মজুদ ছিল ১ কোটি ১৭ লাখ ১৯ হাজার টন। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে খাদ্যপণ্যটির মজুদ কমেছে ১১ লাখ টন।
এর আগে ২০১৩ সালে ভুট্টার মজুদ ব্রাজিলের ইতিহাসে সর্বোচ্চে পৌঁছেছিল। এ সময় দেশটিতে খাদ্যপণ্যটির মজুদ ১ কোটি ৩৯ লাখ ৭২ হাজার টনে দাঁড়িয়েছিল বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইউএসডিএ।


স্বাদের কুমড়ো ফুলের বড়া

নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় একাধিক পদ রান্না করা বেশ কঠিন। তাই মাঝে মাঝে পরিবারের সদস্যদের চমকে দেয়ার জন্য দিনের যেকোনো সময়েই ভেজে ফেলুন মচমচে কুমড়ো ফুল ভাজা। কোনোরকম ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই অল্প সময়ে তৈরি করে ফেলুন এ মজাদার খাবারটি।
কি কি লাগবে
১০টি কুমড়ো ফুল৪ চামচ চালের গুঁড়া৪ চামচ বেসন১টা ডিম১টা মাঝারি আকারের পেঁয়াজকুচি১ চামচ ধনেপাতাকুচি২-৩টি কাঁচামরিচকুচি১ চামচ হলুদগুঁড়া১ চামচ লবণতেল ও পানি পরিমাণমতো।
কীভাবে বানাবেন
একটি পাত্রে চালের গুঁড়াবেসন ও ডিম দিয়ে ভালোভাবে ফেটে নিন। এরপর সামান্য তরল মিশ্রণের জন্য প্রয়োজনমতো পানির পাশাপাশি এর মধ্যে পেঁয়াজকুচিকাঁচামরিচহলুদগুঁড়াধনেপাতা ও লবণ দিয়ে নাড়ুন। সব উপকরণ একসঙ্গে ভালোভাবে মিশে গেলে আধাঘণ্টা রাখুন।
এবার প্যানে তেল গরম করুন। তেল গরম হয়ে গেলে মিশ্রণের মধ্যে কুমড়ো ফুল ডুবিয়ে তা একে একে তেলে ছাড়তে থাকুন। হালকা বাদামি না হওয়া পর্যন্ত এপিঠ-ওপিঠ করে ফুলগুলো ভাজতে থাকুন।
ব্যাসতৈরি হয়ে গেল কুমড়ো ফুলের বড়া। গরম গরম ভাতের সঙ্গে অথবা বিকেলবেলার নাস্তা হিসেবে মচমচে বড়া পরিবেশন করুন।
বিভিন্নভাবে রান্না করা ছাড়াও কুমড়োর স্যুপ তৈরি করা যায়। এর ভর্তাও খেতে পারেন। কুমড়োতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এসিবি-কমপ্লেক্সম্যাগনেশিয়ামপটাশিয়ামবিটা ক্যারোটিন রয়েছে। এটি স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো।

ঈশ্বরকে ভালোবেসে বদলে গেলেন পর্নো তারকা

ব্রিটনি ডে লা মোরাকে পর্নোজগতে সবাই চিনতেন জেনা প্রিসলি নামে। নারী পর্নো তারকাদের মধ্যে তিনি সবসময় শীর্ষ বারোতে ছিলেন। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার এক যাজককে বিয়ে করে নিজের ক্যারিয়ারের ইতি ঘটিয়েছেন।
২০১২ সালে তিনি তরুণ যাজকদের নেতৃত্ব দেয়া শুরু করেন। তিনি মানুষকে জানাতে চাচ্ছেন- পৃথিবীতে ঈশ্বর বলতে একজন আছেন, যিনি সবাইকে ভালোবাসেন। সে যে-ই হোক না কেন; কেউ তার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত নন।-খবর স্পুটনিকের।
একসময়ে এই শীর্ষ পর্নো তারকা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন এবং বিষণ্নতায় ভুগতে শুরু করেন। যৌন পেশায় জড়িত হওয়ার পর একবার তিনি আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন। নিজেই নিজের হাতের কব্জি কাটতে শুরু করলে হঠাৎ একটি কণ্ঠ শুনতে পান, আপনি বাতি বন্ধ করে কাঁচিটা নিচে রেখে দেন।
কেন পর্নোজগতকে বিদায় জানিয়েছেন ব্রিটনি ডে লা মোরা? সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই কথা বলেন।
তিনি বলেন, ঈশ্বরের ভালোবাসা ও দয়া আমার হৃদয় জয় করেছে। তার দয়ায় আমি অনুতপ্ত হয়েছি। ঈশ্বর যে আমাকে পেছনের সবকিছু একসঙ্গে ছাড়তে বলেছেন, কখনই তা নয়। ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক যতই গভীর হয়েছে, ততই আমি যে পাপের ভেতরে ডুবেছিলাম, তা ছাড়তে পেরেছি।
সাবেক এই পর্নো তারকা বলেন, কেউ যদি ঈশ্বরের আলোয় আলোকিত হন, তবে তিনি অবশ্যই তার মনের বাসনা পূরণ করবেন। আমি ঈশ্বরের জন্য যত সময় দিয়েছি, ততই আমার মনের বাসনা পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, একসময় আমি ধূমপান, মাদক, পাপাচার ও উত্তেজনাকর পোশাক পরেছিলাম, তাও ছেড়ে দিতে পেরেছি। আস্তে আস্তে আমি এসব ছাড়তে সক্ষম হয়েছি।

আইনজীবীদের ভুলেই খালেদা জিয়া কারাগারে

আইনজীবীদের ভুলের কারণেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ কারাগারে রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় বিচার সমন্বয় কমিটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের এখতিয়ার বিচার বিভাগের।
আইনমন্ত্রী বলেন, দেশে মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যা কম। ৩৩ লাখ মামলার জট আছে, বিচারসংক্রান্ত সকল প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় নেই বলেই এটি হয়েছে।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন কার্যকরভাবে কাজ করলে মামলাজট কমবে বলে মন্তব্য করে আনিসুল হক জানান, কমিটি হবে বিচারসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে ওয়ানস্টপ সার্ভিস।
ঔপনিবেশিক কারাবিধি দিয়ে বন্দিদের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১২৪ বছর আগের কারাবিধি এখনো বহাল আছে। এটা সংশোধনের প্রয়োজন। চলতি বছর কারাবিধি সংশোধন হবে জানান আইনমন্ত্রী।

সিরিয়ায় মানবিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা পুতিনের

সিরিয়ায় মানবিক যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি সিরিয়ার পূর্ব গৌতায় দিনে ৫ ঘণ্টা মানবিক যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দিয়েছেন। 
 
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশের কথা জানিয়ে বলেন, প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চলবে। 
 
সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও হামলা বন্ধ হয়নি যা নিয়ে সমালোচনা চলছে। জাতিসংঘও যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহবান জানিয়ে আসছে। 

সিএনএন

শ্রীদেবীর মৃত্যুরহস্য ঘনীভূত, বনি কাপুরের পাসপোর্ট জব্দ


একটা মৃত্যু, কিন্তু একাধিক প্রশ্ন। সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে শুধু রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। শ্রীদেবী মারা গিয়েছেন গত শনিবার রাতে। প্রথমে জানা গিয়েছিল, হার্ট অ্যাটাকে। কিন্তু দু’দিন পর সোমবার বিকালে দুবাই পুলিশ জানাল, বাথটাবের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে শ্রীদেবীর।
 
দুবাইয়ের জুমেইরাহ এমিরেটস টাওয়ার্স বাথরুমের সামান্য উচ্চতার একটা বাথটাব। পানি ভরলেও উচ্চতা দেড় ফুটের বেশি হবে না। তাতে কী করে ডুবে গেলেন পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতার ওই অভিনেত্রী। অনেকের মনেই প্রশ্নটা ঘুরছে।
 
দুবাই পুলিশ জানিয়েছে, সঙ্গাহীন অবস্থায় পানিতে ডুবে গিয়েছিলেন শ্রীদেবী। কিন্তু অচেতন হলেন কী ভাবে? সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে গত দু’দিন ধরে বলা ‘হার্ট অ্যাটাক’ শব্দটাও উধাও হয়ে গিয়েছে এ দিনের আলোচনা থেকে। তা হলে কি হার্ট অ্যাটাক হয়নি? জবাব মিলছে না। কারণ, দুবাই পুলিশ বা সে দেশের মিডিয়া সেন্টার এ দিন যে তথ্য দিয়েছে, সেখানে হার্ট অ্যাটাকের কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে অচেতন হয়েই পানিতে ডুবে যাওয়ার কথা।
 
প্রশ্ন তৈরী রয়েছে শ্রীদেবীর স্বামী বনি কপূরের ভূমিকা নিয়েও। কারণ, দুবাইয়ের ‘খালিজ টাইমস’ প্রথমে জানিয়েছিল, বনি সেই সময় হোটেলে শ্রীদেবীর ঘরে ছিলেন। শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তিনি মুম্বাই থেকে দুবাই পৌঁছান। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি শ্রীদেবীর হোটেলেই পৌঁছেছিলেন তিনি। স্ত্রীর সঙ্গে মিনিট ১৫ আড্ডা দেওয়ার পর ডিনারের প্রস্তাব দেন। আর তাতে রাজি হয়ে যান শ্রীদেবী। ডিনারে যাবেন বলে তৈরি হতে গিয়েছিলেন বাথরুমে। কিন্তু, অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি বেরিয়ে আসেননি। তখন বনি বাথরুমের দরজা ভেঙে স্ত্রীকে উদ্ধার করেন। অচেতন অবস্থায় শ্রীদেবী নাকি বাথটাবের ভিতরেই পড়ে ছিলেন। ঘরে এনে স্ত্রীর সংজ্ঞা ফেরানোর নানা চেষ্টা করেন বনি। কিন্তু, কোনও কাজ হয়নি। পরে এক বন্ধুকে ডেকে স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা শ্রীদেবীকে মৃত বলে জানিয়ে দেন। কাপুর পরিবারের থেকে তখন জানানো হয়, হার্ট অ্যাটাকেই মৃত্যু হয়েছে শ্রীদেবীর।
 
আবার অন্য একটা সূত্র বলছে, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ রুম সার্ভিসে ফোন করে তার ঘরে জল দিতে বলেছিলেন শ্রীদেবী। মিনিট ১৫ পর হোটেলের এক কর্মী শ্রীদেবীর ঘরে জল দিতে গিয়ে তার কোনও সাড়া পাচ্ছিলেন না। একাধিক বার ডোর বেল বাজানোর পর যখন দরজা খোলেননি শ্রীদেবী, তখন হোটেল কর্তৃপক্ষ ভিতর থেকে বন্ধ থাকা দরজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। ঘরে ঢুকে তারা দেখেন, শ্রীদেবী বাথটাবে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তা হলে বনি সেই সময় কোথায় ছিলেন?
 
শ্রীদেবীর দেহের ময়নাতদন্ত এবং ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে যে রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে, সেখানে বলা হয়েছে মৃতের শরীরে অ্যালকোহল পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সেই অ্যালকোহলের পরিমাণ কতটা, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। ডেথ সার্টিফিকেটে তাঁর অচেতন হয়ে পড়ার কথা থাকলেও অ্যালকোহলের কারণেই তা হয়েছিল কি না সে ব্যাপারে কোনও আলোকপাত করা হয়নি।
 
উঠছে আরও একটি প্রশ্ন। ভাগ্নের বিয়ের পর মেয়ে খুশিকে নিয়ে মুম্বই ফিরে এসেছিলেন বনি কপূর। দুবাই ফিরে যান দু’দিন পর। ওই দু’দিন হোটেলেই ছিলেন শ্রীদেবী। একা। তাকে এক বারের জন্যও ঘরের বাইরে দেখা যায়নি। কেন? অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, তবে কি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন অভিনেত্রী? সে কারণেই তাঁকে বাইরে দেখা যাচ্ছিল না? তিনি কি অবসাদ কাটাতে ওষুধ খেতেন? জানা যায়নি।
 
আর এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দুবাই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন শ্রীদেবীর স্বামী বলিউডের নামী প্রযোজক বনি কাপুরকে। তার পাসপোর্টও জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া শ্রীদেবীর থাকা কক্ষটা সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ, কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।

রাতের আঁধারেই সৌদি সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা বরখাস্ত

মধ্যরাতেই রাজকীয় ডিক্রি জারি করে সেনাপ্রধানসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল-আজিজ আল সউদ।
 
ইয়েমেনে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি জোটের লড়াইয়ের তিনবছর পূর্তির আগে আগে এই রদবদলের ঘটনা ঘটলো। বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে সৌদি আরবের সেনাপ্রধানসহ রয়েছেন বিমান বাহিনী, পদাতিক বাহিনী এবং বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানরাও।
 
বিবিসির খবরে বলা হয়, সোমবার গভীর রাতে কয়েকটি আদেশ জারির মাধ্যমে সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেন বাদশাহ সালমান।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি নিউজ এজেন্সিতে এসব খবর জানানো হলেও সামরিক কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, রাজকীয় এসব সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছেন যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমান। দেশটিতে বেশ কয়েকজন নতুন উপ মন্ত্রীও নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন নারী মন্ত্রীও রয়েছেন।
 
গত বছর যুবরাজ সালমানের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানেই বেশ কয়েকজন পরিচিত সৌদি নাগরিক, প্রিন্স, মন্ত্রী আর কোটিপতিদের রিয়াদের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বন্দী করা হয়েছিল।
 
বিবিসি বলছে, বাদশাহের ক্ষমতার প্রতীক হিসাবে পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলোয় এটি আরেক দফা সংস্কার চালানো হল, যদিও এসব পদক্ষেপের পেছনে তার পুত্র এবং উত্তরাধিকারী যুবরাজ সালমান রয়েছেন। ইয়েমেনে সৌদি জোটের অভিযানও যুবরাজের সিদ্ধান্তে হয়েছিল, যা দৃশ্যত ব্যর্থ হয়েছে। 

খবর বিবিসি।

‘ওরা খ্রিস্টান, মুসলিম নয়, তাই সন্ত্রাসী হবে না’ - ইতালির নির্বাচনে বড় ইস্যু অভিবাসন


ইতালিতে অনুষ্ঠিতব্য আগামী মাসের নির্বাচনে প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে অভিবাসন। কিছু দলের জন্য এর পেছনের অর্থ হয়তো ‘মুসলিম অভিবাসন’। 
 
গত চার বছরে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির মাটিতে এসে নেমেছে প্রায় ৬ লাখ লোক। এই অভিবাসনের ব্যাপারে কে কত কড়া নীতি নেবে তাই নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো।
 
‘ইউক্রেন বা বেলারুস থেকে অভিবাসী নেয়া বরং অনেক ভালো। ওরা খ্রিস্টান, মুসলিম নয়। তাই তারা সন্ত্রাসী হতে পারে না, বলেন পাওলো গ্রিমোল্ডি, লিগ নামে এক দলের নেতা যার আগে নাম ছিল নর্দার্ন লিগ। ‘আমি কী করবো তা বেছে নেবার অধিকার চাই। আমার মতে এ মুহুর্তে আমাদের অভিবাসীর দরকার নেই’, বলছেন গ্রিমোল্ডি। 
 
ইতালিতে এমন কিছু দল আছে যারা নিজেদেরকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে পরিচয় দিতে কোনো লজ্জা বোধ করে না। এরকমই একটি দল হচ্ছে কাসা পাউন্ড। এর কালো পোশাক পর সদস্যরা চায় ইতালির ইইউ ত্যাগ, সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া এবং সব অভিবাসীকে বের করে দেয়া। বিবিসি

সিরিয়ায় অভিযান বন্ধে প্রভাব খাটাতে রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের আহবান


সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব গৌতা অঞ্চলে অবিলম্বে রক্তক্ষয়ী হামলা সম্পূর্ণভাবে বন্ধে রাশিয়ার প্রভাব খাটাতে সোমবার যুক্তরাষ্ট্র মস্কোর প্রতি আহবান জানিয়েছে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
 
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিদার নুয়ের্ট টুইটারে এক বার্তায় বলেন, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধবিরতির আহবান জানানো সত্ত্বেও সিরিয়া সরকার এবং তাদের মিত্র দেশ রাশিয়া ও ইরান দামেস্কের উপকণ্ঠে ঘনবসতিপূর্ণ ইস্টার্ন ঘৌওতা অঞ্চলে হামলা অব্যাহত রেখেছে।’
 
এতে আরো বলা হয়, ‘এ অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করা হচ্ছে বলে সিরিয়া সরকার দাবি করলেও সেখানে হাজার হাজার বেসামরিক লোক তাদের হামলার শিকার হতে হচ্ছে। তাদের ওপর বিমান হামলা, গোলা বর্ষণ ও রকেট হামলা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি স্থলপথে হামলাও জোরদার করা হয়েছে।
 
ফলে যুক্তরাষ্ট্র এ অভিযান দ্রুত বন্ধের এবং আহতদের চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহে মানবিক কর্মীদের জরুরি ভিত্তিতে সেখানে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়ার আহবান জানিয়েছে। খবর বাসস।
 

চলন্ত বিমান থেকে লাফ যুবকের


ভুল বিমানে উঠে আজব কাণ্ড করে বসলেন এক মার্কিন যুবক। বিমান কর্মীদের অনুমতি ছাড়াই টেক অফ করার ঠিক আগেই আপৎকালীন দরজা খুলে বিমান থেকে ঝাঁপ দিলেন তিনি। 
 
এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিবার নিউ জার্সি শহরের নিওয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এ ঘটনা ঘটে। ইউনাইটেড এয়ারলাইনস-এর নিউ জার্সি থেকে টাম্পা-গামী ফ্লাইট ১৬৪০-তে উঠেছিলেন ট্রয় ফাটুম নামে ওই ‍যুবক। 
 
ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স-এর এক মুখপাত্র ম্যাগি শ্মেরিন জানান, ভুল বিমানে উঠেছেন জানতে পেরে ঘাবড়ে যান ২৫ বছরের ট্রয়। সেই পরিস্থিতিতে কোনো বিমান কর্মীকে না জানিয়ে নিজে নিজেই আপৎকালীন দরজা খুলে বিমান থেকে নেমে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে বিমান কর্মীরা পুলিশে খবর দেন।
 
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই বিমানেই টিকিট কাটা ছিল ট্রয়ের। তা সত্ত্বেও কেন ভুল বিমানে ওঠার দাবি করছেন যুবক তা এখনো জানা যায়নি। আপাতত পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন তিনি।

মিশরে ২ হাজার বছর আগের সমাধিক্ষেত্রের সন্ধান, ৫ বছর লাগবে খননে

মিশরের রাজধানী কায়রোর দক্ষিণে মিনিয়া শহরের কাছে ২ হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো এক প্রাচীন ‘নেক্রোপলিস’ বা সমাধিক্ষেত্রের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন প্রত্নতত্ববিদরা। এখানে পাওয়া গেছে বহু মমি, পাথরের তৈরি শবাধার ও অন্যান্য সামগ্রী, এবং একটি গলার হার। বলা হচ্ছে ‘এটি হলো মৃত্যুর পরের জীবন থেকে পাঠানো বার্তা।’
 
প্রত্নতাত্বিক মিশনের প্রধান মোস্তাফা ওয়াজিরি বলেন, ‘আটটি সমাধিসৌধ পাওয়া গেছে গত তিন মাসে, আশা করা হচ্ছে আরো পাওয়া যাবে। প্রত্নস্থানটি এতই বড় যে তা পুরোপুরি খনন করতে পাঁচ বছর লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।’ এগুলো মিশরের প্রাচীন দেবতা থথ-এর পুরোহিতদের বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একটি নেকলেস পাওয়া গেছে যাতে প্রাচীন মিশরীয় লিপি হিয়েরোগ্লিফিক্স এ লেখা আছে ‘শুভ নববর্ষ’। ওয়াজিরি বলেন, এটি হচ্ছে ‘মৃত্যুর পরের জীবন থেকে পাঠানো বার্তা।’ মিশরের প্রাচীন নিদর্শন বিষয়ক মন্ত্রী খালেদ আল-ইনামি বলছেন, এতে পাওয়া গেছে সোনার মুখোশ, মৃৎপাত্র, গয়না, এবং পাথরের শবাধার।
তিনি বলেন, এখানে যে কবরগুলো পাওয়া গেছে তা আনুমানিক ৩০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের সময়কালের। ‘এটা একটা শুরু মাত্র। আমরা খুব শিগগীরই মিশরের মধ্যাঞ্চলে আরো একটি প্রত্নতাত্বিক আকর্ষণ যোগ করতে যাচ্ছি’ বলেন তিনি। 

বিবিসি।

Monday, February 26, 2018

হোনায়েন ও ত্বায়েফ যুদ্ধ ।

হোনায়েন যুদ্ধ (غزوة حنين) ৮ম হিজরীর শাওয়াল মাস
মুসলমানদের আকস্মিক মক্কা বিজয়কে কুরায়েশ ও তাদের মিত্রদলগুলি মেনে নিলেও নিকট প্রতিবেশী বনু হাওয়াযেন ও তার শাখা ত্বায়েফের বনু ছাক্বীফ গোত্র এটাকে মেনে নিতে পারেনি। তারা মনে করল, মুসলমানেরা এরপর সমৃদ্ধ নগরী ত্বায়েফ হামলা করতে পারে। অতএব আগেই যদি আমরা মুসলমানদের পরাজিত করতে পারি, তাহ’লে আমাদের সম্পদ যেমন রক্ষা পাবে তেমনি ত্বায়েফে মক্কাবাসীদের যত বাগ-বাগিচা ও জায়গীরসমূহ রয়েছে, সব আমাদের দখলে এসে যাবে’। এছাড়া মুসলমানদের কাছ থেকে মূর্তি ভাঙ্গার বদলা নেওয়া যাবে। এ উদ্দেশ্যে তারা মক্কা ও ত্বায়েফের মধ্যবর্তী বনু মুযার ও বনু হেলাল এবং অন্যান্য গোত্রের লোকদেরকে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে নিল। তবে বনু হাওয়াযেন-এর দু’টি শাখা গোত্র বনু কা‘ব ও বনু কেলাব এই অভিযান থেকে পৃথক থাকে। তারা বলে যে, পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমগ্র দুনিয়া যদি মুহাম্মাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়, তথাপি তিনি সকলের উপরে বিজয়ী হবেন। অতএব আমরা এলাহী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারব না’।
এ সত্ত্বেও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে হাওয়াযেন নেতা মালেক বিন আওফ নাছরীর (مالك ابن عوف النَّصْري) নেতৃত্বে চার হাযার সৈন্যের এক দুর্ধর্ষ বাহিনী হুনায়েন-এর সন্নিকটে আওত্বাস (أوطاس) উপত্যকায় অবতরণ করল। যা ছিল হাওয়াযেন গোত্রের এলাকা ভুক্ত। তাদের নারী-শিশু, গবাদি-পশু ও সমস্ত ধন-সম্পদ তারা সাথে নিয়ে আসে এই উদ্দেশ্যে যে, এগুলির মহববতে কেউ যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালাবে না। বরং প্রাণপণ যুদ্ধ করে তারা যুদ্ধ জয়ে উদ্বুদ্ধ হবে। তাদের প্রবীণ নেতা ও দক্ষ যোদ্ধা দুরাইদ বিন ছাম্মাহ (دريد بن الصمة) এগুলিকে সঙ্গে আনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তোমরা এগুলিকে দূরে সংরক্ষিত স্থানে পাঠিয়ে দাও। যুদ্ধে তোমরা বিজয়ী হ’লে ওরা এসে তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবে। আর পরাজিত হ’লে ওরা বেঁচে যাবে’। কিন্তু তরুণ সেনাপতি মালেক বিন আওফ তার এ পরামর্শকে তাচ্ছিল্যভরে উড়িয়ে দেয় এবং সবাইকে যুদ্ধের ময়দানে জমা করে। মূলতঃ দুরাইদের পরামর্শ মতে কাজ করলে তার সুনাম হবে, এবিষয়টি মালেক বরদাশত করতে পারেনি। আবু হাদরাদ আসলামী (রাঃ)-কে গোপনে পাঠিয়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাদের সব খবর জেনে নিয়ে বললেন, تلك غنيمة المسلمين غدًا إن شآء الله ‘এসবই আগামীকাল মুসলমানদের গণীমতে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ’।
ইসলামী বাহিনী হোনায়েনএর পথে :
৮ম হিজরীর ৬ই শাওয়াল শনিবার মক্কা থেকে ২,০০০ নওমুসলিম সহ ১২,০০০ সেনাদল নিয়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হোনায়েনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এটা ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর মক্কায় আগমনের ঊনিশতম দিন। এই সময় আত্তাব বিন আসীদকে মক্কার প্রশাসক নিযুক্ত করা হয়।
যাতু আনওয়াত্ব :
‘হোনায়েন’ হ’ল মক্কা ও ত্বায়েফের মধ্যবর্তী একটি স্থানের নাম, যা মক্কা হ’তে আরাফাতের রাস্তা ধরে ১০ মাইলের কিছু (بضعة عشر ميلا) দূরে অবস্থিত একটি পাহাড় বেষ্টিত উপত্যকা। ১০ই শাওয়াল বুধবার ভোর রাতে মুসলিম বাহিনী হোনায়েন উপস্থিত হয়। যাওয়ার পথে তারা একটি বড় সতেজ-সবুজ কুল গাছ দেখতে পান। যাকে ‘যাতু আনওয়াত্ব’ (ذات أنواط) বলা হ’ত। মুশরিকরা এটিকে ‘মঙ্গল বৃক্ষ’ মনে করত। এখানে তারা পশু যবহ করত, এর উপরে অস্ত্র-শস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত, এখানে পূজা দিত ও মেলা বসাত। তা দেখে  কেউ কেউ বলে উঠলো, اجْعَلْ لَنَا ذَاتَ أَنْوَاطٍ كَمَا لَهُمْ ذَاتُ أَنْوَاطٍ ‘আমাদের জন্য (হে রাসূল) একটি যাতে আনওয়াত্ব দিন, যেমন ওদের রয়েছে’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিস্ময়ের সাথে বলে উঠলেন,اللهُ أَكْبَرُ، قُلْتُمْ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوْسَى ‘আল্লাহু আকবর! সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন নিহিত, তোমরা ঠিক সেইরূপ কথা বলছ, যেরূপ মূসার কওম বলেছিল, اِجْعَلْ لَّنَا إِلَهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ ‘আমাদের জন্য একটি উপাস্য দিন, যেমন তাদের বহু উপাস্য রয়েছে’। আর মূসা তাদের জওয়াবে বলেছিলেন, إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُوْنَ ‘তোমরা মূর্খ জাতি’ (রাফ /১৩৮)। তিনি বললেন, إِنَّهَا السُّنَنُ، لَتَرْكَبُنَّ سُنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ ‘এটাই হ’ল রীতি। তোমরা পূর্বের লোকদের রীতি অবশ্যই অবলম্বন করবে’।
আমরা কখনোই পরাজিত হব না :
এ সময় নিজেদের সৈন্যসংখ্যা বেশী দেখে কেউ কেউ বলে উঠেন, لَنْ نُغْلَبَ اليومَ مِنْ قِلَّةٍ ‘শত্রু সংখ্যা কম হওয়ার কারণে আজ আমরা কখনোই পরাজিত হব না’। একথায় আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বড়ই কষ্ট পান।
যুদ্ধ শুরু : মুসলিম বাহিনীর বিপর্যয় :
ভোর রাতে মুসলিম বাহিনী হোনায়েন পৌঁছল। শত্রুপক্ষের ছাক্বীফ ও হাওয়াযেন গোত্রের দক্ষ তীরন্দাযরা আগেই ওঁৎ পেতে ছিল। তারা গিরিসংকটের সংকীর্ণ পথে মুসলিম বাহিনীর অগ্রগামী দলকে নাগালের মধ্যে পাওয়া মাত্রই তীরবৃষ্টি শুরু করে দিল। তাদের এ আকস্মিক আক্রমণে মুসলিম বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। সবাই দিগ্বিদিক জ্ঞানহারা হয়ে ছুটে পালাতে লাগল। বিভিন্ন বর্ণনা মোতাবেক এ সময় রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে ছিলেন ৯, ১০, ১২ অথবা ১০০ জনের কম সংখ্যক লোক।[4]
এ দৃশ্য দেখে নওমুসলিম কুরায়েশ নেতা আবু সুফিয়ান বিন হারব বলে ওঠেন, لا تنتهي هزيمتهم دون البحر الأحمر ‘লোহিত সাগরে পৌঁছনোর আগ পর্যন্ত এদের পালানোর গতি শেষ হবে না’। আরেক জন ব্যক্তি জাবালাহ অথবা কালদাহ ইবনুল জুনায়েদ চীৎকার দিয়ে বলে ওঠল, ألا بطل السِّحْرُ اليومَ ‘দেখ জাদু আজ বাতিল হয়ে গেল’। অর্থাৎ প্রথম ধাক্কাতেই এদের ঈমান শেষ হয়ে যাবার উপক্রম হ’ল এবং পূর্বের অবিশ্বাসে ফিরে যেতে উদ্যত হ’ল।
এই সংকটপূর্ণ সময়ে রাসূল (ছাঃ)-এর বীরত্ব ও তেজস্বিতা ছিল অতুলনীয়। তিনি স্বীয় খচ্চরকে কাফের বাহিনীর দিকে এগিয়ে যাবার জন্য উত্তেজিত করতে থাকেন ও বলতে থাকেন, أَنَا النَّبِىُّ لاَ كَذِبْ * أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ ‘আমি নবী। মিথ্যা নই’। ‘আমি আব্দুল মুত্ত্বালিবের পুত্র’। অর্থাৎ আমি যে সত্য নবী তার প্রমাণ যুদ্ধে জয়-পরাজয়ের উপরে নির্ভর করে না। এ সময় রাসূল (ছাঃ) ডানদিকে ফিরে ডাক দিয়ে বলেন, هَلُمُّوْا إلَيَّ أيها الناسُ، أنَا رَسُوْلُ الله، أنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ، ‘আমার দিকে এসো হে লোকেরা! আমি আল্লাহর রাসূল’। ‘আমি আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদ’। এসময় তাঁর নিকটে অল্প সংখ্যক মুহাজির ও তাঁর পরিবারের কিছু লোক ব্যতীত কেউ ছিল না। রাসূল (ছাঃ)-এর চাচাতো ভাই নওমুসলিম আবু সুফিয়ান বিন হারেছ বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব রাসূলের খচ্চরের লাগাম এবং চাচা আববাস বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব খচ্চরের রেকাব টেনে ধরে রেখেছিলেন, যাতে সে রাসূলকে নিয়ে সামনে বেড়ে যেতে না পারে। এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খচ্চর থেকে নামলেন ও দো‘আ করলেন, اللَّهُمَّ أَنْزِلْ نَصْرَكَ ‘হে আল্লাহ! তোমার সাহায্য নামিয়ে দাও’। অতঃপর তিনি চাচা আববাসকে নির্দেশ দিলেন ছাহাবীগণকে ঊচ্চৈঃস্বরে আহবান করার জন্য। কেননা আববাস ছিলেন অত্যন্ত দরাজ কণ্ঠের মানুষ। তিনি সর্বশক্তি দিয়ে উচ্চৈঃস্বরে ডাকলেন, أَيْنَ أَصْحَابُ السَّمُرَةِ، ‘বায়‘আতে রিযওয়ানের সাথীরা কোথায়’? তাঁর এই আওয়ায পাওয়ার সাথে সাথে গাভীর ডাকে দুধের বাছুর ছুটে আসার মত লাববায়েক লাববায়েক ধ্বনি দিয়ে চারদিক থেকে ছাহাবীগণ ছুটে এলেন।[7] কারু কারু এমন অবস্থা হয়েছিল যে, স্বীয় উটকে ফিরাতে সক্ষম না হয়ে স্রেফ ঢাল-তলোয়ার নিয়ে লাফিয়ে পড়ে ছুটে রাসূলের নিকটে চলে আসেন।
এরপর হযরত আববাস (রাঃ) يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ ‘হে আনছারগণ!’ বলে আনছারদের আহবান করলেন। অবশেষে দেখা গেল যে, যে গতিতে মুসলমানেরা ফিরে গিয়েছিল, তার চেয়ে দ্রুত গতিতে তারা যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রত্যাবর্তন করল। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই উভয়পক্ষে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক মুষ্টি বালু উঠিয়ে কাফিরদের দিকে নিক্ষেপ করে বললেন,شَاهَتِ الْوُجُوْهُ  ‘চেহারাগুলো বিকৃত হৌক’। এই এক মুঠো বালু শত্রুপক্ষের প্রত্যেকের দু’চোখে ভরে যায় এবং তারা পালাতে থাকে। ফলে যুদ্ধের গতি স্তিমিত হয়ে যায়। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنْهَزَمُوْا وَ رَبِّ مُحَمَّدٍ ‘মুহাম্মাদের প্রভুর কসম! ওরা পরাজিত হয়ে গেছে’। নিঃসন্দেহে এটা ছিল আল্লাহর গায়েবী মদদ,  যা তিনি ফেরেশতাগণের মাধ্যমে সম্পন্ন করেন।
শত্রুপক্ষের শোচনীয় পরাজয় :
ধূলি নিক্ষেপের পরপরই শত্রুদের পরাজয়ের ধারা সূচিত হয় এবং সত্তরের অধিক লাশ ফেলে তারা যুদ্ধের ময়দান থেকে পালাতে শুরু করে। তাদের নেতা মালেক বিন আওফ বড় দলটি নিয়ে স্বীয় স্ত্রী-পরিজন ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে ত্বায়েফের দুর্গে আশ্রয় নেন’। আরেকটি দল তাদের নারী-শিশু ও গবাদি পশু নিয়ে আওত্বাস ঘাঁটিতে চলে যায়। আরেকটি দল নাখলার দিকে পলায়ন করে।
প্রথমোক্ত দলের পশ্চাদ্ধাবনের জন্য ১০০০ সৈন্যসহ খালেদ বিন ওয়ালীদকে পাঠানো হয়। দ্বিতীয় দলটির জন্য আবু আমের আল-আশ‘আরীকে একটি সেনাদল সহ পাঠানো হয়। তিনি তাদের উপরে জয়লাভ করেন। কিন্তু তাদের নিক্ষিপ্ত তীরের আঘাতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তৃতীয় দলটির পিছনে একদল অশ্বারোহীকে পাঠানো হয়। যাদের হাতে তারা পরাভূত হয় এবং তাদের প্রবীণ নেতা দুরাইদ বিন ছাম্মাহ নিহত হয়।
যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা :
মানছূরপুরীর হিসাব মতে হোনায়েন যুদ্ধে মুসলিম পক্ষে শহীদের সংখ্যা ছিল ৬ এবং কাফির পক্ষে নিহতের সংখ্যা ছিল ৭১।
বিপুল গণীমত লাভ :
আওত্বাস ঘাঁটিতে শত্রুপক্ষের নিকট থেকে যে বিপুল গণীমত লাভ হয়, তার পরিমাণ ছিল নিম্নরূপ:
বন্দী : ৬,০০০ নারী-শিশুসহ, উট : ২৪,০০০, দুম্বাবকরী : ৪০,০০০-এর অধিক, রৌপ্য : ৪,০০০ উক্বিয়া। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সব সম্পদ একত্রিত করে ‘জি‘র্রানাহ’ (الجعرانة) নামক স্থানে জমা রাখেন এবং মাসঊদ বিন আমর গেফারীকে তার তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেন। ত্বায়েফ থেকে প্রত্যাবর্তন এবং অবসর না হওয়া পর্যন্ত তিনি গণীমত বণ্টন করেননি। বন্দীদের মধ্যে হালীমার কন্যা রাসূল (ছাঃ)-এর দুধবোন শায়মা বিনতুল হারেছ (شيماء بنت الحارث السعدية) আস-সা‘দিয়াহ ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে চিনতে পেরে নিজের চাদর বিছিয়ে তাতে বসতে দিয়ে তাকে সম্মানিত করেন। অতঃপর তাকে তার ইচ্ছানুযায়ী তার কওমের নিকটে ফেরৎ পাঠান।
বস্ত্ততঃ এটাই ছিল সেই ওয়াদার বাস্তবতা, যে বিষয়ে আল্লাহ বলেছিলেন,
لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ فِيْ مَوَاطِنَ كَثِيْرَةٍ وَيَوْمَ حُنَيْنٍ إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَيْئًا وَضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُمْ مُدْبِرِيْنَ- ثُمَّ أَنْزَلَ اللهُ سَكِيْنَتَهُ عَلَى رَسُوْلِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَأَنْزَلَ جُنُوْدًا لَمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَذَلِكَ جَزَاءُ الْكَافِرِيْنَ- ثُمَّ يَتُوْبُ اللهُ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ عَلَى مَنْ يَشَآءُ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ- (الةوبة ২৫-২৭)-
অনুবাদ : ‘আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন অনেক স্থানে, বিশেষ করে হোনায়েনের দিন। যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের গর্বিত করে ফেলেছিল। কিন্তু তা তোমাদের কোনই কাজে আসেনি। বরং প্রশস্ত যমীন তোমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তোমরা পিঠ ফিরে পালিয়ে গিয়েছিলে’। ‘অতঃপর আল্লাহ তাঁর বিশেষ প্রশান্তি ‘সাকীনা’ অবতীর্ণ করেন স্বীয় রাসূল ও মুমিনদের উপরে এবং নাযিল করেন এমন সেনাদল, যাদের তোমরা দেখোনি এবং কাফিরদের তিনি শাস্তি প্রদান করেন। আর এটি ছিল তাদের কর্মফল’। (এ ঘটনার পরে) আল্লাহ যাদের প্রতি ইচছা করেন, তওবার তাওফীক দেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (তওবাহ /২৫২৭)
শেষোক্ত আয়াতে যে তওবার কথা বলা হয়েছে, তাতে ইঙ্গিত রয়েছে শত্রুপক্ষের নেতা মালেক বিন আওফ ও তার সাথীদের প্রতি। যারা পরে সবাই ইসলাম কবুল করে ফিরে আসেন। – ফালিল্লাহিল হাম্দ।
ত্বায়েফ যুদ্ধ (غزوة الطائف) :
এটি ছিল মূলতঃ হোনায়েন যুদ্ধেরই বর্ধিত অংশ। হোনায়েন যুদ্ধ হ’তে পালিয়ে যাওয়া সেনাপতি মালেক বিন আওফ নাছরী তার দলবল নিয়ে ত্বায়েফ দুর্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইতিপূর্বে তার পশ্চাদ্ধাবনের জন্য এক হাযার সৈন্যসহ খালেদ বিন ওয়ালীদকে পাঠানো হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হোনায়েন-এর গণীমত সমূহ জি‘র্রানাহতে জমা করে রেখে নিজেই ত্বায়েফ অভিমুখে রওয়ানা হয়ে যান। পথিমধ্যে তিনি নাখলা, ইয়ামানিয়াহ, ক্বারনুল মানাযিল, লিয়াহ (لية) প্রভৃতি অঞ্চল অতিক্রম করেন এবং লিয়াহতে অবস্থিত মালেক বিন আওফের একটি সেনাঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেন। অতঃপর ত্বায়েফ গিয়ে দুর্গের নিকটবর্তী স্থানে শিবির স্থাপন করেন এবং দুর্গ অবরোধ করেন। এই অবরোধের সময়কাল ১০, ১৫, ১৮, ২০ ও ৪০ দিন পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে। অবরোধের প্রথম দিকে দুর্গের মধ্য হ’তে বৃষ্টির মত তীর নিক্ষিপ্ত হয়। তাতে মুসলিম বাহিনীর ১২ জন শহীদ হন। অনেকে আহত হন। পরে তাদের উপরে কামানের গোলা নিক্ষেপ করা হয়, যা খায়বর যুদ্ধের সময় মুসলমানদের    হস্তগত হয়েছিল। শত্রুরা পাল্টা উত্তপ্ত লোহার খন্ড নিক্ষেপ করে। তাতেও বেশ কিছু মুসলমান শহীদ হন।
এ সময় রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ হ’তে একটি ঘোষণা প্রচার করা হয় যে, مَنْ خَرَجَ إلَيْنَا مِنَ الْعَبِيْدِ فَهُوَ حُرٌّ- ‘যেসব গোলাম আমাদের নিকটে এসে আত্মসমর্পণ করবে, সে মুক্ত হয়ে যাবে’। এই ঘোষণায় ভাল ফল হয়। একে একে ২৩ জন ক্রীতদাস দুর্গ প্রাচীর টপকে বেরিয়ে আসে এবং সবাই মুসলমানদের দলভুক্ত হয়ে যায়। এদের মধ্যকার একজন ছিলেন বিখ্যাত ছাহাবী হযরত আবু বাকরাহ (রাঃ)। নারী নেতৃত্বের অকল্যাণ সম্পর্কিত ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত হাদীছের যিনি বর্ণনাকারী। ‘আবু বাকরাহ’ নামটি ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর দেওয়া উপনাম। কেননা বাকরাহ (بكرة) অর্থ কূয়া থেকে পানি তোলার চাক্কি। যার সাহায্যে তিনি দুর্গপ্রাচীর থেকে বাইরে নামতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে তার মুনিবের পক্ষ থেকে তাকে ফেরৎ দানের দাবী করা হ’লে রাসূল (ছাঃ) বলেন, هُوَ طَلِيْقُ اللهِ وَطَلِيْقُ رَسُوْلِهِ ‘সে আল্লাহর মুক্ত দাস, অতঃপর তাঁর রাসূলের মুক্ত দাস’।
গোলামদের পলায়ন দুর্গবাসীদের জন্য ক্ষতির কারণ হ’লেও আত্মসমর্পণের কোন লক্ষণ দেখা গেল না। কেননা তাদের কাছে এক বছরের জন্য খাদ্য ও পানীয় মওজুদ ছিল। উপরন্তু তাদের নিক্ষিপ্ত তীর ও উত্তপ্ত লোহা খন্ডের আঘাতে মুসলমানদের ক্ষতি হ’তে থাকল। এ সময় আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নওফাল বিন মু‘আবিয়া দীলীর (نَوْفَل بن معاوية الدِّيلي) ‘নিকটে পরামর্শ চাইলেন। তিনি তাকে অত্যন্ত সুন্দর পরামর্শ দিয়ে বললেন, هم ثعلب في جحر، إن أقمت عليه أخذته وإن تركته لم يضرك، ‘ওরা গর্তের শিয়াল। যদি আপনি এভাবে দন্ডায়মান থাকেন, তবে ধরে ফেলতে পারবেন। আর যদি ছেড়ে যান, তাহ’লে ওরা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার পরামর্শ গ্রহণ করলেন এবং ওমর (রাঃ)-এর মাধ্যমে পরদিন মক্কায় প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা জারি করে দিলেন। কিন্তু এতে ছাহাবীগণ সন্তুষ্ট হ’তে পারলেন না। তারা বললেন, বিজয় অসমাপ্ত রেখে আমরা কেন ফিরে যাব? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ঠিক আছে। কাল তাহ’লে আবার যুদ্ধ শুরু কর’। ফলে তারা যুদ্ধে গেলেন। কিন্তু কিছু লোক আহত হওয়া ব্যতীত কোন লাভ হ’ল না। এবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,  إنا قافلون غداً إن شاء الله ‘আগামীকাল আমরা রওয়ানা হচ্ছি ইনশাআল্লাহ’। এবারে আর কেউ দ্বিরুক্তি না করে খুশী মনে প্রস্ত্ততি নিতে লাগল। এ দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাসতে লাগলেন।
এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলা হ’ল, আপনি বনু ছাক্বীফদের উপরে বদ দো‘আ করুন। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) তাদের হেদায়াতের জন্য দো‘আ করে বললেন, اللَّهُمَّ اهْدِ ثَقِيْفًا وَأْتِ بِهِمْ ‘হে আল্লাহ! তুমি ছাক্বীফদের হেদায়াত কর এবং তাদেরকে নিয়ে এসো’। রাসূল (ছাঃ)-এর দো‘আ কবুল হয়েছিল এবং সেনানায়ক মালেক বিন আওফসহ হাওয়াযেন ও ছাক্বীফ গোত্রের সবাই মুসলমান হয়ে মদীনায় আসে।
উল্লেখ্য যে, এই সেই ত্বায়েফ, যেখানে দশম নববী বর্ষে মক্কা থেকে ৬০ মাইল পায়ে হেটে এসে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছাক্বীফ নেতাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন। বিনিময়ে পেয়েছিলেন তাদের মর্মান্তিক যুলুম ও অবর্ণনীয় দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন। অথচ আজ শক্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি তাদের ক্ষমা করে হেদায়াতের দো‘আ করলেন।
হতাহতের সংখ্যা : ত্বায়েফ যুদ্ধে মুসলিম পক্ষে ১২ জনের অধিক শহীদ হন এবং অনেক সংখ্যক লোক আহত হন। তবে কাফেরদের হতাহতের সংখ্যা জানা যায়নি।
হোনায়েন যুদ্ধের গণীমত বণ্টন :
হোনায়েন যুদ্ধের গণীমত বণ্টন না করেই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ত্বায়েফ গিয়েছিলেন। ইচ্ছাকৃতভাবে এই বিলম্বের কারণ ছিল হাওয়াযেন গোত্রের নেতারা ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে আসলে তাদের বন্দীদের ও তাদের মাল-সম্পদাদি ফেরত দিবেন। কিন্তু এই দীর্ঘ সুযোগ পেয়েও হতভাগাদের কেউ আসলো না। তখন তিনি যুদ্ধজয়ের রীতি অনুযায়ী গণীমত  বণ্টন শুরু করলেন।
বণ্টন নীতি :
বণ্টনের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘মুওয়াল্লাফাতুল কুলূব’ অর্থাৎ মক্কার নওমুসলিম কুরায়েশ নেতৃবৃন্দের এবং অন্যান্য গোত্র নেতাদের মুখ বন্ধ করার নীতি অবলম্বন করেন। যাতে তাদের অন্তরে ইসলামের প্রভাব শক্তভাবে বসে যায়। সেমতে তাদেরকেই বড় বড় অংশ দেওয়া হয়। গণীমতের এক পঞ্চমাংশ রেখে বাকী সব বণ্টন করে দেওয়া হয়। বড় বড় নেতাদের মধ্যে আবু সুফিয়ান ইবনু হারবকে ৪০ উক্বিয়া রৌপ্য এবং ১০০ উট দেওয়া হয়। পরে তার দাবী মতে তার দুই পুত্র ইয়াযীদ ও মু‘আবিয়াকে ১০০টি করে উট দেওয়া হয়। হাকীম বিন হেযামকে প্রথমে ১০০টি উট পরে তার দাবী অনুযায়ী আরো ১০০টি দেওয়া হয়। ছাফওয়ান বিন উমাইয়াকে প্রথমে ১০০ পরে ১০০ পরে আরও ১০০ মোট ৩০০ উট দেওয়া হয়। হারেছ বিন কালদাহকে ১০০ উট এবং অন্যান্য কুরায়েশ নেতাকেও একশ একশ করে উট দেওয়া হয়। অন্যদেরকে মর্যাদা অনুযায়ী পঞ্চাশ, চল্লিশ ইত্যাদি সংখ্যায় উট দিতে থাকেন। এমনকি এমন কথা রটে যায় যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) এত বেশী দান করছেন যে, কারু আর অভাব থাকবে না। এর ফলে বেদুঈনরা এসে এমন ভিড় জমালো যে, এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি গাছের কাছে কোনঠাসা হয়ে পড়লেন। যাতে তাঁর গায়ের চাদরটা জড়িয়ে গেল। তখন তিনি বলে উঠলেন أيها الناس، رُدُّوْا عَلَيَّ رِدَائِي ‘হে লোকেরা! চাদরটা আমাকে ফিরিয়ে দাও’। যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, তার কসম করে বলছি, যদি আমার নিকটে তেহামার বৃক্ষরাজি গণীমত হিসাবে থাকত, তাও আমি তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতাম। তখন তোমরা আমাকে কৃপণ, কাপুরুষ বা মিথ্যাবাদী হিসাবে পেতে না’। তারপর স্বীয় উটের দেহ থেকে একটি লোম উঠিয়ে হাতে উঁচু করে ধরে বললেন, أيُّهَا النَّاسُ! وَاللهِ مَا لِى مِنَ الْفَىْءِ  شَىْءٌ وَلاَ هَذِهِ إِلاَّ خُمُسٌ وَالْخُمُسُ مَرْدُودٌ فِيكُمْ ‘হে জনগণ! আল্লাহর কসম! ফাই বা গণীমতের কিছুই আমার কাছে আর অবশিষ্ট নেই। এমনকি এই লোমটিও নেই, এক পঞ্চমাংশ ব্যতীত। যা অবশেষে তোমাদের কাছেই ফিরে যাবে’।
এইভাবে নওমুসলিম মুওয়াল্লাফাতুল কুলূবদের দেওয়ার পর বাকী গণীমত  ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে বণ্টন করা হয়। যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ)-কে হিসাব করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায় যে, প্রতিজন পদাতিকের মাত্র চারটি উট ও চল্লিশটি বকরী এবং অশ্বারোহীর ১২টি উট ও ১২০টি করে বকরী ভাগে পড়েছে। এই যৎসামান্য গণীমত  নিয়েই তাদেরকে খুশী থাকতে হয়।
তৃণভোজী পশুর সম্মুখে এক গোছা ঘাসের অাঁটি ধরলে যেমন সে ছুটে আসে, মানুষের মধ্যে অনুরূপ একদল মানুষ আছে, যাদেরকে দুনিয়ার লোভ দেখিয়েই কাছে টানতে হয়। সদ্য দলে আগত লোকদের ক্ষেত্রে রাসূল (ছাঃ) অনেকের জন্য উক্ত নীতি অবলম্বন করেন কিন্তু ছাহাবায়ে কেরাম তো পরীক্ষিত মানুষ। দুনিয়া তাদের কাছে তুচ্ছ বিষয়। আখেরাত তাদের নিকটে মুখ্য। তাই তাদের ব্যাপারে রাসূলের কোন উদ্বেগ ছিল না।
আনছারগণের বিমর্ষতা  রাসূল (ছাঃ)-এর ভাষণ :
মক্কার নওমুসলিমদের মধ্যে গণীমতের বৃহদাংশ বণ্টন করে দেওয়ায় আনছারগণের মধ্যে কিছুটা বিমর্ষতা দেখা দেয়। কেউ কেউ বলে বসেন,لَقِيَ وَاللهِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَوْمَهُ ‘আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর কওমের সাথে মিশে গেছেন’। কেউ কেউ বলল, إِذَا كَانَتْ شَدِيْدَةٌ فَنَحْنُ نُدْعَى وَيُعْطَى الْغَنِيْمَةَ غَيْرُنَا ‘যখন কঠিন সময় আসে, তখন আমাদের ডাকা হয়। আর গণীমত দেওয়া হয় অন্যদের’। খাযরাজ নেতা সা‘দ বিন ওবাদাহর মাধ্যমে এ খবর জানতে পেরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দ্রুত তাদের কাছে গমন করেন এবং সমবেত আনছারদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে হামদ ও ছানার পরে বলেন, يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ مَقَالَةٌ بَلَغَتْنِيْ عَنْكُمْ وَجِدَةٌ وَجَدْتُمُوْهَا عَلَيّ فِيْ أَنْفُسِكُمْ ‘হে আনছারগণ! তোমাদের কিছু কথা আমার নিকটে পৌঁছেছে। তোমাদের অন্তরে আমার উপরে কিছু অসন্তুষ্টি দানা বেঁধেছে। أَلَمْ آتِكُمْ ضُلاَلاً فَهَدَاكُمْ اللهُ وَعَالَةً فَأَغْنَاكُمْ اللهُ وَأَعْدَاءً فَأَلّفَ اللهُ بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ؟ ‘আমি কি তোমাদের নিকটে এমন অবস্থায় আসিনি যখন তোমরা পথভ্রষ্ট ছিলে? অতঃপর আল্লাহ তোমাদের সুপথ প্রদর্শন করেন। যখন তোমরা অভাবগ্রস্ত ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের সচ্ছলতা দান করেন? তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মাঝে ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি করে দেন’? তারা বললেন, হাঁ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে আনছারগণ! তোমরা কি জবাব দিবে না? তারা বললেন, আমরা আর কি জবাব দেব হে আল্লাহর রাসূল! এসবই তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগ্রহ। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, দেখ তোমরা ইচ্ছা করলে একথাও বলতে পার এবং সেটা বললে, তোমরা অবশ্য সত্য কথাই বলবে- সেটা এই যে, ‘আপনি আমাদের কাছে এসেছিলেন এমন সময় যখন আপনাকে মিথ্যাবাদী বলা হচ্ছিল, কিন্তু আমরা আপনাকে সত্য বলে জেনেছি। যখন আপনি ছিলেন অপদস্থ, তখন আমরা  আপনাকে সাহায্য করেছি। যখন আপনি ছিলেন বিতাড়িত, তখন আমরা আপনাকে আশ্রয় দিয়েছি। যখন আপনি ছিলেন অভাবগ্রস্ত, তখন আমরা আপনার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছি’।
অতঃপর তিনি বলেন, أَوَجَدْتُمْ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ فِيْ أَنْفُسِكُمْ فِيْ لُعَاعَةٍ مِنَ الدُّنْيَا تَأَلّفْت بِهَا قَوْمًا لِيُسْلِمُوْا، وَوَكَلْتُكُمْ إلَى إسْلاَمِكُمْ ‘হে আনছারগণ! দুনিয়ার এক গোছা ঘাসের জন্য তোমরা মনে কষ্ট নিয়েছ, যার মাধ্যমে আমি লোকদের অন্তরে আকর্ষণ সৃষ্টি করতে চেয়েছি, যাতে তারা অনুগত হয়? আর তোমাদেরকে সোপর্দ করেছি তোমাদের ইসলামের উপর (অর্থাৎ তোমাদের জন্য ইসলামই যথেষ্ট)। أَلاَ تَرْضَوْنَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ أَنْ يَذْهَبَ النّاسُ بِالشّاةِ وَالْبَعِيْرِ وَتَرْجِعُوْا بِرَسُوْلِ اللهِ إلَى رِحَالِكُمْ؟ ‘হে আনছারগণ! তোমরা কি চাও না যে, লোকেরা বকরী ও উট নিয়ে চলে যাক, আর তোমরা আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে ফিরে যাও? أَلاَ تَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النّاسُ بِالدُّنْيَا، وَتَذْهَبُوْنَ بِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ   وَتَحُوْزُوْنَهُ إِلَى بُيُوْتِكُمْ؟ ‘তোমরা কি চাও না যে, লোকেরা দুনিয়া নিয়ে চলে যাক। আর তোমরা আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে চলে যাও ও তাঁকে তোমাদের বাড়ীতে আশ্রয় দাও?’ ‘অতএব সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে রয়েছে মুহাম্মাদের জীবন, যদি হিজরত না থাকত, তাহ’লে আমি হ’তাম আনছারদের মধ্যকার একজন। যদি লোকেরা বিভিন্ন গোত্র বেছে নেয়, তবে আমি আনছারদের গোত্রে প্রবেশ করব’। اللَّهُمَّ ارْحَمْ الْأَنْصَارَ، وَأَبْنَاءَ الْأَنْصَارِ، وَأَبْنَاءَ أَبْنَاءِ الْأَنْصَارِ ‘হে আল্লাহ! তুমি আনছারদের উপরে রহম কর। আনছারদের সন্তানদের উপরে রহম কর এবং তাদের সন্তানগণের সন্তানদের উপরে রহম কর’।
রাসূল (ছাঃ)-এর উক্ত হৃদয়স্পর্শী ভাষণ শুনে কাঁদতে কাঁদতে সকলের দাড়ি ভিজে গেল এবং তারা সবাই বলে উঠল,رَضِيْنَا بِرَسُوْلِ اللهِ قَسْمًا وَحَظًّا ‘আমরা সবাই আল্লাহর রাসূলের ভাগ-বণ্টনে সন্তুষ্ট’।
হাওয়াযেন প্রতিনিধি দলের আগমন  বন্দীদের ফেরৎ দান :
গণীমত  বণ্টন সম্পন্ন হবার পর যোহায়ের বিন ছারদ (زهير بن صرد) -এর নেতৃত্বে হাওয়াযেন গোত্রের ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মুসলমান অবস্থায় আগমন করে। এই দলে রাসূলের দুধ চাচা আবু বুরক্বান (أبو بُرْقَان) ছিলেন। তাঁরা অনুরোধ করলেন যে, অনুগ্রহ পূর্বক তাদের বন্দীদের ও মাল-সম্পদাদি ফেরৎ দেওয়া হৌক’। তাদের কথা-বার্তায় এতই কাকুতি-মিনতি ছিল যে, হৃদয় গলে যায়। তাদের বক্তব্য মতে বন্দীনীদের মধ্যে রাসূলের দুগ্ধ সম্পর্কিত খালা-ফুফুরাও ছিলেন। যাদের বন্দী রাখা ছিল নিতান্ত অবমাননাকর বিষয়।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কার ও অন্যান্য গোত্রের নও মুসলিমদের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, إن معي من ترون،… فأبناؤكم ونساؤكم أحب إليكم أم أموالكم؟ ‘আমার সঙ্গে যারা আছে, তোমরা তো তাদের দেখতেই পাচ্ছ’ (অর্থাৎ মাল-সম্পদ তারা ফেরৎ দিবে না)।… এক্ষণে তোমাদের সন্তানাদি ও নারীগণ তোমাদের নিকটে অধিক প্রিয়, না তোমাদের ধন-সম্পদ’? জবাবে তারা বললেন, ما كنا نعدل بالأحساب شيْئاً ‘আমরা কোন কিছুকেই বংশ মর্যাদার তুলনীয় মনে করি না’। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের বললেন, যোহরের জামা‘আত শেষে তোমরা দাঁড়িয়ে বলবে, إنا نستشفع برسول الله صلى الله عليه وسلم إلى المؤمنين، ونستشفع بالمؤمنين إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم أن يرد إلينا سبينا ‘আমরা রাসূলকে মুমিনদের নিকটে এবং মুমিনদেরকে রাসূলের নিকটে সুফারিশকারী বানাচ্ছি আমাদের বন্দীদেরকে আমাদের নিকটে ফিরিয়ে দেবার জন্য’।
রাসূল (ছাঃ)-এর কথামত তারা যোহরের ছালাত শেষে সকলের উদ্দেশ্যে উক্ত অনুরোধ পেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমার ও বনু আব্দুল মুত্ত্বালিবের অংশে যা আছে, সবই তোমাদের। এক্ষণে আমি তোমাদের জন্য লোকদের নিকটে সওয়াল করছি (سأسأل لكم الناس)। তখন মুহাজির ও আনছারগণ বললেন, আমাদের অংশের সবকিছু আমরা রাসূলকে দিয়ে দিলাম’। এবার আক্বরা বিন হাবিস বললেন, আমার ও বনু তামীমের অংশ দিলাম না’। একইভাবে উওয়ায়না বিন হিছন বললেন, আমার ও বনু ফাযারাহর অংশও নয়’। আববাস বিন মিরদাস বললেন, আমার ও বনু সুলায়েম-এর অংশও নয়’। কিন্তু তার গোত্র বনু সোলায়েম বলে উঠল, না আমাদের অংশের সবটুকু আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দিয়ে দিলাম’। মিরদাস তখন তার গোত্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন, وَهَنْتُمُوْنِيْ ‘তোমরা আমাকে অপদস্থ করলে’?
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘দেখ এই লোকগুলি মুসলমান হয়ে এখানে এসেছে। উক্ত উদ্দেশ্যেই আমি তাদের বন্দী বণ্টনে দেরী করেছিলাম। আমি তাদেরকে এখতিয়ার দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কোন কিছুকেই তাদের বন্দীদের সমতুল্য মনে করেনি। অতএব যার নিকটে বন্দীদের কেউ রয়েছে সন্তুষ্টচিত্তে তাকে ফেরত দিলে সেটাই উত্তম পন্থা হবে। আর যদি কেউ আটকে রাখে, তবে সেটা তার এখতিয়ার। তবে যদি সে ফেরৎ দেয়, তবে আগামীতে অর্জিত প্রথম গণীমতে তাকে একটির বিনিময়ে ছয়টি অংশ দেওয়া হবে’। তখন লোকেরা সমস্বরে বলে উঠলো, قَدْ طَيِّبْنَا ذَلِكَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য সবকিছুই হৃষ্টচিত্তে ফেরত দিতে প্রস্ত্তত আছি’। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা কে কে রাযী ও কে কে রাযী নও, সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। অতএব তোমরা ফিরে যাও এবং তোমাদের দল নেতাদের মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়ে দাও’। তখন সবাই তাদের বন্দী নারী-শিশুদের ফেরত দিল। কেবল বনু ফাযারাহ নেতা উওয়ায়না বিন হিছ্ন বাকী রইল। তার অংশে একজন বৃদ্ধা মহিলা ছিল। পরে তিনি তাকে ফিরিয়ে দেন। এইভাবে ৬,০০০ যুদ্ধ বন্দীর সবাই মুক্তি পেয়ে যায়। মুক্তি দানের সময় প্রত্যেক বন্দীকে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) একটি করে মূল্যবান ক্বিবতী চাদর উপহার স্বরূপ প্রদান করেন। রাসূলের এই উদারনীতি ছিল তৎকালীন সময়ের যুদ্ধনীতিতে একটি ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা।
ওমরাহ পালন  মদীনায় প্রত্যাবর্তন :
জি‘ইর্রানাহতে গণীমত বণ্টন সম্পন্ন হওয়ার পর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ওমরাহ পালনের জন্য ইহরাম বাঁধলেন। অতঃপর মক্কা গমন করে ওমরাহ পালন করলেন। অতঃপর আত্তাব বিন আসীদকে মক্কার প্রশাসক হিসাবে বহাল রেখে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং ২৪শে যুলক্বা‘দাহ মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন।
হোনায়েন যুদ্ধের গুরুত্ব :
১. এই যুদ্ধে বিজয়ের ফলে আরব বেদুঈনদের বড় ধরনের সকল বিদ্রোহের সম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে যায়। কেননা এই যুদ্ধের পরে ৯ম হিজরীর রজব মাসে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাঁর জীবনের শেষ যুদ্ধে অংশ নেন রোমকদের বিরুদ্ধে তাবুক অভিযানে।
২. এই যুদ্ধে বিজয়ের ফলে দোদুল্যমান অনেক নও মুসলিমের মনে ইসলামের অপরাজেয় শক্তিমত্তা সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে। তারা আর কখনো ইসলামের বিরোধিতা করার চিন্তা করেনি। যেমন মক্কার শায়বা বিন ওছমান, নযর বিন হারেছ প্রমুখ ব্যক্তি হোনায়েন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল সুযোগ মত রাসূলকে হত্যা করার জন্য। যুদ্ধের প্রথমাবস্থায় মুসলমানদের পালানোর হিড়িকের মধ্যে শায়বা রাসূলের নিকটবর্তী হয়েছিল তাঁকে অতর্কিতে হত্যা করার জন্য। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) তাকে কাছে টেনে নিয়ে বুকে হাত দিয়ে দো‘আ করেন, হে আল্লাহ! তুমি এর থেকে শয়তানকে দূর করে দাও’! সাথে সাথে শায়বার মনোভাবের আমূল পরিবর্তন ঘটে ও ইসলামের পক্ষে বীরযোদ্ধা বনে যান। নযর বিন হারেছেরও একই অবস্থা হয়।
৩. এই যুদ্ধে বিজয়ের ফলে মুসলিম শক্তি আরব উপদ্বীপে অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিরূপে পরিগণিত হয়। এমনকি তৎকালীন বিশ্বশক্তি রোমকগণ ব্যতীত মুসলিম শক্তির কোন প্রতিদ্বন্দ্বী রইল না।
শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ :
১. সংখ্যা শক্তি নয়, কেবল ঈমানী শক্তিই ইসলামী বিজয়ের মূল চালিকাশক্তি। একথার অন্যতম বাস্তব প্রমাণ হ’ল হোনায়েন যুদ্ধে বিজয়।
২. শিরকের প্রতি আকর্ষণ যে মানুষের সহজাত শয়তানী প্ররোচনা, সেকথারও প্রমাণ পাওয়া যায় হোনায়েন যাত্রাপথে মুশরিকদের পূজিত কুলগাছ (ذات أنواط) দেখে অনুরূপ একটি পূজার বৃক্ষ নিজেদের জন্য নির্ধারণকল্পে কিছু নও মুসলিমের আবদারের মধ্যে। অথচ শিরকী চেতনার টুটি চেপে ধরে তাওহীদী চেতনার উন্মেষ ঘটানোর মধ্যেই মানবতার সুষ্ঠু বিকাশ ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা সম্ভব।
৩. কেবল তারুণ্যের উচ্ছ্বাস দিয়ে নয় বরং যুদ্ধের জন্য প্রবীণের দূরদর্শিতার মূল্যায়ন অধিক যরূরী। শত্রুপক্ষের প্রবীণ নেতা দুরাইদ বিন ছাম্মাহর পরামর্শ অগ্রাহ্য করে তরুণ সেনাপতি মালেক বিন আওফের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণেই হোনায়েন যুদ্ধে বনু হাওয়াযেন তাদের বিপুল সম্পদরাজি এবং ছয় হাযারের মত নারী-শিশু ও বন্দীদের হারায়। পরে রাসূলের বদান্যতায় নারী-শিশু ও বন্দীগণ মুক্তি পায়।
৪. অহংকার পতনের মূল- একথারও প্রমাণ মিলেছে হোনায়েনের যুদ্ধে। যখন কিছু মুসলিম সৈন্যের মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল, لَنْ نُغْلَبَ الْيَوْمَ ‘আজ আমরা কখনোই পরাজিত হব না’। যুদ্ধের শুরুতেই তাদের পলায়ন দশার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের এই অহংকার চূর্ণ করে দেন।
৫. নেতার প্রতি কেবল আনুগত্য নয়- হৃদয়ের গভীর ভালোবাসা ও আকর্ষণ থাকা প্রয়োজন। নইলে বড় কোন বিজয় লাভ করা সম্ভব নয়। যেমন হোনায়েন বিপর্যয়কালে রাসূলের ও তাঁর চাচা আববাসের আহবান শুনে ছাহাবীগণ গাভীর ডাকে বাছুরের ছুটে আসার ন্যায় লাববায়েক লাববায়েক বলতে বলতে চৌম্বিক গতিতে ছুটে এসেছিলেন।
৬. চূড়ান্ত প্রচেষ্টার পরেই কেবল আল্লাহর সাহায্য নেমে আসে যেমন ছাহাবীগণ যুদ্ধে ফিরে আসার পরেই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) শত্রুপক্ষের দিকে বালু নিক্ষেপ করেন এবং এর পরে তাদের পরাজয়ের ধারা সূচিত হয়।
৭. সর্বাবস্থায় মানবতাকে উচ্চে স্থান দিতে হবে। তাই দেখা  যায় যুগের নিয়ম অনুযায়ী বিজিত পক্ষের নারী-শিশু ও বন্দীদের বণ্টন করে দেবার পরেও আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে ফেরৎ দিলেন। এমনকি ছয়গুণ বিনিময় মূল্য দিয়ে অন্যের নিকট থেকে চেয়ে নিয়ে তাদেরকে স্ব স্ব গোত্রে ফেরৎ পাঠালেন। এ ছিল সেযুগের জন্য এক অনন্য সাধারণ ঘটনা। বলা চলে যে, এই উদারতার ফলশ্রুতিতেই বনু হাওয়াযেন ও বনু ছাক্বীফ দ্রুত ইসলাম কবুল করে মদীনায় আসে।
৮. বিজয়ের চাইতে হেদায়াত প্রাপ্তিই সর্বদা মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। সেকারণ আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছাক্বীফ গোত্রের জন্য বদদো‘আ না করে হেদায়াতের দো‘আ করেন এবং আল্লাহর রহমতে তারা সবাই মুসলমান হয়ে যায়।
৯. দুনিয়া পূজারীদের অনুগত করার জন্য তাদেরকে অধিকহারে দুনিয়াবী সুযোগ দেওয়া ক্ষেত্র বিশেষে সিদ্ধ- তার প্রমাণ পাওয়া যায়- আবু সুফিয়ান, হাকীম বিন হেযাম, ছাফওয়ান বিন উমাইয়া প্রমুখকে তাদের চাহিদামত বিপুল গণীমত  দেওয়ার মধ্যে। অথচ আখেরাত পিয়াসী আনছার ও মুহাজিরগণকে নামে মাত্র গণীমত  প্রদান করা হয়।
১০. আমীর ও মা‘মূর উভয়কে উভয়ের প্রতি নির্লোভ সততা ও নিশ্চিন্ত বিশ্বাস রাখতে হয়। সে সততা ও বিশ্বাসে সামান্য চিড় দেখা দিলেই উভয়কে অগ্রণী হয়ে তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে হয়। যেমন রাসূলের গণীমত  বণ্টনে আনছারদের অসন্তুষ্টির খবর তাদের নেতা সা‘দ বিন ওবাদাহর মাধ্যমে জানতে পেরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দ্রুত তাদের কাছে পৌঁছে যান এবং তাদের সন্দেহের নিরসন ঘটান। ফলে অসন্তুষ্টির আগুন মহববতের অশ্রুতে ভিজে নির্মূল হয়ে যায়।

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates