পরিবারে স্বচ্ছলতা আর একটু সুখের আসায় সরকারি (জিটুজি) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন ব্রাহ্মনবাড়িয়ার জসিমউদ্দীন।কিন্তু মালয়েশিয়ায় আসার পরপরই পাঁচমাস ধরে তেমন কোন কাজ পাননি তিনি। তাই আয় রোজগারও করতে পারতেন না ভালো মতো। যে মালিক পক্ষের হয়ে কাজ করতেন সেখানে অমানবিক পরিশ্রম আর শারীরিক নির্যাতনের ফলে এখন তার শরীর দুর্বল হয়ে এসেছে। এক ধরনের বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেতে গত ১২ই এপ্রিল তিনিসহ ২৮ জন শ্রমিক রাতের আঁধারে পালিয়ে আশ্রয় নেন কুয়ালালামপুর বাংলাদেশ দূতাবাসে।
অশ্রুসিক্ত কন্ঠে জসিমউদ্দিন জানান, দীর্ঘ দিন এ অবস্থার ভিতরে আছি।কাউকে কষ্টেরে কথা বলতে পারি না। যে কোম্পানিতে কাজ দেওয়া হয়েছে সে কোম্পানির অবস্থা ভালো না। ৫ মাস ধরে বেতন পাই না।মালিকপক্ষের অমানবিক অত্যাচার আর নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না করতে পেরে আমরা পালিয়ে এসেছি’।
তবে এ অবস্থা জসিমউদ্দীনের একার নয়, তাঁর সাথে পালিয়ে আসা শ্রমিকদের অবস্থাও ঠিক এমনই। এদের সবাই কুয়ালালামপুর থেকে ৩শ কিলোমিটার দূরে মেলাক্কা শহরের জালান টেক, তামান আয়ের কেরাহ হাইট এলাকার মোহামেদ রেশা ও বেরাকাত এসডি এন বিএইচডি নামে তিন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এদের কয়েকজন জানান, ‘জনশক্তি রফতানিকারক আল ইসলামকে জন প্রতি সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় এসেছিলেন তাঁরা। সরকারি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ওই এজেন্সির সম্পৃক্ততা থাকায় টাকার কথাও গোপন রাখতে বলা হয়েছিলো।দেওয়া হয়েছিলো নানা প্রতিশ্রুতিও।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, দেশে তৈরী জনশক্তি রফতানিকারক কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের মতো এক লাখেরও বেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে। শুধু তারাই নন, হাজার হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় নির্মম নির্যাতনের শিকার। যে সিন্ডিকেটটি দেশ থেকে শুরু করে মালয়েশিয়ায় নিয়োগকারীদের ম্যানেজ করে দেশের সরকারের নীতি-নির্ধারনীর পাশ কাটিয়ে কর্মী পাঠাচ্ছে দেশটিতে।আর এসব প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে মালয়েশিয়ায় নিঃস্ব ও অসহায়ের মতো দিন কাটাচ্ছে এখন বহু বাংলাদেশি।
জিটুজি পদ্ধতিতে প্রতারণার শিকার হওয়া কর্মীরা জানান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পাশ কাটিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে এই সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রফতানি করেই চলেছে।
এ দিকে জসিম উদ্দিনের বাবা ছেলের এমন দুঃদর্শার কথা জানতে পেরে জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো অফিসে পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) মুহাম্মদ আতাউর রহমান এই ৩৯ জন কর্মীর ৫ মাসের বেতন ভাতা না দেয়ার কারণ জানাতে ও তাদের কাজের ব্যবস্থা করার জন্য দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলরের কাছে লিখিত নোটিশ পাঠিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment