সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে (এমবিএস) নিয়ে কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত বেশক’দিন ধরেই চলছে কানাঘুষা। কেউ লিখছেন, এমবিএস বোধহয় মারা গেছেন। কেউ লিখছেন, তিনি বহাল তবিয়তেই আছেন। তবে এ কথাও সত্যি, গত বেশ কিছুদিন ধরে প্রকাশ্যে আসছেন না এমবিএস। তিনি কি অসুস্থ? নাকি…….।
তবে তাঁর (এমবিএস) মৃত্যুর খবর মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন দেশটির উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পাকিস্তানি গণমাধ্যম ‘পাকিস্তান টুডে’ জানিয়েছে, ইরানের গণমাধ্যম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতেই এমবিএস’কে নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে। প্রিন্স সুস্থ আছেন এবং রাজপ্রাসাদে এক অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখে গেছে বলে পাকিস্তান টুডে’র প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। এদিকে মার্কিন গণমাধ্যম ‘ভ্যালু ওয়াক’ এক প্রতিবেদনে প্রিন্স সালমানের একটি ছবি প্রকাশ করেছে। ছবিটি ১৮ মে আসাকার নামে এক ব্যক্তি টুইটারে পোস্ট করেন।
ইরানি সংবাদপত্র ‘কায়হান’ জানিয়েছে, গত ২১ এপ্রিল রিয়াদের রাজপ্রাসাদে হওয়া অভ্যুত্থান চেষ্টার ঘটনায় সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের গায়ে অন্তত দু’টি গুলি লাগে। দীর্ঘদিন এমবিএস জনসম্মুখে না আসায় বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলে আরও কিছু গণমাধ্যম। এপ্রিলের শেষ ভাগ থেকে সৌদি যুবরাজের নতুন কোনো ছবি অথবা ভিডিও প্রকাশিত হয়নি জানিয়ে একই শংকা প্রকাশ করেছে প্রেস টিভিও। নতুন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও’র এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে রিয়াদ সফরের সময়ও এমবিএস’কে দেখা না যাওয়ায় সন্দেহের মাত্রা তীব্রতর হচ্ছে বলেও দাবি তাদের।
যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি, ২১ এপ্রিল প্রাসাদের খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়া একটি ড্রোন ভূপাতিত করতেই রক্ষীরা গুলি ছুঁড়েছিলো। সেই গোলাগুলির শব্দ শুনেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অভ্যুত্থানের খবর প্রকাশিত হয়েছিলো।
ঘটনার সময় সৌদি বাদশা সালমান প্রাসাদ ছেড়ে কিং খালেদ ঘাঁটিতে আশ্রয় নেন বলে সৌদি বিশেষজ্ঞ আলি আল-আহাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রুশ গণমাধ্যম স্পুটনিক। ওই ঘটনার সপ্তাহখানেক পরে কয়েকশ’ কোটি ডলারের একটি এন্টারটেইনমেন্ট রিসোর্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও সালমানের পাশে এমবিএস’কে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে স্পুটনিক।
এছাড়া ১৮ মে এমবিএস’র ব্যক্তিগত দপ্তরের পরিচালক বাদের আল-আসাকের টুইটারে সৌদি যুবরাজের সংগে আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, বাহরাইনের বাদশা বিন ইসা ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি’র একটি গ্রুপ ছবি পোস্ট করেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে সৌদি আরবের গণমাধ্যমগুলো কোনো খবর প্রকাশ করেনি।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বাড়ানো নিয়ে সুন্নিপ্রধান সৌদি আরবের সংগে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের বিরোধ কয়েক দশকের। ইয়েমেন ও সিরিয়া যুদ্ধেও তাদের অবস্থান প্রতিপক্ষ শিবিরে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছিলেন, দুই শর্তে তাঁর দেশ সৌদি আরবের সংগে সম্পর্ক ‘ভালো’ করতে পারে। “ইসরায়েলের সংগে বন্ধুত্ব নিয়ে বিভ্রান্তিকর অবস্থান ত্যাগ ও ইয়েমেনে অমানবিক বোমা বর্ষণ বন্ধ করতে হবে।”
তবে, এ বছরের মার্চে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে দেয়া সাক্ষাতকারে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স এমবিএস বলেন, ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ইরানের সংগে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। সংঘর্ষ এড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তেহরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
No comments:
Post a Comment