Monday, August 22, 2016
স্বর্ণ-জয়ী মার্গারিটাকে না পাওয়া কি বাংলাদেশের ব্যর্থতা?
ব্রাজিলের রিওতে সদ্য সমাপ্ত অলিম্পিকসে রিদমিক জিমন্যাস্টিকসে স্বর্ণ জয় করা রুশ তরুণী মার্গারিটা মামুনকে নিয়ে বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেশ আলোচনা চলছে। তাঁর স্বর্ণ জয়ের আগে ও পরে ফেসবুকে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন অনেকেই, তাকে শুভেচ্ছাও জানাচ্ছেন অনেক মানুষ। এর কারণ হলো মার্গারিটার বাবা আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশি, রাজশাহীর ছেলে তিনি। মি: মামুন রাশিয়ায় পড়তে গিয়ে সেখানে স্থায়ী হয়েছেন। বিয়ে করেছেন রাশিয়ান নারীকে। আর তাঁদেরই সন্তান মার্গারিটা মামুন। বাংলাদেশের অনেকেই তাই মনে করছেন, মার্গারিটার এই সাফল্য কিছুটা হলেও বাংলাদেশেরও সাফল্য। মার্গারিটার এই সাফল্য কি বাংলাদেশের জন্য গর্বের না ব্যর্থতার? বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনের মহাসচিব আহমেদুর রহমান বাবলু বিবিসিকে বলেছেন এটা গর্বের যে "মার্গারিটা বিদেশি বা রুশ নাগরিক হয়েও বাংলাদেশের কথা ভুলতে পারেনি। স্বর্ণ জয়ের পর ইন্টারভিউয়ে বলেছে, দুই দেশের জন্য তিনি স্বর্ণ জয় করেছেন। সে যে বাঙালি ,বাংলাদেশের কথা সে বলছে এটাই দেশের জন্য অনেক গর্বের"। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন পত্রিকাতেও লেখা হয়েছে যে মার্গারিটার যখন বয়স অল্প ছিল তখন তাঁর বাবা চেয়েছিলেন সে যেন বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারে। এই কথা কতটা সত্য? বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক ফেডারেশন কি জানতো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনও জিমন্যাস্ট বিদেশে ভালো করছে? মি: রহমান জানালেন তাঁরা এ বিষয়ে জানতেন এবং মি: মামুনও দেশের হয়ে মেয়েকে খেলাতে চেয়েছিলেন এটাও সত্য বলে স্বীকার করলেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনের মহাসচিব। "জিমন্যাস্টিকে পরিবেশ লাগে,পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জিমন্যাশিয়াম দরকার। রিদমিক জিমন্যাস্টিকে তেমন কোচ নেই। তাছাড়া আমাদেরটা অলিম্পিক স্ট্যান্ডার্ডেও নয়। তাছাড়া আর্থিক বিষয়ও জড়িত থাকে। এগুলো বুঝতে পেরে তিনি হয়তো চলে গেছেন"-বলছিলেন আহমেদুর রহমান। মার্গারিটাকে বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনে রাখতে না পারাকে বড় ব্যর্থতা বলেই মনে করেন মি: রহমান। মার্গারিটা জুনিয়র লেভেলে কিছুদিন বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন। কিন্তু সিনিয়র লেভেলে তিনি অংশ নেন রাশিয়ার হয়ে। মার্গারিটাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা। অনেকেই তাঁর স্বর্ণ জয়ের খবরটি প্রকাশ করে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। আবার অনেকের পোস্টে দেখা গেছে ভিন্নধর্মী মন্তব্য। অনেকে বলতে চেয়েছেন মার্গারিটা বাংলাদেশে থাকলে কখনও এই অবস্থায় পৌঁছাতে পারতেন না, কেউ হাস্যরসের ছলে বুঝাতে চেয়েছেন মার্গারিটা বাংলাদেশের নয়, রাশিয়ার। যেমন, সাইফুল্লাহ সাদেক তার পোস্টে লিখেছেন- "আমাদের মিডিয়া তাকে বাংলাদেশি বানিয়ে দিচ্ছে!! নিজের লোকদের এরা বিতর্কিত করে, আর ভিনদেশিদের নিয়ে গর্ব করে! আমি এই রাশিয়ান মেয়ের খেলা দেখেই খুব খুশি। বঙ্গকন্যা বলতে কিছু না!!" আবার সিলেট আমাদের জন্মভূমি নামে একটি পেইজে শেয়ার হয়েছে এই পোস্টটি "মার্গারিটা মামুন রিদমিক জিমন্যাস্টিকসে প্রথম হয়ে স্বর্ণ জিতেছে !!! তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার পিতা বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনে যোগাযোগ করেছিলো তার মেয়েকে বাংলাদেশের হয়ে অংশগ্রহণ করানোর জন্য, কিন্তু তখনকার প্রশাসন আগ্রহ প্রকাশ করেনি। যাই হোক তবুও আমরা তার এই অর্জনে আনন্দিত তো হতেই পারি"। তবে মেহেরুন ফারুক নামের একজন মার্গারিটার সাফল্য নিয়ে বাংলাদেশিদের উচ্ছ্বাসের সমালোচনা করেছেন। মেহেরুন তাঁর ফেসবুক পাতায় বিবিসি বাংলার একটি ছবি শেয়ার করেছেন, ঢাকায় নারীদের ম্যারাথনের একটি ছবিতে কিছু মানুষের বিরূপ মন্তব্য উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন- "আপনারা যারা মার্গারিটা মামুনের পদকের সম্মান নিজেদের ঝুলিতে নিতে অতি আগ্রহী... কষ্ট করে এই ছবির কমেন্ট সেকশন দেখুন। বা বিবিসির পেইজে আরো কিছু নারীর এচিভমেন্টের খবরের নিচের কমেন্ট পড়ুন। তারপরে ফেরত এসে বলেন। মার্গারিটা মামুনরা রাশান পতাকার নিচেই পদক না পেয়ে বাংলাদেশের পতাকার নিচে পাবে সেই আশাটাও করেন কিভাবে? লজ্জা হয় না?? আগে নিজেদের মানসিকতা নিয়ে লজ্জিত হয়ে পরে অন্যের গর্বের ভাগ চাইতে গেলে ভাল হয়"। তবে ফেসবুকে যে পোস্টটি খুব বেশি শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে, সেটি এমন: "মার্গারিটা মামুন বাংলাদেশে থাকলে আজ ২ বাচ্চার মা থাকতো। পোলাডার নাম থাকতো সোনা, মাইয়াডার নাম থাকতো রূপা। অফিস থেকে ফেরার পথে ওদের জন্য প্রতিদিন একটা কইরা অলিম্পিক বিস্কুটের প্যাকেট আনতো সোনা-রূপার বাপ। (সংগৃহীত)"। রিও অলিম্পিকের আসর শেষ হয়ে গেলেও মার্গারিটার স্বর্ণ জয় বাংলাদেশের জন্য আনন্দের নাকি ব্যর্থতার সে নিয়ে এখনও তুমুল আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment