মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী কোনো ধরনের নিপীড়ন চালায়নি বলে দেশটির সরকার গঠিত তদন্ত কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। কমিশনের দেয়া ওই প্রতিবেদনকে ‘পদ্ধতিগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি।
এদিকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নির্যাতনের প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মালয়েশিয়ার এক সন্ত্রাসবিরোধী শীর্ষ কর্মকর্তা। রোহিঙ্গাদের ওপর পুলিশী নির্যাতনের একটি ভিডিও অনলাইনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কয়েকদিন পর কমিশনের ওই প্রতিবেদন এবং তা নিয়ে এইচআরডব্লিউর এই প্রতিক্রিয়া আসলো।
রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিরাপত্তার জন্য বিশ্বব্যাপী যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তার ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই তদন্ত কমিশনটি গঠন করেছিল মিয়ানমার। ওই কমিশনের প্রধান এমন একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত ব্যক্তি। গত বুধবার কমিশনের দেয়া প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
কিন্তু এইচআরডব্লিউ মিয়ানমার সরকার গঠিত কমিশনের এই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এটিকে ‘পদ্ধতিগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করে বলেছে, ‘এটি পূর্ব-নির্ধারিত উপসংহারে পৌঁছানোর এক ধ্রুপদী উদাহরণ। আন্তর্জাতিক চাপ নিরসনের জন্য যেখানে দেখানো হয়েছে, অবস্থা অতোটা খারাপ নয়।’ উল্লেখ্য, এর আগে ‘জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়ার’ অংশ হিসেবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে বলে এইচআরডব্লিউ একাধিকবার অভিযোগ করেছে।
এদিকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নির্যাতনের প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিদেশি সমর্থকদের হামলার হুমকি দিন দিন বাড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মালয়েশিয়ার এক সন্ত্রাসবিরোধী শীর্ষ কর্মকর্তা। এক সাক্ষাৎকারে মালয়েশিয়া পুলিশের সন্ত্রাস-দমন বিভাগের প্রধান আয়ুব খান মাইদিন বলেন, গত মাসে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ আইএস এর সন্দেহভাজন এক অনুসারীকে আটক করেছে। ওই ব্যক্তি হামলা চালানোর জন্য মিয়ানমারে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। আটক ব্যক্তির নাম প্রকাশ না করলেও ওই ব্যক্তি ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক বলে জানান তিনি।
আয়ুব বলেন, ‘তিনি রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমদের হয়ে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদের পরিকল্পনা করছিলেন।’ তাকে অনুসরণ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আরও অনেক জঙ্গি মিয়ানমারে হামলা চালানোর চেষ্টা করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। যদিও মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাউ তাই বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, গত বছর অক্টোবরে রাখাইন রাজ্যে সীমান্ত পুলিশের উপর হামলার পেছনে সেখানে আইএস এর উপস্থিতি বা ওই হামলায় আইএস সংশ্লিষ্টতার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
No comments:
Post a Comment