Social Icons

Thursday, November 2, 2017

ব্রাজিল-মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্র আদম পাচার । বাংলাদেশী দালাল শরাফতের ৩১ মাস জেল ।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্য, ব্রাজিল, পেরু, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, পানামা, কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, এল সালভেদর, গুয়াতেমালা থেকে মেক্সিকো
 হয়ে বেআইনীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আদম পাচারকারি চক্রের হোতা শরাফত আলী খান ( ৩২) কে ৩১ মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। দন্ডভোগের পর তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের নির্দেশও প্রদান করেছেন ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ফেডারেল কোর্টের জজ রেগি বি ওয়াল্টন।

গত মঙ্গলবার আদম পাচারের চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায়ের তথ্য প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সহকারি এটর্নী জেনারেল কেনেথ এ ব্ল্যাঙ্কো বলেছেন, ‘দন্ডিত শরাফত একটি নেটওয়ার্ক গড়েছিলেন। বিভিন্ন দেশের লোকজনের কাছে মোটা অর্থ নিয়ে দুর্গম পথে যুক্তরাষ্ট্রে আনার এ নেটওয়ার্কে থাকা আরো লোকজনকে ধরার চেষ্টা চলছে। 
শরাফতকে গ্রেফতার করা হয় গত বছরের জুলাই মাসে কাতার থেকে। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এনে তার বিচার করা হলো। এই বিচারের মধ্য দিয়ে বেআইনী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় অবস্থানের কথাই প্রকাশ পেল। মামলায় উদঘাটিত হয় যে, পানামার সবচেয়ে বিপজ্জনক একটি জঙ্গল রয়েছে, তার নাম ডেরিয়েন গ্যাপ। সামান্য পানি আর খাদ্য নিয়ে পায়ে হেঁটে এই দুর্গম পথ পাড়ি দিতে অনেকেই শাপের কামড়ে মৃত্যুবরণ কিংবা বাঘের পেটেও গেছে। আবার পানামা খাল সাঁতরে পাড়ি দিতে গিয়েও অনেকে ভেসে গেছে। এমন অমানবিক কর্মকান্ডকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না। মামলা চলাকালে শরাফত খান আরো কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে, যা বিবেকসম্পন্ন মানুষ মাত্রেই চমকে উঠবেন। কোনমতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর অনাদায়ী অর্থ আদায়ের জন্যে জিম্মি করে রাখার কৌশলও অবলম্বন করা হয়। ফেডারেল কোর্টের নথি অনুযায়ী, এই শরাফত খান নিজেকে আড়ালে রাখতে অনেক সময়েই ডা. নকিব হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন তার মক্কেলদের কাছে। এজেন্টরাও তাকে ডা. নকিব হিসেবেই জানতো। এই ব্যক্তি একেকজন বাংলাদেশীকে যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অঙ্গিকারে ২৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা করে নিয়েছে বলে মামলায় প্রমাণিত হয়। তবে সমুদয় টাকা তার হাতে আসতো না। এজেন্টরা ঘাটে ঘাটে খরচা বাবদ কেটে রাখতো।

কাতার, ব্রাজিল, সেন্ট্রাল আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, মেক্সিকোতে রয়েছে এই নেটওয়ার্কের এজেন্ট। এসব দেশের সীমান্তরক্ষীসহ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সাথেও এদের লেন-দেনের ব্যাপার রয়েছে। যদিও চু’ড়ান্ত গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরও অনেকেরই দিন কাটে ডিটেনশন সেন্টারে। এক পর্যায়ে অনেককেই নিজ দেশে ফিরে যাবার ঘটনাও ঘটছে। তাই, সংশ্লিষ্ট সকলকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, দালাল ধরে মোটা অর্থ প্রদানের পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ যেন যুক্তরাষ্ট্রে আসার চেষ্টা না করে। কারণ, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র্রে প্রবেশ করলেই বৈধতার কোন গ্যারান্টি নেই। বরঞ্চ, দালালের জন্যে বরাদ্দকৃত অর্থে নিজ দেশেই ব্যবসা করলে আমেরিকার চেয়েও ভালো অবস্থায় দিনাতিপাত করা সম্ভব বলে ভুক্তভোগিরা মন্তব্য করছেন। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, এই নেটওয়ার্কে মোটা অর্থ দিয়ে বেশ কয়েক হাজার বাংলাদেশী গত ৬/৭ বছরে মেক্সিকো আসতে সক্ষম হন। এদের অধিকাংশই সীমান্ত রক্ষীদের দৃষ্টির সীমানায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেন এবং ধরা পড়ার পরই রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। তবে পরবর্তীতে তারা বাংলাদেশ থেকে প্রয়োজনীয় ডক্যুমেন্ট সংগ্রহে সক্ষম না হওয়ায় মাসের পর মাস টেক্সাস, আলাবামা, ফ্লোরিডা, লুইজিয়ানা, মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাদা, আরিজোনা অঙ্গরাজ্যের ডিটেনশন সেন্টারে অতিবাহিত করতে হয় মাসের পর মাস। যাদের আত্মীয়-স্বজন অথবা পরিচিত লোক রয়েছেন, তারা ইতিমধ্যেই বন্ড পেয়ে মুক্তি লাভ করেছেন। আর যাদের কেউ নেই, তাদের চোখের জল সম্বল করে ডিটেনশন সেন্টারে দিন কাটাতে হচ্ছে। এবং গত এক বছরে কমপক্ষে ১২ শতাধিক বাংলাদেশী যুবককে ডিপোর্ট করা হয়েছে। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার পর যারা প্যারলে মুক্তি পেয়েছেন, তাদের বেশ কয়েকজনের সাথে ইতিপূর্বে কথা হয় এ সংবাদদাতার। সে সময়ে সকলেই বলেছেন যে, ব্রাজিল হচ্ছে সকলের প্রধান বিরতি স্থল। সেখান থেকে বিভিন্ন পথে মেক্সিকোর উদ্দেশ্যে পাঠানোর সময় প্রতিটি গ্রুপের সাথেই এই শরাফত খানের এজেন্টরা থাকে

 অর্থাৎ দালাল হিসেবে অত্যন্ত যত্নের সাথে আদম পাচারের চুক্তিটি সম্পন্ন করতে কখনোই কার্পন্য করেননি শরাফত খান। আর এভাবেই আদম পাচারের নেটওয়ার্ক প্রসারিত হয়েছে সারাবিশ্বে। একইসাথে ফেডারেল গোয়েন্দাদের মনোযোগ বাড়ে এই সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদেরও যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার আশংকায়। ব্রাজিলে দালালদের ঘাঁটির ওপর নজরদারি বাড়ানোর পরই শরাফত খানকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়।




No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates