আর্থিক সচ্ছ্লতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে নিজ দেশ ছেড়ে উন্নত দেশে পাড়ি জমানোর ঘটনায় মৃত্যুর হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। পাশাপাশি মানব পাচারকারীদের আয়ও বেড়েছে। গত বছর শুধুমাত্র ইউরোপে আগত ১০ লক্ষাধিক ইমিগ্র্যান্টের কাছে থেকেই পাচারকারিদের আয় হয়েছে ৫ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার। বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীদের কাছে থেকে আরো কত বিলিয়ন আয় হয়েছে সে পরিসংখ্যান অবশ্য করা হয়নি। তবে গত বছর মেক্সিকো সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় মারা গেছে ১১৭ জন। এর অধিকাংশই অবশ্য স্প্যানিশ। অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরোপে প্রবেশকালে মারা গেছে ২৬০০ জন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গত বছর বেআইনিভাবে ঢুকেছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ইমিগ্র্যান্ট। অপরদিকে, মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে কমপক্ষে ২৫ লাখ। বেআইনিভাবে প্রবেশের সময় মৃত্যুবরণকারীর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে কম। তবে যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের জন্যে দালালরা সবচে' বেশি অর্থ পেয়ে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছে তাদের প্রায় সকলকেই ২৫ লাখ টাকার বেশি দিতে হয়েছে দালালকে। তবে সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশগুলোর জন্যে দালালদের দাবির পরিমাণ অনেক কম।
হেগে অবস্থিত ইউরোপের ২৮ দেশের সমন্বয়ে ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন’-এর ইউরোপোল এবং ইন্টারপোলের তথ্য অনুযায়ী গত বছর ইউরোপে বেআইনিভাবে প্রবেশকারিদের ৯০%-ই কোন না কোনভাবে দালালের সহায়তা নেন। গভীর সমুদ্রে নৌকা থামিয়ে পাচারকৃত লোকজনের কাছে থেকে অঙ্গিকারের অবশিষ্ট আদায়ের ঘটনাও ঘটছে। যারা তা পরিশোধে গড়িমসি করতে চায় তাদেরকে অনেক সময়েই সমুদ্রে ফেলে হত্যা করার ঘটনাও ঘটে। ইউরোপোলের তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা অন্য কোন দেশ থেকে ইউরোপে পাচারের জন্যে দালালদের রেট হচ্ছে সর্বনিম্ন ৩২০০ ডলার এবং সর্বোচ্চ ৬ হাজার ডলার। পাচারের পথে ২৫০টি স্থান রয়েছে-যেগুলোতে যাত্রা বিরতি দিয়ে দালালেরা তাদের পাওনা আদায় করে নেয়।
ইমিগ্র্যান্টদের গতিবিধি সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখে এমন কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা মার্কিন মিডিয়াকে জানিয়েছে, আদম পাচারের এ নেটওয়ার্কে শতাধিক দেশ জড়িত। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেনের মত দেশে আদম পাচারে নির্দিষ্ট একটি চক্র কাজ করছে। এ চক্রের সাথে স্ব স্ব দেশের লোকজনও জড়িত। ক্ষেত্র বিশেষে সীমান্ত রক্ষীদেরকেও সম্পৃক্ত করা হয় মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে।
মধ্যপ্রাচ্যের কোন কোন দেশে যুদ্ধ-সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে অসংখ্য মানুষ নিরাপত্তার প্রশ্নে ইউরোপ-আমেরিকায় ছুটছেন। সমুদ্র পাড়ি দিতে হচ্ছে প্রায় সকলকেই। অসহায় নারী-শিশুসহ দেশ ত্যাগিরা তাদের সর্বস্ব খুইয়ে দালালকে অর্থ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা শুধু নয়, রিফ্যুজি হিসেবে যারা ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমাচ্ছেন তাদের কাছেও ঐ চক্র অর্থ আদায় করছে। যারা দাবিকৃত অর্থ দিতে নিতান্তই অপারগতা প্রকাশ করেন, তাদের কাছে লিখিত অঙ্গিকার নেয়া হচ্ছে যে, গন্তব্যে পৌঁছার পর পুরোদমে কাজ শুরুর পর মাসিক কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপের পথে রওয়ানা দেয়া সর্বশেষ একটি জাহাজ ডুবে মারা গেছে ১০০০ ইমিগ্র্যান্ট। লিবিয়া থেকে তারা ইতালিতে যাচ্ছিলেন। এ রুটে চলতি বছর আরো কটি জাহাজ/নৌকা ডুবে যায়। সেগুলো থেকে ১৪ হাজারের মত ইমিগ্র্যান্টকে উদ্ধার করা হয়। গত সপ্তাহে ডুবে যাওয়া নৌকা/জাহাজ থেকে ৯০০ জনের লাশ উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে। উদ্বাস্তু সম্পর্কিত হাই কমিশনার মিডেসিন্স ফ্রন্টিয়ার্স বলেছেন, আমরা কখনোই প্রকৃত সংখ্যা জানতে পারি না। কারণ, এরা আইনি প্রক্রিয়ায় রওয়ানা দেন না।
No comments:
Post a Comment