Saturday, April 14, 2018
দক্ষিণ আমেরিকায় ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বিস্তার লাভ করছে । ব্রাজিল ও চিলি সরকার ইসরাইল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
গাজায় ইসরাইলের নির্বিচারে আক্রমণ, মানুষ হত্যা ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিক্রিয়ায় লাতিন আমেরিকায় (দক্ষিণ আমেরিকায়) সুপ্ত ইহুদিবিরোধিতা এখন জেগে উঠে ব্যাপক বিস্তার লাভ করছে। এই বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে ব্রাজিল ও চিলি সরকার ইসরাইল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
গাজায় ইসরাইলের নির্বিচারে আক্রমণ, মানুষ হত্যা ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিক্রিয়ায় লাতিন আমেরিকায় (দক্ষিণ আমেরিকায়) সুপ্ত ইহুদিবিরোধিতা এখন জেগে উঠে ব্যাপক বিস্তার লাভ করছে। এই বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে ব্রাজিল ও চিলি সরকার ইসরাইল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কিউবার জাতীয় নেতা ফিডেল ক্যাস্ট্রো ইসরাইলের এই আক্রমণকে ‘গণহত্যা’ (জেনোসাইড) বলে অভিহিত করেছেন। ভেনিজুয়েলাসহ আরো কিছু রাষ্ট্র এ হামলার জন্য প্রকাশ্যে ইসরাইলের নিন্দা করছে। অনেক ইহুদি পণ্ডিত ও বিদগ্ধজন এই ইহুদিবিরোধিতাকে খাটো করে দেখানোর জন্য এটাকে ‘ইসরাইলের নিন্দা’ তবে ইহুদিবিরোধিতা নয় বলে অভিহিত করতে চাইছেন। দক্ষিণ আমেরিকাবাসী সাধারণ ইহুদিরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছেন যে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিশেষ করে নবীন প্রজন্মের সেলফোন ব্যবহারকারীরা যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে এই হামলার জন্য ইসরাইলের নিন্দা করে তারা একই সাথে কঠোরতম ভাষায় ইহুদিদের নিন্দামূলক মন্তব্য দেয়। এ হতে ইহুদি পর্যবেক্ষকেরা দক্ষিণ আমেরিকায় ইহুদিদের প্রতি বিরূপতা দারুণভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে বলে আশঙ্কিত হয়ে উঠছে। কয়েক শ’ বছর আগে উপনিবেশবাদী স্পেন থেকেই দক্ষিণ আমেরিকার মাটিতে ইহুদি বিরূপতার বীজ বপিত হয়েছিল। তখন স্পেন দক্ষিণ আমেরিকায় প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপন করেছিল। এর ফলে দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র ব্রাজিল (ব্রাজিলের ভাষা হচ্ছে পর্তুগিজ) ছাড়া আর সব রাষ্ট্রের ভাষা হচ্ছে স্প্যানিশ। ঈসা পয়গম্বরের জন্মের পূর্বকাল থেকে ইহুদিরা স্পেনে বসবাস করত। স্পেনে ক্যাথলিক খ্রিষ্টানরা ক্ষমতার শীর্ষে ওঠার পর ১৪৯২ সালে ইহুদিদের সরকারিভাবে স্পেন থেকে বহিষ্কার করা হয়। স্পেনে দৈনিক বক্তৃতা-বিবৃতিতে, পুরনো গল্পকাহিনী বয়ানে এবং জনমতের প্রধান প্রধান প্রবাহে আবহমান ইহুদি-নিন্দা এখনো প্রখরভাবে প্রকাশ পায়। তবে এর পাশাপাশি প্রাচীন যুগের সেফারদিম’ নামীয় স্পেনীয় ইহুদিদের কিছু সংস্কৃতি এবং জীবনধারার প্রতিও সম্মান দেখানো হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলা ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশে পরিণত হওয়ার পর ইউরোপ থেকে ইহুদিদের দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্রগুলোতে আগমনের জোয়ার সৃষ্টি হয়। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো থেকে পালিয়ে বিপুল সংখ্যায় ইহুদিরা আর্জেন্টিনায় আশ্রয় নেয়। ইউরোপে নাৎসিদের উত্থানের সাথে সাথে যখন ইহুদিবিদ্বেষ চরমভাবে বিস্তৃতি লাভ করে তখন ১৯২০-৩০ দশকে পোল্যান্ড থেকে হাজারে হাজারে ইহুদি চলে এসে মেক্সিকোতে বসবাস শুরু করে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হলে নাৎসিদের প্রচারণায় ও প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিরূপতার প্রভাবে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে সংবাদপত্র ও বুদ্ধিজীবী এবং ডানপন্থী রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী মহলে হিটলারের জার্মানি ও নাৎসিবাদের প্রতি সমর্থন বেড়ে যায়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমাপ্তিতে পরাজিত জার্মানি থেকে পলায়নপর নাৎসিদের প্রতি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জুয়ান পেরন অবাধভাবে আর্জেন্টিনায় প্রবেশের দুয়ার খুলে দেন। এর ফলে আর্জেন্টিনায় ইহুদিদের প্রতি বিরূপতা অনেকটা গভীরভাবে প্রোথিত হয়েছে। আর্জেন্টিনার ঐতিহ্যধারী ভূস্বামী শ্রেণী এবং সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ইহুদিদের প্রতি বিরূপভাব বিশেষভাবে বিরাজমান। আর্জেন্টিনায় সামরিক শাসনের সময় যেসব ইহুদি সামরিক জান্তার হাতে পড়েছে তাদের প্রতি... হিটলারের নাৎসি প্রশাসন যেভাবে ইহুদি আন্দোলন করেছিল... সেই ধরনের আন্দোলননীতি প্রয়োগ করা হয় বলে অভিযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক প্রভাবশালী সংবাদপত্র ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ (ইহুদি মালিকানাধীন) এক উপসম্পাদকীয়তে বলেছে যে মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমান সংঘর্ষ দক্ষিণ আমেরিকায় বসবাসকারী ইহুদিদের জন্য এক দারুণ আশঙ্কাময় পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের এলাকা বেদখল করায় দক্ষিণ আমেরিকায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরদার হয়ে এখন রাজপথে ইহুদি বিরোধী বিক্ষোভে পরিণত হচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকায় ইহুদিদের প্রতি বিরূপতা জোরদার হওয়ার দু’টি কারণ উল্লেখ করা হচ্ছে। এক. ভেনিজুয়েলাতে চেভিসের শাসন সময়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি দৃঢ় সমর্থনভিত্তিক কঠোর ইহুদিবিদ্বেষ গড়ে উঠতে দেয়া হয়। দুই. সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক বিস্তার, যার মাধ্যমে ডানপন্থীদের ইহুদিবিদ্বেষ ইহুদিদের সম্পর্কে কঠোর সব মন্তব্যের রূপ নিচ্ছে, যা বামপন্থী শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাবিদরাও অনুমোদন করছেন। ইসরাইলের গাজায় বেপরোয়া আক্রমণ, প্রাণহানিকর ও বিধ্বংসী কার্যক্রমে দক্ষিণ আমেরিকার জনগণের মধ্যে ইহুদিদের প্রতি বিরূপ ও নিন্দাভাব এভাবে প্রখর হয়ে উঠছে। মধ্যপ্রাচ্যে একটি ন্যায়ভিত্তিক সার্বিক সমাধানই শুধু দক্ষিণ আমেরিকায় নয়, বিশ্বব্যাপী ইহুদিবিরূপতাকে নমনীয় করতে পারে। এ ধরনের উদ্যোগ ও প্রয়াসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী ইহুদিদের খোলা মন নিয়ে অংশগ্রহণ ও আলাপ-আলোচনা করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর এই উপসম্পাদকীয়তে।
Labels:
আন্তর্জাতিক,
ব্রাজিল,
লাতিন আমেরিকা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment