সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থিত ব্লু মার্কেটে ফ্যাশন হাউসগুলোর ব্যবসা হারিয়ে বিপাকে পড়ছেন সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। এক সময় সকাল দশটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত যে ফ্যাশন হাউসগুলো আলোর ঝলকানিতে ক্রেতা আকৃষ্ট করতো, সেগুলো এখন রাত নয়টা বাজতেই অন্ধকারে তলিয়ে যায়। সৌদি সরকারের সাম্প্রতিক কঠোর বিধি-নিষেধের ঘেরাটোপে পড়ে ক্রমশঃ ম্রিয়মান হয়ে পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্যের একদা সরগরম প্রতিটি খাত। প্রবাসীদের যে ১২ ধরনের কাজে সৌদি সরকার সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ফ্যাশন বা বুটিক হাউস, যার অন্য নাম ব্লু মার্কেট। বলা হয়, এই খাতের নব্বই শতাংশ প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যেখানে কাজ করছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা এই খাতে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন।
সম্প্রতি সৌদি সরকার ঘোষণা করেছে, ৪০ ভাগ সৌদি নাগরিককে এই খাতে নিয়োগ দিতে হবে। এতেই কপাল পুড়েছে ফ্যাশন হাউসগুলোর মালিক ও কারিগরদের। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে বাধ্যতামূলকভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দক্ষ কারিগরদের ছাঁটাই করে যোগ্যতা ও দক্ষতাহীন সৌদি নাগরিকদের নিয়োগ দিতে হবে। এদিকে হঠাৎ কর্মচ্যুত প্রবাসী বাংলাদেশিরা পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায়ও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না সৌদি সরকারের অবিবেচক সিদ্ধান্তের কারণে। জেদ্দার ব্লু মার্কেটে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ফ্যাশন হাউস পরিচালনা করেছেন চট্টগ্রামের রফিক চৌধুরী।সম্প্রতি তিনি মাত্র পঞ্চাশ হাজার রিয়ালে সৌদি এক ব্যবসায়ীর কাছে নিজের প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে সপরিবারে দেশে ফিরে এসেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরাও দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। রফিক চৌধুরী জানান, সৌদিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেসব সেক্টরে শেকড় গেড়ে বসেছিলেন, এর প্রায় প্রতিটিতেই এমন বিপর্যয় নেমে এসেছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন ‘আমার ফ্যাশন হাউসে ১০ জন কারিগর কাজ করতেন।প্রতিমাসে খুব ভালো ব্যবসা হতো। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন অন্য ফ্যাশন হাউসগুলোতেও জমজমাট ব্যবসা হতো। এসব হাউসের পণ্যের গুণগত মান সৌদি ক্রেতাদের কাছে খুব কদর পেয়েছিলো। কিন্তু সৌদি সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে তা ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সৌদি সরকারের নিয়ম অনুযায়ী খাতবিশেষে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সৌদি নাগরিককে নিয়োগ দিতে হবে। ফলে বেকার হয়ে পড়বেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি। পক্ষান্তরে যাদের নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হচ্ছে, তাদের নেই সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে কাজ করার ন্যূনতম অভিজ্ঞতাও। এদের বেশিরভাগ নারী-পুরুষই বয়স্ক এবং তালাকপ্রাপ্ত। সমস্যা আরও আছে। যে বেতনে বাংলাদেশি কারিগর পাওয়া যেতো, তার চেয়ে দ্বিগুণ বেতন দিয়ে এসব অদক্ষ সৌদি নারী-পুরুষকে নিয়োগ দিতে হবে। সৌদি সরকারের এমন নিয়ম মানতে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যবসা লাটে উঠছে। ফ্যাশন খাতের ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা মনে করেন, বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল সৌদি সরকারের সাথে আলোচনা করে বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধান খুঁজতে পারে। এতে যেসব সেক্টরে প্রবাসীদের কাজে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। অন্যথায়, সৌদি থেকে প্রবাসী প্রত্যাবর্তনের মিছিল চলতে থাকলে তা বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহে এমনকি দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
No comments:
Post a Comment