সভ্যতার যে উপাদানগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর অন্যতম পরিবার। এ উপাদানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্বামী, স্ত্রী ও সন্তান একত্রে বসবাস করে সামাজিক একটা ভিত্তি দাঁড় করানো।
শুধু একত্রে বসবাস বললে কিছুটা ভুল হবে, বলা উচিত স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের দায়িত্ব নিয়ে বংশবৃদ্ধি করার প্রক্রিয়ায় নিজেদের স¤পৃক্ত করার নামই পরিবার। যখন একে অপরের দায়িত্ব কেউ নিতে শিখে গেল, তখন সে সামাজিকভাবেও দায়িত্ববান হয়ে গেল।
কিন্তু এ পরিবার প্রথায় এখন ব্যাপক ভাঙন পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কারণেই সামাজিক অস্থিরতা দিন দিন বেড়ে চলছে। প্রথমে একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে একক পরিবার প্রথা চালু হতে থাকে। তখনও সমাজ চিন্তাবিদরা এর বিরুদ্ধে কথা বলে গেছে, কিন্তু বড় কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি।
যখন একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে গেল, তখন স্বামী-স্ত্রী মা-বাবাকে ছেড়ে আলাদা বাড়িতে থাকতে শুরু করল। হয়তো স্বামী চাকরি করছে, স্ত্রী বাসায় থাকছে; স্বামী স্ত্রীকে ঠিকভাবে সময় দিতে পারছে না অথবা স্বামীকে যথাযথভাবে স্ত্রী সময় দিতে পারছে না। শুরু হল সম্পর্কের দ্বন্দ্ব।
এতে কিছুদিন আমাদের সমাজ ভুগেছে। কিন্তু এখন যে সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি সমাজে খারাপ প্রভাব ফেলছে তা হল পরকীয়া নামক অসুস্থ এক ব্যাধি। এমনই একটি ঘটনা ঘটে গেছে কিছুদিন আগে।
আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে বেরিয়ে এলো পরকীয়ার মতো সামাজিক অপরাধ। এর আগে শিশু হত্যাসহ নির্মম কিছু উদাহরণ আমরা দেখেছি একই কারণে। কিন্তু এবার দেখলাম স্বামী হত্যার ঘটনা।
প্রশ্ন আসতে পারে, কেন এমন হচ্ছে? এর উত্তরে খুব স্বাভাবিকভাবেই আসবে কয়েকটি বিষয়। যেমন- স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়া কমে যাওয়া, দু’জন দু’জনকে সময় কম দেয়া, একে অপরের প্রতি দায়িত্বহীনতা বেড়ে যাওয়া, অপসংস্কৃতির প্রভাব এবং ধর্মীয় অনুশাসন না মেনে চলা।
অপসংস্কৃতির কথা এলেই চলে আসবে ভারতীয় কিছু টিভি সিরিয়ালের কথা। আমরা আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারলেও কেন জানি সমস্যা সমাধানে কোনো অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারছি না। আমরা জানতে পারছি অপসংস্কৃতি আমাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে, তবুও তা বন্ধ করতে পারছি না।
আমরা বুঝতে পারছি ধর্মীয় অনুশাসন না মানার কারণেই সামাজিক এ অবক্ষয়গুলো হচ্ছে, তবুও ধর্মের ব্যপারে আগ্রহী হতে পারছি না!
যদি এভাবে চলতে থাকে তবে সামাজিক প্রতিটি সঠিক আচরণই বিপরীত আচরণ করতে শুরু করবে। শিশুরা একসময় নিজেদের নিরাপত্তাহীন ভেবে নেশার দিকে আরও বেশি ধাবিত হবে। এরকম অস্থিরতা থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হলে সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
এটা একটা জাতীয় সমস্যা হওয়ার আগেই সমস্যা চিহ্নিত করে একে নির্মূলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যদি সমাজের কাছে পরিবারগুলোকে দায়বদ্ধ না করা যায়, তবে সমাজের সবচেয়ে মূল্যবান এ উপাদান তার ভারসাম্য হারাবে এবং সমাজ পতিত হবে অসভ্যতার গহিন কূপে।
সাঈদ চৌধূরী : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর
No comments:
Post a Comment