পত্রিকার পাতা উল্টালেই প্রতিনিয়ত চোখে পড়ে স্বপ্নের দেশ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা কিংবা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার হাতছানি। দেখলে মনে হতে পারে, কেউ চাইলেই এই দেশগুলোতে গিয়ে বসবাস বা কাজ করার সুযোগ পাবেন। আসলেই বিষয়টি এতো সরল না। যাচাই-বাছাই না করে এই হাতছানিতে পড়ে অনেক বাংলাদেশি তরুণ সর্বশান্ত হচ্ছেন। টাকা ও সময় নষ্ট করে অনেকের ভবিষ্যত আজ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে। সাম্প্রতি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা কিংবা অনলাইন নিউজ পোর্টালের শিরোনামে চটকদার বিজ্ঞাপনের দেখা মিলছে। কানাডায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ।
বহুকৃষ্টির দেশ কানাডা এই বছরের প্রথমদিকে নতুন করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অভিবাসী নেওয়ার ঘোষণা দেয়। কানাডার ইমিগ্রেশন মন্ত্রী আহমেদ হোসাইন গণমাধ্যমেকে জানান, স্কিলড ও ট্রেড স্কিলডসহ অন্যান্য ক্যাটাগরিতে আগামী তিন বছরে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বৈধভাবে কানাডায় অভিবাসনের সুযোগ পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশে প্রকাশিত অনেক বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে, এ বছর নতুন করে বাংলাদেশি থেকে তিন লাখ লোক নেবে কানাডা। বাস্তবতা হলো এই অভিবাসী শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, সারা পৃথিবী থেকে নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে কানাডার জব মার্কেটে বাংলাদেশিদের দক্ষতার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশিরা ইংরেজি বলার দক্ষতায় এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার কয়েকটি দেশের তুলনায় পিছিয়ে। তাই কানাডায় বাংলাদেশিদের স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাওয়াটা সহজসাধ্য নয় বলে মনে করেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।
কানাডায় বাংলাদেশিদের জন্য স্থায়ী বসবাসের সুযোগ কতোটা সহজ হতে পারে প্রশ্ন করলে আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন ও কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আলহাজ শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ ভয়েস বাংলাকে জানান, দক্ষ ও সংশ্লিষ্ট পেশায় অভিজ্ঞ লোক ছাড়া কোনও অবস্থাতেই কানাডায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, বসবাসের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ছয় মাস হতে তিন বছরের ট্রেড স্কিল সার্টিফিকেট ও এক হতে তিন বছরের কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকজন সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করলেই আবেদন করতে পারবেন। সেখানেও রয়েছে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি। নূন্যতম পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগে একটি প্রক্রিয়াকে সফলভাবে সমাপ্ত করতে। কারণ বাংলাদেশি আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় কানাডার এম্বেসি নতুন করে সাপোর্টিং ডকুমেন্টস চায়, সেই ক্ষেত্রে সময় আরও একটু বেশি লাগে।
কানাডায় ইমিগ্রেশন পেতে হলে বাংলাদেশিদের কি কি প্রক্রিয়ায় এগোনো দরকার জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, প্রচলিত এক্সপ্রেস এন্ট্রি, নতুন নতুন পিএনপি এবং ট্রেড স্কিল্ড প্রোগ্রামের আওতায় কানাডা সরকার আবেদনকারীদের চাহিদা পূরণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ বাংলাদেশি লোকজনদের এই সুযোগটি নেওয়া উচিত। আগ্রহী লোকজন একজন অভিজ্ঞ ইমিগ্রেশন আইনজীবীর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ ও ফাইলটি প্রসেস করতে পারেন। নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী সঠিক প্রোগ্রাম নির্বাচন এবং সঠিক সময়ে সঠিকভাবে আবেদন ও ফলোআপ করার মধ্যেই সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বর্তমান গ্লোবালাইজেশনের যুগে দক্ষ কর্মিবাহিনীর কদর সকল দেশেই রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে কর্মযোগ্যতাসম্পূর্ণ কেউ অভিবাসী হবার জন্য আবেদন করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবেন না এমন মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। কেবল দক্ষ জনশক্তি এই সুযোগ গ্রহণ করা উচিত বলে তাঁরা মনে করেন। এতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূতি উজ্জ্বল হবে এবং দক্ষ ও যোগ্য অভিবাসী হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত হবে।
No comments:
Post a Comment