ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার দাবির মধ্যেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তায়েপ এরদোগান বলেছেন মৃত্যুদণ্ড পুনর্বহাল করতে তার সরকার প্রস্তুত। সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম জানান, এ বিষয়ে আজ বুধবার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক হবে। সেখানেই মৃত্যুদণ্ড বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এদিকে তুরস্ক মৃত্যুদণ্ডের বিধান ফিরিয়ে আনলে দেশটিকে সদস্য করবে না বলে সতর্ক করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
সিএনএনকে এরদোগান বলেন, অভ্যুত্থান চেষ্টা স্পষ্টত রাষ্ট্রদ্রোহিতা। তাই এখন পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে কী সাংবিধানিক ব্যবস্থা নেয়া যায়। যদি তুর্কি জনগণ দাবি জানায় এবং পার্লামেন্ট প্রয়োজনীয় আইনি অনুমোদন দেয় তাহলে মৃত্যুদণ্ড পুনর্বহাল করা হবে। মঙ্গলবার সকালে এক ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বলেন, সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়ার ঘটনায় প্রথমবারের মতো জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। মৃত্যুদণ্ড বিষয়ে আমাদের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে, আশা করছি বুধবার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেয়া হবে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সতর্ক করে দিয়েছে, তুরস্ক যদি মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনে তাহলে দেশটিকে তারা নিজেদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করবে না। তুরস্ক ইইউর সদস্য পদ পেতে সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০০৪ সালে মৃত্যুদণ্ড রদ করে।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ড পুনর্বহাল নিয়ে তুরস্কের আলাপ-আলোচনার প্রতি নজর রাখছেন ইইউ নেতারা। এ বিষয়ে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল টেলিফোনে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে বলেছেন, আমরা জানি না ইইউতে তুর্কির অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি কখন ঘটবে। তবে মৃত্যুদণ্ড পুনর্বহাল হলে এটি কখনোই ঘটবে না।
মৃত্যুদণ্ডের প্রতি সমর্থন বিরোধী দলের : বিদ্রোহী সেনাদের বিচারে মৃত্যুদণ্ড পুনর্বহালের যে কথা বলছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগানসহ সরকারের লোকজন তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তুরস্কের বিরোধী দলগুলোর অন্যতম ন্যাশনাল মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) প্রধান দেভলেত বাহচেলি। পার্টির সংসদীয় কমিটির সাপ্তাহিক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, যারা একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের জন্য বিদ্রোহ করেছে তাদের সঙ্গে কুর্দি সন্ত্রাসী গ্রুপ পিকেকে ও আইএসের কোনো পার্থক্য নেই।
বাংলাদেশীদের সতর্ক বার্তা : তুরস্কে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর আনন্দ-উৎসবে তুর্কিদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসেন বহু বিদেশীও। বিষয়টি নিয়ে দেশটিতে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তুর্কিদের অনেকেই একে ভালো চোখে দেখেননি। খোদ বিদেশী শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে। বাংলাদেশী বেশকিছু শিক্ষার্থীকেও ওই উৎসবে যোগ দিতে দেখা যায়। তারা উৎসবে যোগ দেয়ার ছবিসহ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। একে দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশের কনস্যাল জেনারেল এএফএম বোরহান উদ্দিন বলেন, এর ফলে বিভক্ত তুর্কি সমাজে আমাদের সম্পর্কে খারাপ বার্তা যাবে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
২৬ জেনারেল কারাগারে : ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে দেশটির ২৬ জ্যেষ্ঠ জেনারেলকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে। এসব শীর্ষ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ওই ২৬ জনের মধ্যে দেশটির বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল একিন ওজতুর্কও আছেন। তুরস্কের কিছু গণমাধ্যম একিনকে অভ্যুত্থানের মূল পরিকল্পক হিসেবে বর্ণনা করেছে। তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
২৫ বিদ্রোহী নিখোঁজ : এদিকে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার ৪ দিন পার হলেও এখনও দুটি হেলিকপ্টারসহ বিদ্রোহে যোগ দেয়া বিশেষ বাহিনীর ২৫ কর্মকর্তা নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানায় দেশটির সরকার। এ বিদ্রোহীরা রাতে এরদোগানের হোটেল লক্ষ্য করে হামলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেন-দরবার : স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা তুর্কি ধর্মীয় নেতা ফেতহুল্লাহ গুলেনকে তুরস্কে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া নিয়ে তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক শুরু হয়েছে। এদিকে গুলেনকে তুরস্কের হাতে ফিরিয়ে দিতে হাজার হাজার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তুর্কি অনলাইনে আবেদন করেছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবারও ইস্তাম্বুলসহ বিভিন্ন স্থানে গুলেনবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে।
Wednesday, July 20, 2016
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment