শুধু অলিম্পিকটা বাদ দিন, এর বাইরে বিশ্ব ফুটবলে যতটি বড় শিরোপা জেতা সম্ভব, সবই তারা জিতেছে। পাঁচটি বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা আটটি, চারটি কনফেডারেশন কাপ...ব্রাজিলের অর্জনের তালিকাটা অনেক লম্বা। কিন্তু জানেন কি, এর সবকিছু্ই শুরু হয়েছিল ১৯১৪ সালের ২১ জুলাই। গতকাল ছিল যার ১০২ বছর পূর্তি। সেই শুরুটাও হয়েছিল যেভাবে, কে ভেবেছিল, সেই দলই একদিন হবে ইতিহাসসেরা!
একটু চমক হয়ে আসতে পারে তথ্যটা, এখন আন্তর্জাতিক ফুটবল দাপিয়ে বেড়ালেও ব্রাজিল তাদের ফুটবল ইতিহাসের প্রথম ম্যাচটা খেলেছে একটি ইংলিশ ক্লাব দলের বিপক্ষে। এমনই এক ক্লাব, এ যুগের ইংলিশ ফুটবল সমর্থকদের কাছেও নামটা অচেনা ঠেকতে পারে—এক্সেটার সিটি। বর্তমানে ইংলিশ ফুটবলের চতুর্থ স্তরে (লিগ টু) খেলে। ১৯১৪ সালের ২১ জুলাই এই দলটির বিপক্ষেই নিজেদের ইতিহাসের প্রথম ম্যাচ খেলেছিল ব্রাজিল।
অবশ্য ব্রাজিল না বলে ‘ব্রাজিলিয়ান একাদশ’ও বলা যেতে পারে। দলটি যে তৈরি হয়েছিল রিও ডি জেনিরো ও সাও পাওলোর দুই ক্লাবের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে। তা-ও কী ঘটনাচক্রে!
আর্জেন্টিনা সে সময় ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এফএ) কাছে অনুরোধ করেছিল একটা দল পাঠাতে। যাতে আর্জেন্টিনার স্থানীয় ক্লাবগুলো সেই দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে পারে। তো এফএ সে সময় ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের লিগের তালিকায় মাঝামাঝি থাকা এক্সেটারকে পাঠিয়ে দিল দক্ষিণ আমেরিকা সফরে। আর্জেন্টিনায় খেলার পর দেশে ফেরার আগে ব্রাজিলেও তিনটি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল এক্সেটার। সেলেকাও ইতিহাসের শুরুও সেখানে।
প্রথম ম্যাচটা এক্সেটার খেলল ব্রাজিলে থাকা ইংলিশ অভিবাসীদের একটা দলের সঙ্গে। ৩-০ গোলে সেই ম্যাচ জেতার পর দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল রিওর একটা দল। সেই ম্যাচেও এক্সেটার জিতল ৫-৩ গোলে। কিন্তু রিওর দলটির যেন আঁতে ঘা লাগল এতে। পরের ম্যাচে নামার আগে স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে সাও পাওলোর সেরা খেলোয়াড়দের কাছে সাহায্য চাইল রিওর দলটি।
দুই ক্লাবের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া সেই ব্রাজিল একাদশই হলো এক্সেটারের তৃতীয় ম্যাচের প্রতিপক্ষ। রিওর লারানজেইরাস স্টেডিয়ামে ম্যাচটি দেখতে ১০ হাজার দর্শকও এলেন। উত্তেজনা ছড়াল সেই ম্যাচ, মাঠে একটু রক্তও (নাকি দাঁত?) ঝরল। অসওয়ালদো গোমেজের গোলে ব্রাজিলিয়ানরা এগিয়ে যাওয়ার পর এক্সেটার যেন একটু যুদ্ধংদেহী হয়ে পড়ে। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার আরতুর ফ্রেইডেনরিখকে নাকি এমন ট্যাকলই করেছিল যে বেচারার দুটি দাঁতই পড়ে গেছে। এটিরই ‘প্রতিশোধ’ নিল ব্রাজিলিয়ান একাদশ, ওসমানের গোলে ম্যাচ জিতে যায় ২-০ গোলে।
ওই ম্যাচটিই ব্রাজিলের আজকের এত সমৃদ্ধ ইতিহাসে ভোরের প্রথম প্রহরের মতো। রিও ও সাও পাওলোর ক্লাবের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ওই দলটির দেখানো পথেই আজ হলুদ রঙে ঔজ্জ্বল্য ছড়াচ্ছেন নেইমার-কাকারা। এই ম্যাচ অফিশিয়াল আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্বীকৃতি অবশ্য পায়নি। ব্রাজিল প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিল ১৯১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে।
Friday, July 22, 2016
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment