আহত হয়ে মাটিতে পড়ে থাকা এক নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলায় ইসরাইলের সামরিক আদালত শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত সেনাকে নরহত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে। পরবর্তী একটি তারিখে সাজা ঘোষণা করা হবে। তার সর্বোচ্চ ২০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।
বিচারক কর্নেল মায়া হেলার আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিচারের রায় পড়ে শোনান। বিচারক রায়ে আসামি পক্ষের আইনজীবীদের দেখানো যুক্তির কঠোর সমালোচনা করেন। তিন সদস্যের বিচারক প্যানেলের পক্ষে কর্নেল হেলার বলেন, ওই আহত ফিলিস্তিনি যেহেতু কোনো হুমকি সৃষ্টি করছিল না সেহেতু আজারিয়ার তাকে গুলি করার কোনো কারণ ছিল না। বিশ বছর বয়সী সার্জেন্ট এলর আজারিয়া গত মার্চে অধিকৃত পশ্চিমতীরের হেবরনে আবদুল ফাতাহ আল শরিফ নামে এক ফিলিস্তিনিকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে।
আবদুল ফাতাহ আল শরিফ এর একটু আগেই এক ইসরাইলি সেনাকে ছুরিকাঘাত করে। তবে এর পরপরই অন্য সেনারা তাকে ধরে ফেলেন। আহত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় সার্জেন্ট এলর আজারিয়া তাকে মাথায় সরাসরি গুলি করে। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর এ নিয়ে ইসরাইলে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়।
ফিলিস্তিনি এবং ইসরাইলি মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে একটি ‘প্রতিশোধমূলক হত্যা’ বলে বর্ণনা করে। তবে সার্জেন্ট আজারিয়ার যুক্তি দেখায় যে আহত ফিলিস্তিনি আত্মঘাতী বোমার বেল্ট পরা ছিল বলে তার সন্দেহ হয়েছিল। সেজন্যেই সে তাকে গুলি করে হত্যা করে। এই মামলাটি নিয়ে ইসরাইলি জনমত মারাত্মকভাবে বিভক্ত ছিল এবং এ নিয়ে সেখানে তীব্র বিতর্ক চলছিল।
অনেকে অভিযোগ করেন যে একজন আহত নিরস্ত্র মানুষ, যার দিক থেকে কোন ঝুঁকি আর ছিল না, তাকে ঠাণ্ডা মাথায় এভাবে সরাসরি গুলি করে হত্যা করে সার্জেন্ট আজারিয়া সামরিক বাহিনীর আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। বিচার বহির্ভূত হত্যার দায়ে এজন্যে তার সাজা দাবি করেন তারা। তবে অন্যরা ছুরি হাতে সন্ত্রাসী হামলায় অংশ নেয়া ওই ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে সার্জেন্ট আজারিয়া ঠিক কাজই করেছেন বলে যুক্তি দেন।
বহু ইসরাইলি সার্জেন্ট আজারিয়ার পক্ষ সমর্থন করে গত কয়েক মাস ধরে রাস্তায় নেমেছেন। আজকেও আদালতের বাইরে তাদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। গত এক বছর ধরে ইসরাইলি ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি এলাকাগুলোতে ছুরি হাতে এরকম অনেক হামলা চালিয়েছিল ফিলিস্তিনিরা।
হেবরনের ওই ঘটনায় হামলাকারী অপর ফিলিস্তিনি রামজি আজিজ আল কারসাউই সৈন্যদের গুলিতে নিহত হন। তবে আবদুল ফাতাহ আল শরিফ আহত অবস্থায় মাটিতে পড়েছিলেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় তিনি তখনো জীবিত। এরপর দেখা যায় সার্জেন্ট আজারিয়া রাইফেল দিয়ে খুব কাছ থেকে তার মাথায় গুলি করছেন। সরকারি কৌঁসুলিরা আদালতে বলেন, সার্জেন্ট আজারিয়া কোন বিচার-বিবেচনা ছাড়া এভাবে মাটিতে পড়ে থাকা ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে সামরিক বাহিনীর ‘রুলস অব এনগেজমেন্ট’ লঙ্ঘন করেছেন।
সরকারি কৌঁসুলিরা আদালতকে জানান, গুলি করার আগে সার্জেন্ট আজারিয়া তার কাছাকাছি থাকা অপর এক সৈনিককে বলছিলেন, এই লোকটাকে মেরেই ফেলা উচিত। এএফপি।
No comments:
Post a Comment