Social Icons

Friday, May 19, 2017

ব্রাজিলের আমাজান জঙ্গল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জঙ্গল।

আমরা যতই চাঁদ, মহাকাশ জয় করি না কেন, পৃথিবীর অনেক রহস্যই আজও অজানাই রয়ে গেছে। আমাজন জঙ্গল এমনই একটি রহস্য। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জঙ্গল। 
আমাজান জঙ্গল আমাজন নদীর অববাহিকায় অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিরক্ষীয় বন, যা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তরভাগে অবস্থিত ৯টি দেশের অন্তর্ভুক্ত। এর আয়তন প্রায় সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার। আমাজান বন অত্যন্ত দুর্গম। তবে দক্ষ গাইডসহ নদী পথে ভ্রমণ এই নিরক্ষীয় বনের প্রাকৃতিক বিষ্ময় দেখার সবচেয়ে ভালো উপায়। প্রাচীনকাল থেকেই অভিযাত্রীরা আমাজানে যাত্রা করে মূলত স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ধন-রতেœর খোঁজে। পর্তুগিজ অভিযাত্রীরা বিশ্বাস করত, বিশাল এ বনের মধ্যেই কোথাও লুকিয়ে আছে ‘এলডোরাডো’ নামক এক গুপ্ত শহর, যা পুরোপুরি সোনার তৈরি। এই ভ্রান্ত ধারণাটি এসেছে গ্রিক পৌরাণিক গল্প থেকে যেখানে বলা হয়েছে যে ‘এলডোরাডো’ নামক সোনায় মোড়ানো শহরটি পাহারা দেয় এক শ্রেণীর বিশেষ নারী যোদ্ধারা, যাদেরকে গল্পে ‘আমাজন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। পর্তুগিজ, স্প্যানিশ এবং ফ্রেঞ্চ অভিযাত্রীরা প্রতিযোগিতায় নামে এই ‘এলডোরাডো’ শহর আবিষ্কারের জন্য। কিন্তু কেউ এই কাল্পনিক শহরের খোঁজ পায়নি। শহরের সন্ধান না পেলেও স্থায়ী হয়ে যায় সেই নারী যোদ্ধাদের নাম। তাদের নামানুসারেই এই জঙ্গলের নাম হয় ‘আমাজান’ জঙ্গল। 
আমাজানকে রেইনফরেস্ট বলা হলেও এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে, এখানে সারা বছর বৃষ্টিপাত হয়। বরং রেইনফরেস্ট বলা হয় এখানকার অত্যধিক আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত (বর্ষা মৌসুমে) এবং গরম আবহাওয়ার কারণে। প্রচণ্ড গরম এখানে আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ। এই গরম আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত এবং আর্দ্রতার কারণে এ বনে উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের বৈচিত্রময় সমাহার দেখা যায়। এখানে আছে ১২০ ফুট উঁচু গাছ, ৪০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ২.৫ মিলিয়ন প্রজাতির কীট-পতঙ্গ ১,২৯৪ প্রজাতির পাখি, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২৮ প্রজাতির উভচর এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ হাজারো প্রজাতির অজানা জীব-অণুজীব। এখানকার প্রাণীবৈচিত্র অতুলনীয়। মজার বিষয় হলো হাজারো রকমের প্রাণীর সমাহার থাকলেও এখানকার ইকোসিস্টেম অত্যন্ত শক্তিশালী যা মিলিয়ন বছর ধরে টিকে আছে। 

এই বনের স্তন্যপায়ীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জাগুয়ার, গোলাপি ডলফিন, তামানডুয়া, তাপির, মানাতি, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি,বাদুড় ইত্যাদি। 
পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঈগল, টুকান, হোয়াটজিন, দ্রুতগামী হামিং বার্ড এবং আরও রঙ-বেরঙের অনেক পাখি। পৃথিবীর সকল পাখির এক পঞ্চমাংশ পাখি এই বনের অধিবাসী। 
মাছের মধ্যে আছে মাংসাশী লাল পিরানহা, বিপদজনক বৈদ্যুতিক মাছ এবং স্বাদু পানির অন্যতম বড় মাছ-পিরারুকু, যার ওজন ১৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। উভচর প্রাণীর মধ্যে লাল চোখ বিশিষ্ট গেছো ব্যাঙের নাম না বললেই নয়। সরিসৃপের মধ্যে আছে বিখ্যাত সাপ বোয়া যা তার শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে। তাছাড়া রয়েছে কুমির, অ্যালিগেটর, কচ্ছপ প্রভৃতি। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পিঁপড়া, বড় তলাপোকা, রঙ-বেরঙের প্রজাপতি, শুঁয়োপোকা আর জানা অজানা হরেক রকমের পোকা-মাকড়ের বসতি এই আমাজনে। 



পৃথিবী যখন আধুনিকায়নের সিঁড়ি বেয়ে দিন দিন মহাশূন্যের গ্রহ নক্ষত্র চাঁদ সবকিছু মানুষের হাতের মুঠোই নিয়ে এসেছে ঠিক এই সময় দক্ষিণ আমেরিকার বিশাল আমাজান নদীবিধৌত অঞ্চল ব্রাজিলের অ্যাকরি রাজ্যের পেরুর সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চলের গভীর আমাজান জঙ্গলে এখনো সভ্যতার আলো ছাড়া বাস করে প্রাচীন উপজাতীয় মানবগোষ্ঠী। যাদের অনেকের সঙ্গেই কোনো যোগাযোগ নেই সভ্য দুনিয়ার। যাদের পরনে এখনও কোন কাপড় নেই। সম্প্রতি বিমান থেকে তেমনি একটি অরণ্যচারী মানবগোষ্ঠীর খবর পাওয়া যায়।
অবৈধভাবে ভূভাগে কেউ প্রবেশ করেছে কিনা তা দেখার জন্য গত সপ্তাহে পেরু সীমান্তে টহলের সময় ব্রাজিলের একটি বিমান থেকে তাদের এই ছবি তোলা হয়। আকাশ থেকে তোলা ছবিটিতে দেখা যায়, গভীর অরণ্যে কলাগাছের বাগান ঘেরা কয়েকটি কুঁড়েঘরের নিচে নগ্ন অবস্থায় কিছু মানুষ আকাশের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বিমান দেখে। তাদের কাউকে কাউকে বর্শা হাতে ভয় দেখাতেও দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অরণ্যচারী মানবগোষ্ঠীটি ছোট এবং তাদের সঙ্গে সভ্য জগতের কোনো সম্পর্ক নেই।
ব্রাজিল সরকারের ধারণা মতে দেশটির অ্যাকরি রাজ্যের দুর্গম গভীর অরণ্যে বাস করা এই মানবগোষ্ঠীটির লোকসংখ্যা প্রায় দুশো। নানা কারণে হুমকির মুখে থাকা এই ছোট্ট গোষ্ঠীটিকে বাঁচাতে সরকার ইচ্ছে করেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করার পলিসি গ্রহণ করেছে। তবে ছোট্ট গোষ্ঠীটি সভ্য মানুষদের অরণ্যধ্বংস, মাইনিং, গবাদি পশু পালন, মাছধরা, অবৈধ শিকারসহ স্বেচ্ছাচারিতার বলি হয় কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখছে।আমাজান জঙ্গলে এখনো সভ্যতার আলো ছাড়া বাস করে প্রাচীন উপজাতীয় মানবগোষ্ঠী
জানা গেছে, প্রাচীন আসহানিনকা উপজাতীয় গোষ্ঠীর লোকেরা অন্য ছোট গোষ্ঠীর লোকদের সঙ্গে ওই অঞ্চলে ভাগাভাগি করে থাকে। এছাড়াও আমাজানে সভ্য জগতের সঙ্গে যোগাযোগবিহীন আরেকটি ছোট্ট গোষ্ঠী আছে। ধারণা করা হচ্ছে এটিই সেই গোষ্ঠী। এইসব গোষ্ঠীগুলোকে যেন তাদের জায়গা থেকে তাড়ানো না হয় সেজন্যে ব্রাজিল সরকার ও এনজিওগুলো কাজ করছে।





No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates