ইস্তাম্বুলে বসবাসকারী মিসরের নির্বাসিত ইসলামপন্থীরা অনেক আগেই এরকম অভ্যুত্থান দেখেছে। মাত্র তিন বছর আগে মিসরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের সর্বোচ্চ নেতা মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির সামরিক কর্মকর্তারা। এরপর অভ্যুত্থান পরবর্তী হয়রানি এড়াতে তুরস্কে আশ্রয় নেয় মুরসিপন্থী মিসরীয় নেতারা।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ইস্তাম্বুলে বসে প্রবাসী সরকার গঠনের অনুমতি দেন তাদের। এছাড়াও রাজনৈতিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বৈঠক ও সভা আয়োজনের সুবিধা এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পাঁচটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চালানোর অনুমতিও দেয়া হয় তাদেরকে।
এ কারণেই তুরস্কের সামরিকবাহিনীর একটা অংশ যখন শুক্রবার রাতে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে উৎখাতের উদ্যোগ নিয়েছিল, তখন দেশটিতে বসবাসকারী মিসরীয় ইসলামপন্থীরা ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এরদোগান সেই অভ্যুত্থান দমনে সফল হওয়ায় এখন তারা এরদোগানকে আদর্শ মেনে আবারও মিসরের ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
আসলে তুরস্কের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা এবং কঠোর হস্তে তা দমনের ঘটনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় প্রভাবিত করেছে বৈশ্বিক রাজনীতির অন্য নিয়ামকগুলোকে। দৃশ্যত অভ্যুত্থানটি ব্যর্থ হয়েছে এবং এ ঘটনাকে ইসলামপন্থীদের বিজয় হিসেবে অভিহিত করে এরদোগানকে অভিনন্দিত করছে মুসলিম ব্রাদারহুড।
আবার ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মিসরের ইসলামপন্থীরা ২০১৩ সালের জুলাইয়ে সেনা অভ্যুত্থানে নিজেদের ক্ষমতা হারানোর ঘটনার সঙ্গে এরদোগানের ঘটনাকে এক করে দেখতে রাজি নয়। দুটি ঘটনা সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে দাবি করেছে তারা। এ ব্যাপারে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষ থেকে। তারা বলছে- তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধান, প্রধান সামরিক কর্মকর্তারা এবং প্রধান বিরোধী দলগুলো পর্যন্ত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছে। কিন্তু এর বিপরীত ঘটনাই ঘটেছিল মিসরে। প্রত্যেকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান মৌনভাবে এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দল প্রত্যক্ষভাবেই মুরসির অপসারণকে সমর্থন করেছিল।
উপরন্তু মিসরের বেসামরিক জনগোষ্ঠীর মাঝেও বিরাজ করছিল পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং আদর্শিক দ্বন্দ্বে তারা ছিল প্রকাশ্যই বিভাজিত। কিন্তু এরদোগানের বেসামরিক ভিত্তি ছিল মজবুত এবং তারা সবাই এরদোগানের পেছনেই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।
এখন ইসলামপন্থীরা বিশ্বাস করে যে, এরদোগানের বিজয় মিসরের বিভাজিত ইসলামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা জোগাবে। ওয়াম টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রাদারহুডের নেতা গামাল হাসমেত বলেন, সম্ভবত এ ঘটনাই মিসরের ইসলামপন্থী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ভিত্তি রচনা করবে- যার মাধ্যমে অভ্যুত্থানকারী সেনা শাসনের পতন ঘটানো সম্ভব হবে।’ আরেকজন ব্রাদারহুড নেতা তুরস্কের ঘটনাকে একটি সংকেত হিসেবে বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, এ ঘটনাই প্রমাণ করে যে, কোনো অভ্যুত্থানই চিরকাল স্থায়ী হয় না। এ কারণে যখনই মিসরের বর্তমান সরকার দুর্বল বা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যাবে ঠিক তখনই এরদোগানের মতো দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে তাদের ধরাশায়ী করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।
মিসরের ইসলামপন্থীরা এরই মধ্যে নিজেদের প্রতিশোধ পরিকল্পনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগা মাধ্যমগুলোতে মতামত প্রকাশ করতে শুরু করেছে। গিজার ব্রাদারহুড নেতা বদর মুহাম্মদ বদর লিখেছেন, ‘তুরস্কের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের প্রত্যেককে বড় কোনো জনসমাগমের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হবে বলেই আমি আশা প্রকাশ করি এবং অনিবার্যভাবেই মিসরের অভ্যুত্থানকারীদের জন্যও একই পরিণতি অপেক্ষা করছে।’ আরও আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ করেছেন ব্রাদারহুডের ঘনিষ্ঠ অনলাইন পত্রিকা ‘রাসদ’-এর প্রতিষ্ঠাতা আমর ফারাদা।
তিনি লিখেছেন, ‘মিসরের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মগজকে পাথরের আঘাতে ছিটকে যেতে দেখব একদিন- সে আশাতেই বেঁচে আছি।’ ব্রাদারহুডের বিরোধিতাকারীদেরও একই পরিণতি হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্যভাবে, এরদোগানের সফলতা মিসরের ইসলামপন্থীদের ‘অভ্যুত্থান-জয়’ দমনের অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।
অন্যদিকে সেনা অভ্যুত্থান যাতে ব্যর্থ না হয় তা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে মিসরের ক্ষমতাসীন নেতারা।
Wednesday, July 20, 2016
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment