সমগ্র বিশ্বের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ড অন্যতম। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক। বিশ্বের অন্যতম ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন হওয়ায় পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও এর দ্বীপ পাতায়া। থাইল্যান্ডের পূর্ব-উপকূলে থাইল্যান্ড উপমহাসাগর ও পশ্চিমে আন্দামান সাগর। উপমহাদেশ তো বটেই সারা বিশ্ব থেকে এখন থাইল্যান্ডে বেড়াতে আসেন অসংখ্য দর্শনার্থী।
* কেন যাবেন : প্রাকৃতিক রূপলাবণ্যের ও আধুনিকতায় শীর্ষে থাকা থাইল্যান্ডে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যা আগত দর্শনার্থীদের ব্যাপক আনন্দ দেয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীতকালের তিনটি ঋতুতে সারা বছর পার হয়ে যায়। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ দেশের সমুদ্রসৈকত, ভূদৃশ্য তদুপরি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসংবলিত থাইল্যান্ড বিশ্বের পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
কিভাবে যাবেন : ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য অবশ্যই থাইল্যান্ডের অ্যাম্বাসিতে একটি আবেদন করতে হবে। ভিসা প্রসেসিং তেমন একটা কঠিন নয়। বাংলাদেশ থেকে সহজে থাইল্যান্ড যাওয়ার জন্য এয়ার বাই বা বিমানে করে যেতে হবে। থাইল্যান্ড অ্যাম্বাসি আপনার সার্বিক দিক বিবেচনা করে আপনাকে ট্যুরিস্ট ভিসার অনুমোদন দেবে।
* কোথায় ভিসা পাবেন : আমরা অনেকেই জানি না কিভাবে সহজেই বাংলাদেশ থেকে কী করে থাইল্যান্ডের ভিসা পেতে পারি। বর্তমানে থাইল্যান্ডের ভিসা পেতে অনেকটা সহজ, এ ছাড়া আপনি অনলাইনেও ভিসার আবেদন করতে পারবেন। ভিসার আবেদন জমা দেওয়ার জন্য গুলশানের স্টার সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় থাইল্যান্ডের অ্যাম্বাসি রয়েছে। ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য জনপ্রতি দুই হাজার টাকা, ভিসা সার্ভিস চার্জ ৪০০ টাকা, ব্যাংক চার্জ ৪০ টাকা জমা দিতে হয়। এ ভিসার মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস থাকে। থাইল্যান্ড দূতাবাসের ঠিকানা ১৮-২০ মাদানী রোড, বারিধারা, ঢাকা-১২১২। ফোন : ৮৮১২৭৯৫-৬, ৮৮১৩২৬০-১, ফ্যাক্স : ৮৮৫৪২৮০/৮৮৫৩৯৯৮।
* প্রয়োজনীয় কাগজপত্র : পাসপোর্টের বৈধতার পাশাপাশি ভ্রমণের জন্য কমপক্ষে ছয় মাস পাঁচ দিনের মেয়াদ থাকতে হবে। থাই দূতাবাস থেকে সংগৃহীত ভিসা ফরম পূরণ করতে হবে পাসপোর্টের সঙ্গে মিল রেখে। জাতীয় পরিচয়পত্রের দুই কপি ফটোকপি। সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের চার কপি ছবি, ছবির আকার অবশ্যই ৪.৫, ৩.৫ সে.মি. হতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট কমপক্ষে ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেখাতে হবে। ভ্রমণের উদ্দেশ্যসংবলিত তথ্যনামা, চাকরিযুক্ত হলে কর্তৃপক্ষের ছুটির মঞ্জুরপত্র অথবা ছাত্রছাত্রী হলে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের অনুমোদনকৃত পত্র। ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স ও বিমানের টিকিটের বুকিং কপি দিতে হবে। বাচ্চাদের জন্য তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ মায়ের পাসপোর্টের সি ফরম যুক্ত করতে হবে (যদি প্রয়োজন হয়)।
যা করবেন : এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি ট্যাক্স * বা গাড়িতে করে আপনার নির্ধারিত স্থান বা বুকিংকৃত হোটেলে উঠবেন। প্রয়োজনে স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিতে পারেন। এয়ারপোর্টে থাই ম্যাপ পাওয়া যাবে বা আপনার মোবাইলের ইন্টারনেটের মাধ্যমে থাইম্যাপ বের করে নিজেই যেতে পারেন।
* কোথায় অবস্থান করবেন : এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে সরাসরি আপনার বুকিংকৃত হোটেলে উঠবেন যদি হোটেল বুকিং না করে থাকেন তবে রাজধানী ব্যাংককে অনেক বড় বড় হোটেল রয়েছে যেখানে আপনি সহজেই আপনার পছন্দের হোটেল বুক করতে পারবেন। থাইল্যান্ডে ট্যুরিস্টদের জন্য অনেক নামিদামি হোটেলের ব্যবস্থা রয়েছে যার খরচ আপনার হাতের নাগালের মধ্যেই।
কেনাকাটা : থাই ব্যাংকক সিটিতে অনেক দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের শপিং বা কেনাকাটা করার ব্যবস্থা। ব্যাংকক সিটিতে রাতের বেলায় হাজারও দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজপথ। এ নাইস সিটিতে ঘোরাফেরা থেকে শুরু করে কেনাকাটা সবকিছুতেই রয়েছে অন্যরকম আনন্দ। বিশ্বের অনেক নামিদামি ব্রান্ডের দোকানের পাশাপাশি রয়েছে আলোকসজ্জিত শপিংমল। ফ্লোটিং মার্কেট পাতায়ার অভিনব শপিং সেন্টার।
যেখানে খাবেন : থাই সিটিতে দেশি-বিদেশি অনেক খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ব্যাংকক সিটি ও পাতায়া দ্বীপে নানা ধরনের কাবারের সমারোহ; চিংড়ি, জায়ান্ট কাবাব, চিকেন, হাঁসের বিফ, সামুদ্রিক মাছের হরেক পদ। পাশাপাশি মেন্যুতে পাবনে ব্যাঙ, ঝিনুক, শামুক, বেবি অক্টোপাস, কাঁকড়া, সাপ, মেনকি ফড়িংও। ব্যাংকক সিটির মূল আকর্ষণ হচ্ছে টাইগার রেস্টুরেন্ট যেখানে না গেলে অনেক বড় মিসিং হয়ে যাবে।
* যা যা দেখবেন : বলিউড, টালিউড রঙিন সিনেমার পাশাপাশি থাই পাতায়ায় পর্যটকদের জন্য থাইল্যান্ড এ মুহূর্তে অন্যতম পছন্দের স্থান। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, পাতায়া, ফুকেতে ছুটছেন ভ্রমণপিপাসু অনেক বাঙালি। মাকড়শার জালের মতো ছড়িয়ে অসংখ্য উড়ালপুল। প্রতিটি রাস্তার একটি লেন, রোডের প্রায় দুটি লেনেই সমানভাবে চওড়া আর এটাই হচ্ছে ব্যাংকক। নাইস সিটির বুকচিরে বয়ে গেছে চাও-ফ্রায়া নদী। রাতের মায়াবি আলোয় জলপথে শহরটাকে ঘুরে দেখতে অসাধারণ লাগে। রিভার ক্রুজ, বিদেশিদের কাছে অন্যতম নিশিজীবন। রাত যত বাড়তে থাকে ততই রঙিন হয় ব্যাংকক সিটি। শহরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ডান্স বার, ডিস্কো বার। সর্বত্রই পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়, পাঁচিলঘেরা চওড়া মাঠ, জলাশয়। মাটি থেকে তিন ফুট উপরে প্লাটফর্মের রেস্তোরাঁ। গোটা রেস্তোরাঁটি ঘেরা বুলেটপ্রুফ কাচে, যেকোনো সময় কৌতূহলি বাঘের থাবা এসে পড়তে পারে আপনার লাঞ্চ টেবিলের কাচের দেয়ালে। পাহাড়, সমুদ্রেঘেরা ছোট্ট শহর পাতায়া।
No comments:
Post a Comment