নিউইয়র্কের লাখো প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবা প্রদানে অঘোষিত অভিভাবকের ভূমিকা পালন করছেন বাংলাদেশি চিকিৎসকেরা। এতে প্রবাসীরা যেমন উপকৃত হচ্ছেন তেমনি চিকিৎসকেরাও প্রবাসে দেশের মানুষকে সেবা দিতে পারছেন। বাংলাদেশি চিকিৎসকেরা ইতিমধ্যে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে অনেক ক্লিনিক স্থাপন করেছেন। বর্তমানে এ দেশের যেকোনো অঙ্গরাজ্যের হাসপাতালে বাংলাদেশি চিকিৎসকেরা কর্মরত আছেন। আর তাঁদের সেবার কারণে প্রবাসে বাংলাদেশের সুনাম বাড়ছে অনেক গুনে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগদানের পূর্বশর্ত যেকোনো জরুরি ফোন কলে হাজিরা দিতে হবে এবং যেকোনো সময় রোগীদের টেলিফোন কলেরও জবাব দিতে হবে। এ দায়িত্বটি বাংলাদেশি চিকিৎসকেরা খুব ভালো ভাবে পালন করছেন। সে কারণে অন্যান্য দেশ বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলো তুলনায় বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সুনাম বেশি। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক দম্পতি রয়েছেন যাদের দুজনই এ চিকিৎসা পেশায় যুক্ত। ব্যক্তিগত জীবনে সময় স্বল্পতার মধ্যে থাকলেও নেই কোনো অভিযোগ, ক্লান্তি বা অবহেলা। তবুও স্বাচ্ছন্দ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন পেশাটি।
চিকিৎসকদের মা-বাবা, ভাই-বোন আলাপচারিতায় গর্বের সঙ্গে নাম উচ্চারণ করেন তাদের ছেলে বা মেয়ে কিংবা ভাই-বোন ডাক্তার। প্রবাসেও অনেক মা-বাবা চান তাঁদের সন্তান যেন চিকিৎসক হয়ে সেবা দিতে পারে। ৭০ ও ৮০ দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রবাসীরা চিকিৎসা নিয়ে মহা সমস্যায় পড়তেন। হাতে-গোনা ২ থেকে ৪ জন ছাড়া বাংলাদেশি তেমন কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। যার কারণে অনেক বাংলাদেশি চিকিৎসা পেশা নিতে গিয়ে প্রধান সমস্যায় পড়তো তা হলো ভাষাগত সমস্যায়। যেটা তাদের প্রচুর বিড়ম্বনায় ফেলে দিতো। সেই সময় বাংলাদেশিরা ভাষাগত সমস্যার সমাধানে দোভাষী নিয়ে যেতো। কিন্তু দোভাষী সবসময় পাওয়া যেত না। অপেক্ষা করতে হতো দু-চার দিন।
অন্যদিকে, পাকিস্তানি বা ভারতীয়দের ওই ধরনের সমস্যা হতো না। তাদের দেশের অনেক চিকিৎসক সে সময় চাকরিরত ছিলেন। মারজিয়া নামের এক বয়স্ক প্রবাসী বাংলাদেশি বললেন, সত্তরের দশকে ম্যানহাটন মেট্রোপলিটন হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এখন বন্ধ। গিয়েছিলেন, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা নিয়ে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় সমস্যাটি বোঝাতে সক্ষম হইনি। একপর্যায়ে এক পাকিস্তানি চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ হয়। ভাষাগত সমস্যায় তিনি অনুমানে আমাকে পেটের পীড়ার ওষুধ লিখে দেন। কিন্তু আমি অনুমান করতে ব্যর্থ হইনি যে, এটা আমার প্রয়োজনীয় ওষুধ না।
বর্তমান প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, আমাদের ৭০ বা ৮০ দশকের অভিবাসীদের প্রত্যাশা ছিল হয়তো একদিন অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশি চিকিৎসকেরা যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্যা সমাধানে সক্ষম হবেন। শেষ হবে আমাদের বিড়ম্বনা। প্রতিফলিত হবে আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটির আশা-আকাঙ্ক্ষা। তিনি বলেন, আজ আমরা মহাখুশি। আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে। মারজিয়া বলেন, নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের যেখানেই যাবেন দেখতে পাবেন আমাদের যোগ্য সন্তানেরা ক্লিনিক করেছেন। হাসপাতালেও পাবেন আমাদের বাংলাদেশি চিকিৎসক।
তাই বাংলাদেশি চিকিৎসকেরা আমাদের গর্ব। একই ভাবে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের অন্যান্য দেশে একইভাবে এই সমসার সমাধান করার সম্ভব হলে আমাদের বাংলাদেশিদের অনেক সমস্যা দ্রুতই সমাধান করার সম্ভব হবে বলেও আশা করেন মারজিয়া। আমিনুল ইসলাম বলেন, আজ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ডাক্তারদের কমতি নেই। অন্যান্য দেশে তুলনায় অনেক ভাবেভাবে কাজ করেছেন তারা। বিভিন্ন বড়বড় চিকিৎসাকেন্দ্রে আজ কাজের সুযোগ হয়েছে তাদের।
এমনকি অনেক চিকিৎসা পেশায় অনেক বড় ধরনের সমস্যা সমাধানেও তাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে অনেক। বর্তমানের অবস্থা অব্যাহত থাকলে আশা করার যায় বাংলাদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা সেবা নিতে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।
No comments:
Post a Comment