বছরের ৩৬৫ দিনের প্রায় প্রতিদিনই অামাদের দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা ও ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে পড়তে যাওয়ার নানা রকম চমকপ্রদ ও লোভনীয় বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে৷নামে বেনামে বিভিন্ন স্টুডেন্ট কনসালটেন্সি ফার্ম ও প্রতিষ্ঠান এসব বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন৷তাতে প্রলোভিত হয়ে প্রতিনিয়ত ওসব প্রতিষ্ঠানে ভিড় জমান কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে ও তাদের অভিভাবক৷ সাইপ্রাস, মাল্টা, গ্রিস, স্পেন, ইতালী, জার্মানী, ইংল্যান্ড, অায়ারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্কসহ ইউরোপের যে কোন দেশে অনায়াসে ছাত্র পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেবার পাশাপাশি ওয়ার্ক পারমিট, গ্রীণকার্ড, স্থায়ীভাবে স্যাটেলড হওয়া ও বড় অংকের বেতনে চাকুরির নিশ্চয়তা ও মিষ্টি কথার প্রলোভনে পড়ে ছাত্রছাএী ও তাদের অভিভাবক টাকা-পয়সার লেনদেন করে থাকেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে৷পরিশেষে দেখা যায়- অনেকে এসব দেশের কোন কোনটিতে অাসতে সক্ষম হন, অাবার অনেকে টাকা-পয়সা সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন৷
গেল বছরের অাগস্টে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে বাচ্চাদের স্কুল সবেমাত্র বন্ধ হয়েছে ৷ পরিবারের সবাই বায়না ধরলো বার্সেলোনার বাহিরের কোন শহরে ঘুরতে নিয়ে যেতে ৷ সবার সিদ্ধান্ত হলো, অামার ছুটির দিনে বার্সেলোনা থেকে প্রায় একশো কিলোমিটার দূরের সাগরঘেষা পর্যটন শহর টাররাগোনায় ঘুরতে যাবো ৷ সপ্তাহের শেষে একদিন সকালে সবাইকে নিয়ে রয়ানা দিলাম টাররাগোনার পথে ৷ প্রায় ঘন্টা দেড়েকের মধ্যেই অামরা টাররাগোনায় পৌঁছে গেলাম৷
অত্যন্ত মনোরম এ শহরটির প্রধান অাকর্ষণ তার সমুদ্র সৈকত ও অতি পুরাতন নানা স্থাপত্যশিল্প৷এছাড়াও আছে প্রাকৃতিক ও কৃত্তিমভাবে গড়ে ওঠা অাকর্ষনীয় নানা জায়গা, যেগুলোতে সারাক্ষণ পর্যটকদের ভিড় জমে থাকে৷ট্যুরিষ্ট বাসে করে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরির পর, অামাদের বাস সাগর পাড়ে পৌঁছুলে অামরা সবাই বাস থেকে নেমে পড়লাম৷সাগর তীরে গড়ে ওঠা বার-রেষ্টুরেন্ট ও তারকা হোটেলগুলো সৈকতটিকে অারও নান্দনিক করে তুলেছে৷রেষ্টুরেন্টের টেরেসগুলো কাষ্টমারদের ভিড়ে উপচে পড়ছে।ওদিকে সমুদ্র সৈকতে বালু ও চেয়ারের উপর রৌদ্রস্নান করতে শুয়ে থাকা নারী-পুরুষ, দূর থেকে ভেসে অাসা সাগরের ঢেউ, ঢেউয়ের সাথে সার্ফিং করে অাসা ছেলে-মেয়ে , ছোট ছোট বাচ্চাদের বালু নিয়ে খেলা- সব কিছু যেন ছবির মতো লাগছিলো৷
সাগর পাড়ে হাঁটার জন্য ও সাইকেল চালানোর জন্য অালাদা রাস্তা করা হয়েছে, যে রাস্তা ধরে মানুষ হাঁটছে তার উভয় পাশে বিভিন্ন দেশের অবৈধ অভিবাসীরা নানা রকমের জিনিষপত্রের দোকান সাজিয়ে রেখেছে৷এসব স্থানে কোন কিছুর দোকান বসানো বা বিক্রি অবৈধ হওয়ায়, প্রায়ই পুলিশ এসে উঠিয়ে দেয়৷বিক্রেতারাও যখন দেখে পুলিশ অাসছে, তখন তাড়াতাড়ি করে তাদের জিনিসপত্র গুছিয়ে যে যার মত দৌঁড়ে পালায়৷পুলিশ যদি কখনও বেপরোয়া হয়ে ওঠে, তখন যে কোন মূল্যে দৌঁড়ে তাদের ধরে ফেলে৷ধরতে পারলে সাথে থাকা সমস্ত জিনিসপত্র ও টাকা-পয়সা গাড়িতে করে নিয়ে যায়। অার না হয় সাথে থাকা ডকুমেন্টের উপর অর্থদন্ড দিয়ে থাকে৷
অামরা হাঁটছি অার ভাসমান দোকানগুলো (মোটা কাপড় বিছিয়ে তার উপর রেখে বিক্রি করা নানা সামগ্রী) একটা একটা করে দেখছি৷এমন সময় একটা দোকানে রঙ-বেরঙ এর বাচ্চাদের চশমা দেখে অামার মেয়ে বায়না ধরলো চশমা কিনবে৷চশমা নিয়ে পয়সা দেবার সময় বিক্রেতা ছেলেটির দিকে চোখ পড়লো৷সম্পূর্ণ এশিয়ান অবয়ব, টগবগে যুবক৷ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্প্যানিশ ও ইংরেজীতে কি সুন্দর কথা বলছে৷কি শান্ত, নীরব! চেহারায় কোন শংকা বা ভয় নেই৷কেন জানি মন চাইছিলো জিজ্ঞেস করে দেখি, ছেলেটা কোন দেশের? বেশি কিছু না ভেবে জিজ্ঞেস করেই বসলাম (স্প্যানিশে), ‘অাপনি কি বাংলাদেশী ?’ অনেকটা সংকোচ নিয়ে উত্তর দিলো- ‘জ্বি, অামি বাংলাদেশী৷’
অামি তার উত্তর শুনে কিছু বলার অাগেই যেই না টাকাটা হাতে দিলাম, ঠিক সেই মুহুর্তে সাইরেন বাজিয়ে পুলিশ এসে সবদিক দিয়ে তাদেরকে ঘিরে ফেললো ৷ সবাই যার যার দোকান গুছিয়ে যে যার মতো দিল দৌঁড়৷অামরা যেখানটায় দাঁড়িয়ে ছিলাম ঠিক সেখান থেকে একটু সামনে ওভারব্রিজের মতো একটা রাস্তা এসে যোগ হয়েছে সাগর পাড়ে৷অারেকটি খোলা রাস্তা প্রায় অাট/নয় ফুট গভীর হবে, চলে গেছে নিচ দিয়ে৷অনেকটা অান্ডারগ্রাউন্ড পথের মতো।তবে উপর একদম খোলা ও দু’পাশেই উঁচু রেলিং৷সম্ভবতঃ যানজট এড়াতে নগর কর্তৃপক্ষ একলেনে করে এ রাস্তাটিকে কোন বড় রাস্তায় নিয়ে গেছে৷ক্রমাগত গাড়ি ছুটছে রাস্তাটিতে৷
বাংলাদেশী দোকানদার ছেলেটি যখন দেখলো পুলিশ তাকে ধরে ফেলবে, সাথে থাকা জিনিসপত্রগুলো মোটা কাপড়ে ভালো করে পুটলি বেঁধে নিচের রাস্তাটিতে ফেলে দিয়ে সবার সামনে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে সেও লাফ দিলো অাট/নয় ফুট উপর থেকে একদম নিচে৷সে লাফ দিয়ে পড়ার সাথে সাথে রাস্তার দু’পাশের উৎসুক সমস্ত দেশী-বিদেশী পর্যটক ও অামরা সবাই রেলিং ধরে দাঁড়িয়েছি ছেলেটিকে দেখতে৷সবার একটাই কথা- পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে সে তার নিজের জীবনটাকে এভাবে নষ্ট করে দেবে কেন? নিশ্চই এতক্ষণে কোন চলন্ত গাড়ীর নিচে সে পিষ্ট হয়ে গেছে৷
এক লেনের রাস্তাটিতে দ্রুত ছুটে চলা গাড়ীগুলো হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেছে৷ওভারব্রিজের উপর ও নিচের রাস্তার দুপাশে ততক্ষণে অারও মানুষের ভিড় জমেছে৷এর মধ্যে দুজন লোককে গাড়ি থেকে নামতে দেখলাম৷দুটো গাড়ির মাঝখান থেকে একটা ছেলেকে টেনে তুলতে দেখলাম৷দুজনের কাঁধে ভর করে যখন ছেলেটি দাঁড়ালো, অাশেপাশের সবার মুখে এক চিলতে খুশির ঝলক৷হয়তো এই ভেবে যে, অন্তত: একটি তাজা প্রাণ নিশ্চিত মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে অাসলো৷লোক দু’জন তাকে রাস্তার পাশে বসিয়ে দিয়ে, তার পুটলাটি হাতে ধরিয়ে দিয়ে অনেক সহানুভূতি দেখিয়ে যার যার গাড়িতে গিয়ে উঠে পড়লো৷
গাড়িগুলো চলতে শুরু করেছে৷অাশেপাশের উৎসুক মানুষজনও কমতে শুরু করেছে৷কেউ কেউ এখনও ছেলেটিকে দেখছে৷ অামিও দেখছি৷হঠাৎ দেখলাম, ছেলেটি বসা থেকে উঠতে গিয়ে উঠতে পারছে না৷এপাশ থেকে জোরে অাওয়াজ করে বললাম- ‘ভাই, অাপনি ঠিক অাছেন তো? কোন সমস্যা হয়নি তো?’ এই জায়গায় এই পরিবেশে কেউ বাংলা ভাষায় তাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে সে হয়তো কল্পনাও করেনি৷অামার দিকে তাকিয়ে রইলো সে৷ অামি ওভারব্রিজটি পার হয়ে নিচে নেমে তার কাছে পৌঁছাতেই অামাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো৷অনেকটা ছোট বাচ্চাদের মতো করে৷অামি জিজ্ঞেস করলাম- ‘এখন কেমন লাগছে, হাঁটতে পারবেন?’ সে বললো, পা ফেলতে পারছে না৷প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে৷কোনমতে তাকে ওখান থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে একটা রেষ্টুরেন্টে বসলাম৷অভয় দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে তার অার কেউ অাছে কি না ? সে বললো- না তার অার কেউ নেই৷ সে-ই একমাত্র বাঙ্গালী এই জায়গাটায় ভাসমান দোকান বসায়৷ এও বললো, সে থাকে বার্সেলোনাতে৷প্রতিদিন ভোরে তার জিনিষপত্রের পুটলি নিয়ে ট্রেনে করে এখানে অাসে৷ কিছু খাবারের অর্ডার দিতেই তার চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো৷হয়তো অামাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা খুঁজছিলো সে৷ অামি তাকে সহজ করার চেষ্টা করলাম৷বললাম, অাপনি বাংলাদেশী ভাই৷অামিও বাংলাদেশী৷এই যে অামার স্ত্রী-সন্তান সবাই অামরা বার্সেলোনাতেই থাকি৷এখানে ঘুরতে এসেছি৷বললাম, অাপনি সম্ভবত: স্পেনে এসেছেন বেশিদিন হয়নি? সে বলল, এক বছরের মত হয়েছে স্পেনে অাসছি৷অামি অারও কিছু জিজ্ঞেস করার অাগেই সে নিজ থেকে বলতে শুরু করেছে-
অামার স্পেনে অাসার প্রায় এক বছর হলো৷অনেক অাশা ও স্বপ্ন নিয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় অামি মাল্টা অাসি৷পাঁচ ভাই-বোনের সংসারে সবার বড় অামি৷পড়তাম একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে৷থার্ড ইয়ার ফার্ষ্ট সেমিষ্টারে৷নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার অামাদের৷বাবা স্কুল মাষ্টার ছিলেন৷অবসর নিয়েছেন ক’বছর হলো৷পরিবারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাবা-মা অামাকে বিদেশে পাঠানো৷অামাকে বিদেশ পাঠাতে বাবার অবসরের পুরো টাকাটাই শেষ হয়ে গেছে৷এদিকে অামি মাল্টা এসে এখানকার ভাষা, কালচার কোন কিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না৷অনেক কষ্টে একটা বাংলাদেশী মেস জোগাড় করে সেখানে উঠলাম৷মেসে গিয়ে দেখলাম, সবাই দেশে থাকতে কোন না কোন ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করতো৷সবাই এসেছে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে৷এখন সবার একটাই উদ্দেশ্য- এখান থেকে চলে যাওয়া৷এখানে বছরের পর বছর টিউশন ফি দিয়ে পড়ালেখা চালানো সম্ভব না৷অাবার দেশ থেকে টাকা এনে পড়ার খরচ চালানোও অসম্ভব৷সবার মতো অামারও একই অবস্থা৷এখানে যে কাজ করে নিজের খরচ চালাবো এ সুযোগটিও নেই৷এভাবে কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখলাম অাস্তে অাস্তে মেসের সদস্য সংখ্যা কমছে৷অাজ এ তো কাল সে, এ রকম অনেকেই পাড়ি জমাচ্ছে ইতালীতে৷একদিন সকালে মা’র সাথে কথা বললাম৷মা খুব কান্নাকাটি করছিলেন৷বলছিলেন, ছোট বোনটার জন্য নাকি ভালো একটা ছেলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে৷অামি অামার সব কথা মা’কে খুলে বললাম৷মা অামার সবকিছু শুনে জিজ্ঞেস করলেন- পড়ালেখার কি হবে তাহলে? অামি মাকে মিছে শান্ত্বনা দিয়ে বললাম, অামাকে তোমরা কিছু টাকা ম্যানেজ করে দাও। অামি ইতালী পৌঁছে শোধ করে দেবো৷অার পড়ালেখা ওখানে গিয়ে করবো৷ছোট বোনের বিয়েটাও অামার উপার্জনের টাকায় ধুমধাম করে দিতে পারবো৷মা অামার বাবার সাথে অালাপ করলেন৷অামার ভবিষ্যৎ ও সংসারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, অামাদের জমি বন্ধক রেখে সুদ হারে কিছু টাকা অানলেন৷ এদিকে অামি দালালের সাথে অালাপ করে সব কিছু ঠিক করলাম৷নির্দিষ্ট একটা দিনে অামাকে সাগরে মাছ ধরার জাহাজে নিয়ে অাসা হলো৷অামি কিছু বুঝার অাগেই একজন মাল্টার নাগরিক জোর করে অামাকে পাটাতনের নিচে শুইয়ে দিয়ে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো৷ওখানে ঢুকে অামার দম বন্ধ হয়ে অাসছিলো৷মোবিল, পেট্রোলের পোড়া গন্ধ, বিদঘুটে অন্ধকার, ইঞ্জিনের অাওয়াজ, মাছের অাষ্টে গন্ধ- সবমিলিয়ে বমি অাসার উপক্রম হলো অামার৷কিছুক্ষণের মধ্যেই অারও দু’জনকে একই কায়দায় অামার এখানে প্রবেশ করানো হলো৷যেখানটায় অামার একা থাকাটাও কষ্টের সেখানে অামরা তিনজন৷একজন অারেকজনের সাথে যেন অাষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রইলাম৷ এক সময় বুঝতে পারলাম জাহাজ ছেড়ে দিয়েছে৷এর কতক্ষণ পর ঠিক মনে নেই- দেখলাম, একজন এসে দরজা খুলে দেখছে অামরা জীবিত না মৃত৷তিনজনের একজনকে বের করে নিয়ে যেতে দেখলাম৷ কারণ, ঐ হতভাগা একজন কখন যে মারা গেছে অামরা টেরই পাইনি৷তাকে নিয়ে যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য লাশটিকে অাস্তে করে সাগরে ফেলে দেয়া৷ ওরা করেছেও তাই৷
এর অনেক পর কত ঘন্টা বা কতদিন অামার সঠিক মনে নেই। কারণ, অামার হুঁশ ছিলো না৷অামি নিজেকে অাবিষ্কার করলাম, ইতালীর রেডক্রসের মেডিকল টিমের বেডে৷সেখানে চিকিৎসার পর অামাকে ইতালীর মূল ভূখন্ডে ছেড়ে দেয়া হয়৷তারপর ওখানে কোন কাজকামের ব্যবস্থা করতে না পেরে, বৈধতার অাশায় ও কাজের অাশায় অামার স্পেনে অাসা৷
এবার অামি লক্ষ্য করলাম, ছেলেটির দু’চোখ বেয়ে অনবরত চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে৷অামার স্ত্রী তাকে নিজের ভাইয়ের মত শান্ত্বনা দিয়ে বললো, নাও ভাই খাবারগুলো খাও, নিজেকে শক্ত করো৷একদিন দেখবা সব ঠিক হয়ে যাবে৷ অামি বললাম, অাপনার সাথে জাহাজে থাকা একজনকে তো সাগরে ফেলে দিলো অার বাকি একজন? সে বললো, অামি অাজও জানি না বাকিজন বেঁচে অাছে না তাকেও সাগরে ফেলা হয়েছে৷বললাম, অাপনার পুরো ঘটনা শুনে যা বুঝতে পারলাম, অাপনি সংসারের সবার বড় ও পুরো পরিবার অাপনার উপর ভরসা করে অাছে৷একদিন অাপনি তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবেন এই অাশায়৷তাহলে জীবন বাজী রেখে এত উপর থেকে লাফিয়ে পড়লেন কেন, যদি কিছু হয়ে যেত ? সে বললো-
অাজকের বেচাবিকিটা ভালো হয়েছে৷সাথে কিছু ইউরো অাছে৷এখন মাসের শেষ৷ঘর ভাড়া, খাবার খরচ ও মাকে সুদের টাকা ও ভাই-বোনের খরচের টাকাটা পাঠাতে হবে৷যদি পুলিশ অামাকে ধরে ফেলতো তাহলে অামার কাছে থাকা ইউরো ও অামারা জিনিসপত্রগুলো সব নিয়ে যেতো৷অামার তখন আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন পথ থাকতো না৷
অামরা তার জীবন ও বাস্তবতার কথাগুলো শুনে কখন যে, অামাদেরও চোখের পাতা ভিজে উঠেছে বুঝতেই পারিনি৷তাকে কি শান্ত্বনা দেবো জানা ছিলো না৷ শুধু এটুকুই দেখলাম, ছেলেটির বুকে জমানো কষ্টগুলো অাগ্নেয়গিরির লাভার মতো গলে গলে বেরিয়ে পড়ছে৷
প্রতি বছর কত মেধা প্রাচার হচ্ছে এভাবে তার সঠিক হিসেব কে বা রাখে! উন্নত জীবনের স্বপ্নে বিভোর মানুষগুলোর জীবন ও স্বপ্নের সমাধি কখন কোথায় ঘটছে তা ক’জনেই বা জানে।
-- এখলাছ মিয়া
No comments:
Post a Comment