Social Icons

Friday, April 1, 2016

সংঘাতের পথ ছেড়ে সংলাপে আসুন, সরকারকে খালেদা জিয়া

দেশে ‘চলমান জুলুম-নির্যাতনের’ কথা তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘সত্য সমাগত এবং মিথ্যা দূরীভূত হোক।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ইসলামী ঐক্যজোটের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
সম্মেলনে উপস্থিত হতে পেরে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে খালেদা জিয়া তাকে আমন্ত্রণ করায় ঐক্যজোটের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান।
সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে চেয়ারপারসন বলেন, ‘জাতীয় জীবনের এক কঠিন দুঃসময়ে আপনাদের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আপনারা সকলে দোয়া করবেন, যাতে বাংলাদেশের জনগণ এই কঠিন সংকট থেকে মুক্তি পায়। দেশে সুস্থ্য ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। জনগণ তাদের সকল অধিকার ফিরে পায়। জুলুম-নির্যাতনের অবসান ঘটে।’
তিনি ইসলামী ঐক্যজোটের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে এসময় আরো বলেন, ‘আপনারা পবিত্র কুরআনুল কারিমের একটি আয়াত উল্লেখ করেছেন। আমিও তার উল্লেখ করে মুনাজাত করি: সত্য সমাগত এবং মিথ্যা দূরীভূত হোক।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা জানেন দেশের আজ কী অবস্থা। গণতন্ত্র নেই। জনগণের সরকার নেই। সুশাসন নেই। সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙ্গে পড়েছে। সবখানে নৈরাজ্য। আইন-শৃঙ্খলার সীমাহীন অবনতি ঘটেছে। কারো কোনো নিরাপত্তা নেই।’
দেশের অর্থনীতিতে চলমান অস্থিরতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় অর্থনীতি ছত্রখান হয়ে গেছে। শেয়ারবাজার ও ব্যাংকগুলো লুট হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও জনগণের অর্থ-সম্পদ নিরাপদ নয়। ডিজিটাল ডাকাতি করে সে অর্থ লুটে নিয়ে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ রয়েছে সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশায়। অন্যায়, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, নারীর সম্ভ্রম হরণ, দুর্নীতি, লুণ্ঠন অতীতের সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’
‘শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে। ভিনদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি বিপন্ন,’ বলেন খালেদা জিয়া।
জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ক্ষমতাসীনদের কোনো উদ্যোগ নেই মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন ও বন্ধুহীন করে ফেলা হয়েছে। বন্ধুত্বের বদলে গোলামীর পথ বেছে নিয়ে শাসকেরা তাদের গদি রক্ষায় ব্যস্ত।’
তিনি বলেন, ‘ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং আলেম সম্প্রদায় নানাভাবে নিগৃহীত ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। অন্য ধর্মের লোকদেরও কোনো নিরাপত্তা নেই। এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারা অন্য ধর্মের নাগরিকদের ভোটই শুধু চায় না। তাদের সহায় সম্পদও তারা দখল করে নিচ্ছে। এই অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি চায়। সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে পেতে চায়।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা জানেন, কয়েকদিন আগেই আমরা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করেছি। কাউন্সিলের পর আমরা এখন দল পুনর্গঠনের কাজে ব্যস্ত রয়েছি। ঐ কাউন্সিলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও সর্বশেষ রাজনৈতিক অবস্থা আমি তুলে ধরেছি। এই সমস্যা ও সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একটা পথ-নির্দেশনাও আমরা তুলে ধরেছি। আমরা মনে করি, যে অসুস্থ রাজনৈতিক ধারা এদেশে চালু করা হয়েছে সেখান থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে দেখাতে হবে নতুন সম্ভাবনার পথ। জাতির বিরাজমান সমস্যাবলী সমাধানের জন্য সুচিন্তিত ও বাস্তবমুখী কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। সেইসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতি হিসেবে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা এখন একটি ভিশন ও কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কাজ করে যাচ্ছি।’
‘আলেম সম্প্রদায়সহ সকল স্তরের মানুষের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা আমরা সেই কর্মসূচিতে রাখছি,’ জানান খালেদা জিয়া।
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী। কিন্তু তারা সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিতে আক্রান্ত নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের এই দেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ আবহমানকাল থেকে পাশাপাশি শান্তিতে বসবাস করে আসছে। এটা আমাদের পরম গৌরবের বিষয়। সেই ঐতিহ্য ও গৌরবকে ক্ষুণ্ন করার জন্য বিভিন্ন সময় কায়েমী স্বার্থবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠী অপতৎপরতা চালিয়ে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্মানিত আলেম সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে, যাতে আমাদের বদনাম না হয়।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। আপনারা সেই শান্তির ধর্মের নেতা। হিংসা, হানাহানি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কোনো স্থান ইসলামে নেই। ইসলাম শান্তির পক্ষে, মজলুমের পক্ষে, ইনসাফের পক্ষে, সুশাসনের পক্ষে, মৈত্রীর পক্ষে, সাম্যের পক্ষে, মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তার পক্ষে। কিন্তু মুষ্টিমেয় কিছু বিপথগামী লোক সন্ত্রাস, প্রতিহিংসা ও নিষ্ঠুরতার পথ বেছে নিয়ে আজ বিশ্বব্যাপী মুসলমানদেরকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে ইসলামের পবিত্র শিক্ষার আলোকে আপনারা শান্তির পতাকাকে সমুন্নত রাখবেন, এই কাউন্সিলে আপনাদের প্রতি সেটাই আমার আহ্বান।’
বিএনপি চেয়ার পারসন বলেন, ‘আপনারা জানেন বাংলাদেশেও পবিত্র ইসলামের নামে বিপথগামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করলে আমরা তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করতে পেরেছিলাম। আমাদের সেই অভিযানে সম্মানিত আলেম সম্প্রদায় সন্ত্রাস-বিরোধী জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। সেজন্য আমি আপনাদের মোবারকবাদ জানাই।’
পবিত্র ধর্মের নামে সন্ত্রাস-নাশকতার বিরুদ্ধে আলেমদের ভূমিকার আরো দৃঢ় হবে বলে আশা করেন তিনি।
ইসলামে শিক্ষার গুরুত্বের কথা তুলে ধরে খালেদা বলেন, ‘শিক্ষার ওপর ইসলাম অনেক গুরুত্বরোপ করেছে। ইসলাম দিয়েছে নারীর মর্যাদা। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজে ভিন্ন ধর্মের মানুষকে পবিত্র আমানত ভাবতে শিখিয়েছে ইসলাম। পবিত্র ইসলাম দারিদ্র থেকে মুক্তি এবং বৈষম্য নিরসনের পথ দেখিয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে ইসলাম উৎসাহ দিয়েছে। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে আপনারা আপনাদের নীতি নির্ধারণ ও কর্মতৎপরতা পরিচালনা করবেন বলে আমি আশা করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশের সংকট নিরসনে এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের একটি প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার আহ্বান জানিয়েছি। বল এখন শাসক দলের কোর্টে।’
সরকার সংঘাতের পথ ছেড়ে সংলাপের পথে সমস্যার সমাধান করবে বলে আশা করেন খালেদা জিয়া।
দেশের চরম সংকট উত্তরণে সম্মানিত আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা বলেন, ‘এদেশে হাজী শরিয়তউল্লাহ, শহীদ তিতুমির ও ফকির মজনু শাহরা ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীকার ও স্বাধীনতার সংগ্রামেও আলেম সমাজ পিছিয়ে ছিলেন না। স্বাধীন দেশের মানুষের অধিকার ও ইনসাফ কায়েমের জন্য আপনারা অকাতরে জীবন দিতেও পিছপা হননি। আগামীতেও আপনাদের সে ভূমিকা দেশবাসী আশা করে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, অত্যাচারী শাসকের সামনে স্পষ্ট কথা বলাও উত্তম জিহাদ। দেশে শান্তি, সুশাসন, গণতন্ত্র জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে, দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে, ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষায়, আলেমসহ সকলের সম্মান রক্ষায়, জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা রক্ষায়, জুলুমের অবসান কল্পে আপনারা ঐক্যবদ্ধ ও সোচ্চার হোন।’
তিনি বলেন, ‘সম্মেলন আপনাদেরকে লক্ষ্য অর্জনের পথ দেখাক, আমি সেই দোয়া করি। এই ঢাকার রাজপথেও ওলামা মাশায়েখ, হাফেজ ও মাদরাসার গরীব শিক্ষক-ছাত্রদের রক্ত ঝরেছে। সেই ত্যাগ যেন বৃথা না যায়।’
লোভ ও ভয়ের মুখে ঈমান নষ্ট না করে আপনারা যারা ইসলামী ঐক্যজোটের পতাকা সমুন্নত রেখেছেন তাদেরকে মোবারকবাদ জানান খালেদা জিয়া।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates