Thursday, April 14, 2016
আইএসবিরোধী যুদ্ধে লাভবান হচ্ছে আল কায়েদা
ইসলামিক স্টেট নামক সন্ত্রাসী সংগঠনটি বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম আলোচনার বিষয়। ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ইরাকে হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠে দলটি। রাতারাতি নতুন নাম ঘোষণা করে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে শুরু করলেও ইসলামিক স্টেট বা দায়েশ নামের এই সংস্থার নেতৃস্থানীয় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যই ছিলেন আলকায়েদার সদস্য। বলা হয়ে থাকে, আলকায়েদা প্রধান আয়মন জাওয়াহিরির সঙ্গে ইরাক এবং সিরিয়া প্রশ্নে মতপার্থক্য দেখা দিলে একদল বিচ্ছিন্ন আলকায়েদা মতাবলম্বীই পরবর্তীতে দায়েশ নামের সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করে। যুদ্ধ পরিস্থিতির এক পর্যায়ে পরাশক্তি রাশিয়া সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সহায্য করতে এগিয়ে আসলে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিনমদদপুষ্ট দেশ সৌদিআরব ভূ-রাজনীতির প্রশ্নে নতুন সংঘাতে জড়িয়ে যায়। পার্শ্ববর্তী দেশ ইয়েমেনে বিমান হামলা চালানোর মাধ্যমে হুতি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সৌদিআরব। ইরাক এবং সিরিয়ার যুদ্ধ ইয়েমেন পর্যন্ত ছড়িয়ে গেলে কার্যত লাভবান হওয়া শুরু করে সাবেক শক্তিশালী সন্ত্রাসী সংগঠন আলকায়েদা। বর্তমানে ইয়েমেন যুদ্ধ পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে সংগঠনটি দেশটির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে নিয়েছে এবং সেখানে নিজস্ব শাসন কাঠামো কায়েম করেছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইয়েমেনের বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে আলকায়েদা ইতোমধ্যেই শতাধিক মিলিয়ন ডলার লুট করেছে। ইসলামিক স্টেটের রাজধানী যদি হয় সিরিয়ার রাকা শহর, তাহলে আলকায়েদার রাজধানী হলো মুকাল্লা। প্রায় পাঁচ লাখ জনগোষ্ঠির বন্দর শহর মুকাল্লার স্থানীয় আয়কর অফিস গুড়িয়ে দিয়েছে এবং পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে কোনো আয়কর দিতে হবে না বলেও তারা ঘোষণা করে। তবে সাগরে তারা কর্তৃত্ব করার চেষ্টা চালাচ্ছে। স্পীডবোটে করে তারা সমুদ্রে যাতায়াতকারী জাহাজ থেকে আয়কর নিচ্ছে এবং বিভিন্ন প্রচারণামূলক তথ্যচিত্র তৈরি করছে অনলাইনে প্রচার করার উদ্দেশ্য নিয়ে। আর এই কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইয়েমেনেরই কিছু নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য এবং স্থানীয় আদিবাসী নেতারা। মুকাল্লায় বর্তমানে এক হাজার ভাড়াটে যোদ্ধা আছেন যারা আলকায়েদার পক্ষে লড়াই করছে। এই সৈনিকদের নিয়ে গঠিত মুকাল্লায় আলকায়েদা প্রতিদিন প্রায় দুই মিলিয়ন ডলার আয়কর সংগ্রহ করে। এই বিপুল পরিমান অর্থ শুধুমাত্র তেলবাহী ও পণ্যবাহী জাহাজ থেকে তারা সংগ্রহ করে। যে সব অঞ্চল আগে ইসলামিক স্টেটের হাতে অধিকৃত ছিল সেসব অঞ্চলে আলকায়েদা তাদের কার্যক্রম বৃদ্ধি করছে। মুকাল্লার ৪৭ বছর বয়সী এক অধিবাসী জানান, ‘আমি চাই আলকায়েদা এখানে থাকুক, মুকাল্লা স্বাধীন হোক বা না হোক। এখানকার পরিস্থিতি ইয়েমেনের অন্যান্য স্বাধীন অঞ্চলের তুলনায় অনেকটাই শান্ত। আলকায়েদার বিকল্প যারা আছে তারা আলকায়েদার চেয়েও খারাপ।’ সৌদিআরব যতটা ইয়েমেনের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে তারচেয়েও বেশি তারা ইরানের বিরুদ্ধে লড়ছে। ইরানের সমর্থনপুষ্ট ইয়েমেনি শিয়া হুতি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে সৌদিআরব ভৌগোলিকভাবে সুবিধা আদায় করতে চাইছে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, এখন পর্যন্ত সৌদি বিমান হামলায় ছয় হাজার ইয়েমেনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অর্ধেকই সাধারণ জনগণ। কিন্তু এতকিছুর পরেও আলকায়েদার সমর্থন কিন্তু ইয়েমেনে দিনকে দিন বাড়ছেই। সংগঠনটির এই বর্ধিষ্ণু পরিস্থিতিতে কয়েকদিন আগেই মার্কিন বিমান মুকাল্লায় বোমা হামলা চালিয়েছিল। সেই হামলায় আলকায়েদার কমপক্ষে ৫০জন সদস্য নিহত হয়েছে বলে জানা যায়।
Labels:
আন্তর্জাতিক
Subscribe to:
Post Comments (Atom)


No comments:
Post a Comment