Social Icons

Friday, July 1, 2016

জীবদেহে ওষুধের উপযোগিতা যাচাই দেশেই করা যাবে

ওষুধ, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যবহারের উপযোগিতা যাচাইয়ে দেশেই পরীক্ষাগার নির্মিত হয়েছে। এর মাধ্যমে বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে দেশের পরীক্ষাগারেই জীবদেহে ওষুধ বা পণ্যের ব্যবহার-উপযোগিতা যাচাই করা যাবে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর-সায়েন্স ল্যাব) প্রতিষ্ঠিত এ পরীক্ষাগার দেশের ওষুধ ও খাদ্য শিল্পের জন্য বিরাট সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
ওষুধ বা অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাদ্য মানুষের উপযোগী কিনা তা যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের জীবদেহে ওই ওষুধ বা পণ্যের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে হয়। গবেষণাগারে ওই পরীক্ষা সফল হলেই ওষুধ বা পণ্য বাজারজাত করার অনুমতি পায় বাণিজ্যিক কোম্পানি। দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো এতদিন দেশের বাইরে বিভিন্ন পরীক্ষাগারে এ পরীক্ষা চালিয়ে ওষুধ-পণ্য বাজারজাত করত। কিন্তু এতে সময় ও অর্থ বেশি খরচ হত। এর ওপর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব আইনের (ট্রিপস) আওতায় ২০৩২ সালের পর বিদেশের পরীক্ষাগারে উপযোগিতা যাচাইয়ের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তাই ওষুধ উত্পাদনের ভবিষ্যত্ পথ মসৃণ করতে এই পরীক্ষাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে গবেষক ও ওষুধবিদরা মন্তব্য করেছেন।
 
বিসিএসআইআর সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটির বায়োমেডিক্যাল অ্যান্ড টক্সিকোলজিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে জীবদেহে ওষুধের প্রাকপ্রয়োগের পরীক্ষা (প্রিক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) করা যাবে। চলতি জুনেই এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নতুন এ গবেষণাগারে প্রাণী বা মানবদেহে ওষুধ প্রয়োগের ফলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বিষক্রিয়া, ভারী ধাতু (হেভিমেটাল), কীটনাশক (পেস্টিসাইড) এবং মাইক্রোটক্সিন উপাদান পরীক্ষার সুযোগ থাকবে। পাশাপাশি খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর বিষ (টক্সিক) ও প্রসাধন সামগ্রীতে রাসায়নিক উপাদানের গ্রহণযোগ্য উপস্থিতি থাকা বা না থাকা পরীক্ষা করা যাবে।
 
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের জুলাইতে পরীক্ষাগারটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। চলতি জুনে একটি পৃথক ইনস্টিটিউট হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭৮টি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় শেষে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- রিয়াল টাইম-পিসিআর, ডিএনএ সিক্যুয়েন্সার, বায়োকেমিস্ট্রি এনালাইজার, হেমাটোলজি এনালাইজার, টিস্যু প্রসেসর। সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা ও কোম্পানির প্রিক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কাজ এ গবেষণাগারে সম্পন্নের জন্য আহবান জানিয়ে শিগগিরই চিঠি দেয়া হবে।
 
কেন এই গবেষনাগার
 
ট্রিপস চুক্তি বা মেধাস্বত্ব আইন অনুসারে ২০৩৩ সাল থেকে দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো অন্য কোনো বিদেশি কোম্পানির পেটেন্টকৃত ওষুধ বা কাঁচামাল বা ফর্মুলা ব্যবহার করে ওষুধ উত্পাদন করতে পারবে না। এ সুযোগে বিদেশি কোম্পানি দেশের বাজার দখল করতে পারে। সেক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে পারে দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো। এর ফলে ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের মত স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে চিকিত্সা সেবা গ্রহণ আরো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে এবং ওষুধ ফর্মুলেশন ও এর কাঁচামাল উত্পাদনের প্রয়োজন নিজেদের দেশেই দেখা দেবে। সেক্ষেত্রে এদেশে একটি স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউট এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবে। ভবিষ্যতের এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গবেষণাগারটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
 
এছাড়া ওষুধ শিল্পে সহায়তা প্রদানে প্রাকৃতিক ওষুধ (ন্যাচারাল মেডিসিন) নিয়ে গবেষণা করার সকল সুযোগ-সুবিধা এবং ন্যাচারাল মেডিসিনের এনিম্যাল টেস্টের মাধ্যমে টক্সিসিটি নিরূপণ করা সক্ষমতা এই ইনস্টিটিউটে রয়েছে। এতে বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক, হেভিমেটালসহ অন্যান্য রাসায়নিক প্যারামিটার নির্ণয় করা যাবে। নতুন ওষুধ উন্নয়নের জন্য প্রিক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সকল সক্ষমতা এর রয়েছে।
 
খাদ্যশিল্পে অবদান
 
খাদ্যে নিষিদ্ধ এন্টিবায়োটিক, প্রচলিত ক্ষতিকারক এন্টিবায়োটিক, মার্কারি, লেড, ক্রমিয়াম, ক্যাডমিয়ামসহ বিভিন্ন হেভিমেটাল এ পরীক্ষাগারে নির্ণয় করা সম্ভব। দেশে আমদানিকৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদির শনাক্তকরণ এবং খাদ্যে ব্যবহূত বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক প্রিজারভেটিভ, কীটনাশক পরীক্ষার ব্যবস্থাও থাকবে। পাশাপাশি হাঁস, মুরগি, মাছ ও পশুর জন্য শিল্পে উত্পাদিত ফিডের (খাদ্য) মান নিয়ন্ত্রণের প্রায় সকল মানদণ্ড (প্যারামিটার) বিশ্লেষণ করার সকল সুবিধা এই ইনস্টিটিউটে রয়েছে। মুরগি ও মাছের খামারে বিভিন্ন মহামারী রোগের কারণ শনাক্তও করা যাবে।
 
বিসিএসআইআর’র ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা প্রকল্পের পরিচালক দিপা ইসলাম বলেন, ৩০ কক্ষবিশিষ্ট তিন তলা ভবনের এ গবেষণাগারে ওষুধ ও খাদ্যের উপযোগিতা যাচাইয়ের পাশাপাশি বিশ্লেষণ সেবাও দেয়া যাবে। এছাড়া ড্রাগ ডিজাইনিং, ড্রাগ ফর্মুলেশন, অণুপ্রাণ বিজ্ঞান, বায়োটেকনোলজি, বায়োমেডিসিন, ফার্মাকোলজি, ফরেনসিক সায়েন্স বিষয়ক গবেষণাও করা যাবে। দেশের ওষুধ শিল্পের জন্য পরীক্ষাগারটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
 
বিসিএসআইআর’র চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, গবেষণাগার থেকে দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি,  ফুড ও বেভারেজ কোম্পানি, বিভিন্ন প্রসাধনী কোম্পানি, পশু ও হাঁস-মুরগির খাবার উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান, প্যাথলজিক্যাল ল্যাব ও ক্লিনিক, বায়োমেটালিক ইমপ্লান্ট আমদানি ও প্রস্তুতকারক কোম্পানি এবং খাদ্যদ্রব্য আমদানি ও রফতানিকারক কোম্পানি সেবা ও সুবিধা নিতে পারবে। দেশে ওষুধের গবেষণা, মান নিয়ন্ত্রণ ও গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষার জন্য এটি পথিকৃতের ভূমিকা পালন করবে।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates