Social Icons

Thursday, September 29, 2016

ভারতের ৮ কমান্ডো বাহিনী যেন সাক্ষাৎ যম!


বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় ভারতের ৮ কমান্ডো বাহিনী যেন অধিক হিংস্র ও ক্ষিপ্র গতিসম্পন্ন। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় এরা খুব বেশি পারদর্শী এবং মাত্র কয়েক সেকেন্ডে শত্রুর সামনে সাক্ষাৎ যম হয়ে উদয় হয়। শত্রু মোকাবিলায় এরা এতটাই ভয়ানক যে এদের বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর কমান্ডো বাহিনী হিসেবে ধরা হয়।
মার্কোস:
ভারতীয় নৌসেনা বাহিনীর কমান্ডো। জলে শত্রুর মোকাবিলায় ওস্তাদ এরা। এমনকি, পানির তলাতেও এরা সমান তালে লড়াই করতে সক্ষম। ১৯৮৭ সালে এই কমান্ডো বাহিনীকে তৈরি করা হয়। ঝিলম নদীর মতো খরাস্রোতা পাহাড়ি নদী এবং বুলর লেকের মতো স্থানেও মার্কোস তার লড়াইয়ের দক্ষতায় সকলকে চমকে দিয়েছে। শত্রুপক্ষ এদের ‘দাড়িওয়ালা ফৌজ’ বলেও ডাকে।
মার্কোসের প্রশিক্ষণ এতটাই ভয়ানক যে, ৮০ শতাংশ জওয়ানই বাহিনী ছেড়ে পালিয়ে যায়। মার্কোসের সদস্য হওয়ার জন্য যে শারীরিক পরীক্ষা দিতে হয়, তাকে ভয়ঙ্কর বললেও কম বলা হবে।
মার্কোস কমান্ডোরা বিশ্বের হাতে গোনা সেই সেনা, যারা আকাশ থেকেও ঝাঁপ দিয়ে লড়াইয়ে সক্ষম। মার্কোস কমান্ডোদের হাতে থাকে ইসরায়েলে তৈরি টাভোর টার ২১ অ্যাসল্ট রাইফেল। যেহেতু জলে থেকে লড়াই করে মার্কোস, তাই তাদের সমস্ত অস্ত্র ওয়াটারপ্রুফ। পানির তলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকলেও অস্ত্রের কিছু হয় না।
গরুড়:
গরুড়
পুরাণে উল্লিখিত গরুড়ের নামে এই কমান্ডো বাহিনীর নাম। ভারতীয় বায়ু সেনার অধীনে এই কমান্ডো বাহিনী। ‘আক্রমণই হলো বাঁচার মন্ত্র’ এই আদর্শেই অনুপ্রাণিত গরুড় কমান্ডো বাহিনী। ২০০৪ সালে এই কমান্ডো বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। এদের প্রশিক্ষণ এতটাই কঠিন যে, একজন বায়ু সেনার জওয়ানের পুরোপুরি গরুড় কমান্ডো হতে অন্তত ৩ বছর সময় লাগে। অ্যান্টিহাইজ্যাকিং থেকে শুরু করে প্যারাট্রুপিং, বরফের মধ্যে লড়াইয়ের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। নৌসেনার কমান্ডো বাহিনী থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর অ্যান্টিইনসার্জেন্সি এবং জঙ্গল ওয়ার-ফেয়ার স্কুলেও গরুড় কমান্ডোদের প্রশিক্ষণ দেয়ানো হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পাঠানকোট বায়ু সেনা ঘাটিতে জঙ্গিদের খতম করতে নামানো হয়েছিল গরুড় কমান্ডোদের।
ঘাতক:
এরা
ভারতীয় পদাতিক বাহিনীর কমান্ডো এরা। ২০ সদস্যের এই কমান্ডো বাহিনীর প্রাথমিক লক্ষ্যই হলো নিশানায় চোখের পলকে হামলা করা এবং শত্রুপক্ষকে হতভম্ব করে দেয়া। মূল বাহিনীর সাহায্য ছাড়াই যাতে এরা অভিযান চালাতে পারে, সেভাবে প্রশিক্ষিত করা হয় এদের। দুর্গম পাহাড়ের গা বেয়ে যে কোনো উচ্চতায় উঠে যেতে পারে ঘাতক কমান্ডো বাহিনী। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধে এই কমান্ডো বাহিনীকে নামানো হয়েছিল।
ব্ল্যাক ক্যাটস:
ব্ল্যাক ক্যাটস
১৯৮৬ সালে এই কমান্ডো বাহিনী তৈরি হয়। এই কমান্ডো বাহিনীর মূল নাম ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্স বা এনএসজি। মূলত এরা এলিট কমান্ডো বাহিনী। যারা জঙ্গি নিধনে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। জঙ্গি হামলার মোকাবিলা থেকে বিমান ছিনতাই, ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা দেয়া, যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে শত্রুপক্ষের হাত থেকে নিজেদের কব্জায় আনতে সক্ষম ব্ল্যাক ক্যাটস-এর কমান্ডোরা।
গত দু’দশকেরও বেশি সময়ে অপারেশন ব্ল্যাক থান্ডার, অপারেশন অশ্বমেধ, অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডো, অপারেশন সাইক্লোনের মতো অভিযানে অংশ নিয়েছে ব্ল্যাক ক্যাটস। এরা এতটাই এলিট গ্রুপে পড়ে যে, এরা কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী বা প্যারামিলিটারির অধীনে আসে না। এনএসজির আবার দু’টো ভাগ রয়েছে— স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ বা স্যাগ এবং স্পেশাল রেঞ্জার গ্রুপ বা এসআরজি। এনএসজি কমান্ডো হওয়ার জন্য ৯ মাস ধরে প্রশিক্ষণ চলে। সেই প্রশিক্ষণের চাপ সামলাতে না পেরে অন্তত ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ জওয়ান এনএসজি ছাড়তে বাধ্য হন।
স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স:
স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স
ইন্দো-চায়না যুদ্ধের সময়ে এই কমান্ডো বাহিনীর গঠন হয়েছিল। এরা এমন এক প্রশিক্ষিত কমান্ডো বাহিনী, যারা শত্রুকে তাড়া করে এলাকা ছাড়া করে। মূলত স্থলপথে যুদ্ধের জন্য এদের প্রশিক্ষিত করা হয়। যে কোনো ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে গরিলা যুদ্ধে ভয়ঙ্কর রকমের দক্ষ স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স।
পাহাড়ের উপরে লড়াই থেকে শুরু করে প্যারাসুটে ঝাঁপ দিয়ে শত্রুকে খতম করতে ওস্তাদ স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স। পণবন্দিদের উদ্ধারেরও প্রশিক্ষণ আছে এদের। এই কমান্ডো বাহিনীর একটি ইউনিটকে সিয়াচেন হিমবাহে পাহারার কাজে মোতায়েন করা হয়।
প্যারাকমান্ডো:
প্যারাকমান্ডো
১৯৬৬ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে এই কমান্ডো ইউনিটটি তৈরি করা হয়েছিল। এদের কাজ হলো আকাশ থেকে ঝাঁপ দিয়ে শত্রুপক্ষের উপরে হামলা করে পদাতিক বাহিনীর অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। রোজ ৬০ কেজি ওজনের জিনিসপত্র পিঠে চাপিয়ে অন্তত ২০ কিলোমিটার দৌড়তে হয় এই কমান্ডো বাহিনীর সদস্যদের। সাড়ে তেত্রিশ হাজার ফুট উপর থেকে ঝাঁপ দিতে সক্ষম এরা। আকাশপথে শত্রুর এলাকায় অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে সমুদ্রপথে হামলায় দক্ষ এই বাহিনী। প্যারাকমান্ডোরারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর একমাত্র ইউনিট, যাদের শরীরে ট্যাটু আঁকার অনুমতি দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
কোবরা:
কোবরা কমান্ডো
‘হয় মরো না হয় মারো’। এটাই কোবরা কমান্ডো বাহিনীর আপ্তবাক্য। জঙ্গলের মধ্যে যেকোনো ধরনের গেরিলা যুদ্ধে সক্ষম এই বাহিনী। ২০০৮ সালে মূলত মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এই বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। কোবরা কমান্ডোরা এতটাই দক্ষ যে, মুহূর্তের মধ্যে জঙ্গলে শত্রুর চোখে ধুলো দিতে পারে। তারা এমন পোশাক এবং মুখে রঙ মেখে অভিযানে নামে যে, চট করে জঙ্গলে তাদের দেখে ফেলা কঠিন। প্যারাসুট নিয়ে ঝাঁপ দিয়েও অভিযানে সক্ষম কোবরা।
কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীর অধীনে আসে কোবরা কমান্ডো বাহিনী। অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় ইনসাস রাইফেল থেকে একে ৪৭, এক্স ৯৫-এর মতো আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত। কোবরা কমান্ডোদের নিশানা এতটাই নিখুঁত যে, যে কোনও স্থান থেকে শত্রুকে গুলি করে খতম করা এদের কাছে জলভাত।
ফোর্স ওয়ান:
ফোর্স ওয়ান
২৬/১১ হামলার পর এই কমান্ডো বাহিনী তৈরি করেছে মহারাষ্ট্র সরকার। এদের মূলকাজ মুম্বইকে রক্ষা করা। বাণিজ্য নগরীর বুকে যেকোনো ধরনের সন্ত্রাস প্রতিরোধে এই বাহিনীকে তৈরি করা হয়েছে। ফোর্স ওয়ান-এর কমান্ডোদের এমনভাবে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে যে মাত্র ১৫ মিনিটে এরা শত্রুপক্ষের ওপরে হামলা চালাতে সক্ষম।
একবার ফোর্স ওয়ান কমান্ডো বাহিনীতে যোগদানের জন্য ৩০০০ আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ২১৬ জনকে বেছে নেয়া হয়।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates