যাদের ঘোরাঘুরির অভ্যাস আছে তারা হয়তো বিষয়টি খেয়াল করে দেখেছেন, আলাদা আলাদা এলাকায় আলাদা সংস্কৃতি, আলাদা মানুষের মিশেল। আবার কিছু কিছু এলাকায় একই ধরনের মানুষ আর কাছাকাছি সংস্কৃতি রয়েছে। যেমন : লাতিন আমেরিকা। দূরত্ব বা ভৌগোলিক দিক দিয়ে আমেরিকার কাছাকাছি হলেও ভাষা এবং সংস্কৃতিতে আমেরিকার থেকে অনেকটাই আলাদা।
ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো মানুষ চেনে ফুটবলের বদৌলতে। অনেক বিখ্যাত ফুটবলারের জন্ম দিয়েছে লাতিন আমেরিকা। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পেরু, মেক্সিকো, পর্তুগাল সবগুলোই লাতিন আমেরিকার দেশ। ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি ব্রাজিল। আমাদের দেশেও ব্রাজিলের ভক্তের সংখ্যা নেহাত কম নয়।
যাঁরা একটু ভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি দেখতে চান, জানতে চান বিচিত্র কিছু, তাঁদের জন্য ব্রাজিল হতে পারে ভ্রমণের উপযুক্ত স্থান। যেসব কারণে ব্রাজিল ভ্রমণ আপনার কাছে কাঙ্ক্ষিত হতে পারে সেগুলো একনজরে দেখে নিতে পারেন।
১. কার্নিভাল
ব্রাজিলের সাম্বা নাচের কথা তো সবারই শোনা। কেউ কেউ হয়তো ইউটিউবে বা টিভিতে দেখেও নিয়েছেন। কিন্তু ব্রাজিলের কোনো কার্নিভালে যদি যান তাহলে বুঝতে পারবেন আয়োজনটা আসলে কত বড়। ব্রাজিলের প্রতিটি বড় শহরে কার্নিভাল উপলক্ষে থাকে আলাদা আয়োজন। ব্রাজিলের কার্নিভালগুলো ধর্মীয় আয়োজনের সাথে একাত্ম। সবচেয়ে বেশি উন্মাদনা থাকে রাজধানী রিয়ো-এর কার্নিভালকে ঘিরে। ফেব্রুয়ারি হচ্ছে কার্নিভালের উপযুক্ত সময়। আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিতে পারেন। আর সে সময়ে না পারলে ডিসেম্বরে যেতে পারেন, নিউ ইয়ারের আগে আগে জমজমাট থাকে ব্রাজিল।
২. আকাশের কখনো মন খারাপ হয় না
ব্রাজিলের আবহাওয়া বছরজুড়ে একই রকম থাকে। বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হয় না। আলাদা করে কোনো গরম বা শীতের ঋতু নেই ব্রাজিলে। যদিও বেশি গরম পড়ে, তাহলে পাহাড় থেকে নেমে আসা বৃষ্টি স্বাভাবিক করে দেবে চারপাশ। তাই যে কোনো সময়েই ব্রাজিল ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত।
৩. সুখী মানুষদের দেশ
ব্রাজিলে যাই থাকুক, দেশটার মানুষগুলো ভীষণ সুখী। ব্রাজিলে নেমে আপনি কোনো গোমড়ামুখো হোটেল ম্যানেজার বা খিটখিটে মেজাজের ট্যাক্সি ড্রাইভার পাবেন না। সবাই বেশ হাসিখুশি। কারণ ব্রাজিলের সংস্কৃতিটাই এমন, মেহমানদের এমন করে বরণ করে নেওয়া হয় যাতে মনে হয় তারা অনেক আগে থেকেই পরিচিত।
৪. ভরপুর বিনোদন
কার্নিভালটা মিস হয়ে গেল বলে মন খারাপ করার কিছু নেই। ব্রাজিলে যখনই যান, বিনোদনের কোনো অভাব হবে না। কারণ সব সময়েই কোনো না কোনো উৎসব লেগে থাকে ব্রাজিলে। থিয়েটার উৎসব, স্ট্রিট ডান্সের উৎসব কিংবা ফুটবল টুর্নামেন্ট। ব্রাজিলিয়ানরা যে কোনো খুশি, আনন্দ বা প্রাপ্তিকে উৎসবে পরিণত করতে পারে। সেখানে থাকলে আপনিও আয়োজনের অংশ হয়ে যাবেন।
৫. অ্যামাজন রেইনফরেস্ট
ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশজুড়ে রয়েছে গহিন অ্যামাজন। সবচেয়ে বেশি অংশটি পড়েছে ব্রাজিলে। যাঁরা প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন, তাঁরা ব্রাজিলে গিয়ে অ্যামাজন ঘুরে আসতে ভুলবেন না যেন। অ্যামাজনের অনেক জায়গায় দিনের আলো পর্যন্ত পৌঁছায় না। পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে অ্যামাজন একটি। এর বাইরেও রয়েছে অন্যান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ইগুজু জলপ্রপাত যার মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি ন্যাশনাল পার্ক। লেংকোস মারানেহেন্সর স্বচ্ছ পানির লেক, চাপাডা দিমান্তিনা পার্কের গিরিখাত আপনাকে মুগ্ধ করবে।
৬. কফি
কফি উৎপাদনে পৃথিবীতে ব্রাজিলের অবস্থান তৃতীয়। এত স্বাদের কফি এখানে রয়েছে যে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন না কোনটা ছেড়ে কোনটা খাবেন! ব্রাজিলিয়ানরা সারা দিন কফির ওপরেই থাকে। সকালের নাশতার পর, দুপুরের এবং রাতের খাবারের পর তো কফি না খেলে খাবার হজম হয় না ব্রাজিলিয়ানদের।
৭. ফুটবলপ্রীতি
সবচেয়ে বেশিবার ফুটবল বিশ্বকাপ জেতা দেশ ব্রাজিল। এই দেশে ফুটবলের উন্মাদনা অন্য সবকিছুকেই ছাড়িয়ে যায়। ব্রাজিলের রাস্তাঘাটে, গলিতে-ফুটপাথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ফুটবলাররা। বলা হয়ে থাকে ফুটবল হচ্ছে রাশিয়ার অপ্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম।
No comments:
Post a Comment