Social Icons

Friday, September 30, 2016

বিমান কিভাবে আকাশে উড়ে

পাখির মত ডানা মেলে উড়বার শখ মানুষেরআদিকাল থেকেই। ছোটবেলায় অনেকেরই এইম-ইন লাইফ থাকে পাইলট হবার। জাহাজের মতো একটা প্রকান্ড জিনিস না হয় পানিতে ভেসে থাকলেও আমরা অবাক না হয়ে থাকলাম, কিন্তু বিমানের মত কয়েক হাজার টনের একটা বস্তু দিব্যি হামিং বার্ডের মত আকাশে উড়ে বেড়ালে অবাক নালাগলেও ঈর্ষা তো লাগে মাস্ট। ইঞ্জিনিয়ারিং এর অনন্য সাফল্য এই বিমান বা উড়োজাহাজ। চলুন তাহলে মনের খিদা মেটাই-
বিমান কিভাবে উড়ে তা জানতে চাইলে আগেজানতে হবে বিমান কোথায় উড়ে? বাতাসে! আর এই বাতাস হলো বিজ্ঞানের ভাষায় ফ্লুইড (Fluid)। পানি যেমন ফ্লুইড ঠিকতেমনি বাতাস ও ফ্লুইড। কাজেই একটা ঈগলের কিংবা একটি বিমানের আকাশে উড়া অনেকটা একটা হাঙ্গরের পানিতে সাঁতার কাটার মতই। এ কারণেই এরোডাইনামিক্সের বিভিন্ন টেস্ট আকাশে না করে প্রথমে পানির নিচে করা হয়। একটা বিমান যখন আকাশে উড়ে তখন সেটি ৪টি এরোডাইনামিক্স বল অনুভব করে।
১। ওজন-যা নিচের দিকে ক্রিয়া করে অভিকর্ষ বলের কারণে,
২। লিফট-উপরের দিকে,
৩। ড্র্যাগ(Drag)-প িছনের দিকে (একটি লাঠিকে যদি বাতাসে বা পানিতে এদিক-ওদিক নাড়ানো হয়, তবে যে বল বাঁধাদেয়ার চেষ্টা করে সেটাই ড্র্যাগ। অর্থাৎ বাতাসের বাঁধাজনিত বল।)
৪। থার্স্ট (Thrust)-সামনের দিকে।
স্পষ্টতঃ ১ ও ৩ নং বল হচ্ছে প্রাকৃতিক এবং ২ ও ৪ নং হচ্ছে কৃত্রিম, যা এদের বিপরীতে ক্রিয়া করে এবং যা বিমানকে ফুয়েল খরচ করে পেতে হয় ওজন এবং পশ্চাতমুখী টান (Drag) এরবিপরীতে ভেসে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
এবার আসা যাক কিভাবে বিমান এই ২ ও ৪ নং বল সৃষ্টি করে।
লিফটঃ
যে বল উড়োজাহাজকে তার ওজন বা অভিকর্ষবলের বিরুদ্ধে উড্ডয়ন করতে সাহায্য করে। স্বাভাবিকভাবেই এটি একটি উর্ধ্বমুখী বল।
আমরা জানি, যেকোন ফ্লুইডের বেগ তার প্রবাহের পথে প্রযুক্ত চাপের সমানুপাতিক, অন্যকথায় তার প্রবাহ পথের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলের ব্যস্তানুপাতিক( V=Q/ A)। ঠিক যেমন বৈদুতিক বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ রোধের ব্যস্তানুপাতিক। যদি প্রবাহের পথে কোন বাঁধার থাকে অর্থাৎ প্রবাহ পথ Narrow হয়ে যায় তবে প্রবাহের বেগ বৃদ্ধি পায় এবং চাপ হ্রাস পায়। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বোঝা যাবে-একটা নল দিয়ে যখন পানি আসে তখন নলটা যদি চেপে ধরা হয় তবে পানির বেগ অনেক বেড়ে যায় কিন্তু চাপ হ্রাস পায়।একই নীতি ব্যবহার করা হয় ইঞ্জিনের কার্বুরেটর কিংবা যেকোন স্প্রে(যেমনঃ এরোসল, বডি স্প্রে)’র ক্ষেত্রে। এই নীতির নাম ‘ভেঞ্চুরী নীতি (Venturi Principle)’, যা কিনা ফ্লুইড মেকানিক্সের বিখ্যাত বার্ণোলীর ইক্যুয়েশানের (Bernoulli’sEquation) ব্যবহারিক রূপ।
বিমানের যে ডানা থাকে তার নাম উইং (Wing) বা এয়ার ফয়েল (Air Foil)। বিমানের ডানার আকার তো সবাই জানে-একটু বাঁকানো ধরণের। যখন ই একটাবিমান সামনের দিকে চলতে শুরু করে তখনএর ডানা বায়ুকে দু’টি স্তরে ে বিভক্ত করে ফেলে-একটি ডানার উপরের স্তর, অন্যটি নিচের। এখন ডানার উপরের বিশেষধরণের অর্ধবৃত্তাকার বা অধিবৃত্তাকার আকৃতির কারণে এর উপর দিয়ে যে বায়ু স্তর অতিক্রম করে তা বাঁধা পায় বা কম আয়তনের মধ্যে দিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ফলে বার্ণোলী নীতি অনুসারে এই বায়ু স্তরের বেগ বৃদ্ধি পায় কিন্তু চাপ হ্রাস পায়। পক্ষান্তরে ডানার নিচের তলটি সমতল বলে বায়ুস্তরের বেগ বা চাপ পরিবর্তন হয় না। সুতরাং যেহেতু ডানার উপরের বায়ুচাপ অপেক্ষা নিচের বায়ুচাপ বেশী,স্বাভাবিকভাবেই বিমানটি বায়ুর চাপে ওজনের বিপরীতে উপরের দিকে উঠবে। একেইলিফট বলে। প্রাথমিক অবস্থায় ভূমি থেকে উঠার সময় অনেক বেশী লিফট প্রয়োজন হয় বলেই বিমান ভূমি থেকে টেকঅফ করার সময় তির্যকভাবে উঠে। কারণ যতবেশী তির্যকভাবে ডানা বা উইং গুলোকে বাতাসে মুভ করানো যাবে তত বেশী লিফট পাওয়া যাবে। এখন নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন কেন টেক অফের আগে বিমানকে রানওয়েতে অতদূর চলতে হয়। কারণ এ সময় ধীরে ধীরে বিমানের বেগ বাড়তে থাকে বলে লিফটও বাড়তে থাকে এবং একটা নির্দিষ্ট বেগে নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করলেই লিফট বল বিমানের ওজনের চেয়ে বেশী হয় এবং বিমান ফাইনাল টেক অফ করে। বিমানকে যখন ল্যান্ডিং-এর প্রয়োজন হয় তখন বিমানের ডানা দু’টিকে নিচের দিকে বাঁকা করা হয়। ফলে এখন ডানার নিচের বায়ুর চাপ ধীরে ধীরে কমতে থাকেএবং বিমান উচ্চতা হারিয়ে নিচের দিকে নামতে শুরু করে।
থার্স্ট(Thurst) :
বিমান তো আকাশে উঠলো, কিন্তু বাতাস তোএকে পিছনের দিকে Drag করে নামিয়ে দিতে চাইবে। কাজেই এই বলকে অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে চাই বল বা থার্স্ট। এ বল নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র কাজে লাগিয়ে সৃষ্টি করা হয়। বিমানের ইঞ্জিন থাকে এর ডানায়। বিমানের উইং বা ডানায় জেট ইঞ্জিনচালিত কম্প্রেসর ঘুরলে বাইরেরবায়ু প্রচুর পরিমাণে ইঞ্জিনের ভিতরে প্রবেশ করে। ইঞ্জিনে ২টি চেম্বার থাকে। একটি কম্বাসচন চেম্বার, অন্যটিএয়ার চেম্বার। এই দুই চেম্বার থেকে প্রচন্ড বেগে বের হওয়া এক্সহস্ট গ্যাস পিছনের বায়ুতে আঘাত করে, ফলে নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুসারে পিছনের বায়ু থার্স্ট প্রয়োগ করে বিমান কে সামনের দিকে চলতে সাহায্য করে।
ইঞ্জিনে প্রবিষ্ট বায়ুর প্রায় ৮০% এয়ার চেম্বারের মধ্য দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায় এবং থার্স্ট তৈরী করে। অবশিষ্ট ২০% বায়ু দুইটি কাজ করে।
১. কম্প্রেসড হয়ে কম্বাসচন চেম্বারে প্রবেশ করে এবং ফুয়েলকে জ্বলতে সাহায্য করে। এই ফুয়েল জ্বালানীর ফলেউৎপন্ন গরম গ্যাস প্রচন্ড বেগে বের হয়ে যাওয়ার সময় কম্প্রেসরের টার্বাইনকে ঘুরায়, যা প্রকারান্তরে এর সাথে কাপল্ড সাকশান ফ্যানকে ঘুরতেসাহায্য করে, যার ফলে নতুন বায়ু কম্প্রেসড হয়ে ইঞ্জিনে প্রবেশ করে।
২. টার্বাইনকে ঘুরিয়ে যখন গরম এক্সহস্ট গ্যাস বের হয়ে যায় তখন তাও থার্স্ট সৃষ্টি করে।
সংগৃহীত

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates