Social Icons

Wednesday, September 28, 2016

বঙ্গোপসাগরে দেখা দিয়েছে নীল বোতাম আতংকে পুরো বিশ্ব! জেনেনিন কি এই নীল বোতাম

খুবই ছোট্ট এবং রহস্যময় একটি সামুদ্রিক প্রাণির নাম ‘নীল বোতাম’ বা ‘Blue Button’। আমরা জামা-কাপড়ে যে বোতাম ব্যবহার করি দেখতে অনেকটা সে রকমই। আর গায়ের রং নীল বলেই নাম হয়েছে নীল বোতাম। সাগরের পানির উপরে এরা ভেসে বেড়ায়।
প্রাণীটি বোতাম আকৃতির গোলাকার ডিস্ক সদৃশ অ্যাবোরাল অংশ ও অসংখ্য ঝুলন্ত টেন্টাকল এবং পলিপ সমৃদ্ধ ওরাল অংশের সমন্বয়ে গঠিত।অ্যাবোরাল অংশের উপরিভাগ বাতাস ধারণে সক্ষম অসংখ্য কাইটিনাস টিউব দ্বারা গঠিত। যার পরিধি ১৬ মিমি পর্যন্ত হতে পারে। এই অংশেরসাহায্যে প্রাণীটি সমুদ্রের পানির উপরিভাগে ভেসে বেড়ায়।
বাংলাদেশের সাগর উপকূলে আগে কখনো এটি দেখা যায়নি। তবে একদল গবেষক সম্প্রতি প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন উপকূলে সাগরের উপরিভাগেএই প্রাণীটিকে প্রথম ভেসে থাকতে দেখেন।বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে হঠাৎ এই প্রাণীর উপস্থিতিকে অশনিসংকেত বলেই মনে করছেনসমুদ্রবিজ্ঞানীরা।
কিন্তু আমাদের সাগর উপকূলে এই প্রাণীর দেখা পাওয়াটা কেন আতংকের?চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ডফিশারিজের পরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম নির্ণায়ক হচ্ছে নীল বোতাম। বাংলাদেশের সমুদ্রউপকূলে এ প্রাণীর উপস্থিতিই বলে দিচ্ছে এখানকার সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে। এটি ভাবনার বিষয়। পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে হাইড্রোজোয়াপ্রজাতির এই প্রাণীর উপস্থিতি জলবায়ু পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বাংলাদেশ উপকূলে মার্চ–এপ্রিলে এইপ্রাণীর অস্তিত্ব বেশি দেখা যাচ্ছে যখনসমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এবংলবণাক্ততা বেশি থাকে। বিশেষ করেদক্ষিণ–পশ্চিম তীব্র মৌসুমিবায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রপৃষ্ঠীয় তাপমাত্রাএবং সমুদ্রের পানির লবণাক্ততাবৃদ্ধির সঙ্গে এই প্রাণীর উপস্থিতিরসম্পৃক্ততা থাকতে পারে। এই প্রাণীটিকোপিপোড (প্রাণিজ খাদ্যকণা) এবংনানা সন্ধিপদী প্রাণীর লার্ভি খাদ্যহিসেবে গ্রহণ করে থাকে, যা অন্যান্যসামুদ্রিক প্রাণীর খাদ্যসংকট ঘটিয়েনেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।অধিক সংখ্যায় এই প্রাণীর উপস্থিতিসামুদ্রিক খাদ্যচক্রকেও প্রভাবিতকরতে পারে। সর্বোপরি বাংলাদেশউপকূলে এই প্রাণীর উপস্থিতি এবং সংখ্যায় বৃদ্ধি বঙ্গোপসাগরের মৎস্যসম্পদ ও জলজ জীববৈচিত্র্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
নীল বোতামের উপস্থিতি বলে দিচ্ছে, সেন্ট মার্টিন উপকূলে তাপমাত্রা বাড়ছে। তাপমাত্রা বাড়লে প্রবাল দ্বীপের ক্ষতি হতে পারে, মাছও কমে যেতেপারে। এতে জেলেদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। মৎস্য খাতে রপ্তানি আয় কমে যাবে। তাপমাত্রা বাড়লে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে। তখনজোয়ারের সময় উপকূলীয় এলাকাগুলো নিয়মিত প্লাবিত হবে।
২০১৪ সালের মার্চ মাসে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে গিয়ে প্রথম নীল বোতামের সন্ধান পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসঅ্যান্ড ফিশারিজের গবেষকেরা। এ প্রাণীর নমুনা সংগ্রহের পর ইনস্টিটিউটের গবেষণাগারে নিবিড় শারীরবৃত্তীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয়।এরপর গবেষকেরা বাংলাদেশ উপকূলে এই প্রজাতির প্রাণীর উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হন। চলতি বছরের জুন মাসে জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিকপ্রকাশনা সংস্থা ‘স্প্রিঙ্গার’-এর ওশান সায়েন্স জার্নালের ৫১ (২) সংখ্যায় এ–সংক্রান্ত গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।
গবেষক দলের সমন্বয়ক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের প্রভাষক মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজচৌধুরী। গবেষণা সহযোগিতা করেন একই ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. রাশেদ–উন–নবী, সাইদুর রহমান চৌধুরী, মো. শাহাদাত হোসেন ওসহযোগী অধ্যাপক এস এম শরীফুজ্জামান।
মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ চৌধুরী বলেন, বিশ্বসমুদ্রের নানা অংশে হাইড্রোজোয়া শ্রেণির, বিশেষ করে ভাসমান জেলিফিশ প্রজাতির প্রাণীর আধিক্যআগের চেয়ে অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। ডেনমার্কভিত্তিক জীববৈচিত্র্যের তথ্য সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ডাইভার্সিটিইনফরমেশন ফ্যাসিলিটির (জিবিআইএফ) তথ্য অনুযায়ী প্রশান্ত, আটলান্টিক এবং ভারত মহাসাগরের ট্রপিক্যাল ও সাব–ট্রপিক্যাল অঞ্চলের প্রায়৮৬টি পয়েন্টে এখন পর্যন্ত এই প্রাণীর অস্তিত্ব রেকর্ড করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ উপকূলে এই প্রাণীর হঠাৎ উপস্থিতিসমুদ্রবিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে।
নীল বোতাম প্রাণী বিশ্বে প্রথম কখন কোথায় দেখা যায়, সে–সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলেরসদস্যরা। তাঁরা জানান, ১৯০৪ সালে পানামা উপকূলে এ প্রাণী দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যায় ১৯৬৫ সালে। ভারতের তামিলনাড়ুর উপকূলে২০১৩ সালে এ প্রাণীর উপস্থিতি শনাক্ত হয়। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, জাপান ও চীনের উপকূলে এ প্রাণী দেখা যায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি সমুদ্রদূষণের কারণে ‘নীল বোতাম’ দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন সেন্ট মার্টিন নিয়ে গবেষণা করা খুলনাবিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী। দ্বীপটিতে ১০ বছর ধরে গবেষণার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন,সেখানে জাহাজ চলাচল বেড়ে যাওয়ায় সমুদ্রে তেলজাতীয় বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এ ছাড়া দ্বীপটিতে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হোটেলেরবর্জ্যও পানিতে মিশছে। এ কারণে সেখানে পানির তাপমাত্রা গত ১০ বছরে প্রায় দেড় ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেড়েছে।

    No comments:

    Post a Comment

     

    © সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

    © সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

    সম্পাদকীয় কার্যলয়

    Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

    সম্পাদক ও প্রকাশক

    Jahangir Alom
    Email- worldnewsbb2@gmail.com
    worldnewsbbbrazil@gmail.com
     
    Blogger Templates