বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস ডায়াবেটিসের সাধারণ ওষুধ মেটফরমিনেই লুকিয়ে রয়েছে মানুষের দীর্ঘায়ু হওয়ার রহস্য। এ নিয়ে ২০১৬ সালেই মানুষের ওপর যুগান্তকারী কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এর মাধ্যমে আলঝেইমার ও পারকিনসনস এর মতো রোগবালাই নিরাময় করা সম্ভব হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। যার ফলে মানুষের দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকানো এবং ১১০ ও ১২০ এর কোঠায় গিয়েও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা যাবে।
যদিও বিষয়টিকে কল্পবিজ্ঞানের কাহিনির মতোই লাগছে তথাপি গবেষণায় ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে, ডায়াবেটিসের ওষুধ মেটফরমিন বিভিন্ন প্রাণির আয়ু দীর্ঘায়িত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মানুষের ওপরও ওষুধটির প্রয়োগে একই রকম ফল হয় কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে।
যদি এই পরীক্ষা সফল হয় তার মানে দাড়াঁবে ওষুধটি সেবনে একজন মানুষ ৭০ বছর বয়সেও ৫০ বছরের মতোই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারবেন। এর ফলে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও ডিমেনশিয়ার মতো রোগের আলাদা আলাদা চিকিত্সাযজ্ঞের বদলে শুধুমাত্র বার্ধর্ক্যের গতিরোধ করা গেলেই সব রোগ প্রতিরোধ করা যাবে। যা চিকিত্সা বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।
ক্যালিফোর্নিয়ার বাক ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন এজিং এর অধ্যাপক গর্ডন লাইটগো বলেন, ‘আপনি যদি মানবদেহের বার্ধক্যায়ন প্রক্রিয়াকে টার্গেট করেন এবং এর গতি রোধ করতে পারেন তাহলে আপনি সব ধরনের বার্ধক্যজনিত রোগের গতিও থামিয়ে দিতে পারবেন। এতে এমনকি বার্ধক্যজনিত যন্ত্রণাও লাঘব করা যাবে। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটা হবে এক যুগান্তকারী বিপ্লবী ঘটনা যা আগে কখনো ঘটেনি’।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি গত ২৫ বছর ধরে বার্ধক্য নিয়ে গবেষণা করছি। কিন্তু এই প্রথম মানুষের উপর বার্ধক্য প্রতিরোধী ওষুধ নিয়ে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর সম্ভাব্যতা নিয়ে ভাবতে সক্ষম হলাম। এমনকি ২০ বছর আগেও মানবদেহের বার্ধক্যায়ন প্রক্রিয়া পুরোপুরি রহস্যঘেরা ছিল। কিন্তু বিষয়টি এখন আমরা কিছুটা বুঝতে শুরু করেছি’।
প্রসঙ্গত, প্রাণিজগতে বার্ধক্যায়ন জীবনের কোনো অনিবার্য অংশ নয়। কারণ সব প্রাণিকোষই এমন একটি ডিএনএ ব্লু-প্রিন্ট ধারণ করে যা প্রাণিদেহকে মৃত্যু পর্যন্ত সবসময়ই সজীব রাখতে সক্ষম। যেমনটা দেখা যায় অনেক সামুদ্রিক প্রাণির ক্ষেত্রে- যারা কখনোই বার্ধ্যক্যে আক্রান্ত হয় না। কিন্তু জীবদ্দশায় মানবদেহে শত কোটি কোষ বিভাজনের ঘটনা ঘটে দেহটিকে সক্রিয় রাখার জন্য। আর যত বেশি বার এই বিভাজনের ঘটনা ঘটে মানবদেহের কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় তত বেশি ভুলভ্রান্তি প্রবেশ করে। এই গোলমাল যত বাড়তে থাকে তত মানবদেহ নিজের ক্ষয়ক্ষতি পূরণে অক্ষম হয়ে পড়ে।
উদাহরণত, ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই গোলমালের ফলে মানবদেহের প্রাণকোষগুলো ক্যান্সারকোষের বৃদ্ধি ঠেকাতে অক্ষম হয়ে পড়ে। আর আলঝেইমারের ক্ষেত্রে অকেজো হয়ে পড়া কোষগুলোকে অপসারণে অক্ষম হয়ে পড়ে মস্তিষ্ক। যার ফলে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ দেখা দেয়।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ
No comments:
Post a Comment