৭১১ সালে মুসলমানেরা স্পেন (যার মধ্যে বর্তমান পর্তুগালও অন্তর্গত ছিল) আক্রমণ করে ও শিঘ্রই সমগ্র স্পেন দখল করে।
১০ম শতকের শুরুতে গৃহযুদ্ধের কারণে স্পেনের কেন্দ্রে মুসলমান শাসকদের পতন ঘটে।
১১৪৩ সালে পর্তুগাল কাস্তিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
১২শ শতকের শেষার্ধে স্পেনে গ্রানাদা ছিল মুসলমানদের শেষ ঘাঁটি।
১৪৬৯ সালে আরাগোনের রাজা ফের্দিনান্দ এবং কাস্তিয়ার রাণী ইসাবেলা বিয়ে করেন। এর ফলে স্পেনের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই খ্রিস্টান রাজ্য একত্রিত হয়ে একটি রাজ্যে পরিণত হয়। রাজা ফের্দিনান্দ ও রাণী ইসাবেলার ঘরে ১৪৯৫ সালে জন্ম নেন কন্যাসন্তান কাতেরিনা।
১৪৯২ সাল নাগাদ নতুন এই রাজ্যের সেনারা স্পেনে মুসলমানদের শেষ ঘাঁটি গ্রানাদা দখল করে এবং মুসলমানদের সেখান থেকে বিতাড়িত করে। স্পেনে মুসলমান শাসনের সমাপ্তি ঘটে। মুসলমানদের রেখে যাওয়া সমৃদ্ধ স্থাপত্যকলার নিদর্শন এখনও দক্ষিণ স্পেনের গ্রানাদা ও কর্দোবার মত শহরগুলিতে দেখতে পাওয়া যায়।
একই বছরে (১৪৯২) নাবিক ক্রিস্তোফার কলম্বাস নতুন রাজা-রাণীর সমর্থন নিয়ে পশ্চিম অভিমুখে জাহাজ নিয়ে যাত্রা শুরু করেন, উদ্দেশ্য আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ভারতে পৌঁছানো।
স্পেনের নতুন শাসকেরা অন্যান্য ধর্মের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল ছিল না। তারা “বিপথগামীদের” খুঁজে বের করতে বিশেষ ধর্মবিচারসভার (inquisition) ব্যবস্থা করে। এই তথাকথিত বিপথগামীদের মধ্যে রোমান ক্যাথলিক গির্জার চেয়ে ভিন্ন মতাবলম্বী খ্রিস্টানরাও যেমন ছিল, অন্য ধর্মবিশ্বাসের লোকেরাও যেমন ইহুদীরাও ছিল। ইহুদীদেরকেও স্পেন থেকে বিতাড়িত করা হয়।
১৫০৯ সালে ফের্দিনান্দ ও ইসাবেলের কন্যা কাতেরিনার সাথে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরির বিয়ে হয়।
১৫১২ সালে রাজা ফের্দিনান্দ নাভার রাজ্য দখল করেন এবং এর মাধ্যমে স্পেনের পুনঃএকত্রীকরণ সম্পূর্ণ করেন।
১৬শ শতকে স্পেন ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হয়। তাদের স্থলসেনাবাহিনী ইউরোপের বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করত (যেমন – ওলন্দাজদের বিরুদ্ধে)। তাদের নৌবাহিনী নব্য আবিষ্কৃত আমেরিকা মহাদেশে স্থাপিত স্পেনীয় সাম্রাজ্য থেকে সোনা ও রূপার লাভজনক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করত।
রাজা প্রথম কার্লোস-এর শাসনামলে (১৫১৬-১৫৫৬) স্পেনীয় শক্তি উন্নতির শিখরে পৌঁছেছিল। তিনি ১৫১৯ সালে পবিত্র রোমান সম্রাটের উপাধি লাভ করেন, এবং ফলশ্রুতিতে তিনি জার্মানি, অস্ট্রিয়া, হল্যান্ড, ফ্রান্সের কিছু অংশ ও ইতালির অংশবিশেষ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা লাভ করেন।
১৫২১ সালে স্পেন মেক্সিকোর আজতেক সাম্রাজ্য দখল করে।
১৫৩৫ সালে তারা পেরুর ইনকা সাম্রাজ্য করায়ত্ত করে।
১৫৫৬ সালে রাজা কার্লোসের মৃত্যুর পর তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলি তাঁর ছেলে দ্বিতীয় ফিলিপ এবং তাঁর ভাই প্রথম ফের্দিনান্দের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। ফিলিপ স্পেন, হল্যান্ড এবং স্পেনের আমেরিকান উপনিবেশগুলির শাসনাধিকার লাভ করেন। অন্যদিকে ফের্দিনান্দ পবিত্র রোমান সম্রাটের উপাধি নেন।
রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৫৬ সালে যখন স্পেনের শাসনভার গ্রহণ করেন, তখন স্পেন ছিল উন্নতির শিখরে। তিনি ১৫৯৮ সাল পর্যন্ত স্পেন শাসন করেন। ফিলিপ ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক ছিলেন। তিনি স্পেনের নেতৃত্বে ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশকে নিয়ে একটি ক্যাথলিক সাম্রাজ্য গঠনের স্বপ্ন দেখতেন।
১৫৬৫ সালে স্পেন ফিলিপিনে উপনিবেশ স্থাপন করে।
১৫৬৮ সালে স্পেনীয় হল্যান্ডে যুদ্ধ শুরু হয়। অরেঞ্জের উইলিয়ামের নেতৃত্বে ওলন্দাজরা স্পেনীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।
১৫৭১ সালে লেপান্তোর যুদ্ধে স্পেন ও অস্ট্রিয়া তুর্কি একটি নৌবহরকে পরাজিত করে।
১৫৮০ সালে স্পেন পর্তুগাল বিজয় করে এবং ফলে পর্তুগাল স্পেনীয় সাম্রাজ্যের অংশে পরিণত হয়। স্পেন ১৬৪০ পর্যন্ত পর্তুগালকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল।
১৫৮১ সালে হল্যান্ড স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
পর্তুগাল মহাসমুদ্রে ইউরোপীয় অভিযানগুলিতে পথপ্রদর্শক ও নেতার ভূমিকা পালন করেছিল। পর্তুগিজ নাবিকেরা এশিয়ার সাথে নতুন নতুন বাণিজ্যপথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। পর্তুগিজেরা ইতিমধ্যেই সাগরের ওপারে একটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল যার মধ্যে অন্তর্গত ছিল আফ্রিকার পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের দীর্ঘ কিছু অংশ, ব্রাজিল, ভারতের বাণিজ্যবন্দর গোয়া, চীনের বাণিজ্যবন্দর মাকাও এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু দ্বীপ।
১৫৮৮ সালে স্পেনের নৌবহর আর্মাদা (Armada) ইংল্যান্ড আক্রমণ ও দখলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, কিন্তু পথে ইংরেজদের সাথে নৌযুদ্ধে পরাজিত হয়।
No comments:
Post a Comment