বিকল্প জ্বালানির ব্যবহারের ক্ষেত্রে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে ব্রাজিল৷ প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানানসই সরকারি নীতির মাধ্যমে জলবিদ্যুৎ ও সৌরশক্তির উৎপাদন বাড়ছে৷
ফ্লোরিয়ানোপেলিস বে-তেই সব কিছুর সূচনা৷ রাটোনেস গ্রান্জি দ্বীপটিতে রয়েছে সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্ল্যান্ট, যা ব্রাজিলের সবচেয়ে পুরনোগুলির মধ্যে পড়ে৷ ঐতিহাসিক দুর্গটির জন্য বিদ্যুৎ আসে এই প্ল্যান্ট থেকে৷ ১৫ বছর আগে এই প্যানেলগুলো বসানো হয়৷ সে যাবৎ অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, জানালেন নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ের অধ্যাপক রিকার্ডো ব়্যুটার৷ তিনি বললেন, ‘‘আরো অনেক বিকাশ ঘটেছে৷ গোড়ায় অধিকাংশ প্ল্যান্টগুলোই এ রকম ছিল, ব্যাটারি লাগানো একক সিস্টেম বা প্রণালী, যাদের মূল গ্রিডের সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই৷ এখন যেখানে গ্রিড আছে, সেখানেও এই প্রণালী চালু হচ্ছে৷ কিন্তু একা একা নিজেই কাজ করতে পারে, এ ধরনের প্রণালী আজও গ্রামাঞ্চলে খুবই কার্যকরী, কেননা সেখানে গ্রিড পৌঁছয়নি৷''
অ্যাটলান্টিকের ধারে অবস্থিত ফ্লোরিয়ানোপোলিস৷ শহরটি সাম্প্রতিক কয়েক বছরে খুবই বেড়ে উঠেছে৷ আর সেজেছে এক বিশেষ ধরনের আলোকসজ্জায়৷ সেই কারণে হয়তো এখানেই ব্রাজিলের বৃহত্তম ফোটোভল্টেয়িক পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলেছে৷ এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রাখবে সেই প্ল্যান্ট৷
ব্রাজিল নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে
বসানো হচ্ছে ইলেক্ট্রোসুল বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানির জমিতে৷ প্ল্যান্টের একাংশ ইতিমধ্যেই তৈরি৷ সপ্তাহে দুবার করে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের একটি গাইডেড ট্যুর পর্যন্ত দেওয়া হয়৷
একজিবিট বা প্রদর্শনী হিসেবে নটি ইনস্টলেশন বসানো হচ্ছে৷ অগাস্ট থেকে এখানে সৌরশক্তিজাত ৫৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করা হবে৷ এছাড়া ছাদের ওপর আরো ৪৫০ কিলোওয়াট৷ সব মিলিয়ে এক মেগাওয়াট৷
জার্মান উন্নয়ন ব্যাংক এই প্রকল্পের অর্থসংস্থান করছে – তবে ঋণ হিসেবে নয়, দান হিসেবে – ২৮ লাখ ইউরো৷ এই সাহায্য ছাড়া ইলেক্ট্রোসুলের প্রকল্পটি অর্থকরী হতো না৷ সৌরশক্তি থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের দাম অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া জ্বালানির চেয়ে বেশি হতো৷
সোলার প্যানেলগুলেোর দাম কিছুদিন আগেও প্রায় দ্বিগুণ ছিল৷ কিন্তু ক্রমাগত দাম কমার ফলে সৌরশক্তি অন্যান্য জ্বালানির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে, বিশেষ করে জলবিদ্যুতের সঙ্গে৷ ইলেক্ট্রোসুলের ম্যানেজার ফ্রাংকলিন ফাব্রিসিও লাগো প্রতি সপ্তাহে একবার কেন্দ্রগুলি ঘুরে দেখেন৷ ব্রাজিল তার জ্বালানি চাহিদার ৮০ শতাংশই মেটায় ছোট ছোট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে৷
এভাবে ব্রাজিল নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে – তবে খরা দেখা দিলে জলবিদ্যুতের আকাল ঘটতে পারে৷ ইলেক্ট্রোসুল জলবিদ্যুৎ বিভাগের ফ্রাংকলিন ফাব্রিসিও লাগো বলেন, ‘‘ব্রাজিলে জ্বালানি শক্তির বাজারে বৈচিত্র্য আনা দরকার৷ আমরা জ্বালানির যাবতীয় প্রাকৃতিক উৎস ব্যবহার করতে চাই, বিশেষ করে ব্রাজিলের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চাহিদা মেটানোর জন্য৷''
ইলেক্ট্রোসুলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুতের সমন্বয় করা হয়৷ এমনও হতে পারে যে, শীগগিরই আরো অনেক ছোট ছোট বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী তাতে যোগ দেবে৷ জার্মান জ্বালানি উপদেষ্টারাও তাতে সাহায্য করছেন৷ লক্ষ্য হল, সাধারণ গ্রাহকরাও যাতে তাদের উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ গ্রিডে দিতে পারেন৷ সে জন্য গত ডিসেম্বর মাসে আলাদা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে৷ জিআইজেড-এর ইওহানেস কিসেল বলেন, ‘‘এটা একটা বিরাট পরিবর্তন বলা চলতে পারে, কেননা ব্রাজিলের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল খুবই কেন্দ্রীভূত৷ এই প্রথম বিকেন্দ্রীকৃতভাবে গ্রিডে বিদ্যুৎ দেওয়া চলবে৷ উন্মুক্ত কাঠামোর আওতায় আজকাল গ্রাহকরা সরাসরি গ্রিডে বিদ্যুৎ দিতে পারেন ও সেভাবে তাদের ইলেকট্রিক বিল কমাতে পারেন৷''
নতুন আইনের ফলে ব্রাজিলের সৌরশক্তি শিল্পে একটা যুগান্তকারী পরিবর্তন আসতে চলেছে৷ ইউনিভার্সিটিতে একটি অতি পুরনো সোলার ইনস্টলেশন আছে৷ প্রফেসর রিকার্ডো ব়্যুটার মাঝে মাঝে তাঁর ছাত্রছাত্রীদের ছাদের ওপর নিয়ে যান৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানি পাঠক্রমটিতে প্রযুক্তি ছাড়া ব্যবসায় ও ব্যবস্থাপনাও পড়ানো হয়৷
ব্রাজিলের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বর্তমানে মাত্র এক শতাংশ৷ কিন্তু এক শতাংশ প্রবৃদ্ধির জন্যেই বাড়তি এক গিগাওয়াট জ্বালানি শক্তির প্রয়োজন৷ যা কিনা ফ্লোরিয়ানোপোলিসে প্রস্তাবিত সোলার প্ল্যান্ট যা সরবরাহ করবে, তার চেয়ে এক হাজার গুণ বেশি৷
No comments:
Post a Comment