সুইফটের নেটওয়ার্ক হ্যাক করে বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ চুরি হয়নি বলে ফের দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সুইফট বলছে, আমরা শতভাগ নিশ্চিত যে, আমাদের সিস্টেমে কোনো সমস্যা হয়নি। আমাদের নেটওয়ার্কে কোনো হ্যাকের ঘটনা ঘটেনি। এ লেনদেনের জন্য ব্যাংকগুলোই দায়ী।
ফিলিপাইনের মাকাতি সিটিতে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন সুইফটের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যালেইন রেস। তিনি সংস্থাটির ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলেরও প্রধান।
অ্যালেইন রেস বলেন, যেকোনো ধরনের লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শেষাবধি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সুইফট ও ব্যাংকগুলোর দায়িত্বের পার্থক্য সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। ব্যাংকের আওতাধীন অংশের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যাংকেরই। সুইফট শুধু সব গ্রাহকের লেনদেন সম্পর্কে অবহিত করার কাজটি করে থাকে। পাশাপাশি সুইফট অংশের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বও প্রতিষ্ঠানটির ওপর।
নিরাপত্তা সম্পর্কিত বাস্তবিক অবস্থা সবাইকে অবহিত করাটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অর্থ চুরির ঘটনায় বেশকিছু তদন্ত কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এ তদন্তের ভার সত্যিই তাদের। আমরাও চাই, তাদের নেতৃত্বেই যেন তদন্তগুলো সম্পন্ন হোক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক স্পষ্ট করেই বলেছে, তাদের কম্পিউটার ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ বা হ্যাকড হয়েছে এমন কোন প্রমাণ নেই। এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি। গত ৮ মার্চ নিউইয়র্ক ফেডের মুখপাত্র আন্দ্রিয়া প্রিস্ট এক বিবৃতিতে বলেন, অর্থ চুরির ক্ষেত্রে ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমসে অনুপ্রবেশের চেষ্টার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফেডের সিস্টেমস লঙ্ঘনের কোনো প্রমাণ নেই।
এদিন মাকাতি সিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সুইফট কর্মকর্তা অ্যালেইন রেস বলেন, আমরা শতভাগ নিশ্চিত যে, আমাদের সিস্টেমে কোনো সমস্যা হয়নি। অর্থ চুরির ক্ষেত্রে সুইফট সিস্টেমের সুরক্ষা ভাঙা হয়নি। আমাদের নেটওয়ার্কে কোনো হ্যাকের ঘটনা ঘটেনি। যেকোনো ধরনের লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শেষাবধি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
তার উদ্ধৃতি দিয়ে ফিলিপাইনের জিএমএ নিউজ ও র্যাপলার গতকাল এ খবর প্রকাশ করে।
বিশ্বব্যাপী ৩ হাজারের অধিক বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থ স্থানান্তরে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে। সুইফটের মেসেজিং সিস্টেম ব্যবহার করে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থ স্থানান্তরের নির্দেশনা পাঠায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ক্ষেত্রে সুইফট নেটওয়ার্ক হ্যাকের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে গতকাল ফের দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি করেছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। এর মধ্যে ১৯.৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার শ্রীলংকা ফেরত দিলেও এখন পর্যন্ত তা বাংলাদেশ ব্যাংক বুঝে পায়নি। আর ৮১ মিলিয়ন ডলার রয়েছে ফিলিপাইনে। এ ঘটনার সন্দেহ ভাজন ব্যবসায়ী কিম অং প্রথমে ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার, পরে ৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার ফেরত দেয় ফিলিপাইনের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট এএমএলসির কাছে। কিন্তু ফিলিপাইনের পত্রিকা বলছে, দ্বিতীয় দফায় আরো ৮৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৬ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা চুরি করে পাঠানো হয় ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। ফেডারেল রিজার্ভের সন্দেহ হলে সেই অর্থের ছাড় আটকে দেয় ফিলিপাইন। পরে সে অর্থ ফেরত নেয় ফেডারেল রিজার্ভ। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই বলেনি। এটিও চেপে রেখেছে।
এ ঘটনার পরে নিউইয়র্ক ফেড এ বিষয়ে রয়টার্সকে জানায়, সাধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করেই ওই অর্থ আরসিবিসিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ওই অনুরোধ সুইফটের মাধ্যমে আসায় তা নির্ভরযোগ্য ছিল। যদিও ফেডারেল রিজার্ভ এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না বলে বাংলাদেশেরে পক্ষ থেকে সে সময় বক্তব্য দেয়া হয়।
বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনার পর সুইফট নিরাপত্তা বিধানে বাড়তি কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা জানতে চাইলে অ্যালেইন রেস বলেন, আমরা প্রতিটি লেনদেনকে একইভাবে দেখতে চাই। সব লেনদেনই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের নিরাপত্তার মূলনীতি এক।
Friday, April 8, 2016
Subscribe to:
Post Comments (Atom)


No comments:
Post a Comment