পুরুষের তুলনায় নারীর শরীরিক পরিবর্তন বেশি ঘটে থাকে। বয়ঃসন্ধিতে তো বটেই গর্ভধারণের ক্ষেত্রেও নারীর শরীরে লক্ষনীয় পরিবর্তন ঘটে। পরিবর্তন ঘটে চিন্তা-চেতনায় এমনকি মেজাজেও। এই বিষয়কে আরও শক্ত ভিত্তি দিয়েছে বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণা। তাদের মতে, গর্ভধারণের পর অন্তত ২ বছরের জন্য নারীর মস্তিষ্কে পরিবর্তন ঘটে থাকে।
ইউরোপের একদল বিজ্ঞানী সম্প্রতি গবেষণা করে দেখেছেন গর্ভধারণের পর থেকেই নারীর মস্তিষ্কে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। মস্তিষ্কে ধূসর পদার্থের ক্ষরণ এ সময় অনেক হ্রাস পায়। তবে এর ফলে নারীর মনোভাবে কোনো বিরূপ পরিবর্তন ঘটে না। বরং এর ফলে অনাগত শিশুর সঙ্গে মার সম্পর্কের বন্ধন আরো দৃঢ় হয়।
আর এই পরিবর্তন সন্তান জন্মদানের ২ বছর পর পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। স্পেনের এইউবি (Autonomous University of Barcelona) এবং নেদারল্যান্ডের লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় (Leiden University)এর একদল গবেষক নারীর মস্তিষ্কের এই পরিবর্তন সম্পর্কে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন নেচার নিউরোসায়েন্স (Nature Neuroscience) পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন।
গবেষণার জন্যে তারা একদল নারীর উপর পরীক্ষা চালান। গবেষণায় অবিবাহিত নারী ছাড়াও যেমন গর্ভবতী নারী ছিলেন, তেমনই সন্তানের মা এবং বিবাহিত তবে সন্তান নেই এমন নারীর মস্তিষ্কও তারা পর্যবেক্ষণ করেন।
গবেষকেরা দেখেন যেসব নারী প্রথমবারের মতো সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন তাদের মস্তিষ্কে ধূসর পদার্থ হ্রাস পায় সবচেয়ে বেশি। তারা আরও দেখেন মস্তিষ্কের যে অংশে ধূসর পদার্থের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে তা সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। গবেষকেরা বলছেন, ওই অংশটি মূলত অপর মানুষের মনোভাব ও আচরণ বুঝতে সাহায্য করে থাকে। যাকে থিওরি অব মাইন্ড (theory-of-mind) বলা হয়ে থাকে।
গবেষকেরা বলছেন, মস্তিষ্কের এই অংশের পরিবর্তনের ফলে একজন মা তার সন্তানের প্রতি বেশি আবেগপ্রবণ থাকেন। সন্তান আর মার মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন আরো মজবুত হয়।
মস্তিষ্কের এই পরিবর্তনের ফলে স্মৃতিশক্তিতে কোনো প্রভাব ফেলে না বলেই দাবি করেছেন ইউরোপের বিজ্ঞানী দলটি। তবে গবেষণাকালে অনেক মা জানিয়েছেন, এ সময়টিতে তারা ভুলোমনের হয়ে যান। অবশ্য অনাগত শিশুটির চিন্তাই তাদের মন জুড়ে থাকে বলেই এমনটি হয়। যাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন সন্তানের প্রতি মার অতিরিক্ত আদর ও যত্নের মনোভাবের কারণেই তা ঘটে।
বিজ্ঞানীরা আরো জানিয়েছেন, গর্ভধারণের সময় একজন নারীর যৌনক্ষুধা সবচেয়ে বেশিমাত্রায় থাকে। বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের কারণে তাদের যৌন চাহিদা বেড়ে যায়। এই গবেষকদলও বলছেন, মস্তিষ্কের পরিবর্তনের কারণেই তা ঘটে থাকে। অর্থাৎ মস্তিষ্কে ইস্ট্রোজেন নামক হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ। আর এই ইস্ট্রোজেনের ঢেউ খেলে থাকে গর্ভধারণের পুরো ৯ মাসই! আর এ সময় যে পরিমাণ ইস্ট্রোজেনের নিঃসরণ ঘটে তা সারা জীবনেও কোনো নারীর ঘটে থাকে না।
সুত্রঃ বিবিসি
No comments:
Post a Comment