রাখাইন পরিস্থিতি সরেজমিনে ঘুরে দেখে আসার জন্যে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির প্রতি আহবান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
সেনাবাহিনীর হাতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগের মধ্যেই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এই আহবান জানানো হলো।
রোহিঙ্গা নির্যাতনের ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকায় অনেকেই দেশটির প্রকৃত নেত্রী অং সান সু চির সমালোচনা করছেন। এমনকি তার নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়ারও দাবি উঠেছে সোশাল মিডিয়ায়।
জাতিসংঘ বলছে, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সৈন্যদের হাতে যখন বেসামরিক লোকজনকে হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া এবং রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণের অভিযোগ উঠছে তখন অং সান সু চির উচিত রাখাইন রাজ্যে গিয়ে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করার ব্যাপারে তাদেরকে আশ্বস্ত করা।
গত সপ্তাহে অং সান সু চি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা করে বলেছিলেন, বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কে তারা উস্কানি দিচ্ছে।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত ভিজয় নাম্বিয়ার বলেছেন, কট্টরপন্থীদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে দেশটির কর্তৃপক্ষ অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তিনি খুব হতাশ।
তিনি বলেছেন, মিয়ানমারে তাদের স্থানীয় দূত এবং তাদের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা, যারা দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য ঘুরে দেখে এসেছেন, তারা সেখানকার অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
নাম্বিয়ার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে, আমি মনে করি, সেখানে যাতে নতুন করে কোনো আক্রমণের ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে সেখানকার বেসামরিক নাগরিকরা যাতে নিরাপদ বোধ করেন সেজন্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতেও কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
অং সান সু চির প্রতি জাতিসংঘের এই দূত আহবান জানান, রাখাইনের পরিস্থিতি সরেজমিনের ঘুরে দেখে আসার জন্যে।
সু চির পক্ষ থেকে এখনও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুকে তিনি বারবারই অত্যন্ত ‘স্পর্শকাতর’ বলে উল্লেখ করে আসছেন।
সু চির পক্ষ থেকে এখনও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুকে তিনি বারবারই অত্যন্ত ‘স্পর্শকাতর’ বলে উল্লেখ করে আসছেন।
গত সপ্তাহে সিঙ্গাপুরের একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে শুধু মুসলিমরাই উদ্বিগ্ন নয়, বৌদ্ধরাও একই রকমের উদ্বিগ্ন। তারা উদ্বিগ্ন কারণ সেখানে শতাংশের হিসেবে তাদের সংখ্যা কমে আসছে।’
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করে দেখার জন্যে সরকার ১৩ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন সেনাবাহিনী সমর্থিত একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সাবেক একজন জেনারেল।
কমিশনের পক্ষ থেকে স্বচ্ছতার সাথে তদন্ত চালানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও অনেকে এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
রাখাইন রাজ্যে এই সহিংসতা শুরু হয় অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে যখন দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের ভাষায়, কয়েকশ সশস্ত্র হামলাকারী সীমান্ত পুলিশের বিভিন্ন ছাউনিতে একইসাথে হামলা চালায়।
সরকার বলছে, ওই হামলায় নয়জন কর্মকর্তা নিহত হয়। বলা হয়, হামলাকারীরা এসব ছাউনি ও ফাঁড়ি থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদে লুট করে নিয়ে গেছে। তারপর থেকে সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে অভিযান চালাতে শুরু করে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এই অভিযান চলছে যখন তারা রোহিঙ্গাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। গ্রেফতার করছে সন্দেহভাজন হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে। তখন থেকে রোহিঙ্গারা তাদের বাড়িঘর থেকে পালাতে শুরু করে। অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশেও পালিয়ে এসেছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা
No comments:
Post a Comment