রাজধানীর বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে ধর্ষণের ঘটনার আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দু’জন নয়; ঘটনার রাতে চার তরুণীকে ধর্ষণ করেছিল আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু আবদুল হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ। তাদের মধ্যে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। অন্য দু’জনের কথা এতদিন অজানা ছিল। রিমান্ডে নাঈমকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ধর্ষণের শিকার আরও দুই তরুণীর কথা জানা গেছে। তবে তার দাবি, ‘সম্মতি’ নিয়েই ওই রাতে তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে দুই বন্ধু।
এদিকে বনানী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শেষ করেছে পুলিশের তদন্ত কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বনানীর ওসির বিরুদ্ধে এ ঘটনায় গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, প্রথমে দুই তরুণীকে পৃথক রুমে ধর্ষণের পর সাফাত-নাঈম তাদের গাড়িতে করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এরপর অন্য দু’জনের সঙ্গে তারা একই ধরনের কাজ করে। বিভিন্ন সময় ধর্ষণের ঘটনার বাদীসহ দুই তরুণীর বক্তব্য পুলিশ নিলেও এখন বাকি দু’জনকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা। পেলে তাদেরও বক্তব্য নেওয়া হবে। স্বেচ্ছায় নাকি জোরপূর্বক তাদের শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করতে বাধ্য করেছিল সাফাত-নাঈম; তা স্পষ্টভাবে জানবে পুলিশ। কেন তারা এতদিন বিষয়টি লুকিয়ে রেখেছিলেন তাও জানার চেষ্টা করা হবে।
রিমান্ডে সাফাতের দেহরক্ষির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য!
আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের দেহরক্ষী রহমত রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে সেই তথ্য প্রকাশ করা যাবে না বলে জানালেন তদন্তকারী অফিসার। গত শনিবার তিন দিনের রিমান্ড শেষে রহমতকে (আবুল কালাম আজাদ) ঢাকা সিএমএম আদালতে হাজির করে তদন্তকারী অফিসার। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে রাখার আবেদন করে তিনি। অন্যদিকে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলা তদন্তকারী অফিসার ও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পুলিশ পরিদর্শক ইসমত আরা এমি বলেন, তিন দিনের রিমান্ডে রহমতের কাছ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে এখন তা প্রকাশ করা যাবে না। এর আগে মঙ্গলবার রহমতকে সিএমএম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম লস্কর সোহেল তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
সোমবার (১৫ মে) রাজধানীর গুলশান থেকে সাফাতের দেহরক্ষী রহমতকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার মামলার মূল আসামী সাফাত ও তিন নম্বর আসামী সাদমান সাকিফ ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দেন।
জবানবন্দীতে সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ বলেন, ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে হোটেল পিকাসোতে ভিকটিম দুই তরুণীর সঙ্গে বন্ধু সাদমান সাকিফের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথন হতো। ২৮ মার্চ সাদমানের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে দুই তরুণীকে আমন্ত্রণ জানান সাদমান। পার্টিতে আসার পর তারা সুইমিং পুলে গোসল করে। এরপর দুই তরুণীকে নিয়ে সাফাত ও নাঈম দুই রুেম যান। রুমে কথা বলতে বলতে দুই তরুণীর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হন। একপর্যায়ে তারা জোরপূর্বক দুই তরুণীকে ধর্ষণ করে। সে সময় দুই তরুণী কান্নায় ভেঙে পড়েন। দুই তরুণীকে তারা বোঝান। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যায়।
এর আগে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মামলার প্রধান আসামী সাফাত আহমেদকে ছয়দিন এবং সাদমান সাকিফকে পাঁচদিনের রিমান্ডে দেন ঢাকা মহানগর হাকিম রায়হানুল ইসলাম।
ওই ঘটনার ৪০ দিন পর ৬ মে সন্ধ্যায় বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামী করে মামলা করে দুই তরুণী। এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামী হলেন- সাফাত আহমেদ, সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ (রহমত)। বর্তমানে নাঈম আশরাফ ও বিল্লাল রিমান্ডে আছেন।
তরুণীদের ছবি প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
ঘটনার শিকার ওই দুই তরুণীর ছবি ফেসবুকে প্রকাশের মাধ্যমে যারা তাদের হেয় করার চেষ্টা করছে তাদের বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। একথা বলেছেন গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন।গতকাল শনিবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।তিনি বলেন, ‘যারা এটা করেছে, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। বিষয়টি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে অবহিত করা হবে।’
গত সপ্তাহ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণীদের ব্যক্তিগত কিছু ছবি প্রকাশ করে একটি গ্রুপ। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিষয়টি গতকাল আব্দুল বাতেনের নজরে এনে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি এই উত্তর দেন।
No comments:
Post a Comment