বাংলাদেশের নামকরা স্বর্ণালংকার বিক্রয় প্রতিষ্ঠান আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের বড় ছেলে বলে কথা। আর ধনীর ছেলের বিয়ে প্রসঙ্গ হলে তো কোন কথায় নেই। ধনীর ছেলে সাফাতের সাথে উপস্থাপিকা পিয়াসার বিয়েটা ছিল তেমন, যেমনটা সবাই প্রত্যাশা করেছিল। ধনীর দুলালের বিয়েতে কাবিন কত হয়েছিলো? এমন প্রশ্ন করা হলে, সবাই চোখ বুঝে বলে দিতে পারে যে টাকার পরিমাণটা কত। তবে ভাবনা যতই, বাস্তবে তার ধারে কাছেও নেই। কেননা, তাদের বিয়ের কাবিন কত টাকায় হয়েছিলো, তা জানলে যে কেউ অবাক হবেন। যদি বলা হয়, তাদের বিয়েতে মাত্র ১ টাকার কাবিন হয়েছিলো। এটা শুনলে, যে কেউ যথারীতি অবাক হবেন। কিন্তু এটাই সত্যি। সাফাত ও উপস্থাপিকা পিয়াসার বিয়েতে মাত্র ১ টাকার কাবিন হয়েছিলো।
যা শুনেছেন সেটাই সত্য। কাগজ পত্রগুলোও ঠিক তাই বলছে। ১ টাকার কথা লেখা আছে দেনমোহরের কাগজেও। আর তাই এটা এখন আর কোনো লুকোচুরি গল্প নয়, কিংবা ভার্চুয়াল কোনো গুজব নয়। তবে এমনটা হবার কারণও আছে। সেই কারণ সম্পর্কে জানতে গিয়ে পাওয়া গেল ভালোবাসার এপিঠ-ওপিঠের কিছু গল্প। সংশ্লিষ্টদের পারিবারিক সূত্র থেকে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য।
কেন এক টাকার দেনমোহরে সাফাত-পিয়াসার কাবিন হয়েছিল জানতে চাইলে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম খোলামেলা কথা বলেন। তার ভাষায়, ভালোবাসা আর প্রেমের কারণে সাফাতকে পিয়াসা একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে গিয়ে দেনমোহর করেছিল এক টাকা। তিনি বলেন, পিয়াসাকে সেই এক টাকা মোহরনা পরিশোধও করা হয়েছে।
বিয়েতে এক টাকার কাবিন প্রসঙ্গে ফারিহা মাহাবুব পিয়াসা বলেন, মামলা চলছে একটা আর ঘটনা ভিন্নদিকে নেয়ার চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, যতদিন সাফাত তার সঙ্গে ছিল সে তো ভালোই ছিল। আর বাসায় মেয়ে নিয়ে আসা তার পুরনো স্বভাব।
পিয়াসা আরো বলেন, ভালোবেসে দু’জনের সম্মতিতে বিয়ে করেছিলাম। আর দেনমোহর এক টাকা করার বিষয়টিও দু’জনের সম্পত্তিতেই হয়। পিয়াসার বক্তব্য হচ্ছে, ‘আমার যদি টাকার লোভ থাকত তাহলে আমি তো অনেক টাকাই কাবিন করতে পারতাম। তারা কী (আপন জুয়েলার্সের মালিক) বলতে পারবে আমি তাদের কাছ থেকে এক লাখ টাকার গয়না নিয়েছি?
ছেলে সাফাতকে ছাড়িয়ে নিতে তার বাবাই ষড়যন্ত্র করেছে জানিয়ে পিয়াসা জানান, বনানীতে যে কাজটি করেছে সেটা ভালো করেছে? ওর বিচার হওয়া প্রয়োজন। সাফাতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি কীভাবে হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোথায় সমস্যা আমি নিজেও জানি না। এখন আমাকে নিয়ে টানাটানি চলছে।
প্রশ্ন করা হলে দিলদার আহমেদ আরো বলেন, ছেলের কাছে এক টাকা দেনমোহরের কাহিনী শুনতে চেয়েছিলাম। ছেলে বলেছিল, পিয়াসা তাকে নাকি এত ভালোবাসে তাই এক টাকা দেনমোহর করে তা প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু বিয়ের পর দিনে দেখেছি উল্টোটা। মানুষ কত অভিনয় করতে জানে। আমরা ব্যবসা বাণিজ্য করে খাই। আমাদের সঙ্গে শত শত মানুষের রুজি রুটির সম্পর্ক। আপন জুয়েলার্স ঘিরে কত মানুষের চাকরি-বাকরি। সবকিছু এখন বিবেচনার বিষয়। প্রশাসন এসব বিবেচনা করে দেখবে।
এক টাকার কাবিন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দিলদার আহমেদ সেলিম জানান, ‘আমার সম্পদের দিকে পিয়াসার নজর ছিল। তাই তো পিয়াসা এক টাকা দেন মোহর করে ভালোবাসার সম্পর্কের নামে অভিনয় করেছে। পিয়াসা আমার ছেলেকে বলেছিল, ‘তোমার টাকা চাই না, ভালোবাসা চাই।’ অথচ বিয়ের পর একে একে মুখোশ উন্মোচন হতে থাকে। এক টাকার কাবিননামার নামে যে কৌশল করা হয়েছিল তার নেপথ্যের ঘটনা বের হতে থাকে। দিলদার আহমেদ সেলিমের দাবি, পিয়াসা তার ছেলেকে দিয়ে আপন জুয়েলার্সের সম্পদ লুটের চেষ্টা করেছিল। সেই চেষ্টা ভেস্তে যাওয়ায় সাফাতকে ব্লাকমেইলিং করা হয় বলে দাবি তার।
সম্প্রতি বনানীতে দ্য রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় সারাদেশে যখন তোলপাড় শুরু হয়েছে এমন সময় ছেলের কর্মকাণ্ডে বাবা দিলদার আহমেদ সেলিম মোটেও অনুতপ্ত নন। বরং আরও ছেলের পক্ষে সাফাই গাইলেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম।বড় ছেলে সাফাত আহমেদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আরে মিয়া, আমার পোলা আকাম (ধর্ষণ) করছে তো কি হইছে। জোয়ান পোলা একটু-আধটু তো এসব করবই। আমিও তো করি। আমার যৌবন কি শেষ হয়ে গেছে? আমি এখনও বুড়া হইনি।’রাজধানীর বারিধারা আবাসিক এলাকায় আপন জুয়েলার্সের অফিসে এ সময় আপন জুয়েলার্সের কর্মকর্তা ডা. দৌলাসহ তার ঘনিষ্ঠ আরও দুই বন্ধু উপস্থিত ছিলেন। তারাও মাথা নেড়ে সেলিমের এমন বক্তব্য সমর্থন করেন।ধর্ষণ মামলার বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে সেলিম বারিধারার সোহরাওয়ার্দী এভিনিউর ১০৩ নম্বর বাড়িতে যেতে বলেন। সেখানে গেলে দেখা যায়, একটা কাচঘেরা কক্ষে স্বল্প আলোতে সোফায় বসে একের পর এক ধূমপান করছেন তিনি। তার দু’পাশে আরও দু’জন মধ্য বয়সী ব্যক্তি বসে আছেন। সাংবাদিক এসেছেন শুনে তিনি ডা. দৌলা নামের আপন জুয়েলার্সের এক কর্মকর্তাকে ডেকে পাঠান। ধর্ষণ মামলা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই সেলিম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।বলেন, ‘আরে ভাই এমন ফালতু বিষয় নিয়ে হৈচৈ করার কি আছে? মানছি আমার ছেলে আকাম করছে। কিন্তু ওই দুইটা মেয়েও তো ভালো না। খারাপ মেয়ে। তা না হলে কেউ গভীর রাতে হোটেলে যায়? ভদ্রঘরের কোনো মেয়ে কি রাত-বিরাতে হোটেলে যাবে?’এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ কাকে বলে আসলে আপনারা তা জানেন না। জোর করে কিছু করলে তাকে ধর্ষণ বলে। কিন্তু যে মেয়ে নিজের ইচ্ছায় হোটেলে গিয়েছে তাকে ধর্ষণ করতে হবে কেন? আসলে ওরা (ধর্ষিত দুই তরুণী) মনে করছে বড় লোকের ছেলেরে পাইছি। এগুলোরে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসাইতে পারলে কিছু টাকা-পয়সা পাওয়া যাবে।’সেলিম বলেন, ‘পুরোপুরি প্ল্যানিং করে ওরা এটা করেছে। আমার সাবেক পুত্রবধূ ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাও ওদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।’ সেলিম বলেন, ‘আমিও তো অনেক জায়গায় আকাম করি। করুম না কেন। আমি কি বুড়া হইয়া গেছি নাকি? আমার যৌবন নাই? আমিও তো হোটেলে যাই। আমার ছেলে যদি হোটেলে ওগো লগে কিছু কইরা থাকে তো মিলমিশ কইরা করছে। ধর্ষণ করতে যাইব ক্যান?’এই বিষয় নিয়ে এতো দিন চুপ থাকলেও অবশেষে মুখ খুললেন ধর্ষনের অভিযোগে অভিযুক্ত শাফাত আহমেদের মা নিলুফার জেসমিন। তিনি দাবী করেন, শাফাতের বাবা ছেলেকে অনেক অসৎ কাজ করতে উৎসাহ দিয়েছেন এবং তার আসকারা পেয়েই ছেলের আজকে এই দশা হয়েছে। তিনি নির্যাতিত দুই মেয়েদের সাথে যা হয়েছে তা সত্য হলে এটি অন্যায় বলেও অভিমত দেন।
এদিকে সাফাত আহমেদ ও ফারিহা মাহাবুব পিয়াসার নিকাহনামার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের পহেলা জানুযারি মহাখালীর আমতলি এলাকার একটি কাজী অফিসে প্রয়োজনীয় সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিবাহ সম্পন্ন হয়। নিকাহনামায় লেখা আছে, সাফাতের জম্ম তারিখ ২৮-৩-১৯৯২। ঠিকানা গুলশান-২ এর ৬২ নম্বর সড়কের ২ নম্বর বাড়ি। বাবার নাম দিলদার আহমেদ সেলিম, মাতার নাম নিলুফা বেগম জেসমিন। অপরদিকে কনের নাম ফারিহা মাহাবুব পিয়াসার বাবার নাম মাহাবুব আলম, মাতার নাম রকি মাহাবুব। ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে ৩ আর কে মিশন লেন, আসকর দিঘী, পশ্চিমপাশে চট্টগ্রাম। পিয়াসার জম্ম তারিখ ১০-১১-১৯৮৯। পিয়াসা বয়সেও সাফাতের চেয়ে একটু সিনিয়র ছিলেন।
কন্যাপক্ষে উকিল ছিলেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কাজির হাট এলাকার মরহুম আব্দুল জলিলের পুত্র আব্দুল মোতালেব। বিয়েতে সাক্ষী হিসেবে ছিলেন রাজধানীর বাড্ডা এলাকার কুড়াতলির সিরাজ উদ্দিনের পুত্র ইমরান হাসান ও দক্ষিণ বাড্ডার ব-৩৭ এর মরহুম সুলতান উদ্দিনের পুত্র একলাছ উদ্দিন। নিকাহনামায় ১৩ নম্বর পয়েন্টে দেনমোহরের পরিমাণের স্থানে লেখা আছে, ‘এক টাকা’ এবং ১৫ নম্বর পয়েন্টে উল্লেখ আছে যে, ‘বিবাহের সময় দেন মোহরের কোনো অংশ পরিশোধ করা হয়েছে কী না? যদি হইয়া থাকে তবে উহার পরিমাণ কত? সেখানে উত্তর হিসেবে উল্লেখ করা হয় যে, ‘নগদ পরিশোধ করা হইল’।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বিয়ের পর সাফাত ও পিয়াসার মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে উভয় মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়। গুলশানের একটি কাজী অফিস থেকে চলতি বছরের সালের ৮ মার্চ সাফাতের পক্ষে তালাকের নোটিশ পাঠানো হয়। পিয়াসা একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সংবাদ উপস্থাপিকা।
বনানীর দ্য রেইনট্রি রেস্টুরেন্টে সাফাতের ধর্ষণ কেলেঙ্কারির পর পিয়াসার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তার সাবেক শ্বশুর দিলদার আহমেদ সেলিম। এ ঘটনার পর পিয়াসার বিরুদ্ধে তিনি গণমাধ্যমেও কথা বলেন।
অপরদিকে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন সাফাতের সাবেক স্ত্রী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা
সাফাতের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন তার সাবেক স্ত্রী এশিয়ান টিভির সাবেক পরিচালক ও টিভি উপস্থাপিকা মাহবুব পিয়াসা। অবশেষে নানা জল্পনা-কল্পনার পর এবার সেই অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে নিজের ক্ষোভের কথা জানালেন ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ওরফে লামিয়া আশা (২৫)। ফারিয়ার বাবার নাম মাহবুব আলম। তিনি ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় বসবাস করেন। । সাংবাদিকদের সাথে এই বিষয়ে আলাপকালে তিনি জানান, তার সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে দিলদার হোসেন অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
তিনি জানান, সাফাত আহমেদ ইয়াবা আসক্ত। কিন্তু বিয়ের আগে এটা জানতেন না তিনি। ধর্ষিত দুই তরুণীর সাথে সাফাতের পরিচয় হওয়ার একদিন পর গত ৮ মার্চ সাফাত তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে ভারত চলে যায়। তাদের বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি সাফাতের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ। দিলদার পিয়াসাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল বলেও জানান তিনি। এ জন্য সাফাত বাড্ডা থানায় একটি জিডি করে রেখেছিল।
পিয়াসা দুঃখ করে বলেন, সাফাত আমার লাইফটা ধ্বংস করেছে বিয়ে করে, আর ওদের লাইফটা ধ্বংস করেছে বিয়ে না করেই।
সাবেক শ্বশুরের অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় পিয়াসা জানান , “চলতি বছরের ৮ মার্চ সাফাত বিনা কারণেই আমাকে ডিভোর্স করেছিল। তার দুই সপ্তাহ পার না হতেই তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। সাফাত আমাকে বিয়ের আগেও একবার বিয়ে করেছিল।”
ক্ষুব্ধ কন্ঠে নিজের প্রতিক্রিয়ায় পিয়াসা জানালেন, “ওই মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হওয়ার সময়ও জানত না সাফাতের সঙ্গে আমার ডিভোর্স হয়েছে। তাই তারা আমার কাছেও অভিযোগ করেছিল সেসময় । তবে আমি এ ব্যপারে তাদের শুধু বলেছি আমার সাথে সাফাতের ডিভোর্স হয়ে গেছে। এ জন্য আমি তাদের এ বিষয়ে কোন সাহায্য করতে পারবোনা ” ।
উল্লেখ্য, ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন দুই তরুণী। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৮ মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওই দুই তরুণীকে জন্মদিনের দাওয়াত দেয়। এরপর তাদের বনানীর ‘কে’ ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে রেইনট্রি নামের হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, সেখানে দুই তরুণীকে হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ করে সাফাত ও নাঈম। এ ঘটনা সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিও করানো হয় বলেও উল্লেখ করা হয় এজাহারে। ধর্ষণ মামলার আসামিরা হলো- সাফাত আহমদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।


No comments:
Post a Comment