সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা তথ্য-প্রমাণ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা। যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকার বড় ভুল করল। সংঘাত, প্রতিহিংসা থেকে বেরিয়ে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের বাতাস বইতে শুরু করেছিল, ঠিক সেই সময় এমন ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। এতে রাজনৈতিক সমঝোতা ফের বন্ধ হওয়ার শংকা তৈরি হয়েছে। দুই দল যখন কাছাকাছি আসতে শুরু করেছে তখন কেন এ তল্লাশি।
এ তল্লাশির মধ্য দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অপমানিত হয়েছেন বলে মনে করেন তারা। তাই প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার আহ্বান জানান।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ এ ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যখন প্রতিহিংসা ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি ছেড়ে নতুন ধারার রাজনীতির বাতাস বইতে শুরু করেছে তখন এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সেই পরিবেশ নষ্ট করে দিতে পারে। এ ঘটনায় শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সম্মান নয়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানও হানি হয়েছে। হয়তো তাকে না জানিয়েই কোনো লক্ষ্য নিয়ে বা পরিস্থিতি আবারও ঘোলাটে করতে এ ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখতে হবে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে নিষিদ্ধ কিছু থাকলে তার উপস্থিতিতেই তল্লাশি চালাতে পারত। তিনি তো প্রতিদিনই অফিস করেন। সেটা সম্মানের হতো। সমঝোতা বা ইতিবাচক রাজনীতির ক্ষেত্রে এটা নতুন করে মস্ত বড় বাধা বা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, সরকার নতুন করে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। সরকার একটি ভুল কাজ করল। পুলিশকে তারা ছাত্রলীগের মতো ক্যাডার বানিয়ে ফেলেছে। পুলিশি রাষ্ট্র বানাচ্ছে। দেশ একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশের দিকে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচন ২০১৪ সালের মতো হবে না বলে খোদ প্রধানমন্ত্রীই বলেছেন। সে সময় এমন ঘটনা নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, বিএনপির দুর্বলতার কারণেই সরকার এ ঘটনা ঘটানোর সাহস পেয়েছে। আজ যদি তারা ঘরে বসে না থাকত তাহলে পুলিশ তল্লাশির সাহসই পেত না।
সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কয়েকবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও নাশকতা চালানোর যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটা হাস্যকর, ন্যক্কারজনক ও জঘন্য ঘটনা। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের উসকে দিয়ে আবার দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায় সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার কৌশল হিসেবেই এসব করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে সার্চ ওয়ারেন্ট থাকলে তার উপস্থিতিতেই তল্লাশি চালানোর নিয়ম। আদালতের আদেশও তাকে দেখাতে হবে। শুধু তাই নয়, সন্দেহ হলে যারা সার্চ করতে যাবেন তাদেরও আগে শরীর তল্লাশি করা যায়। কিছু তল্লাশি করতে গিয়ে যদি ১০টা অবৈধ জিনিস রেখে আসেন। তার দায়দায়িত্ব কে নেবেন, সেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন বর্ষীয়ান এ আইনজীবী।
No comments:
Post a Comment