সংবাদ উপস্থাপিকা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ফারহানা শবনম নিশোকে একুশে টিভি থেকে বরখাস্তের সংবাদ বুধবার বিকেলে মিডিয়াপাড়ায় ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় নানা গুঞ্জন। মূল গুঞ্জন শুরু হয় বনানীর আলোচিত ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত নাঈম আশরাফের সঙ্গে ফারহানা নিশোর কিছু ছবি নিয়ে। তবে ফারহানা নিশোর চাকরি যাওয়ার মূল কারণ কি ধর্ষকের সাথে ছবি ভাইরাল নাকি অর্থিক কেলেঙ্কারি? এমন অালোচনা-সমালোচনা এখন সর্বত্র।
নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে ফারহানা নিশোর চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার আসল কারণ জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক নীতি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নিয়োগ পত্রের ১০ নং শর্ত ভঙ্গ করে অন্য ব্যবসার সাথে জড়িত এবং একুশে টেলিভিশনের ব্যবস্যার সঙ্গে প্রতারণা ও অসাধুতার আশ্রয় গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি করায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
একুশে টেলিভিশনের মানব সম্পদ বিভাগের এক চিঠিতে ফারহানা নিশোর চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার এই তিনটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। একুশে টেলিভিশনের মানব সম্পদ প্রধান মো. আতিকুর রহমান স্বাক্ষরিত ফারহানা নিশোর একুশে টিভি থেকে বরখাস্তের কারণ উল্লেখ করেন।
একুশে টেলিভিশনের কোম্পানি সচিব ও মানব সম্পদ প্রধান মো. আতিকুর রহমানের স্বাক্ষরিত সেই বরখাস্তপত্রে নিশোকে জানানো হয়, ‘আপনি একুশে টেলিভিশন লিমিটেড এর অনুষ্ঠান বিভাগ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব সম্পর্কিত কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা এবং আত্মপক্ষ সমর্থনে আপনার প্রদত্ত বক্তব্য ও উপস্থাপিত নথিসমূহ আমলে নিয়ে প্রমাণ পাওয়া যায় যে-
ক. আপনি আপনার নিয়োগ পত্রের ১০ নং শর্ত ভঙ্গ করে অন্য ব্যবসায়ের সাথে জড়িত হয়েছেন এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
খ. আপনি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক নীতি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন।
গ. আপনি একুশে টেলিভিশন লিমিটেড এর ব্যবসা সম্পর্কে প্রতারণা ও অসাধুতার আশ্রয় গ্রহন করে প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছেন।
উপরোক্ত অসদাচরণের দায়ে আপনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো।
একই চিঠিতে একুশে কর্তৃপক্ষ নিশোকে জানায়, আপনার নিকট রক্ষিত আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, সিম, স্টিকার, গাড়ি ও অন্যান্য দ্রব্যাদি কোম্পানির নিয়ম ও বিধি অনুসারে হস্তান্তর করার জন্য।
এদিকে, প্রবাসী সাংবাদিক আরিফ নেওয়াজ ফারাজী বাদল ফেসবুকে লিখেছেন, সেল্ফি বনাম জালিয়াতি…অনেক সাংবাদিকের পোস্টে দেখছি সেল্ফি তোলার জন্য চাকুরী থেকে বরখাস্ত…অবাক লাগে…আসলে প্রায় ২ কোটি টাকা জালিয়াতির কারণে একুশে টিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান ফারহানা শবনম নিশো এবং মার্কেটিং বিভাগের তারেক সাহেবের চাকরি গেছে।
সম্প্রতি একুশে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ নিশো ও তারেকের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করে। তদন্তের পর বিষয়টি পরিষ্কার হয়। তদন্তে দেখা যায়, সেলিব্রিটিদের নিয়ে অনুষ্ঠানের নামে তারা যে বিল দেখিয়েছে তার বিল-ভাওচার ভুয়া। এমনকি সেলিব্রিটিদের সই ও জাল। এমনকি তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের নামেও অনুষ্ঠান কিনে একুশে টেলিভিশনকে বিক্রি করেছে। যা একুশে টেলিভিশন নিজেই করতে পারতো। এতে একুশে টেলিভিশনের আর্থিক ক্ষতি হলেও তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছে। তদন্ত চলছে। আরো ছাঁটাই হবে।
প্রসঙ্গত,একজন মডেল ও অভিনেত্রী হিসেবেও জনপ্রিয়তা রয়েছে ফারহানা নিশোর। ফারহানা নিশো একজন সংবাদ পাঠিকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করে বর্তমানে মিডিয়ার আলোচিত নারী। লবিং আর করপোরেট ভাষা রপ্ত করে নিজেকে তিনি একজন মডেল ও অভিনেত্রী হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন।
তার সংবাদ পাঠ শুরু হয় ২০০৩ সালে। সংবাদ পাঠিকা হিসেবে যোগদান করা ফারহানা নিশো বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘চ্যানেল ওয়ান’-এ অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তখন তারেক জিয়াসহ নানা অঙ্গণের প্রভাবশালী মানুষের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্কে জড়িয়ে নিজেকে আলোচনায় আনেন।
চ্যানেল ওয়ান বন্ধ হয়ে গেলে তিনি বৈশাখীতে যোগ দেন এজিএম বিজনেস ডেভলপমেন্ট ও সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে। অবশ্য এর আগে তিনি গ্রামীণফোন, ওয়ারিদের মতো করপোরেটবান্ধব প্রতিষ্ঠানগুলোতেও কাজ করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বৈশাখী টিভিতে চাকরি নিয়ে এখানেও তিনি লবিং আর করপোরেট বাণিজ্য জমিয়ে তুলেন। সর্বশেষ বৈশাখী টিভির হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্সে দায়িত্বরত ছিলেন ফারহানা নিশো।
এর আগে যমুনা টিভিতে জ্যেষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপক এবং গাজী টিভিতে ‘আজকের অনন্যা’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছিলেন তিনি । এছাড়াও চ্যানেল ওয়ান ও বৈশাখী টিভির করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান হিসেবেও কাজ করেছেন দীর্ঘদিন।
২০০৩ সালে এনটিভিতে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু হলেও মাঝে গ্রামীণফোনের টেকনিক্যাল ডিভিশন ও ওয়ারিদ টেলিকমে প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট বিভাগেও কাজ করেন এই উপস্থাপিকা ।
No comments:
Post a Comment