প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষের দেশ সৌদি আরব। অর্থনৈতিক সম্পদে বলীয়ান, আরব মুসলিম অধ্যুষিত দেশটির চারপাশে রয়েছে জর্ডান, ইরাক, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও ইয়েমেন। পারস্য ও লোহিত সাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত দেশটির আয়তন সাড়ে ২১ হাজার বর্গকিলোমিটার। আর বরাবরই এই দেশটি কট্টর রক্ষণশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। পৃথিবীব্যাপী ইসলামী কট্টরপন্থার প্রচারে অনেকাংশে সৌদি মতাদর্শকেই দায়ী করা হয়ে থাকে। তবে এবার কট্টর সৌদি আরব কট্টর রক্ষণশীলতার খোলস থেকে বের হয়ে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
দেশটির প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদিকে আবারও ‘মধ্যপন্থী, উন্মুক্ত’ ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছেন । তিনি বলেন, আগে যেমন ছিল, সে রকম উদারনীতিতেই ফিরে যাবে সৌদি আরব। সম্প্রতি দেশটির রাজধানী রিয়াদে বিনিয়োগবিষয়ক এক সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে যুবরাজ এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আগে যেখানে ছিলাম সেখানেই ফিরে যাচ্ছি, মধ্যপন্থী একটি ইসলামী দেশ যেটি সব ধর্ম ও বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত।’ মূলত তার ভাষণে সৌদি আরবের রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থার সমালোচনা করে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, ‘উগ্র চিন্তাভাবনার ওপর আমরা জীবনের পরবর্তী ৩০ বছর নষ্ট করব না। খুব শিগগির আমরা সব ধরনের উগ্র চিন্তাকে শেষ করে ফেলব। আমরা দ্রুত কট্টরপন্থার অবসান ঘটাব।’
তবে এটাও সত্য এই প্রথম সৌদি আরবের শীর্ষ পদে থাকা কোনো কর্মকর্তা সরাসরি দেশটির কট্টরপন্থাকে আক্রমণ করে কথা বললেন। চলতি বছরের ২১ জুন হঠাৎ করে উত্তরাধিকারী যুবরাজ মনোনীত হওয়ার পর থেকেই সংস্কারের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি যুবরাজের এমন বক্তব্যের বিষয়ে ভয়েস বাংলার সঙ্গে কথা বলেন সৌদি প্রবাসী সাংবাদিক মাসুদ সেলিম। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের টিকে থাকার স্বার্থেই সৌদি রাজ পরিবার দেশে কিছু পরিবর্তন আনতে চেষ্টা করছে। আর এই পরিবর্তন আমার অপ্রত্যাশিত কিছু না। সামনের দিনগুলোতে আরো নতুন নতুন সিদ্ধান্ত হয়তোবা আমরা দেখতে পাব।’ সৌদি যুবরাজ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশটিকে তেল নির্ভর অর্থনীতি থেকে বের করে আনতে ‘ভিশন: ২০৩০’ ঘোষণার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
গত মাসে সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ যে ঘোষণা দিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তের পেছনেও যুবরাজের প্রভাব কাজ করেছে বলে মনে করা হয়। তাছাড়া বিশ্ববাজারে তেলের দাম পড়ে যাওয়ার পর নিজেদের পরিবর্তিত অর্থনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থার অমুল পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি বলেই সনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এই সহজ পথে সৌদি রাজ পরিবার হাটবে কিনা এই সংশয়টা সব সময়ই ছিল। কেননা বর্তমানে রাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শাসিত হয় সৌদি আরব। তাই দেশটিতে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড বা নির্বাচনের ব্যবস্থাও নেই।
সৌদি বাদশাহই হলেন দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী। আর সৌদির যুবরাজ হলেন উপপ্রধানমন্ত্রী। তাঁরা শরিয়া আইনে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। কোরআন ও সুন্নাহ হলো দেশটির সংবিধান অর্থাৎ সব আইন ও বিধির উৎস। ফলে রক্ষণশীলতার বাইরে গিয়ে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সৌদির কাছ থেকে সব সময় ছিল প্রত্যাশার বাইরে। তবে সৌদি যুবরাজের ভাষায় সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠা থেকে চলে আসা কর্মপদ্ধতি এখন আর কাজ চালানোর মতো নয়।
তাই ৫শ’ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে লোহিত সাগর উপকূলে নতুন একটি অত্যাধুনিক শহর গঠনের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি, যে শহরে অধিবাসীদের জন্য এমন জীবনব্যবস্থা থাকবে যা আজকের সৌদি আরবে নেই। তাছাড়া গত মাসে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সৌদি আরব। এখন সময়ই বলতে পারবে ভবিষ্যতের সৌদি আরব সত্যিকার অর্থে কতটা রক্ষণশীলতার দেয়াল মুক্ত হতে পারবে। আর ধর্ম বর্ণ সবার জন্য কতটাই বা উন্মুক্ত হতে পারবে ইসলামিক এই দেশটি
No comments:
Post a Comment