অবৈধ পথে ইউরোপ প্রত্যাশীরা গ্রিস হয়ে অন্যান্য দেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু গ্রিসে সীমান্ত পথ বন্ধ থাকায় অনেকে আটকে পরেন এথেন্সসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে। এসব অভিবাসীদের পেছনে ফিরে যাবার পথও বন্ধ। অন্যদিকে, গ্রিসে অবৈধদের আয়ের সুযোগ সুবিধা একবারেই সীমিত। এই পরিস্থিতির সুযোগ নেন মানব পাচারকারী চক্র। তারা অর্থের বিনিময়ে ইরানসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পার করে দেয় অবৈধদের।
গ্রিস থেকে ইরানে পালিয়ে আসা মো. রফিক জানান, অবৈধদের মধ্যে অনেকেই কোণঠাসা পরিস্থিতিতে পরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তবে বাবা-মা পরিবারের কথা মনে করে কেউ কেউ দেশে ফেরত আসার পথ সন্ধান করেন। তখনই পাচারকারী দলের সদস্যরা মোটা অর্থের বিনিময়ে অন্য দেশে পার করে দেয়ার প্রলোভন দেখান। ফলে দেশে ফেরার স্বপ্নে বিভোর তরুণদের অনেকেই অবৈধ পথে অর্থ উপার্জনে নেমে পরেন। যেহেতু বৈধ কাজের সুযোগ কম, তখন তারা যৌনকর্মী হিসেবে পার্ক বা অন্য কোথাও কাজ শুরু করেন। এভাবেই ইউরোপ প্রত্যাশী তরুণদের একাংশ জড়িয়ে পড়ছে যৌন ব্যবসায়।
এর আগে বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়, অভিবাসী অনেক তরুণ এখন এথেন্সে পাঁচ-দশ ইউরোর বিনিময়ে বয়স্ক গ্রিক পুরুষদের বিনোদনের সামগ্রী হচ্ছে। এদের কারো কারো বয়স ১৫ বছরেরও কম। হাজার হাজার লোক মধ্যপ্রাচ্য এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে গ্রিসে ঢুকেছিল – তাদের অনেকেই সেখানে আটকা পড়েছে। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এথেন্স শহরের পার্কগুলোতে প্রতিনিয়তই দেখা যায়, বেঞ্চে হেলান দিয়ে তরুণ ছেলেরা বসে আছে। মাত্র কয়েক ইউরোর বিনিময়ে পার্কের ভেতরে ঝোপঝাড়ের মধ্যেই কিশোররা দেহদান করে।
‘প্রবাসী মুখ’ এর সঞ্চালক, সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেন, অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রার ফলে অধিকাংশই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাতে ব্যর্থ হন। মাঝামাঝি কোথাও আটকা পড়ের এসব বিদেশগামীরা। যে কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে তারা ইউরোপ ঢোকার চেষ্টা করেন আবার সেই পথে ফিরে আসা অসম্ভব প্রায়।
এই সিনিয়র সাংবাদিক আরো বলেন, একদিকে লক্ষ্যে পৌছাতে না পারা অন্যদিকে মাতৃভূমিতে ফিরে আসতে না পারার যন্ত্রণা- এই দু’য়ের টানাপোড়েনে তখন তারা দিশেহারা থাকেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাচাকারী দলের সদস্যরা অথবা মধ্যস্বত্তভোগী শ্রেণি সম্ভাবনার কথা বলে তাদেরকে বিপথগামী হতে উৎসাহিত করেন। যার একটি পরোক্ষ ফলাফল হচ্ছে দেশে ফেরত আসতে ইচ্ছুক তরুণদের যৌনকর্মী হয়ে ওঠার প্রবণতা।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, শুধু দেশে ফেরার উদ্দেশ্যেই নয়; অনেকে কাজ না পেয়ে পেটের দায়েও যৌনকর্মী হয়ে উঠতে পারেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবার আগে প্রয়োজন অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রা বন্ধ করা। আর এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।


No comments:
Post a Comment