বিগত পাঁচ বছর ইতালিতে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার প্রক্রিয়া। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থাকলেও থেমে নেই অবৈধ পথে শ্রমিক যাওয়া। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনৈতিক মন্দায় শরণার্থীদের সাথে নৌ-পথে ইতালি প্রবেশ করছে হাজার হাজার বাংলাদেশি। জীবন বাজি রেখে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করা এসব শরনার্থীদের সাথে বেশ জোরে সোরে আলোচিত হচ্ছে বাংলাদেশিদের নাম ।অভিবাসীদের ইউরোপে প্রবেশের এই জীবন সংগ্রাম চরম নির্মমতার স্বীকার বলে মনে করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
তবে এটি এখন আলোচনার মূল বিষয় নয়, এই শরণার্থীদের সাথে বিপুল সংখ্যাক অভিবাসী শ্রমিক ঢুকছে মধ্যপ্রাচ্যসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে। সেটাই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আর এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রয়েছে বাংলাদেশিরা। যারা কাজের সন্ধানে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় প্রবেশ করলেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলির অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক মন্দায় পালিয়ে যাচ্ছে ইউরোপে। যে বিষয়টি নিয়ে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমের খবরে উঠে আসছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু কেন অভিবাসী শ্রমিকরা প্রবেশ করছে ইতালিতে? প্রথম দিকে অনুসন্ধানে দেখা গেছে শ্রমিকরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমালেও সাম্প্রতিক সময়ে বেশিরভাগ শ্রমিক থেকে যাচ্ছে প্রবেশদ্বার ইতালিতে।কিন্তু কেন অভিবাসী বাংলাদেশিরা আগ্রহী হচ্ছে ইতালিতে? এমন কারণ অনুসন্ধানে ফুটে উঠেছে ভিন্নসব চিত্র।ইতালির অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলেও শরনার্থী আর অভিবাসীদের ভরণ-পোষণে দেশটির সরকার বেশ তৎপর এবং বদ্ধপরিকর বলে মনে করেন অনেকেই। ইতালিয়ান সরকার লিবিয়া থেকে আসা লোকদের রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি দিচ্ছে বসবাসের জায়গা, খাবার ও হাত খরচ। কর্মের জন্য করাচ্ছে বিভিন্ন কোর্স ও ট্রেনিং। দেশটির এই অভিনব উদ্যোগ অনেকে ইউরোপে স্থায়ীভাবে কাজ পেয়ে যাওয়ার সুযোগ বলে মনে করছেন।
ইতালিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে ইতালি প্রবাসী রাকেশ রাহমান জানান, মূলত দুটি কারণে ইতালি প্রবেশে শ্রমিকরা বেশি আগ্রহী হচ্ছে তার মধ্যে প্রথমত. ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়া ইংল্যান্ড আগামীর অভিবাসন আইনে কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে ইতালির অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও দেশটিতে খাবার, পোশাকে ফ্যাশনে এখনো বিশ্বের এক নম্বর অবস্থান করা এবং প্রবেশ করা অভিবাসীদের যথাযথ ট্রেনিং, থাকা-খাওয়া এবং হাত খরচ বহন করায় সরকারের সু-দৃষ্টি থাকা।
এছাড়া ইতালিতে অবস্থানরত অভিবাসীরা মনে করেন, ইংল্যান্ডের নতুন অভিবাসন নীতি ঘোষণা হলে দেশটি থেকে অনেক অভিবাসীকে নিজ দেশে ফিরতে হতে পারে।না গেলে পুলিশে ধরা পড়ার সম্ভবনাও অনেক বেশি। এছাড়া ইংল্যান্ডে জীবন মানের ভালো সুযোগ থাকলেও কাজ পাওয়া বেশ কঠিন। অন্যদিকে ইতালি সরকারের নতুন এই উদ্যোগে দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিবাসী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বলে মনে করেন। তবে ইতালিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রবেশের মূল কারণ হলো সরাসরি ইতালিতে প্রবেশে বাংলাদেশিদের নিষেধাজ্ঞা থাকা।
কারণ ইউরোপের অন্যদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে ইতালি একমাত্র সহজ রুট বলে মনে করেন অভিবাসী শ্রমিকরা। তাছাড়া এজেন্ট মাধ্যমে এ পথে শ্রমিক রপ্তানির সহজ এবং পরিচিত পথ। সরাসরি শ্রমিক ভিসা নিয়ে কোন বাংলাদেশি এখন আর ইতালিতে প্রবেশ করতে পারছে না। কারণ দেশটির সরকারের দেওয়া শ্রম আইন অনুযায়ী বাংলাদেশি শ্রমিক দেশটিতে প্রবেশ করলেও পরবর্তীতে দেখা গেছে যে এসব শ্রমিক পালিয়ে অন্য দেশে চলে গেছে।আর একারণে ইতালি সরকার মনে করেন যে ওসব শ্রমিক ইতালির ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। তাই গত চার বছরে শ্রমিক নেওয়ায় বাংলাদেশকে কালো তালিকায় ফেলেছে।
রোমে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ইতালির শ্রম বাজারে বাংলাদেশিরে পাঠানোর চেষ্টা করা হলেও সে বাজারে এখনও কোন সম্ভবনা দেখা যায়নি। ২০১৭ সালের সিজনাল ভিসায় আগতদের জন্য নতুন আইন হয়েছে ইতালিতে। নতুন আইনে যে সব শ্রমিক ২০১৬ সালে ইতালিতে প্রবেশ করে নিজ দেশে ফেরত যায়নি তারা আর আগের মালিকের অধীনে কাজ করতে পারবেন না। পাশাপাশি গত বছর ছয় মাসের চুক্তি শেষে যারা নিজ দেশে ফেরত যাননি, তাদের ব্যাখ্যা দিতে হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রণালয়কে। ইতালিতে অর্থনৈতিক মন্দা চলাকালে সরকার কেন বাইরে থেকে শ্রমিক আনার ঘোষণা দিয়েছে তা নিয়েও চলছে জোর সমালোচনা। সিজনাল ভিসায় একজন শ্রমিক কৃষি, হোটেল ও পর্যটন খাতে ছয় মাস ইতালিতে বৈধভাবে কাজ করতে পারেন। এরপর আইন অনুযায়ী ওই শ্রমিককে নিজ দেশে চলে আসতে হতো। এই নিয়ম পালন করে কোনো শ্রমিক আসা যাওয়ার মধ্যে থাকলে তিনবারের পর পূর্ণাঙ্গ বৈধ হওয়ার সুযোগ পায়।


No comments:
Post a Comment