রাষ্ট্রপতি পদটি আলঙ্করিক হলেও জাতীয় নির্বাচনের আগে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক শক্তি যোগায় পদটি। আর ভোটের বছর নানা হিসেব নিকেশ করেই আগাতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে।
রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হয়ে আসার প্রেক্ষিতে এই পদের জন্য বেশ কয়েকজনের নাম এসেছিল গণমাধ্যমে। সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো না হলেও যাদের নাম এসেছিল তাদের বিষয়ে চিন্তাভাবনাও করা হয়েছিল। তবে শেষমেশ আবদুল হামিদকেই দ্বিতীয় মেয়াদে রাখার বিষয়ে একমত হয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জানিয়েছেন, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বা ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির আগ পর্যন্ত সে সময়ের রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে বিরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাদের। এই বিবেচনায় এই পদে পরিবর্তন আনার কোনো ভাবনা গুরুত্ব পাচ্ছে না।
সরকার এবং আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাদের সবাই নাম গোপন রাখার অনুরোধ করেছেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। তার পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে ২৩ এপ্রিলে। আবার সংবিধান অনুযায়ী এক জন দুই দফায় রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল অবশ্য ঘোষণা হয়নি। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। ফলে ভোট হতে হবে ২৪ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। আর আজ ২৪ জানুয়ারি থেকে এই ক্ষণগণনা শুরু হচ্ছে।
এই নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠক ডাকা হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোট হবে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে জেনেছেন তিনি।
এই নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠক ডাকা হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোট হবে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে জেনেছেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনে বৈঠকের আগে বুধবার বিকাল তিনটায় সংসদ সচিবালয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।
রাষ্ট্রপতি বাছাইয়ে পরোক্ষ নির্বাচনে ভোটার হলেন সংসদ সদস্যরা। ভোটার তালিকা চেয়ে মঙ্গলবারই স্পিকারের কাছে নির্বাচন কমিশন চিঠি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত রয়েছে।’
সংসদের চলতি অধিবেশনেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে এটা নিশ্চিত। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ অধিবেশনটি চলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংসদে বর্তমানে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের ইচ্ছাতেই নির্বাচিত হবেন রাষ্ট্রপতি। কারণ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেয়ার এখতিয়ার নেই সদস্যদের। সেই হিসাবে ক্ষমতাসীন দল যার মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে, তার বাইরে কারও নির্বাচিত হয়ে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।
১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট হলেও এরপর থেকে কোনো নির্বাচনেই ভোট হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীরা। এবারেও আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থী দেয়ার কোনো লক্ষণ নেই।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি পদে আরেক মেয়াদে থেকে যেতে আবদুল হামিদকে অনুরোধ জানিয়েছেন। তার তিনি সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য সময় নিয়েছেন।
১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পরে কেউ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হননি। বিএনপির প্রথম আমলে দলের নেতা আবদুর রহমান বিশ্বাস, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলের বাইরে থেকে সাহাবুদ্দিন চৌধুরী, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং চাপের মুখে তার পদত্যাগের পর ইয়াজউদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি হন। জরুরি অবস্থা জারির সুবাদে ইয়াজউদ্দিন সাত বছর রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তবে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হননি। ফলে আবদুল হামিদ আবার রাষ্ট্রপতি হলে তিনিই হবেন সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরার পর প্রথম দুই মেয়াদের রাষ্ট্রপতি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্য বলেন, চলতি বছরেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আবার ভোটের আগে দেশে অস্থিরতা তৈরির চক্রান্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এবং সব মহলে গ্রহণযোগ্য নেতাকেই এই পদে রাখতে চান তারা।
আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা। আবার দলের প্রতি আনুগত্য থাকলেও তিনি এই পদটিকে দলীয়করণের ঊর্ধ্বে রাখতে পেরেছেন বলেই ধারণা করা হয়। আর বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে তার বিষয়ে তেমন কোনো সমালোচনা আসেনি এখন পর্যন্ত। আবদুল হামিদ স্পিকার থাকাকালেও তিনি বিএনপির ‘প্রিয়ভাজন’ই ছিলেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অধিকারী আবদুল হামিদ জনগণের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করেন। তিনি বহুবার বিষয়টি বলেছেন। নিরাপত্তার ঘেরাটোপ তার ভালো লাগে না। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও তিনি বিশেষ করে নিজ এলাকার লোকদের জন্য তার দুয়ার উন্মুক্ত রেখেছেন।
২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২৪ মার্চ থেকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন আবদুল হামিদ। পরে ২২ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। আর তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২৪ এপ্রিল।
স্বাধীনতার পর থেকে এখন আবদুল হামিদকে নিয়ে ২০ মেয়াদে ১৭ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।-ঢাকাটাইমস
No comments:
Post a Comment