বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্নিভাল এটি। প্রতিবছর ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে এ কার্নিভাল হয়। প্রতিদিন কার্নিভালে প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। কার্নিভাল প্যারেডে বাহারি পোশাকে ঐতিহ্যবাহী নাচ, গান, ফূর্তি আর হুল্লোড়ের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের মুখোশ, ফানুস, সাজসজ্জা উৎসবটিকে আরো রঙিন করে তোলে।
এবার ব্রাজিল কার্নিভ্যাল এ সারা পৃথিবীর পর্যটকদের সাথে থাকবেন বাংলাদেশী পর্যটকরাও । বাংলাদেশ ব্রাজিল দূতাবাস ও ব্রাজিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুত্রে যানা যায় ২০১৮ ব্রাজিল কার্নিভ্যাল এ যোগ দিতে এরি মধ্যে ভিসা পেয়েছেন প্রচুর বাংলাদেশী ।অপেক্ষায় আছেন এখনও অনেকে।
সাম্বা মানেই ব্রাজিল। ব্রাজিল মানেই এখন সাম্বা। ব্রাজিলের আর সব সম্পদের চেয়ে বিশ্বব্যাপী বেশি পরিচিত সাম্বা। এটি এমনই এক নৃত্য সংগীত যার আকর্ষণীয় সুর আর ছন্দ, সঙ্গে বাদ্য যন্ত্রের মর্মস্পর্শী আওয়াজ আপনাকে সম্মোহিত করে ফেলবে। ব্রাজিল আর সাম্বা যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে। আর সাম্বা বলতেই আমাদের সামনে যে চিত্রটি ফুটে ওঠে তাহলো অর্ধ বা তার চেয়েও বেশি অনাবৃত দেহের নারী বা নারীদের নৃত্য। অনেকের ধারণা সাম্বা নাচ অশ্লীলতানির্ভর। আসলে কিন্তু তা নয়। সাম্বা নাচের কিছুটা এবার বিশ্ববাসী সরাসরি দেখতে পেয়েছেন বিশ্বকাপ ফুটবলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সমাপনী অনুষ্ঠানে। মজার ব্যাপার হলো সাম্বা আর ব্রাজিল একাকার হয়ে গেলেও এর উৎপত্তি আফ্রিকায়। আফ্রিকান দাসদের এই নাচই এখন ব্রাজিলের ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনপ্রিয়তার দিক থেকেও তুঙ্গে। শুধু তাই নয়, নৃত্যের এই ধরন এখন বিভিন্ন দেশেও প্রসারিত হচ্ছে। মানুষের আগ্রহ বাড়ছে এর প্রতি। বছরের পর বছর এই নাচ ব্রাজিলিয়ানদের নিজস্ব সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। কার্নিভাল ব্রাসিলেইরোর একটি অংশ এখন সাম্বা। এটি এখন ব্রাজিলের জাতিগত ও সামাজিক সম্প্রীতিরও প্রতীকে রূপ নিয়েছে। ষোড়শ বা সপ্তদশ শতকে পর্তুগিজরা ব্রাজিলে কাজের জন্য আফ্রিকা থেকে দাস হিসেবে মানুষ কিনে আনতো। তারা সাধারণত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাহিয়া রাজ্যে বসবাস করতো। ১৮৮৮ সালে ব্রাজিলে দাস প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর দাসদের অনেকে ছড়িয়ে পড়ে দেশের নানা এলাকায়। বিশেষ করে দক্ষিণের সবচেয়ে বড় শহর রিওতে এসে তারা আস্তানা গাড়তে থাকে। এখন সাম্বার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে গেছে এই রিও।
সাম্বা নাচ কবে কোথায় শুরু হয়েছিল এর নির্দিষ্ট কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। এ নিয়ে রয়েছে ‘নানা মুনির নানা মত’। তবে একটা বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই যে, এটি আফ্রিকান কৃতদাসরাই ব্রাজিলে এর প্রচলন করে। সাম্বা আফ্রিকানদেরই সংস্কৃতির অংশ। ওই সব কৃতদাসরা নানা ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগত অনুষ্ঠানে সাম্বা নাচের মাধ্যমে আনন্দ করতো। সাম্বা কেবল শারীরিক কসরতই নয়, এর সঙ্গে বাদ্য যন্ত্রের শব্দ ও ছন্দের বিরাট প্রভাব রয়েছে। বাদ্য যন্ত্রগুলোর মধ্যে পান্ডেইরো, রেকো রেকো, টামবরিম ও কুইকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই যন্ত্রগুলো এক ধরনের শব্দ ও কম্পন তৈরি করে; যা হৃদয়কে ছুঁয়ে যায় সহজেই।
No comments:
Post a Comment