ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মদের নেশার বিরুদ্ধে পক্ষকালব্যাপী প্রচারাভিযান অভিযান চালাচ্ছে একটি সংগঠন। তাদের স্লোগান হল, ‘মদ চাই না দুধ চাই, মদ মুক্ত বাংলা চাই।‘
গ্রামে গঞ্জে, এমনকি খাস কলকাতা শহরেও এই মদ-বিরোধী প্রচার মিছিল চলছে, যেগুলিতে ঝাঁটা হাতে মহিলাদের দল থাকছে সামনে।
`ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া` নামের ঐ সংগঠনটির মুখপাত্র মোক্তার হোসেন মন্ডল বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “বিহার বা কেরালায় যদি সেখানকার সরকার মদ বন্ধ করে দিতে পারে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ কেন পারবে না!``
``মদের নেশায় হাজার হাজার পরিবার পথে বসছে, বারে বারে বিষাক্ত দেশি মদ খেয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে, অথচ এখানকার সরকার নিত্যনতুন মদের দোকানের লাইসেন্স দিয়ে যাচ্ছে। এটাই সরকারের আয়ের উৎস হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।``
নদীয়া জেলার অভয়পুর গ্রামের নাজমা বিবি জানান, তাঁর প্রতিবেশী এক ব্যক্তি মদ খেয়ে এসে পারিবারিক অশান্তি চলাকালীন কয়েকদিন আগে নিজের স্ত্রী আর কন্যাকে হত্যা করেছে। তাঁর ছোট ছেলেটি এখনও কথা বলতে পারছে না, নেশা করে তার গলাতেও কোপ বসিয়ে দিয়েছিল বাবা।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলায় বিষাক্ত মদ খেয়ে ১৮২ জন মারা গিয়েছিলেন কয়েক বছর আগে। কয়েক সপ্তাহ আগেও তিনজন মারা গেছেন।
মৃত্যু না হলেও বহু পরিবারে মদের নেশার কারণে অশান্তি নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠে।
ঐ জেলারই মহেশতলার বাসিন্দা সালমা বিবি ছোটবেলা থেকেই দেখছেন যে তাঁর বাবা রোজগারের প্রায় পুরোটাই মদ খেয়ে উড়িয়ে দেন।
সালমা বিবির কথায়, “বাবা একটা মিলে কাজ করত। অনেকদিন কাজে যেত না, মদের ঠেকে গিয়ে বসত। মা কিছু বলতে গেলেই অশান্তি বাঁধাতো – মাকে মারত, গালাগালি দিত। ছোট থেকে এই দেখেই বড় হয়েছি। মা লোকের বাড়িতে কাজ করে, আনাজ বেচে সংসারটা কোনও মতে চালাত। এখন শ্বশুরবাড়িতে ওই ঝামেলা নেই, কিন্তু মায়ের কাছে গেলেই ওই মারধরের কথা শুনতে হয়, মনটা খারাপ হয়ে যায়।“
বেশ কয়েকবার পুলিশ এসে মদের ঠেক ভেঙ্গে দিয়েছে সালমা বিবিদের পাড়ায়। দুদিন বন্ধ থাকে, আবারও শুরু হয়ে যায়, বলছিলেন তিনি।
বজবজে বিয়ে হয়ে এসেছেন রেশমা বিবি। তাঁর স্বামী মদ খান না, কিন্তু শ্বশুরবাড়ির অন্য কয়েকজন রোজ খায়। তা নিয়ে ঝগড়া, মারধর লেগেই আছে।
“মদ খেয়ে মাথা কাজ করে না তো ওদের। কিছু আনতে বললে খেয়াল থাকে না। বেশীরভাগ টাকা ওতেই উড়িয়ে দেয়। তাই নিয়ে রোজ অশান্তি বাড়িতে। এর মধ্যেই আমার বড় ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে এবার। সে কী করে পড়াশোনা করবে এই অবস্থায়?” বলছিলেন রেশমা বিবি।
ওয়েলফেয়ার পার্টি গ্রামে, গঞ্জে, শহরে প্রচার চালানোর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোকেও ব্যবহার করছে তাদের মদ-বিরোধী প্রচারের জন্য।
তারা বলছে, মদের বদলে যদি দুধ দেওয়া যায়, তাহলে সেটা প্রত্যেক মানুষ খেতে পারবেন আর দুধের উৎপাদনের জন্য গরু পালন, ফার্ম করা এসব করে মানুষের রোজগার বাড়বে, সরকারও আয় বাড়াতে পারবে। আর হাজার হাজার পরিবার উজাড় হওয়ার হাত থেকে বাঁচবে।
------বিবিসি বাংলা
No comments:
Post a Comment