Social Icons

Thursday, January 28, 2016

গ্যাস সংকটে ক্ষুব্ধ রাজধানীবাসী

রাজধানীতে তীব্র গ্যাস সংকট অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বুধবারও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে তীব্র গ্যাস সংকটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক সপ্তাহেরও বেশী সময় ধরে চলা তীব্র্র গ্যাস সংকট নিয়ে রাজধানীবাসীর মধ্যে বিশেষ করে গৃহিনীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে মানুষের এই অসন্তোষ বিক্ষোভে রুপ নেয়ার আশংকা করছেন নগরবাসী। এর আগে গত সোমবার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মঙ্গলবারের মধ্যে গ্যাস সংকটের সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু ওই ঘোষণা কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু গতকাল বুধবার গৃহস্থালির গ্যাস সংকটের কথা স্বীকার করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘আবাসিক খাতে গ্যাস সংকট স্বাভাবিক। এটি জ্বালানি সংকটের কোনো বিষয় না। গ্যাস লাইনে কাজ চলছে। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে এ সংকট কেটে যাবে। 
গতকাল বুধবারও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকায় চুলা জ্বলছে না। অনেকে মাটির চুলায় রান্না-বান্না করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক এলাকা থেকে ভুক্তভোগিরা জানান, এক সপ্তাহ ধরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রান্নাঘরে চুলা জ্বলছে টিমটিম করে। রান্না করতে চরম অসুবিধা হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করে অল্প-স্বল্প রান্না সেরে নিতে হচ্ছে। অনেক সময় রাত জেগে গ্যাসের চাপ বাড়লে গভীর রাতে রান্না করতে হচ্ছে। তারা বলেন, মাস গেলে টাকা ঠিকই দিতে হবে। কিন্তু এখন ছেলে-মেয়ের জন্য রান্না পর্যন্ত করতে পারছি না। এভাবে চলা যায় না হোটেল থেকে এনে অনেকে খাচ্ছেন এমন অভিযোগও করেন ভুক্তভোগিরা। 
 অভিযোগে জানা গেছে, রাজধানীর রামপুরা, সিদ্ধেশ্বরী, বনশ্রী, বাড্ডা, তেজগাঁও, তেজকুনিপাড়া, মগবাজার, মধুবাগ, মীরবাগ, ইস্কাটন, নাখালপাড়া, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মালিবাগ, খিলগাঁও, কমলাপুর, গোলাপবাগ, গোপীবাগ, মানিকনগর, ওয়ারী, পুরান ঢাকাসহ বেশিরভাগ এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে কোন কোন এলাকায় গ্যাস আগে রাত ৯টার পরে। আবার সকাল হওয়ার আগেই গ্যাস সংকট শুরু হয়ে যায়। সবচেয়ে মারাত্মক হলো বহু এলাকায় আদৌ গ্যাসের চুলা জ্বলছেনা। 
গ্যাস-সংকটের কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে অনেক সিএনজি স্টেশন। তেজগাঁও, শ্যামপুরসহ বিভিন্ন এলাকার শিল্প-কারখানার ঊৎপাদনও বিঘিত হচ্ছে গ্যাসের চাপ ঠিক না থাকায়। দিনভর সিএনজি স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। 
রাজধানী ও এর আশপাশের আবাসিকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে গ্যাস সরবরাহ করে থাকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। মতিঝিল, মিরপুর ও গুলশান- তিন অঞ্চলে কোম্পানির রয়েছে জরুরি তিনটি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের টেকনিশিয়ানরা জানান, তাদের কাছে আবাসিক গ্যাস সংকটের বিষয়ে প্রতিদিন অসংখ্য অভিযোগ আসছে। প্রতিবার শীতকালে গ্যাসের সমস্যা থাকে, তবে এবার সংকট একটু বেশি। 
তিতাস গ্যাস কোম্পানি গ্যাস সমস্যার বিষয় স্বীকার করে বলেছে, এক হাজার ৮০০ থেকে প্রায় দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে পেট্রোবাংলা থেকে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ এক হাজার সাড়ে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কোম্পানির দাবি, বিকেল পাঁচটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত সিএনজি স্টেশনগুলো যখন বন্ধ থাকে, স্থানীয় আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের সমস্যা হয় না। অন্য সময় সমস্যা হচ্ছে। তবে, দ্রুতই গ্যাসের সংকট কেটে যাবে বলেও জানান কোম্পানির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। 
গ্যাসের এই সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে তিতাস গ্যাস কোম্পানি উপ-মহাব্যবস্থাপক ঊায়জার রহমান  জানান, ঢাকায় গ্যাস সরবরাহের জন্য বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জে ৩০ ইঞ্চির একটি লাইনের মেরামত কাজ চলছে। হবিগঞ্জের মুছাই গ্যাস কম্প্রেসার স্টেশনে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া শীতকালে আবাসিক ক্ষেত্রে ২০/৩০ শতাংশ গ্যাসের ব্যবহার বেড়ে যায়। এসব কারণে ঢাকায় গ্যাসের চাপ কমে গেছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, কোম্পানির নেটওয়ার্কের মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে পেট্রোবাংলা থেকে ১৭’শ মিলিয়ন ঘটফুটের মতো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। আরও ৩’শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। তবে এতদিন তেমন সমস্যা অনুভূত না হলেও প্রধানত শীতকালের জন্য এমনটা দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন ঊায়জার রহমান। সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড কাজ করছে। অল্প সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। 
ওদিকে বাংলাদেশে বড় শহরগুলোতে গ্যাসের যে সংকট চলছে তার সমাধান সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার শুরু করা বলে উল্লেখ করেছেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন,আমরা আবাসিক খাতে পাইপসংযোগ দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস দেয়া বন্ধ করে দিচ্ছি। বিকল্প হিসেবে আমরা সবাইকে বলছি এলপিজি (সিলিন্ডারে ভরা গ্যাস) ব্যবহার শুরু করতে। বিবিসি বাংলাকে এ কথা বলেন মি. হামিদ
বিবিসির খবরে বলা হয়,বাংলাদেশে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে গত বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে বাসা-বাড়ী রেস্তোরাঁয় তীব্র গ্যাস সংকট। বহু রান্নাঘরে মধ্যরাতের আগে কোনো গ্যাসই আসছে না। সংকট এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে যাবার উপক্রম হয়েছে। এর সুরাহা কেন হচ্ছে না ? জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, পাইপলাইনে গ্যাস থাকবে না, এবং ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। আর হযতো আট-দশ বছর থাকবে। এলপিজি বাজারেও সহজলভ্য। এর দামও কমে আসছে। আমরা এ্যাকশন প্ল্যান নিয়েছি - তিন বছরের মাথায় সারা বাংলাদেশে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি পৌছে দেবার। "মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যে প্রাকৃতিক গ্যাস আছে তা দিয়ে আর দশ-বারো বছর চলবে। বিকল্প হচ্ছে - বাসাবাড়িতে রান্নার জন্য এখন এলপিজির দিকে যেতে হবে। "আমরা ধীরে ধীরে সেদিকেই চলে যাচ্ছি" - বলেন নসরুল হামিদ। 
তিনি বলেন, ১৫০০ টাকা দিয়ে সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু লোকে ৬০০ টাকা দিয়ে পাইপলাইনের গ্যাস নিয়ে সেটা অপচয় করছে, সারাদিন জ্বালিয়ে রাখছে, শীতের দিনে হিটার হিসেবে ব্যবহার করছে। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম হোসেন খন্দকার ভবন মিলনায়তনে গতকাল বুধবার দুপুরে ‘টেকসই ঊন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে নবায়নযোগ্য শক্তি : বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী জাতীয় সেমিনার ও নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তির সরঞ্জামাদির এক প্রদর্শনীর উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আবাসিক খাতে গ্যাস সংকট স্বাভাবিক। এটি জ্বালানি সংকটের কোনো বিষয় না। গ্যাস লাইনে কাজ চলছে। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে এ সংকট কেটে যাবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যারা গ্যাস ব্যবহার করছেন আর যারা করছেন না তারা যেন ধীরে ধীরে এলপিজির আওতায় চলে যান। তাহলে ধীরে ধীরে এ সংকট কেটে যাবে। ’
আগামী ৩ বছরের মধ্যে দেশের ৭০ ভাগ আবাসিক এলাকা এলপিজির আওতায় নিয়ে আসা হবে উল্লেখ করে নসরুল হামিদ বলেন, ‘কীভাবে স্বল্পমূল্যে এলপিজি সবার আওতায় নিয়ে আসা যায় সে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আগামী দিনে আমাদের টার্গেট আবাসিক খাতকে সম্পূর্ণরূপে এলপিজির আওতায় নিয়ে আসা। এলপিজির দাম কমেছে। ভবিষ্যতে আরও কমবে। আমি মনে করি এলপিজি ব্যবহার করলে আবাসিক এলাকায় কোনো গ্যাস সংকট থাকবে না। কীভাবে এর মূল্য হ্রাস করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করা যায়, সে ব্যাপারে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘আমাদের টার্গেট সবার জন্য সকল এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করা। আমাদের উচিত আবাসিক খাত থেকে শিল্প খাতকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া। আশা করি আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যেই শিল্প খাতের গ্যাস সংকট কেটে যাবে। ’

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates