নরসিংদীতে শিশু শিহাবুর রহমান পায়েল হত্যা মামলায় তার মা আফরোজা সুলতানা নুপুরের যাবজ্জীবন এবং নুপুরের কথিত প্রেমিক গাজী আবদুস সালাম ওরফে উজ্জ্বল ওরফে রাজীবের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাইকোর্ট।
বিচারিক আদালতের দণ্ড কার্যকরের আবেদন (ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল) ও আসামিদের আপিল শুনানি করে বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার ও বিচারপতি এ এন এম বশির উল্লাহর বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় ঘোষণা দেয়।
২০০৬ সালে নরসিংদীর পলাশ থানার পণ্ডিত পাড়ার সিঙ্গাপুর প্রবাসী সোহরাব হোসেন ভূঁইয়া মামুনের ছেলে শিহাবকে হত্যার ঘটনায় জেলার একটি আদালত ২০০৯ সালে দুই আসামিকে ওই সাজা দিয়েছিল।
আসামি নুপুর ও উজ্জ্বল বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন বলে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুর রহমান চৌধুরী টিকু জানিয়েছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৬ সালের ৭ ডিসেম্বর শিহাব পাশের বাড়িতে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। ওই ঘটনায় নরসিংদী থানায় একটি জিডি করেন শিশুটির চাচা মজিবুর রহমান ভূঁইয়া বাদল। এরপর ৯ ডিসেম্বর বাসার পেছনের কলাবাগান থেকে শিহাবের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওইদিনই মজিবুর রহমান নরসিংদী থানায় মামলা করেন। পরের বছর ৯ আগস্ট নুপুর, উজ্জ্বল ও তার বন্ধু হারুনুর রশিদ গাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে নুপুর বলেন, মোবাইল ফোন সারাতে গিয়ে উজ্জ্বলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে টেলিফোনে প্রেমের সূত্রপাত। উজ্জ্বল বিয়ের প্রস্তাব দিলে নুপুর তাতে রাজি হন। ঠিক হয়, উজ্জ্বল আগে শিহাবকে নিয়ে যাবে, পরে নেবে নুপুরকে। ৬ ডিসেম্বর রাজীব এসে শিহাবকে নিয়ে যায়। পরে ৮ ডিসেম্বর সে জানায়, ছেলে ভালো আছে। পরে আবার জানায়, ছেলেকে অজ্ঞান করে রেখেছিল; জ্ঞান না ফেরায় গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
১৬ জনের জবানবন্দি শুনে নরসিংদীর অতিরিক্ত দায়রা জজ এ কে এম আবুল কাসেম ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর উজ্জ্বলকে মৃত্যুদণ্ড ও নুপুরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। হত্যায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় হারুনকে খালাস দেন বিচারক।
মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আসামিরা কারাগারে থাকলেও ওই রায়ের আগে তাদের জামিন বালিত করে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই বছরই আসামিরা আপিল করেন। পাশাপাশি ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে যায়।
চলতি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শুনানি শেষে আদালত রবিবার থেকে রায় ঘোষণা শুরু করে। মঙ্গলবার তা শেষ হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল মান্নান মোহন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুর রহমান টিকু ও কাজী বজলুর রশিদ।
উজ্জ্বলের পক্ষে ছিলেন ড. সাইফুদ্দিন মাহমুদ, নুপুরের পক্ষে শুনানি করেন এম এম শাজাহান কবির।
No comments:
Post a Comment