Social Icons

Thursday, September 8, 2016

বাংলাদেশে আসছে ভারতীয় গরু, পথে পথে চাঁদাবাজি

সীমান্তে কড়াকড়ি ছিল। একারণে বেশ কিছুদিন ভারত থেকে গরু আসেনি। কিন্তু গত বুধবার থেকে হাজার হাজার গরু আসছে। রাতদিন চলছে গরু পারাপারের কাজ। ফলে এ ক’দিনেই ভারতীয় গরুতে ফের ভরে গেছে হাট।

এদিকে ভারতীয় পদ্মানদী পারাপারে টোল আদায়ের নামে ফেরিঘাটে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। থেমে নেই পুলিশও। এই গরুর চাঁদাবাজিতে ভাগ বসাচ্ছে হাটের ইজারাদারও। চাঁদাবাজির কারণে বেড়ে যাচ্ছে কোরবানির পশুর দাম।

গরু আনায় ব্যস্ত রাখাল
বুধবার ভোরে রাজশাহীর নগরীর পদ্মা নদীর বসরী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নৌকায় করে শত শত গরু আসছে। গরুর ভিড়ে নদীপাড় ভরে গেছে। রাখালরা গরু আনার কাজে দারুণ ব্যস্ত।

চরমাঝারদিয়াঢ় সীমান্তের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন জানান, সামনে কোরবানির ঈদ। তাই বাজার ধরার তাড়া।  বিজিবির কড়াকড়ির কারণে কয়েক দিন আগেও সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ ছিল। কিন্তু ঈদের কারণে এখন গরুর চাহিদা বেড়েছে। তাই সীমান্ত এখন খোলা।

সীমান্ত থেকে গরু নিয়ে আসা গরুর রাখাল নয়ন আলী (১৭) বলেন, ওপারে বিএসএফ ঘুষ নিয়ে গরু পার করার সুযোগ দেয়। ভারতীয় রাখালরা সীমান্ত পার করে দেয়, আমরা এপার থেকে নিয়ে আসি। পদ্মা নদী পার করে রাজশাহী সিটি বাইপাশ হাটে নিয়ে গেলেই সাতশ’ টাকা করে পায়।

তার মতো কয়েকশ’ রাখাল রাজশাহী সীমান্তে গরু আনার কাজ করছে বলেও জানান নয়ন।

গরুর রাখালরা জানান, সীমান্তের ওপারে প্রথমে বিএসএফকে ঘুষ দিয়ে ভারতীয় গরু এপারে আনা হয়। এরপর করিডোর করতে লাগে গরু প্রতি ৫০০ টাকা। সেখান থেকে নদী পার টোল নেয়ার কথা ১১০ টাকা করে। কিন্তু ফেরিঘাটে আদায় করা হচ্ছে ১৩ হাজার টাকা করে।  দাম যাইহোক প্রতিটি গরুর বিপরীতে এই টাকা ইজারাদারকে দিতেই হচ্ছে।

হাটে বিক্রির পর ছাড় করতেও গুণতে হয় অতিরিক্তি টাকা। ভারতীয় গরুর ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছে টাকা আদায় করা হয়।

তবে রাজশাহী সিটি পশুহাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, গরু প্রতি মাত্র সাড়ে তিনশ’ টাকা আমরা নিই। এই অল্প টাকাই ক্রেতা-বিক্রেতার কাছে নেয়া হয়।  

চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহীর পুলিশ সুপার মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এ ধরনের কোনও অভিযোগ তার জানা নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

রাজপাড়া জোনের সিনিয়র সহকারি কমিশনার ও আরএমপির মুখপাত্র ইফতেখার আলম বলেন, অবৈধপথে গরু আসার পর করিডোর না করলে আমরা ধরে মামলা দিই। তবে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ আমার জানা নেই।  কেউ চাঁদাবজি করলেই অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শুল্ক আদায়
অপরদিকে, রাজশাহী বিভাগীয় কাস্টমস কমিশনার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের চলতি আগস্ট মাস পর্যন্ত ভারতীয় গরু থেকে শুল্ক আদায় হয়েছে তিন কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৩৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে আট কোটি ৮৬ লাখ টাকা, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে পাঁচ কোটি  ৩৫ লাখ টাকা এবং ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে  আট কোটি ৩৫ লাখ টাকায় শুল্ক আদায় হয়েছে।

তিনি জানান, ঈদের কারণে ভারত থেকে প্রচুর গরু আসা শুরু হয়েছে। তাই বিজিবির সাথে সমন্বয় করে সীমান্তে করিডোরের কার্যক্রমও  বাড়ানো হয়েছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত কাস্টমস বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা করিডোরের কাজ করবেন। গরু আসায় দেশের রাজস্ব খাতে বড় অংক যোগ হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

জমজমাট হাট
রাজশাহী সিটি হাটে গিয়ে দেখা যায়, গরু নিয়ে হাটে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা আসছেন, জানতে চাইছেন দাম। দামে-দরে মিলে গেলে কিনছেন।

নাখোশ দেশি খামারিরা
কিন্তু ভারতীয় গরুতে হাট ভরে যাওয়ায় চরম নাখোশ দেশী খামারিরা।

পবা থেকে আসা খামারী নাজমুল হাবীব বলেন, আমরা কোরবানির ঈদে দু’পয়সার লাভের আশায় সারা বছর ধরে গরু পালন করি। কিন্তু ঠিক ঈদের কয়েক দিন আগে ভারতীয় গরু বাজার দখল করে নিচ্ছে। এতে দেশীয় গরুর মালিকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না।চেম্বার নেতাদের বক্তব্য
ভারতীয় গরু আসা প্রসঙ্গে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মনিরুজ্জামান বলেন, অবৈধপথে আসলেও গরু প্রতি মাত্র পাঁচশত টাকা নিয়ে সরকারই বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ম চলছে বছরের পর বছর ধরে। চাহিদা থাকায় ভারত থেকে হাজার হাজার গরু আনা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এভাবে এতে দেশীয় গরুর বাজার নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি বলেন, নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গরু পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রীয়ভাবেও ভারত গরু রফতানি করে না। কিন্তু অলিখিত আন্ডারস্ট্যাডিংয়ের মাধ্যমে গরু আসছে।  

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের আমদানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় গরু নেই। কারণ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে গরু কেনাবেচার টাকা লেনদেন হয় না। যা হয় হুন্ডির মাধ্যমে। এটি সঠিক পদ্ধতি নয় বলেও তিনি জানান।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates