Social Icons

Friday, September 2, 2016

স্লিম ফিগার: কেমন খাদ্য হওয়া উচিত

তলপেটে মেদ নিয়ে দুর্ভাবনা আছে। আর এর কারণও আছে। শরীরে অন্যত্র মেদ জমার চেয়ে তলপেটের মেদ অনেক গুরুগম্ভীর, অনেক বেশি ভাবনার। নিতন্ত ও উরুতে মেদ জমার চেয়ে বিপজ্জনক তো বটেই। আর তলপেটের এই মেদের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা রকমের বড় বড় অসুখ যেমন- হৃদরোগ, স্ট্রোক ও টাইপ-২ডায়াবেটিস। শরীর ভারি হওয়ার সঙ্গে জীনগত প্রবণতাও আছে বটে। 
 
অনেকের ধারণা চর্বিযুক্ত গোস্ত, পনির, মাখন বেশি বেশি খাওয়া হলো তলপেটে মেদ হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ। আসল কথা হলো যে কোনও ভাবে হোক বাড়তি ক্যালোরি গ্রহণ হলো কোমর রেখা স্ফীত করার মূল কারণ। বেশি ক্যালোরি গ্রহণ হলো তলপেটে মেদের মুল কারণ। তবে তলপেটে মেদের একক কারণ নেই, জিণগতি, খাওয়া, বয়স, জীবন যাপনের ধরণ সবগুলোই কোনও না কোনও ভাবে দায়ী। খাওয়ার অভ্যাস বদলালে তলপেটে মেদ অনেক কমানো যায়। তাই বেশি ভাত খাবেন না, চিনি, মিষ্টি নয়, ঘন চর্বি কম আহার এবং বাড়াতে হবে সবজি ও ফল। একসঙ্গে অতিভোজন করা যাবে না। বাড়তি ক্যালোরির কথা বলছিলাম। অনেকে মদ্য পান করেন ফলে তাদের মেদভূড়ি বাড়ে। কোমল পানীয়, ভরাট পেটে খাবার, অতিভোজন, এগুলো সবই মেদভূড়ি হওয়ার পেছনে কম বড় কারণ নয়। যত রকমের চর্বি আছে এর মধ্যে বেশি বিপজ্জনক হলো ট্রান্সিফ্যাট।
 
তেলকে আংশিক হাইড্রোজেনায়ন করে বাণিজ্যিক কারণে তৈরি করা হয় ট্রান্সফ্যাট। ফাস্টফুড, কুড়মুড়ি, বিস্কিট, কেক পেস্ট্রিতে রয়েছে ট্রান্সফ্যাট। ওয়েক ফরেস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন, ট্রান্সফ্রাট গ্রহণের ফলে শরীরের অন্যত্র মেদ এসে পুনঃস্থাপিত হয় তলেপেটে। ফলে মেদভূড়ি হয়। তাই বলছি যে, মার্জাবিন, প্যাস্টি, কুকিস, ক্র্যাকারস-এগুলোতে বেশ আছে ট্রান্সফ্রাট। আছে ভাজা খাবার ও সবরকত ফাস্টফুডে।
 
মেদভূড়ি কমাতে গ্রীন টি উপযোগী অনেকে বলেন। কমায় শরীরের ওজন। গবেষকদের ধারণা কিছু জিনিষ যেমন ক্যাটেচিন যা গ্রিন টিতে আছে, তা শরীরকে ক্যালোরি পুড়াতে উদ্দীপিত করে এর মেদভূড়ি কমাতে সাহায্য করে।
 
ব্লো-বেরি ফলের কথাও বলেন কেউ কেউ। মেদ ভূড়ির পেছনে ফাস্টফুডের অবদান অনেক বেশি। এব্যাপারে সন্দেহ নাই। অনেক ফাস্টফুড খাবারে থাকে প্রচুর চর্বি, অনেক বেশি ক্যালোরি আর এসব খাবার অনেকে খানও বেশি পরিমাণে। ক্যালোরি এতে অনেক বেশি খাওয়া হয়। ওজন বাড়ে শরীরে, মেদভুড়ি হয়। অনেক ফাস্টফুড রেস্তোরায় পুষ্টিতথ্য দেওয়া হয় না। 
 
দেখা গেছে পুষ্টিতথ্য দেওয়া থাকলে, যারা ফাস্টফুড খান তারাও ছোট অংশ বা কম পরিমাণে খান। নিয়মিত সফট ড্রিংকের বদলে ডায়েট সফট ড্রিংক পান করলে মেদভূড়ি বাড়া রোধ হয় একথাটিও ঠিক নয়।
 
আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের মতামত: ‘আমেরিকান খাদ্যে বাড়তি চিনির প্রথম নম্বর উত্স হলো কোমল পানীয় ও চিনি ও মিষ্টি পানীয়।’ বাড়তি চিনি মানে বাড়তি ক্যালোরি-ওজন হ্রাস মোকাবেলা ও মেদভূড়ি হ্রাসের জন্য যে জিনিষ পরিহার করতে হয় তাহলো এটি। যদিও কোমল পানীয়তে পরিশোধিত চিনির বদলে হাইফ্রকুটোজ কর্ন সিরাপ যোগ করা হচ্ছে কোমল পানীয়ের প্রধান মিষ্টক হিসেবে। তবুও মেদস্থূলতা মহামারীর পেছনে এর বড় অবদান রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন। ডায়েট সোড়া পান করলে কি লাভ হতে পারে? এক্ষেত্রেও কোনও ইতিবাচক গবেষণা-মতামত এখনও পাওয়া যায়নি।
 
ওয়েস্টলাইন বা কটি রেখা ক্ষীন
 
করার জন্য খাদ্যে আঁশ যোগ করা একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। বলা হচ্ছে গোটা শস্যদানার কথা। যেমন- ময়দার রুটি বা লুচির বদলে আটার রুটি। ব্রাউন রাইস এদেশে দুর্লভ। অনেক দেশে হোলগ্রাম রাইস ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে চাল হলো- ডাবল বিডিশেড রাইস। এতে আঁশ ও ভিটামিন নেই। আছে শর্করা ও কিছু প্রোটিন। তাই এরকম চাল আমাদের শক্তির প্রধান উত্স হওয়াতে অপুষ্টি বাড়ছে। 
 
আমেরিকান জার্নাল অব নিউট্রিশন জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক নিবন্ধে দেখা যায়, ক্যালোরি নিয়ন্ত্রিত খাবার ও গোটা শস্যদানা সমৃদ্ধ খাবার মেদভূড়ি হ্রাসে খুবই কার্যকর। স্প্যাগেটি, কর্নফ্লেক পরিশোধিত শর্করা থেকে তৈরি অবশ্য হোল প্রেনও আছে কোনও কোনও দেশে। পপকর্ন খাবার, আঁশ সমৃদ্ধ।
 
Alr-popper দিয়ে পপকর্ন তৈরি করা ভালো। এ পদ্ধতিতে তেলের প্রয়োজন হয় না। হোলগ্রেইন ভালো কারণ এটি আঁশ সমৃদ্ধ। এর হজম হতেও সময় লাগে বেশি। এতে খাওয়ার তৃপ্তি আসে ভালো। সুস্থিত থাকে রক্তের সুগার। কমে শরীরে চর্বি।
 
মেদভুড়ি বেশি হয় পুরুষের নারীদের চেয়ে। যৌন হরমোনের পার্থক্যের জন্যই এটা হয়ে থাকে। বয়স চল্লিশ হবার আগে নারীদের শরীরে কটিদেশ, নিতম্ব ও উরুতে মেদ জমার প্রবণতা থাকে। ৪০ বছরের পর ইস্ট্রোজেন হরমোন নেমে গেলে শরীরের মেদ পুনঃস্থাপিত হতে শুরু করে তলপেটে। তবে পেটের মেদ হারানো কঠিন এও সত্যি নয়। সুনিয়ন্ত্রিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে ওজন হ্রাসের প্রচেষ্টা নিলে শরীরের মেদ, পেটেরও মেদ গলতে শুরু করে। স্বাস্থ্যকর আহার ও নিয়মিত ব্যায়াম হলো মেদভূড়ি কমাবার শ্রেষ্ট উপায়।
 
কিছু স্পট এক্সারসাইজ আছে
 
যেমন- উঠ-সব, ক্রানেচস এবং সেধবনের পেটের ব্যায়াম করলে যে পেটের মেদ কমবেই তা নয়, এসব ব্যায়ামে পেটের পেশী মজবুত হয় এবং তা মেদ হারাতে সহায়ক নয়। তবে এসব ব্যায়ামে পেটের মেদ কমবেই এমনও নয়। পেটের মেদ বা সার্বিকভাবে মেদ হারানোর উপায় হলো সুষম ও পরিমিত খাদ্য ও নিয়মিত ব্যায়াম। এরোবিক ব্যায়াম, যেমন দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, টেনিস খেলা বেশ উপযোগী ব্যায়াম।
 
মেদভূড়ি থাকলে হৃদপিন্ডের বড় বিপদ। গবেষণায় দেখা গেছে তলপেটে মেদ থাকা হূদ নিষ্ক্রিয়ার পথ সুগম করে ও অন্যান্য হৃদসমস্যাকেও ত্বরান্বিত করে। মেদভূড়ি আরও সব রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেমন-ওস্টিওপরোসিস, ডিমেনশিয়া, আলঝাইমার রোগ, ডায়াবেটিস, কলোরেকটাল ক্যান্সার, মেটাবলিক সিনড্রোম, উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য আরও স্বাস্থ্য সমস্যা।
 
মেদভূড়ি কমাবার শ্রেষ্ঠপন্থা কি
 
বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণ থেকে বোঝা যায় ক্যালোরি নিয়ন্ত্রিত খাবার যাতে থাকে প্রচুর ফল ও শাক সবজি, গোটাশস্যদানা, কম চর্বি দুধ ও দুগ্ধজাতদব্য, বীনস্, বাদাম, বীজ, কৃশ মাংস, কচি মাংস, মাছ, ডিম ও পোলট্রি, এমন সব খাবার যা ক্ষীনকটি শুধু নয়, স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য মূল উপাদান একে অনুস্বরণ করা হলো অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। এমন খাদ্যের সঙ্গে সপ্তাহের প্রায় প্রতিটি দিনে ৩০-৬০ মিনিটের ব্যায়াম যোগ করলে সাফল্য অর্জন সম্ভব, বলেন ওজন হ্রাস বিশেষজ্ঞরা।
 
 
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম, ঢাকা

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates