অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেনের জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলো দিন দিন বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ঐক্য যে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে, আর বিপরীতে মহাদেশটির ভাঙন যে মাথাচারা দিচ্ছে, তা এবার আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিরেনজির গণভোটে হেরে যাওয়া ও পদত্যাগের মধ্য দিয়ে। গতকাল সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের সিনেটের আকার ছোট করার প্রশ্নে সাংবিধানিক সংস্কারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর গণভোটের আহ্বানে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। আর এই গণভোটে তিনি হেরে যান। জয় ঘটে দেশটির ডানপন্থি ও বিরোধী দলগুলোর। জয় হয় জনগণের অপরিণামদর্শী আবেগের, জাতীয়তাবাদী দলগুলোর, আর অভিবাসন বিরোধিতারও। এর ফলে ইউরোপের দেশ ব্রিটেনের পর ৬ মাসের মাথায় ইতালিতেও এবার এত দিনকার রাজনৈতিক অভিজাত গোষ্ঠীর পতন হলো। রেনজির হারের পর বাজারে ইউরোর দরপতন ঘটে। ১৯ দেশের সাধারণ মুদ্রা ইউরোর মূল্য টোকিওতে কমে মাত্র ১.০৫ ডলার পরিণত হয়। ২০১৫ সালের মার্চ থেকে এটাই সবচেয়ে বড় পতন। গত শুক্রবার ইউরোর মূল্য ছিল ১.০৬৬৪ ডলার।
ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভোট বিশ্লেষণে আভাস পাওয়া গেছে, কট্টর অভিবাসনবিরোধী ফাইভ স্টার মুভমেন্টের নেতৃত্বে ভোটদাতাদের ৫৯.৫ শতাংশই সাংবিধানিক সংস্কারের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। এই হারের ফলে এবং রেনজির পদত্যাগে ইতালি নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশটির অর্থনীতিও সংকটে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করছেন, ইতালিসহ ইউরো জোনের অনেক দেশের ওপর এবার আস্থা হারাবে বিনিয়োগকারীরা। এতে ইউরো জোনে সংকট ঘনীভূত হতে পারে। টোকিওর নামুরা সিকিউরিটিজের প্রধান মুদ্রা বিশেষজ্ঞ ইয়ুনোসুকে ইকেদা বলেন, রেনজির পরাজয়, বাকি ইউরোপে ছায়াপাত করবে। জন-আবেগ পুঁজি করা সস্তা রাজনীতি আরও মাথাচারা দেবে।
এই মহাদেশটির বিভক্তি প্রথমবারের মতো বেশ বড় আকারে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ব্রিটেনের ইউরোপী ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষের শক্তি বেক্সিট গণভোটে জয়ের মধ্য দিয়ে। এমনিতে গত কয়েক বছরে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় অভিবাসন সংকটের মুখে এর সমাধানের প্রশ্নে বিভিন্ন দেশের একমত হতে ব্যর্থ হওয়ার পরিপেক্ষিতেই এই আলামত ফুটে উঠতে শুরু করেছিল। এবার সেই ফাটল যেন মুখ হাঁ করে ইউরোপবাসীকে গ্রাস করতে সামনে এগিয়ে এলো। বিভিন্ন দেশে অভিবাসনবিরোধী অবস্থান ও ডানপন্থিদের প্রভাবশালী হয়ে ওঠা, সাধারণ জনগণের অগভীর দেশপ্রেম আর অপরিণামদর্শী আবেগের কাছে উদার গণতন্ত্রীদের ধরাশায়ী হওয়া_ এসব ঘটনা মহাদেশটির বিভক্তিকে আর ঢেকে রাখার পথ খোলা রাখছে না। অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেনে বিশ্বায়নে অনাগ্রহী ও জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলো দিন দিন বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে, যা ইউরোপী ইউনিয়ন ও ইউরো জোনের জন্য অশনিসংকেত ছাড়া কিছু নয়।
Tuesday, December 6, 2016
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment