Social Icons

Friday, January 6, 2017

ব্রাজিল কি এখনো উন্নয়নশীল রাষ্ট্র ?


ভারতের মতো ব্রাজিল এখনো উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়। অথচ দুটি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বিস্তর ফারাক। তুলনামূলক উপাত্ত দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে।  বিশ্ব অর্থনীতিতে ৫ নম্বরে ব্রাজিল  ১৯৯০ সালে ব্রাজিলের মাথাপিছু আয় ছিল ভারতের পাঁচ গুণ বেশি।


প্রায় ৩০ বছর পর ব্যবধান কিছুটা কমে এসেছে, তবে এখনো তা প্রায় তিন গুণ। বর্তমানে ব্রাজিলে খুব কম মানুষই দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। ১৯৮১ সালে ব্রাজিলে চরম দরিদ্রের (যারা দিন পার করে ১ দশমিক ২৫ ডলারেরও কম খরচ করে) সংখ্যাটা ছিলো মোট জনগণের ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ। 


২০০৫ সাল নাগাদ এ সংখ্যা নেমে আসে ১০ শতাংশের নিচে। অথচ ভারতে ১৯৮১ সালে এমন মানুষের সংখ্যা ছিলো ৮২ শতাংশ। ২০০৫ সালে সংখ্যাটি যে স্তরে নেমে আসে, তাও প্রায় পঁচিশ বছর আগের ব্রাজিলের চেয়ে বেশি। 




২০ বছর আগে জনগণের আয় ও দরিদ্রের সংখ্যার পাশাপাশি অধিকাংশ উন্নয়ন সূচকেই ভারতের চেয়ে এগিয়ে ছিলো ব্রাজিল। দেশটি গত দুই দশকে নিজেদের অবস্থান আগের চেয়ে আরও অনেক মজবুত করে ফেলেছে। ব্রাজিলে এখন প্রায় সবাই অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন; শিশুমৃত্যুর হারও খুবই কম। নারী-পুরুষ বৈষম্যের সূচকও তাদের অনুকূলে। উপরন্তু নারী সাক্ষরতার হার পুরুষের তুলনায় কিছুটা বেশি। দেশটির শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ভারতের প্রায় দ্বিগুণ। এছাড়া ব্রাজিলের রয়েছে পরিকল্পিত ও উন্নত অবকাঠামো। মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৫ শতাংশ বাস করে গ্রাম এলাকায়। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতের শহরে বসবাস করে মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ, অবশিষ্টরা গ্রামেই থাকে।


ব্রাজিলের অবকাঠামো সূচক সত্যিই স্বস্তির খোরাক জোগায়। বিদ্যুত্ বয়েছে  প্রতিটি বাড়িতে; লোডশেডিং নেই বললেই চলে। পাইপ দিয়ে সংযুক্ত পানি সরবরাহে ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে ব্রাজিল। অধিকাংশ স্থানই পরিচালিত হয় প্রাণবন্ত পৌরসভার মাধ্যমে। প্রতিটিতেই রয়েছে কার্যকর ও যুগোপযোগী পরিষদ। পৌরসভার প্রশাসনিক অবকাঠামো সত্যিই ঈর্ষণীয়। কর্মচারী, অট্টালিকা, আসবাবপত্র, কম্পিউটার কোনো কিছুরই কমতি নেই। খাদ্য ও পুষ্টি কর্মসূচি এবং দারিদ্র্য হরাসের নীতিতে ভারতের সঙ্গে কোনো মিলই নেই ব্রাজিলের। ২০০৩ সালে লুলা ডি সিলভা সরকার ক্ষমতায় আসার সময় ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অপুষ্টিতে আক্রান্ত ছিলো মোট জনসংখ্যার এক-দশমাংশ লোক। 




ক্ষমতায় এসেই তিনি যেনো যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন সামাজিক অসমতার বিরুদ্ধে। বঞ্চনা দূর করতে গ্রহণ করেন নানা উদ্যোগ। ফলও আসে হাতেনাতে। ২০১১ সাল শেষে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও পুষ্টিপীড়িত লোকের সংখ্যা নেমে আসে ৫ শতাংশে।

এটা অনস্বীকার্য যে, গত ১০ বছরে দারিদ্র্য হরাস, ক্ষুধা ও অপুষ্টি দূর করতে অবিস্মরণীয় সাফল্য দেখিয়েছে ব্রাজিল। বঞ্চিতদের খুঁজে বের করে তাদের সমস্যা নিরসন করা সহজ কোন বিষয় নয়। জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি হস্তক্ষেপের পদক্ষেপের মধ্যে 'বলসা ফ্যামিলিয়া' একটি। ব্রাজিলে সামাজিক মন্ত্রণালয়ের হয়ে কাজ করা ইসিস ফেরেইরা ও মার্সেলো সাবোইয়া জানান, দারিদ্র্য নির্মূলে আসল কৌশলটির নাম 'ফোম জিরো'। আর বলসা ফ্যামিলিয়া হচ্ছে সার্বিক কৌশলের একটি কর্মসূচি। প্রকৃতপক্ষে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে স্বাস্থ্যসেবা, পানির সুবিধা ও ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা জরুরি। সার্বিকভাবে মৌলিক পরিষেবাগুলোর পরিসর ও গুণগতমান ব্রাজিলে খুবই ভালো। দেশটি জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ ব্যয় করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে।




ব্রাজিলের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বর্ধিত নেটওয়ার্ক দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। খাদ্য ঝুড়ি কর্মসূচির (পুষ্টিযুক্ত টাটকা খাবার সরবরাহ) আওতায় জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টগুলো একবারের খাবার বিক্রি করে মাত্র এক ব্রাজিলিয়ান রিয়েলে। জানা যাক, একবারের খাবারের তালিকাটা— মাছ, চিকেন সসেজ, শিম, সালাদ , ফ্রুট জুস ও একটি তাজা ফল। পৃথিবীর অন্য কোথাও কি এতো সস্তায় এসব খাবারের কথা চিন্তা করা যায়। নতুন চালু হওয়া 'ফুড ব্যাংক' কর্মসূচির আওতায় কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় পচনশীল দ্রব্যাদি। শিশুশ্রম নিরসনেও তারা বদ্ধপরিকর।



 শিশুশ্রমের আশঙ্কা সৃষ্টি হলে সে পরিবারগুলোর দিকে বাড়িয়ে দেয়া হয় সাহায্যের হাত। তাদের কর্মসূচির ধারে-কাছেও পৌঁছতে পারেনি উন্নয়নশীল তকমাযুক্ত অন্য কোন দেশ। ভেঙ্গে যাওয়া পরিবারের সন্তানদের জন্য রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বৃদ্ধদের বিনোদন কেন্দ্রেরও অভাব নেই। সমবায় গঠন, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে মূল ভূমিকা পালন করে স্থানীয় পৌরসভা। তাদের তত্ত্বাবধানেই 'বলসা ফ্যামিলিয়'র সুবিধাভোগীদের শিক্ষা দেয়া হয় চুলসজ্জা, হাত ও নখের পরিচর্যাসহ অনেক কিছু, যাতে নিজেরাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। এরই মধ্যে অনেকেই সেই নজির রেখেছেনও। যাদের এখন আর সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন হয় না।




ব্রাজিলে অনেক কিছুই আইনে বাঁধা। 'ঐক্যবদ্ধ স্বাস্থ্য পদ্ধতি' নামক আইন চালু হয় সেই ১৯৯০ সালে। সামাজিক সহযোগিতা আইনে রূপ নেয় ১৯৯৩ সালে। পরের বছরই প্রণীত হয় বেসিক ইনকাম এন্ড সিটিজেনশীপ ল। খাদ্য ও নিরাপত্তা আইন চালু করা হয় ২০০৬ সালে। স্কুলে খাবার দেয়ার ব্যাপারে বাধ্য-বাধকতা তৈরি হয় এর তিন বছর পর। দারিদ্র্য ও বঞ্চনা দূর করতে মেডিক্যাল টার্ম 'ইনটেনসিভ কেয়ার'কে বেছে নিয়েছে তারা। প্রত্যেকটি দরিদ্র লোকের প্রতি দেয়া হয় বিশেষ মনোযোগ। 


২০১৩ সালে দিলাম হোসেফ ( প্রেসিডেন্ট ) ব্রাজিলে বসবাসরত বিদেশী নাগরিকদের গণহারে ব্রাজিলের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। দিলাম ২০১৪ সালে আরেকটি আইন করেন যাতে লিখা আছে যে কোনো প্রবাসী ব্রাজিলিয়ান মেয়ে বিয়ে করলে সাথে সাথে সে ব্রাজিলের নাগরিকত্ব পাবেন। সেই সুবাদে বর্তমানে হাজার হাজার প্রবাসী এখন ব্রাজিলের নাগরিক। 











































No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates