মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের করুন দশা । বাংলাদেশী হাইকমিশনের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়মে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের। মাত্র কদিন আগে, সরকার দেশের শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন দেশে পাসপোর্ট পাঠাতে ৩ থেকে ৫ দিনের সময় নির্ধারণ করেছেন। অথচ মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের এই পাসপোর্ট নিতেই পরতে হচ্ছে চরম বিপদে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী হাইকমিশনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাইকমিশনের সদর দরজা থেকেই ভেতরে যাওয়ার টোকেন পেতেই লাইন শুরু করতে হয় প্রবাসীদের। স্বল্প পরিসরের এ জায়গাটুকু থেকে ভেতরে কি হচ্ছে, কিছুই দেখার সুযোগ নেই। ছোট্ট একটি দরজা রয়েছে, যার সামনে হাইকমিশনের ওয়েটিং রুমে যাওয়ার টোকেন দেওয়া হয়।
ভেতরে একসঙ্গে ৩শ’ জন বসতে পারেন। সে কারণে আগে যারা ভেতরে গেছেন, তাদের বের হওয়া সাপেক্ষে নতুন কাউকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। সকাল ৮টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অনেকে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে মেঝেতে বসে পড়েছেন। কয়েকজন আবার দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
লাইন ছেড়ে গ্লাসের ওপারে মুকুলের হোটেলে ঢুকেছেন প্রবাসী বাবুল মিয়া। চার মাস আগে পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। এসেছেন পাসপোর্ট নিতে। বাবুল মিয়া থাকেন মালয়েশিয়ার সীমান্ত শহর জহুর বারুতে। হাইকমিশন থেকে যার দূরত্ব সাড়ে তিনশ’ কিলোমিটার। আগের রাতে বাসে এসেছেন একদিনের ছুটি নিয়ে। পাসপোর্ট নিয়ে দিনে দিনে ফিরতে হবে তাকে।
কিন্তু পাসপোর্টতো দূরের কথা, হাইকমিশনে ঢোকার টোকেনও পাননি। গরমে মাথা চক্কর দিয়ে ওঠায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন এ প্রবাসী। চোখে-মুখে তার রাজ্যের হতাশা ও আতঙ্কের ছাপ। বাবুল মিয়ার মতো অনেকেরই একই দূরাবস্থা।
দুপুরে মধ্যাহ্ন বিরতির কারণে থমকে আছে লাইন। কেউ কেউ দালালদের সহায়তায় লাইন এড়িয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলেই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অন্যরা। আর তাতেই গোলমাল লেগে যাচ্ছে। হাতাহাতিও হচ্ছে হরদম। হাইকমিশনের কেউ সেখানে না থাকলেও ভবন মালিকের একজন সিকিউরিটি গার্ড চোখ বুজে লাঠিপেটা করলেন কয়েকজনকে।
কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার প্রবাসী মোমিনুল ইসলাম থাকেন মালাক্কা শহরে। রোববার (১৬ এপ্রিল) রাতে এসে সোমবার (১৭ এপ্রিল) লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তার ভাগ্যে টোকেন জোটেনি। হাইকমিশনের সামনের ফুটওভার ব্রিজে রাত কাটান। সেখানে তার মতো আরও জনাবিশেক প্রবাসী ছিলেন।
মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টায় নতুন পাসপোর্ট তুলতে ফের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন মোমিনুল ইসলাম। এক দালালের মাধ্যমে ব্যাংক ড্রাফট করেছিলেন। কিন্তু দুপুর নাগাদ সিরিয়াল পেলে কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারেন, তার ব্যাংক ড্রাফটি ভুয়া। পরে আর ওই দালালের দেখা পাননি। আবার চলে যান ব্যাংক ড্রাফট করতে। এসে প্রায় তিনশ’ লোকের পেছনে পড়েছেন। কি আছে ভাগ্যে জানেন না।
ঘড়ির কাটায় চলে হাইকমিশন। টোকেন নেন আর যাই নেন। বিকেল ৫টার এক মিনিট পরও কোনো কাজ হবে না।
মোমিনুল ইসলাম জানান, সোমবার তারা অনেক অনুনয়-বিনয় করেছিলেন। কিন্তু প্রথম সচিব (পাসপোর্ট) মসিউর রহমানের মন গলাতে পারেননি। তিনি সাফ বলে দিয়েছিলেন, ‘আমি সময়ের পর কোনো কাজ করতে পারবো না। কে কতোদূর থেকে এসেছেন, কার কি সমস্যা, সেটি দেখার দায়িত্ব আমার নয়’।
মোমিনুল ইসলাম জানান, সোমবার তারা অনেক অনুনয়-বিনয় করেছিলেন। কিন্তু প্রথম সচিব (পাসপোর্ট) মসিউর রহমানের মন গলাতে পারেননি। তিনি সাফ বলে দিয়েছিলেন, ‘আমি সময়ের পর কোনো কাজ করতে পারবো না। কে কতোদূর থেকে এসেছেন, কার কি সমস্যা, সেটি দেখার দায়িত্ব আমার নয়’।
‘যে কারণে প্রায় ৫০ জন প্রবাসী শ্রমিককে ফুটপাতে রাত কাটাতে হয়। কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাও সুপারিশ নিয়ে গিয়েছিলেন। তারাও বলেছিলেন যে, প্রবাসীরা অনেক দূর থেকে এসেছেন। আবেদনগুলো জমা নেওয়া হোক। তাদেরকেও সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, সমস্যা দেখার জন্য সরকার আছে আমাকে বলে লাভ হবে না’।
উল্লেখ্য,গত ০৩-০৪-২০১৭ তারিখে প্রকাশিত সংবাদে দেশের পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান জানান, বাংলাদেশী প্রবাসীরা এখন থেকে দ্রুত পাসপোর্ট হাতে পাবেন। নতুন ব্যবস্থাপনায় এ দেশ থেকে পাসপোর্ট পাঠানোর পর বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছাতে তিন থেকে পাঁচ দিন সময় লাগবে।
তিনি বলেন, প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদের পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে তাঁদের বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হয়। দূতাবাস তথ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরে পাঠালে অধিদপ্তর থেকে পাসপোর্ট পাঠানো হয়। আগে কূটনৈতিক ব্যাগে পাসপোর্ট পাঠানো হতো। এতে করে কখনো কখনো পাসপোর্ট হাতে পেতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লেগে যেত। সম্প্রতি সরকার ফেডারেল এক্সপ্রেসকে পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে। সবচেয়ে কম দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফেডারেল এক্সপ্রেস কাজটি পায়।
ভিডিওটিতে দেখুন বাংলাদেশী হাইকমিশন মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের করুন দশার একটি চিত্রঃ
No comments:
Post a Comment